কোন গভীর রাতের নিচ্ছিদ্র অন্ধকারে
সব বাতি নিভে যায়, বৃষ্টিভেজা পিচের অলি গলি অন্ধগলি
সব শব্দহীন; একাকী শহরটা অন্তলীন নীরব নিদ্রায় বিলীন।


তখন আমাদের মতো বিনিদ্র কেউ একজন অন্য মানুষ!
নিজেকে নিজেই চেনেনা খোলা জানালায়
এক রাশি শীত আর কুয়াশা ভরা অন্ধকার গিলে ঝিম ঝিম মাথা নিয়ে
জীবনের সীমানা মাপে কারো ফেলে যাওয়া পনেরো হাত শাড়ি দিয়ে।


এক শাড়ি, দুই শাড়ি, তিন শাড়ি সারি সারি অনেক দূরত্বে
সেই আচেনা মানুষটা তখন একজন বিভ্রান্ত পরিব্রাজক জীবনের
পথে ঘাটে সে ইবনে বতুতা।
অলীক কারো অশরীরী শ্যামল শরীরের
গলিত কাঠ গোলাপ জলাধারে স্বর্ণ আর প্রেমের সীমানা জরীপ করার
জ্যামিতিক সুত্র নিয়ে সে তখন
একজন আর্কিমিডিস।


তার কোনো আনন্দ নেই, পুলক নেই, নেই কোনো
দুঃখ বা কান্না, সে নির্বিকার, তার চোখ ঘষা কাঁচ, অশ্রুহীন।
সে বিন্দুমাত্র হাসেনা চার্লি চ্যাপলিনের বোবা সিনেমা দেখে,
সে কোনো বেদনা পায়না ওফেলিয়া, লাইলি, অরূন্ধতী,
বা সুরঞ্জনার মতো তার প্রেয়সীকে "হড়পা বানে" ক্রমাগত হারিয়ে যেতে দেখে ।


সে তখন একজন সম্রাট তার নিজের অলীক সাম্রাজ্যে
ধনী নীল নীলাভ নির্লিপ্ত কুয়াশা ভরা গভীর উর্ণাজালে বিদ্ধ
সে পৃথিবীর নীল থেকে, ঘন নীল, গাঢ় নীল, আরো নীল ---, নীলতর ---, নীলতম
সম্রাজ্ঞীহীন রাজ্যহীন বাক্যহীন একজন নির্জন বিদ্ধস্ত একাকী সম্রাট!


শূন্য ক্লজেটে তার এক শাড়ি, দুই শাড়ি, তিন শাড়ি সারি সারি অনেক দূরত্ব!
অন্ধকার সমুদ্রে তার কম্পাসহীন মাস্তুল হারা বিবাগি জাহাজ
"এক বাও মেলে না। দো বাও মেলে না — লক্ষ বাও মেলেনা --- না না না। ----"
সে তখন একজন অন্য মানুষ। এই পৃথিবীর কেউ তাকে চেনেনা,
সে নিজেকেও না।
------
* "হড়পা বান" শব্দটা আমার জানা ছিলোনা, এই শব্দটা আমি প্রথম শুনি
আমাদের কবি নির্ঝর মুখোপাধ্যায়ের "হড়পা বান" কবিতাটা পড়ে।