জীবন যুদ্ধ সাময়িক ইতি টেনে,
       ফিরছি আমি বাড়ি।
মা বলে উচ্ছ্বাসের স্বরে মুঠোফোনে
       বাবা আর কতক্ষণ বাকি।
মায়ের উল্লাসে প্রকোষ্ঠ দুটি লালচে-ধূসর;
       বন্ধ রেখেছি অনেকক্ষণ।


আঁখি গোপনে ঝরলো কয়েক ফোঁটা জল
        বলছি, মা আর কয়টা সময়।
অপেক্ষার উপেক্ষা না করে মা দাঁড়িয়ে
          তাল গাছটির গোঁড়ায়।
ক্যালকুলাসের রীতি মেনে হয়তো অংক কষছে,
            'আর কয়টা সময়'!


খানিকক্ষণে ঝকঝকাঝক ট্রেনের শব্দ শেষে,
         যাচ্ছি বাকি পথ অটো করে;
ইতিমধ্যেই ইতিহাস গড়লো মা, আমার কাব্যে
           মুঠোফোনের আধান শূন্য!
নামতে যেয়ে অটো থেকে,দেখে ফেলেছে মা
             চিৎকার করে উঠলো,
           ওরে বাবা, পেছনে গাড়ি!
                    সাবধান!


পায়ের সালামের ক্রিয়াকৌশল অবলম্বন
             করেছি যথারীতি।
এতে কি ধর্মীয় বিশ্বাসের অবমাননায়
           আঘাত হেনেছি আমি?
শির উঁচু স্বভাবে রপ্ত করে, বুকেটেনে মা,
           জড়িয়ে ধরলো আমায়।
দুই গালে,কপালে চুমু খেয়ে বলেছে বাবা,
           কতদিন হলো দেখিনি!


স্বপ্নে যদি দর্শন করি,নিদ্রাহীন সমস্ত রাত
        পরদিবসে করি মোনাজাত।
কখনো যদি তোর পড়ার কক্ষে ঝাড়ুতে যায়
       হৃদকুটিরে আসিস বারংবার।
মনে পড়ে পরীক্ষার সান্নিধ্যের দিনগুলির কথা
       করেছি কত রাত পাহারাদারী।
যেদিন রাতে ঘুম আসেনি তীব্র চেষ্টায়
       তোর বালিশ রাখি মাথায়!


কয়েক ফোঁটা নয়, শতেক ফোঁটা জল
            বৃষ্টির অবয়ব।
পরিশেষে ঠিকঠাক করে বসেছি খেতে
             মা-র পরিবেশন!
মলা মাছ আর তাজা ফিঙে লাল টমেটো
             সুস্বাদু তরকারি!
বেগুনের চাক ভাজা,ধনিয়াসহ আলুর ভর্তা
             খেতে ভারী মজা।
খাওয়া শেষে ডাল না থাকলে চলে কি আর?
            এ যে খুব পুষ্টিমান!


আহার করে সকলে একত্রে,করেছি সেদিন
             কত গল্প স্বল্প ;
গল্পের ফাঁকে সুকৌশলে বলে উঠলো মা,
          স্বাস্থ্য তো ছিল না তোর এমন!
আমি বিস্মিত দৃষ্টিপাতে চেয়ে,সকলে তাকিয়ে
           আলোকপাত আমার দিকে।
যেন চাঁদ ছিলাম আমি, সেদিনকার সভায়।


অবশেষে বলবো আমি ক্ষুদ্র নীতি বাক্য,
        মা যে আমার ভালোবাসা,
             মা যে আমার প্রাণ,
              মা হীনা এ ধরা
            শিকড়হীন এক গাছ।