( বিগত ১৯৭২ সালের জুন মাসে সদ্য স্বাধীন দেশে দশম শ্রেণীর ছাত্র থাকাকালে বিদ্রোহী কবিকে নিয়ে কাঁচা হাতে এই কবিতাটি লিখেছিলাম। কবিতার কীইবা বুঝি তখন! কেবল লিখতে শুরু করেছি। যদিও প্রথম লেখা ১৯৬৮ সালে সপ্তম শ্রেণীতে পড়ার সময়। পুরোনো রঙচটা পান্ডুলিপি থেকে নিয়ে ৪৮ বছর পর নজরুলের মৃত্যুদিবস উপলক্ষে  কবিতাটি সবার সামনে উপস্থাপন করছি।


আল্লাহপাকের দরবারে কবি'র রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করছি।
আমিন।)


বিদ্রোহী কবি
- শফিকুল ইসলাম বাদল


বিদ্রোহী কবি নজরুল!
ভেঙেছিলে তুমি শোষক শ্রেণীর ভুল।
শোষক শ্রেণী ভেবেছিলো, শোষণ করিবে তারা;
মাথা হেঁট করে ছালাম তাদের জানাবে সর্বহারা।


মূকমুখে তুমি দিয়েছিলে ভাষা;
প্রেরণা পেয়েছে জেলে, কুলি, চাষা।
অবিচার দেখে পুত্তলিমতো থাকে নাকো তারা বসি;
অত্যাচারী নিধনে এখন ধরতে শিখেছে অসি।


'বাংলা মা'কে ভালোবেসেছিলে বলে;
পড়েছিলে তুমি ইংরেজ রোষানলে।
জীবনের অনেক বছর কাটায়েছো তুমি জেলে;
তোমায় রুখতে পারে নিকো তারা তবু কোন কৌশলে।


সাহিত্যে তব এঁকেছিলে কবি,
মানবতার অকৃপণ ছবি।
রংতুলি লাগেনি তোমার;
মসীই নিয়েছিলো সে কার্যভার।


জোলেখার প্রেমে ধরা দিয়েছিলো হজরত ইউসুফ;
তোমার প্রেমের কাহিনী তুলিলে তারা হয় নিশ্চুপ।
মমতার প্রেম-কীর্তি স্বরূপ গড়েছে তাজমহল;
তোমার প্রেমের চিহ্ন স্বরূপ দিয়েছো গানসকল।


'নীরব কেন কবি ফুলের জলসায়;'
সাধু ছাড়া হেন ভবিষ্যৎবানী কেউ কি বলিতে পায়!
সত্যিই তুমি নীরব আজ মানবফুলের মাঝে;
কাব্য তোমার অস্বীকারে ইহা, রক্তিম হয়ে লাজে।


কোথা গেলো তব বজ্রমুষ্ঠি, রলো কোথা হিম্মত!
তোমার গানের কলি পাঠ করে নিয়েছিলাম শপথ।
সেই শপথের জোরে মোরা আজ পেয়েছি স্বাধীনতা;
এমন কালেও তুমি কেন মূঢ়, মুখে কেন নেই কথা?


চুপ থেকো নাকো কবি, বের কর তব বুলি;
কাব্যবাগে ফুল ফুটাইতে হও পুনরায় বুলবুলি।
তোমার মুখে ফিরে আসুক, সেই হারানো ভাষা;
এই যাচনা করি আমরা, এটাই মোদের আশা।


রচনাকাল: ধনবাড়ী (টাঙ্গাইল), ১০ জুন ১৯৭২