আমি যে দেশে বসবাস করি; সে দেশ আমার দেশ নই।
আদিম কাল থেকে নাকি মানুষ বসবাস করে সংঙ্গবদ্ধ ভাবে-
কিন্তু এখানে কোনও গোষ্ঠী নেই, জাতি নেই, সংঘবদ্ধ নেই
এ দেশ আমার নই, এই ভূখণ্ডের এক দলা মাটি আমার নই৷
আমি যে দেশে প্রাণ নিয়ে বেঁচে আছি; সে দেশে প্রাণবন্ত মানব নেই
জড়বস্তুর ন্যায় মানুষ বেঁচে আছে আজন্ম হতে,
দাঁড়িয়ে আছে তালগাছের মতন
কত জীবজন্তু ভোরের সকালে চেঁচামেচি করে,
গল্প করে সাদামাটা মনের মতন।
আমি যে দেশে বসবাস করি; সে দেশের মানুষ কথা বলে না
বসন্ত কি হেমন্তে পাখিদের সুর বেসুরে গান গায় না,
চৈত্রের সূর্যাস্তের বিকেলে কানামাছি ভোঁ খেলে না
এখনে মানুষ বোবা-অন্ধ-বধির; চোখ আছে চোখে দেখে না
কান আছে- কানে শোনে না- মানুষ এখানে মানুষ নই; জড়বস্তু।
আমি যে দেশে রাতে তারা দেখি; সে দেশে আকাশ নেই
সূর্যের অভাব পূরণ করে যে, সে চাঁদটাও আজকাল আলো দেয় না
চান্নি-পসর নেই, অন্ধকার রাইতে ঝিনুক পোকা মিছিল করে না।
আমার দেশে মানুষ চাঁদ চিনে না, তারা চিনে না-
এখানে সব জায়গায় অমাবস্যার ন্যায় ঘোর কালো অন্ধকার
হাতের তালু দেখা যায় না- তবুও রমণীর চাঁদ দেখা যায়
অতএব, এখানে ধর্ষণ হালাল, খুন জায়েজ;
আইন আছে- আইনের প্রয়োগ নেই, সুবিচার নেই।
আমি যে দেশে বসবাস করি; সে দেশে উন্নয়ন হয় চাষার পেটে লাথিমেরে-
আমার দেশের চাষারা অন্নের অভাবে ধুকধুকে মরে
দিনশেষে অন্ধকারাচ্ছন্ন রাতে কান্নায় আহাজারি করে।
আমি যে দেশে বসবাস করি- সে দেশে স্বাধীন লেখক নেই-
কোনও কবি নেই; মুক্তকণ্ঠ-কলম সৈনিকের বড় অভাব
এখানে কবিরা বাঁচতে পারে না; কবির বই নিষিদ্ধ করা হয়।
এখানে লেখালেখির চর্চা নেই; সাহিত্যের সত্যিকারের রস নেই
এখানে জন্মই হয়নি, রস থাকবে কি করে?
এখানে প্রেম হয়, প্রেমযুগল হয়, প্রেমিক নেই!
এখানে দেশাত্ববোধক গান হয়, নৃত্য হয়, নাচ হয়
সত্যিকারের দেশপ্রেমিক নেই।
আমি যে দেশে বসবাস করি; সে দেশের মানুষ-মানুষ নই।