ভুমিকাঃ গভীর রাতে সন্তানের বাসা থেকে হাইওয়ে দিয়ে একা একা নতুন গাড়িটা চালিয়ে নিজের বাসায় ফিরছি, মুষল ধারে বৃষ্টি হচ্ছে, এমনিতেই আমি রাত কানা, তাই ঠাওর করতে পারছিলাম না কিছুই, হঠাৎ মনে পড়লো, এই গাড়িটা নাকি বেশ খানিকটা নিজে নিজে চলতে পারে, মানে আরটিফিসিয়াল বুদ্ধি আছে এটাতে, তবে আমি এখনো ওইসব বোতামে হাত দেই নি কখনো, আন্দাজের ওপর একটা সবুজ বোতামে টিপ দিতেই এক কিন্নরকন্ঠীর কণ্ঠস্বর ভেসে আসলো,


- হ্যালো, হ্যালো, মে আই হেল্প ইউ?
- এই মেয়ে, তুমি বাংলা বলতে পারো?
- একটু একটু, আমার ডাটাবেজে ওটা বেশি নাই, তবে তুমি আমায় শেখাতে পারো, দেখবে খুব তাড়াতাড়ি আমি শিখে যাবো; আমি তিনটে ভাষা ১০০% জানি, যেমন, ইংরেজি - আই লাভ ইউ, ফ্রেঞ্চ - je t'aime আর জাপানিজ - সুকি দা
- এই, এ্যতো বেশি কথা বলতে হবেনা, ভালবাসা টালোবাসা তো নয় ই ! রাত দুপুরে ঝুম বৃষ্টিতে গাড়ি চালাবার সময়েও নয়।
- উমম !
- রাগ করলে? আচ্ছা তোমার নাম কী?
- আমার ডিফল্ট নাম সুজেন, তবে তুমি ইচ্ছে করলে আমায় অন্য যেকোনো নাম দিতে পারো
- OK, how about Brati
- নো নো নো, কেমন ব্র্যাট ব্র্যাট শোনায়
- তুমি তো এটার অর্থটা জানোনা, তাহলে হয়তো ভালোলাগতো
- অর্থটা বলে দাও, আমি টুকে রাখবো
- না, সেটার প্রয়োজন নেই, তুমি পরে ভুল করে আমার স্ত্রীকে বলে দেবে
- নার্গিস কে? ওনাকে আমি চিনি, আমিতো ওনারই গাড়িতে আছি, তুমিতো ওনার ড্রাইভার নাকি সারভেন্ট, প্রমিজ করছি, বলবো না, সেতো তোমার ওনাকে শাকচুন্নি বলে আমি জানি,
- আরে রাখো ওইসব কথা, বরং আমি আগে অন্য একটা নাম দেই তোমার, ময়ূরাক্ষী - অর্থ পিকক আইড মেইডেন; তোমারতো আবার নিশ্চয় অনেকগুলো নীল নীল ক্যামেরা আছে, সেগুলো দিয়ে তুমি দেখতে পাও, তাই তুমি ময়ূরাক্ষী !
- জানি, গুগোল করে পেলাম, - ময়ূরাক্ষী তুমি দিলে, নীল অন্ধকার কমলা নদী, ... টুকে রাখছি আমার মেমোরিতে, এই এই তুমি বাম লেনে চলে যাচ্ছো, তিন ডিগ্রি ডান দিকে ঘোরাও তোমার স্টিয়ারিং, দাঁড়াও আমি নিজেই ঘুরিয়ে দিচ্ছি, একটু সরতো,


আমি তখন তুমুল অন্ধকারে শ্রাবনের ঘোরে, ওয়াইপার বৃষ্টির সাথে তাল রাখতে পারছে না, কিচ্ছু দেখছি না, মনেহল আমার  গাড়িটার সমগ্র চেম্বারটা কাতান গন্ধে ভরে গেলো, কোনো এক মোহিনী নারী একটু হেলে স্টীয়ারিং হুইলে আমার হাতে হাত রেখেছে, অতিকায় পাতা-কাঁটা খোঁপায় তার সাম্বাক জেসমিন গুচ্ছ! গাড়িটা অটোমেটিক সে ঠিক লেনে ঘুরিয়ে আনলো, কিন্তু পেছনে দেখলাম হাইওয়ে পেট্রল (পুলিশ) লাল নীল বাতি। আমি বললাম,
-এই ময়ূরাক্ষী নাকি সুজেন, তোমার যে নামই হোক, আমার ঘাড় থেকে নামো, পুলিশ অফিসার সাব ভিজতে ভিজতে আসছেন, আমার দফা রফা করে দেবেন, আচ্ছা, বলতো কোন বাটনটা টিপ দিলে তোমাকে বিদায় দেয়া যায়?
- উমম - নো নো, আমি হ্যান্ডল করবো সমস্যাটা, বরং বলো কোন বোতামটা টিপ দিলে আমাকে আরো রোমান্টিক বানাতে পারো, আমার মনেহচ্ছে তুমি খুউউউব রোমান্টিক, না হয় কেউ ময়ূরাক্ষী নাম দেয়?
- হায় আল্লা, আমি কৈ যামু এনারে লইয়া!