আসরে অনেক প্রিয় কবি আছেন। এদের মধ্যে এক জন খলিলুর রহমান। কবির জন্ম ২১ নভেম্বর ১৯৬১। জন্মস্থান মুজিবনগর, মেহেরপুর,
বাংলাদেশ।


তার কবিতা অনেক ভাল লাগে। অধিকাংশ কবিতাই মন ছুঁয়ে যায়। কবিতা আবৃত্তি ঠিক ভাবে করতে না পারলেও তার কবিতা জোড়ে জোড়ে পড়ে ফোনে রেকর্ড করি। পরে বাজিয়ে শুনি। অসম্ভব ভাল লাগে তার কবিতাগুলি।


তার অসংখ্য কবিতার মধ্যে আমার কাছে সেরা কবিতাগুলির তিনটি এখানে দেয়া হল। আশা করি আপনাদেরও খুব ভাল লাগবে।


স্বর্গ ওমন হলে


গাঁয়ের পাশে গাছের ফাঁকে ধুলো-ঘাসের মাঠে
হঠাৎ দেখি লোক জমেছে সাঁঝ-আঁধারের
হাটে।
এগিয়ে দেখি ভীড়ের মাঝে গাইছে বাউল গান
দাঁড়িয়ে সেথায় শুনছে সবাই, মগ্ন সবার
প্রাণ।
হঠাৎ দেখি শুনছো তুমি দাঁড়িয়ে আমার পাশে
দাড়ি ভর্তি মুখখানা, আর নয়ন দুটি হাসে।
ক্ষণিক পরে বলি তোমায়, সময় বাড়ি যাবার
রাত হয়েছে চলো এবার খেতে রাতের খাবার।
মিষ্টি হেসে বললে তুমি, আসলে নদীর পথে
খাওয়া তুমি শেষ করেছো কিনে নৌকা হতে।
তবু যে রাত বাড়ছে ধীরে, যেতে হবে বাড়ি,
বলেই পাশে তাকিয়ে দেখি, যাচ্ছ আমায়
ছাড়ি'।
বললে আমায়, আজকে রাতে ফিরবো নারে
খোকা,
এমন কথা শুনে নিজেই নিজকে ভাবি বোকা।
যে কোনদিন ঘর ছাড়েনি মায়ের কথা ছাড়া
সে ঘর ছেড়ে কোথায় যেতে বাবার এতো
তাড়া?
সকাল বেলায় ঘুমটা ভেঙে ভাসি নয়ন জলে
বাবা কেন ফিরবে ঘরে, স্বর্গ ওমন হলে?
যতই ডাকি, ফিরবে না আর আমার মায়ের
টানে
সেও গিয়েছে বাবার আগে বাবারই ওইখানে।



বসন্ত এলো কই?


কার আশে আজও বসে উন্মনা শুধু হই
ফাগুন বিগত সখী, বসন্ত এলো কই?
বউ কথা কও, ডাকে বউহারা কোকিল
ফাগুন বিগত, তবু হলো নাকো মিল
বিরহের নিশি জাগা পাখি একা কাঁদে ওই।
ফাগুন বিগত সখী, বসন্ত এলো কই?
কত ফুল ফুটেছে গো আজ বনে বনে
শিহরিত ভ্রমরের মধু-গুঞ্জনে
সেই ফুলে আমি আজও কোন রং নই।
ফাগুন বিগত সখী, বসন্ত এলো কই?
চোখ গেলো, পাখি কেঁদে উড়ে যায়
সবুজ বনানী তাপে পুড়ে যায়
নিরালাতে একা বসে চৈত্রের তাপ সই।
ফাগুন বিগত সখী, বসন্ত এলো কই?
আসিবে সে, কেন সখী দিয়েছিলো আশা
অভাগীর তরে যদি নাই হবে আসা
আসিবে সে, কেন আজও সে স্বপন বুকে বই?
ফাগুন বিগত সখী, বসন্ত এলো কই?
সবকিছু মরে সখী, আশা কেন মরে না
এতো তারা আকাশে, আর একটা ধরে না?
সে এলে দেখাস সখী, তারা হয়ে যদি রই।
ফাগুন বিগত সখী, বসন্ত এলো কই?



আসবে বলে তুমি


আসবে বলে তুমি, সকাল থেকেই বসে আছি
একা
ক্ষণে ক্ষনেই ভাবি, কখন হবে তোমার সাথে
দেখা।
আসবে বলে, সজনে পাতায় কেমন যেন কাঁপন
লাউয়ের লতা পাইন গাছে খুঁজছে যেন আপন।
বৃষ্টি ধোয়া কুমড়ো গাছে ফুটলো হলুদ ফুল
ঝিঙ্গে ফুলের পাপড়ি নিয়ে ভ্রমর যে মশগুল।
হাস্নাহেনা গন্ধ ছড়ায় সন্ধ্যা হওয়ার আগে
দিগন্ত হয় লজ্জা রাঙা অস্ত আবির রাগে।
আসবে বলে তুমি, মনের ডালি সাজায় এমন
সাঁঝে
হাত ফসকে জিনিস পড়ে, আনমনা হই
কাজে।
অবহেলায় যতকিছুই নিত্য ছিল পড়ে
আজকে সেসব গুছিয়ে রাখি একটু যত্ন করে।
আসবে বলে অনেক কিছুই পেলো হাতের
ছোঁয়া
আসবে বলেই আঙিনাটা আজকে হলো
ধোয়া।
খাবার টেবিল আজকে আবার অনেকদিনের
পরে
তোমার চাওয়া খাবারগুলোই সাজলো থরে
থরে।
আসবে বলে খিড়কি দ্বারে কান দুটি রয় খাড়া
সেই সুযোগে বাতাসটা বয় কেমন ছন্নছাড়া।
কার আশাতে রাত্রি জেগে কাঁদলো বনের
পাখি
তারই সাথে রাত্রি জেগে আমিও আশায়
থাকি।
আসলে নাকো আমি যখন সাজালাম এই ঘর
আসলে নাকো আমার যখন কাটলো অবসর।
নয়তো তুমি এসেছিলে, ছিলেও চারিপাশে
আকাশ থেকে ঝরেছিলে শিশির হয়ে ঘাসে।
নইলে কেন এলে নাকো, হলো না তা জানা
ভাবতে যদিও চাই না তা আর, মন মানে না
মানা।