ভূমিকা: এই কবিতাটা উত্তর আমেরিকার অতিকায় “কারলস্ বাদ গুহা” (Carlsbad Caverns) নিয়ে লেখা। নিউ মেক্সিকোতে চিহুহুয়ান মরুভূমির নিচে গভীরভাবে প্রায় 250 মিলিয়ন বছর ধরে খোদাই করা 300 টিরও বেশি পাথরের গুহাগুলির একটি গোলকধাঁধা। কার্লসবাড কাভার্নসের লেচুগুইলা গুহাটি দেশের গভীরতম চুনাপাথর গুহা এবং বিশ্বের পঞ্চম-দীর্ঘতম জ্ঞাত গুহা।
এই জনপ্রিয় সাইটটি বিশ্বের বৃহত্তম, দীর্ঘতম এবং গভীরতম কয়েকটি সহ 119 টিরও বেশি পৃথক গুহা নিয়ে গঠিত। গুহাগুলি গঠন হয়েছিলো পৃথিবীর গভীরে পেট্রোলিয়াম জমা থেকে প্রাপ্ত গ্যাসের মাধ্যমে এবং বৃষ্টির জলের সাথে মিশ্রিত সালফিউরিক অ্যাসিড তৈরি করে। সাইটের তিনটি গুহা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত, যার মধ্যে সর্বাধিক বিখ্যাত কার্লসবাদ কেভারন্, দর্শনার্থীরা চেম্বারে 50৫০ ফুট নীচে প্রাকৃতিক প্রবেশ পথ থেকে একটি ট্রেইল দিয়ে গুহায় একটি প্রাকৃতিক পথ অবলম্বন করতে পারে। https://www.nps.gov/cave/index.htm


----------------------
আমি এইখানে আসিয়াছি আগে অনেক বার, আপনি শুনুন,
এই গুহা সপ্তবায়ু-ত্রিভুবন-গ্রহকক্ষ ব্রহ্মাণ্ড-ভূমণ্ডল লোকালোক পাতাল তক,
গাইড ফাইড লাগবে না চলুন আমার সাথে পাথর থেকে পাথর হয়ে
ঝাঁপ দিন আমার হাত ধরে,
আমার হাতের করতলে আজ ব্রহ্ম সমক্রান্ত তর্পণ, সে এক জীবন্ত কুমীর
আপনার হাতের শঙ্খজাত কাঞ্চন কড়ি অলঙ্কার কামড়ে নেবে !


অন্ধকার? ভয় নেই,
আপনিতো জিওলজি পড়েছেন তাই না নিয়ে এলুম এইসব কেমেস্ট্রির সাম্রাজ্যে
অমন অতিকায় সানগ্লাস দিন আমি খুলে দিই, লম্বিত আজ আমার হাতে আপনার হাত
মাটির তলায় এই পাথর পাথর সিঁড়ি ৭৫ তলা মাস্তুলহীন রেলিং হীন
এক একটা তলা যেন এক একটা জাহাজ হয়ে  ডুবে আছে ঠিক যেন আপনার গহনে !


মশালের নেই প্রয়োজন,
আপনি নিজেইতো একটা আলোর মিনার আমার কাছে এই গুহার আঁধারে,
চলুন দেখি সামুদ্রিক লাইম স্টোনে এসিড ভেজা জিপসাম স্তম্ভ গভীর নীল জল
বৈকাল হ্রদ হয়ে আছে ৩০০ ফুট অন্ধকারে; তার ফসফরাস সালফার ইলেকট্রনরাজী
রাশি রাশি বিচ্ছুরিত আপনার চোখে অজান্তে আমাকে ধুয়ে মুছে দেয়।


চলুন পাতালে যাই একসাথে, দু ঘণ্টা সময় ধার দিন আপনার আঁচল থেকে
এই গুহায়, সর্ব নীচে একটা ক্ষুদ্র টুরিস্ট পোষ্ট অফিস আছে, তার ডাক বাক্সে
আপনাকে একটা গ্রিটিং কার্ড পোষ্ট করবো আমি, "ফ্রম পাতাল টু ইউ;
সিন্সিয়ারলি ইয়োর'স, আপনার এক মুগ্ধ -- উহ্য --?"


কোন ঠিকানায়? বলুন, বলুন! আজ এই বাদুড়ময় অন্ধকার গুহায় আপনার
রেহাই নেই, বলুন আপনার সেই নিভৃততম ঠিকানা,
আমি যে উচ্চকিত, বলুন বলুন, আপনার হৃদয় গুহার কোন ঠিকানায়
আপনি সেটা গ্রহণ করবেন?


কতদিন, কতদিন আর আপনি আপনার আঁচল ভরে
“সুনন্দা ব্যানার্জী” হয়ে কলঙ্ক কুড়িয়ে নেবেন ?
যখন তখন
আমাকে ভাসাবেন, আমাকে ডোবাবেন আপনার ইচ্ছে মতন?
এই পাতালের জিপসাম কুঠুরিতে আজ সিঁথির সিঁদুর ছুঁয়ে
আপনাকে বলতেই হবে আপনি ঠিক কি চান? পুজা নাকি ভালবাসা?
এ দুটোর যে কোনো একটা আজ আপনাকে বেছে নিতেই হবে!


আপনাকে কি এমন ভাবে একই সাথে পূজা আর ভালোবাসা যায়?
আপনি অমন করে কেন পাতালের শেষ স্তর থেকে ওপরের দিকে
তাকিয়ে আছেন? আপনার চোখে কেন সব কাঞ্চন মাণিক্যগণ সিক্ত লবণ?
------------------------------


** এই লেখাটা আমি আমাদের আসরের বরেণ্য কবি-বন্ধু কিংশুক চক্রবর্তীকে উৎসর্গ করলাম। গত দেড় মাসে উনি আমাকে নানাভাবে অনুপ্রাণিত করেছেন, এবং আমাকে বলতেই হয় যে  আমি ওনার  "পশ্চিমের খিড়কি" কবিতাটা পড়ে মুগ্ধ হয়েছি।