একবার এসে দেখে যেয়ো আমার প্রিয় ভৈরব নদী,
সারাদিনমান আপন মনে বয়ে চলে নিরবধি।
নদী যদি শুধু নদীই হতো কথা ছিল নাকো মোটে,
তারি সাথে শত শৈশবস্মৃতি শতদল হয়ে ফোটে।
স্নিগ্ধশ্যামল প্রকৃতির বুক চিরে বয়ে চলেছে বহুদুরে,
ভৈরবের সাথে কত স্মৃতি আজ মনে পড়ে বারে বারে।
বয়ে চলেছে দুঃখিনী নদী বুকে নিয়ে শত ব্যথা,
আজ কবিতায় কইব ভৈরব নদীর সোনালি দিনের কথা।


পশ্চিমবঙ্গের জলাঙ্গীতে জন্ম নিয়ে শোলমারি সীমান্তে এসে,
মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, পাড়ি দিয়ে গেছে রুপসায় মিশে।
একদা ভৈরবের যৌবনদিনে নদীপথের সুবিধা পেয়ে,
দূর আরবভূমি থেকে ইসলাম প্রচারকেরা এতদঞ্চলে
আসেন ধেয়ে।
ধর্মপ্রচারের পাশাপাশি তারা স্থায়ীভাবে গড়েন আবাস,
তাদের আচার-আচরণ ধর্মের বাণী ছড়ান্ বারোমাস।
ইউরোপ থেকে মিশনারি সাহেবেরা ভৈরব নদীপথে এসে
বলভপুর, রতনপুর, ভবের পাড়ায় খ্রিষ্টান পল্লি গড়েন শেষে।
মেহেরপুরের উপকন্ঠে বন্দর গ্রাম ছিল জলযানের বন্দর,
ভৈরবের বুকে সে সময় বড়ো বড়ো বজরা করত নোঙ্গর!


ভৈরব ঘিরে গড়ে উঠেছে কত লোকবিশ্বাস ও লোকসংস্কার,
কাথুলি-কুতুবপুরের জেলেরা খায় না দুপুরে ধরা মাছ যেদিন বৃহস্পতিবার।
ওইদিন তারা বাই নাকো নৌকো ভৈরব নদীর বুকে,
এতে নাকি তাদের অমঙ্গল হয় বলে শতশত লোকে।
ভৈরব তীরে গড়ে ওঠে কুতুবপুর স্বামী নিগমানন্দের আশ্রমখানি,
উদার লোকধর্মের চর্চায় স্বচ্ছ হয় মন, যেমন স্বচ্ছ ভৈরবের পানি।


ভৈরব তীরে রয়েছে প্রচুর মাজার-আশ্রম খুঁজে পেতে লোকধর্ম,
আরজান শাহ, চেরাগ শাহ, দৌলত শাহেরা রেখে গেছেন অমর কর্ম।
ভৈরব ছিল একদা অনন্তযৌবনা সেসব আজ শুধুই স্মৃতি,
দুপারের গ্রামবাসী করত নৌকাবাইচের আয়োজন দেখাতে সম্প্রীতি।
বললে কথা পুরনো দিনের রূপকথা মনে হবে আজি,
অন্নদামঙ্গল কাব্যের ঈশ্বর পাটনী ছিলেন রসিকপুর খেয়াঘাটের মাঝি।


অনেক কথা বললাম কাব্যে আজ তাহলে যাই,
শুনাব ভৈরবের অমর গাথা ফের যদি সময় পাই।