কত দ্রুত বেগে চলছে জীবনতরী!
মায়ের কোল থেকে হামাগুড়ি, তারপর
আধো আধো দাঁড়ানো শেখা
কারো হাতে ভর করে একটু হাটা,
এটা ধরা, ওটা ভাঙ্গা
অযুত বায়না ধরার সেই শিশুকাল
নিমিষেই পার করে দিলাম!


ঘুড়ি উড়ানো, মার্বেল খেলা, লাটিম খেলা আর
ধান কাটা মাঠে
খড় দিয়ে বুড়ির ঘর বানিয়ে তাতে আবার আগুন দেয়া,
নদীতে ঝাপ দিয়ে গোসল করা
রাস্তার ধারের খেজুর গাছের রস চুরি করা
গ্রামের পুকুর-ডোবা থেকে বড়শি দিয়ে মাছ ধরা
বন্ধুরা মিলে বিলের মাঝে নতুন ধানের খই ভেজে খাওয়া
শত দূরন্তপনার সেই কৈশোর আজ বিলীন কালের গর্ভে!


সময়ের পরিক্রমায় জীবনতরী আজ যৌবণের উত্তাল সাগরে
ঝড়-ঝাঞ্ছা বিক্ষুব্ধ তরঙ্গের মাঝে চলছে তরী
কখনো ভেসে চলে ছন্দময় গতিতে কখনো আবার….
ডুবতে ডুবতে বেঁচে যায়।
একদিকে স্বপ্নীল আগামীর হাতছানি, অপরদিকে তীব্র ঝড়ো হাওয়ায়
অপরিপক্ক এক মাঝির টিকে থাকার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা!
এভাবেই একদিন শুরু হয় দ্বৈততার পথ চলা...
উন্মুক্ত হয় জীবনের নতুন অধ্যায়, ভাবনার নব দিগন্ত
সাহস সঞ্চারিলো মনে, উজ্জীবিত হলাম জীবন সংগ্রামে।
পথ চলছি সময়ের হাত ধরে...
কখনো ছন্দের তালে কখনো ছন্দহীন রুক্ষ বাস্তবতায়।
জাগতিক প্রয়োজন মেটানোর বিরামহীন সংগ্রাম যেমন-
জীবনকে মাঝে মধ্যে অস্থির ও বিপন্ন করে তুলে, তেমনি
ভালোবাসার স্বর্গীয় আভায় কখনো উজ্জীবিত হয় নিজের অস্তিত্ব!
যতই দিন যাচ্ছে ততই এগিয়ে যাচ্ছি নির্ধারিত নিয়তির পানে,
যেন হাতছানি দিচ্ছে সেই অনন্তের সীমানা!
জানিনা, জীবনের শেষ অধ্যায় ছুঁতে পারি কিনা
প্রৌঢ়ত্বের পূর্ণতায় জীবন তরী ভিড়বে কিনা
অনির্দিষ্ট সময়ের এক ফরমান নিয়ে চলছি দিগন্তের দিকে
সময় ফুরালেই ঘটবে সব কিছুর যবনিকাপাত!


জীবনের এই পথ-পরিক্রমায় বাবা-মা, ভাই-বোন
আছে আরো কত শত রক্তের বাঁধন,
স্ত্রী, পুত্র-কণ্যা আরো যারা আছে মোর পরিজন
স্রষ্টাকে রাখিও স্মরণ করি নিবেদন।


বাড়ছে বয়স কমছে আয়ু
যেতে হবে আপন ঘরে,
জীবন প্রদীপ নিভে গেলে
দিও আমায় ক্ষমা করে।