ছোট্ট এ জীবনে বলো কী পেয়েছি?
যে প্রিয়ার হাতে হাত, চোখে চোখ রেখে প্রতিদিন
জীবনটা কাটিয়ে দিতে চেয়েছি-
বৈশাখী ঝড়ের পূর্বাভাসে সেই হাতটাই ছেড়ে বেঁচেছি।


প্রিয়জনের মুখে দুবেলার দুমুঠো অন্নের জন্যে
নিজ দেশ ত্যাগ করে হয়েছি পরবাসী।
নেই কোনো স্বজন, নেই সুশীতল মায়ার ছায়া,
চারিদিকে শুধু উত্তপ্ত ধুধু বালুচর,
কর্মক্লান্ত হয়ে আবার ওখানেই বিশ্রাম-লুটোপুটি।
তিলেতিলে জমানো টাকা যতো, দিয়েছি তোমাদের হাতে,
চাঁদমুখে তারার হাসি দেখবো বলে।
কিন্তু দ্যাখো, সেই হাসিটা আমার দেখা হলো না।
তোমরাও দেখতে পেলে না আমার মুখখানি।
তোমাদের কথাই ভাবতে ভাবতে কোনো একক্ষণে
সাড়া দিতে হলো আমায় নিষ্ঠুর মরণে।


স্ট্রোকের কবলে ঘুম ঘোরেই হলাম লাশ
মা বলে একবার চিৎকার করেছি, শুনতে পাওনি হয়তোবা,
আমার সঙ্গীরা তোমায় ফোন করে সংবাদ দিয়েছে,
না-কী নাড়ির টানে টের পেয়েছো, মা?
আপসোস শুধু একটায়,
মরণকালে তোমার মুখখানি দেখা হলো না।
অপমৃত্যু কী-না তা নিশ্চিত হতে
প্রশাসন তোমার সোনার ছেলের দেহ বস্তার মতন
টেনে হিচড়ে ফেলে দিলো লাশকাটা ঘরের কোণে।
তোমার সোহাগ মাখানো দেহে চালালো হাতুড়ি-ছেনির আঘাত।
সে যে কী অসহ্য যন্ত্রণা তা যদি বুঝতে!
আমি মা মা করে চিৎকার করেছি, শুনতে পায়নি তারা।
কলিজা মগজ ছিন্নভিন্ন করে আমায় রাখা হলো হিমঘরে,
কী ঠান্ডা! রক্ত জমাট বাধঁনো সে হিমঘর।
বলো মা, ওখানে কি মানুষ থাকতে পারে?


আমলাতান্ত্রিক জটিলতার ফাঁদে পড়ে
দিন-মাস-বছর ঘুরে কাছে পেলে আমার লাশ,
কী বীভৎস আমার মুখাবয়ব,
যে মুখে তুমি কতশত চুমু খেয়েছো,
সে মুখ দেখেই আজ তুমি ভয়ে শিহরিত।
এটাই যদি হয় আমার জীবনের কাহিনি; তবে-
একে নষ্ট জীবন বলবো না-তো কী বলবো?