🔳


মা আমাকে আদর করে খোকা বলে ডাক তো


এই নামটি ধরে এখন আর কেউ ডাকে না
মা বড় আপন জন সে দিনই বুঝে ছিলাম;
মা তোমাকে ভীষণ মনে পড়ছে আজ ।


মায়ের শাড়ির আঁচলে সকালে, দুপুরে, রাতে
এঁটো হাত মুছে দিতাম;
মা পরম মমতায় এগিয়ে দিতো শাড়ির আঁচল
মায়ের শাড়ির আঁচল ছিল আমার শেষ আশ্রয় ।


🔳


মা আমার খেলার সাথী ছিলো  
গোপন কথার ব্যাংক ছিল, দুঃখ কষ্টের সাক্ষী ছিল ।
মা আমার পরম আপন ছিলো
দুখের দিনে পাশে ছিলো ।


মা ছিল পাখির মতো , আমাকে তাঁর ডানার নিচে রাখতো;
মা আমাকে সবার থেকে বেশি ভালোবাসাতো
মা আজ কেমন পর হয়ে গেল
তার
পর
থেকে
চোখ দুটি নদী হল ।


আমি আর মা দুজন দু'দেশের মানুষ
অথচ
এতো কাছে তবুও দূরে , যোজন যোজন দূরে ।


🔳


মা আমার জন্য পথ চেয়ে বসে থাকতো;
আমি গাঁয়ের হাঁটে গেলে ফিরে না আসা পর্যন্ত ।
এখন মা নেই , বাড়ির আমগাছটাও দাঁড়িয়ে থাকে ।
আমি আম গাছের শরীর ছুঁয়ে দেখি,
মায়ের মতোই  শীতল যার ছায়ায় আমি বেড়ে উঠেছি ।


মা আমাদের সংসারে বেশি হয় ব্যাঙের ছাতার মতো
অথচ,
মা একদিন আমার সব ছিলো ।
খেলার সাথী থেকে শুরু করে স্কুলের স্যার ।
মা কখনো মরে না , আমরা অবহেলায় মেরে ফেলি ।


🔳


দিনদিন ক্লান্ত হয়ে ফিরে আসি বাড়ি
মায়ের কবর দেখি, দেখি পুরনো আমগাছ
মায়ের মৃত হাসি দেখি, জোনাকির মতো ।
অথচ
মায়ের ঘুমানোর ঘর আঁধারে ডুব মেরে আছে ।


সন্ধ্যা প্রদীপ নেই, এ সন্ধ্যা প্রদীপ নিয়েই মা
সাঁঝের সময় ব্যস্ত হতো , ঘরে আলো জ্বালানো নিয়ে ।
আজ তাঁর ঘর অন্ধকার, কেউ নেই সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালানোর ...
অথচ
একদিন মা ঘর থেকে শুরু করে সংসারে আলো জ্বালিয়েছিল পরম মমতায় ।


🔳


মা ছিল চাঁদের মতো সুন্দরী
তবুও সংসারে তাঁর কথার দাম ছিল না চারআনা ।
তবে কাজের লোক হিসাবে খুব দাম ছিল;
কাজে নড়চড় হলে বাবা বোকা দিতেন ।


'মা হেসে হেসে কেমন সয়ে যেতো, মা এতো সহ্য করতে পারে ?'
মা জীবন ভর দেখেছি;
সংসার আর সংসার করে মরল,
অথচ
বাবা তাঁকে দাম দেয়নি কোনো দিন ।


'সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে ,কতো গুণ লাগে সংসারে ?'
মা সংসারী ছিল, গুণী ছিল ।
অথচ
মা সংসারে শুধুই কাজের মানুষ ছিল ।