সারি সারি অনেকগুলো আকাশ ভাঙা বৈকাল হ্রদ,
আর কৈলাসের নীল জলের চিলতেরা পাহাড় ডিঙিয়ে লম্বিত হয়ে ঝাঁপ দেয় চেরাপুঞ্জির দিকে,
চেরাপুঞ্জি নিরাকার একাকার,
"না, না, ছুঁয়ে দিওনা, ছুঁয়ে দিওনা আমাকে তুমি ... ‍‍‍ আমি ব্যবহৃতা কলঙ্কিনী পরিত্যক্তা;
বিশিষ্ট কবিতা-আদ্র আমি, মাত্রাধিক কবিতা-বৃষ্টি আদ্রতা আমার,
তুমি ডুবে যাবে, হে কৈলাস দেব, তোমার আমাতে তুমি ডুবে যাবে,
তোমার অমন সব দুর্বোধ্য কবিতার দল নিয়ে –!
তুমি জানোনা আমি কবিতা জলধারায় এক অভিশপ্তা রাক্ষসী।"


জানিনা তোমাকে তবু কোনোদিন কাছে টেনে এনে
লালাভ লাভা সিক্ত চুম্বনে লক্ষ তারকারাজি প্রজ্জ্বলন
করা হয়েছিলো? নাকি হয়নি? সেটা কখনো জানিনি।।


তোমার শরীর মন পূর্ণ করে ঘূর্ণি নিয়ে তুরপুন বিদ্ধ? সুঠাম কুম্ভ আর
রম্ভা সম মোমাভ্র কাঠ গোলাপ রেণু গন্ধ? বন্ধ গুহায় সম্ভ্রান্ত
আলোর বিচিত্র মিনার থরো থরো শীতার্ত কম্পিত সুচাগ্র ধরণীকে
সম্মোহিত করে, মুগ্ধ করে
যুদ্ধ সমাপ্তির উদ্যানে পরিত্রাণ নৈবেদ্য অর্পিত করেছিলো
কিনা? করেছিলো কী কোনোদিন? নাকি করেনি? ঠিক জানিনাতো?


কমলা রঙের পাখির দল সেদিন কী উড়েছিল তোমার চুলের আঁধারে? নাকি ওড়েনি?
সেদিন, তোমার জামার নিভৃত গহনে এক লক্ষ আনন্দ ঝঙ্কার
নাকি হাজারো বেহালার তার কন্ঠ রুদ্ধ অশ্রুময়?
মার্গারিটার ক্রিস্টাল চূর্ণ লবনাক্ত স্বাদ যাতে কোনো এক-চক্ষু-অন্ধ জলদস্যু নাবিকের
হালভাঙ্গা দিশাহারা জাহাজ নিয়ে তোমার দূরত্বে জলে ভেসেছিলো?
নাকি ভাসেনি? নাকি সমুদ্রতটের সীমানায় আসেই নি কোনোদিন??


উন্মত্ত জন্তুগুলো আমরুল জামরুল বন ছিন্ন করে,
বেগুনী বোগেনভিলার কণ্টকময় রশি দিয়ে তোমাকে বেঁধে বনবাসে নিয়ে গেলো
আমার সীমানা ছাড়িয়ে,
তুমি তাতে তোমার রক্তিম অলংকার সিঁদুরের বিন্দু মৃত্তিকায় ফেলে ফেলে
আমাকে তোমার পথ চিনতে দিলেনা, নাকি ইচ্ছে করেই দিলেনা?


দীর্ঘ অভিশপ্ত এই জীবনের শেষ প্রান্তে এসে
আমার এডিশন রোডের শেষ ঠিকানা তুমি জানলে না,
এখানে সব ওক্ ম্যাপল দল ক্লোরোফিল গিলে ফেলে পত্র হীন,
প্রতিদিন একটা মৃত উইলো ডালের উচ্চতম শাখায়
একটা দুঃখী একাকী ঈগল ডানা ঝাপ্টায়, হারিয়ে যাওয়া তার সঙ্গীর সন্ধানে।


বিচিত্র বৈকাল হ্রদের কিনারে তুমি এক চিত্রময় সোনার হরিণ
“সে‘ইখানে সরোজিনী শুয়ে আছে, — জানি না সে’ সে’ইখানে শুয়ে আছে কিনা।’”


ওটা কার মৃতদেহ বিলম্বিত লয়ে সব সোনালি সন্ধ্যায় আমার ঝিলের জলে
একতোড়া নিষ্ফল রজনীগন্ধা নিয়ে ভেসে ভেসে যায়?
নাকি আমার নিজস্ব কোনো বিল, ঝিল, দিঘী নেই কোনো?
কোনোদিন ছিলোই না, এখনও নেই, থাকবেও না, আর কোনোদিন?
আমার সমস্ত কিছু তুমি লুন্ঠন করে গেছো, নাকি লুন্ঠন করোনি তুমি?
জানিনা তা আমি জানিনা, এই সমস্ত সব বিকৃত ধারণা আমার।


তবু আমি একটা মাত্র ধ্রুব সত্যকে জেনেছি এখন,
আমি এক বিভ্রান্ত অভিশপ্ত ধূসর বৃদ্ধ ভল্লুক, বনে জংগলে একাকী একাকী,
সর্বস্ব বিসর্জন করেছি আমি শুধু অভিশপ্তা তোমার জন্য, শুধু মাত্র তোমারি জন্য।।