অতিকায় ক্যাথলিক চার্চ, জানালা দেয়াল ভরা, রঙ চং ঘষা কাচ, কাচের টুকরোর কারুকার্য ! ক্যাথেড্রাল আর্কিটেকচার ।


আজ choir এর পর তোমার গান, তুমি সেখানে আমন্ত্রিতা লোকাল বিদেশী অতিথি গায়িকা!


এদিকে আমাদের জীবনে তখন কী প্রচন্ড নির্মম নিদারুণ ঝড়, দশ দিক থেকে দেয়ালে দেয়াল, চারদিকে অন্ধকার, আমরা সেই জতুগৃহ থেকে কিভাবে বেরোবো তার কোন দিক বিদিক অন্ত নেই! সাইমুম। পথে পথে, দিগন্তে, আঁধার ঘরে! আকাশে!


গির্জার অতিকায় সুউচ্চ সিলিং আকাশকে ছুঁতে চায়, প্রশস্ত সমান্তরাল ওক্ বিম, মাঝে মাঝে আঁকিবুকি আঁকা মিনারের মতো মেঘে “মাদার ম্যারির” স্নিগ্ধ দুটো চোখ! শাদা মার্বেলের মিম্বার, তাতে তুমি দাঁড়িয়ে, তোমার পেছনে দেয়ালে ঝুলে আছেন রক্তিম ক্রুশবিদ্ধ জেসাস ক্রাইস্ট! শাদা মার্বেলের বেদিতে, আধা আলো আধা আঁধারে তুমি দাঁড়িয়ে। গান করলে “আগুনের পরশমণি ---”।


বিশাল পাইপ অর্গান তোমার সুচারু কণ্ঠস্বর তৎক্ষণাৎ নিজের ভেতর আত্মসাৎ করে নিলো, কেড়ে নিলো, এদিক সেদিক শুধু প্রতিক্ষিপ্ত প্রতিধ্বনি, শুধু প্রতিধ্বনি, সিলিঙের বিম থর থর ! সেই পাইপ অর্গান তোমাকে নয়, তোমার মিনতিকে ছড়িয়ে দিচ্ছে, ছাপিয়ে দিচ্ছে গম গমিয়ে! তার রেশ ঘুরে ঘুরে যায় সমগ্র হল ঘরে! ১০০+ ভক্ত, পাথরের মতো নীরব নিঃশ্চুপ! তোমার গান নয়, কেবল অর্গান ঘুরে ঘুরে যায় তাহাদের মনে! অর্গান তোমার মিনতি দিয়ে নৈবেদ্য দিলো যিশু খ্রিষ্টের পায়ে!


শেষ প্রান্তে এসে তুমি আর পারলে না, তুমি কম্পিতা, তুমি অশ্রুমতি, তুমি কেঁদে ফেললে, এই গান করতে গিয়ে আমাদের দুঃসময়ের কথা ভেবেই তুমি হয়ত কেঁদে ফেললে তোমার ঈশ্বরের কাছে, সমস্ত পৃথিবীটা যেন কাঁদছে, শুধু তোমার সাথে, একমাত্র তোমারি সাথে!


তুমি জানো? একদম পেছনের সারিতে একা দাঁড়িয়ে আমি তখন কার কাছে কি প্রার্থনা করেছিলাম? যীশু খৃষ্টের কাছে নয়, দেব দেবি ঈশ্বর/আল্লাহতালার কাছে নয়, শুধু মাত্র তোমার কাছে, শধু মাত্র তোমারি কাছে, তুমি আমাকে তোমার ওই দেবালয়ের প্রদীপ করো! নয়নের দৃষ্টি হতে ঘুচবে কালো, যেখানে পড়বে সেথায় দেখবো আলো-- নিশিদিন আলোক-শিখা জ্বলুক গানে -- । তুমি আমার একমাত্র ঈশ্বরী ! ছিলে। থাকবে। কাছে না থেকেও অনন্তকাল থাকবে!
----------------------------