পুরাতন ব্রহ্মপুত্র তুমি
এক লক্ষ জালালি কবুতর নিয়ে
অবিরাম বাকুম বাকুম
কবে থেকে অন্ধকার এই বক্ষে বন্ধ করেছো তুমি
শম্ভুগঞ্জ সেতুর পাড়ে
শিমুল তলার ঘাস, বালু, ধুলো, কাশফুল ঘেঁষে
বিচিত্র এক চিত্র এঁকেছো তুমি ছল ছল জল তরঙ্গে।


বাসা বেঁধেছো তুমি, জলে ভাসা পাখি
পাখালীর নীড় ভরা জটাধারী জটায়ু হয়ে তুমি
জানকী রক্ষণ কর্তব্য পালন না করে
একটা অশ্বত্থ, নাকি বট, নয়বা শ্রাবণ ঘন অসমাপ্ত পুঁথি শ্রবনের পর
একজন দাবী করেন "বাঙ্গাল ছাতিম" নয়; শুদ্ধ ভাষায় হবে এটা সপ্তপর্ণী বৃক্ষ ! - সেটা
হয়ে গভীর শেকড় গেঁথেছো তুমি
শম্ভুগঞ্জ ব্রিজ থেকে আসমুদ্র হিমাচল কৈলাস।


এক সমুদ্র অভিলাস
বক্ষে নিয়ে তোমার বুকে কান পেতে সে প্রৌঢ়া হয়েও মেলার গান শুনবে,
"ওপেন্টি বায়স্কোপ চুল টানা বিবিয়ানা
নাইন টেন টেস্কোপ
সাহেব বিবির বৈঠক খানা"


মেলা থেকে কিনে আনা
ডাগর চক্ষুর কৃষ্ণনগর আশপাশ
ঘূর্ণি থেকে চূর্ণী নদীর সীমানা ভাঙা
মৃত্তিকার প্রগাঢ় প্রতিমা।
আমি যে তাঁর বুকে তোমার গল্পগুচ্ছ গুঁজে দিয়েছিলাম একদিন।
"হলুদ বনে বনে, মোর নাকছাবিটি হারিয়ে গেছে সুখ নেইকো মনে ..."


ইতিহাস, ধরাস ধরাস, নিরাকার প্রতিবিম্ব
আকাশ ভরা কবেকার সেই অন্ধকার কেশরাশি
কতো লক্ষ কোটি যোজন দীর্ঘ হতে হতে
নিম্ন সপ্তকের বিল্মবিত লয়ের তারে মৌটুসি গৎে বাঁধা
কণ্ঠস্বর হতে পারে?


যেটা কিনা আলোক রশ্মির জ্যামিতিক গতি সীমা ছিন্ন করে
অন্তলীন নৈঃশব্দ নিয়ে দারুণ নিদারুণ নিদারুণতম শাব্দিক অর্ক ভস্ম
ব্রহ্মপুত্রে এনে দিতে পারে একটা প্রভাতে।


ষোড়শ সহস্র এক শত আট কান্তাগণের নেই প্রয়োজন !
একজন, কেবল একজনকে, হে তুমি পুরাতন ব্রহ্মপুত্র
এই জীবনের শেষ শ্রাবণে তোমার কদম বনে সে আসবে,
সে তার প্রৌঢ়া শুভ্র কেশরাশি জলে ভিজিয়ে
অসমাপ্ত পদাবলীর পুঁথির শেষটা শুনতে সে তোমার জলে
কান পাতবে,
পাতবেই, আমি জানি সে একদিন না একদিন
আসবেই আসবে, শম্ভুগঞ্জ ব্রীজের পাড়ে
তখন তুমি
মেঘভরা কল্পকথার ফাঁকে ফাঁকে
তোমার এক লক্ষ জালালি কবুতরের বাকুম বাকুম
সঙ্গীতের ঝংকার তোলা গানটা শুনিয়ে দিও তাঁকে।