ছেলেবেলায় পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদীর ধারে
উপেন্দ্র কুমার বিদ্যাপীঠে বাংলা ক্লাসে
রচনা লিখতে হতো, যেমন ধরো গিয়ে
“নৌকা ভ্রমণ”, “শ্মশান”, “গোরস্থান”, “প্রিয় বই”,
“বেগম রোকেয়া”, “কায়দে আযম”, “তিতুমীর”
ইত্যাদি ইত্যাদি!


সবগুলোতেই আমি ১০০% গোল্লা পেতাম,
বাংলা স্যার খাতাখান আমার দিকে ছুড়ে দিতেন
খাতার পাতাগুলা ফড় ফড় করে আমার দিকে
ফানুস হয়ে উড়ে আসতো, উনি বলতেন, “ঐ ছ্যাড়া, এইডা তুই
কি লেখছস? তরে গাব গাছের কথা লেখবার কইছে কেডা?”
তখন আমার মনেহতো ভুল করে ফেলেছি,
গাব গাছের বদলে জাম গাছ লেখা উচিত ছিলো,
যদিও রচনার টাইটেল ছিলো “আমার দেশ”!


এখন ভাবি, যদি তখন, কোনোদিন রচনার সাবজেক্ট হতে “তুমি”
তখন আমি কি লেখতাম? তখন তো আমি তোমাকে দেখিনিই কোনোদিন?
তবু আকাশ, বাতাস, ফুল ফাল, এমন কিছু হয়তো একটা লিখে দিতাম
পরের দিন আবার আমার খাতাটা ফানুস হয়ে উড়ে আসতো
আমার দিকে বিশাল একটা শূন্য নিয়ে!


ধুত্তরি চ্ছাই, আর পারিনা এমন সব রচনার শূন্য নিয়ে
তাই, ফেল করি, যাই করি না কেন, আমি আর
রচনা লেখুম না কোনোদিন ভেবে
পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের জলে খাতাটা ফেলে দিতে গেছি,
দেখি, সেই জলে ছল ছল জলছবি
একজন ডাগর আঁখির, না দেখা শাড়ীর অস্বচ্ছ শরীর
যেন তুমি ভেসে ভেসে ভেঙে ভেঙে
জলে ভরা কল্পকথা গল্পকথা কও,
আমাকে ভাসাও আমাকে ডোবাও যখন তখন তোমার ইচ্ছা মতন!


সেদিন থেকে তুমি কেন আমার ভেতর
“জলের মতো ঘুরে ঘুরে কথা কও”, বলো কেন?
এখন তো আমি বড় হয়ে গেছি, আমার আর
কোনো প্রকার রচনা লিখতে হয়নাযে,
তবু বার বার লিখতে কেন মন চায়,
কেবল শুধুমাত্র, একমাত্র, তোমাকে নিয়েই?
হে আমার পুরাতন ব্রহ্মপুত্র
তুমিই বলো
তুমিতো সাক্ষী ছিলে,
তুমিই তো সেই প্রথম তোমার নির্জন ঢেঊ তে তাকে নিয়ে এসেছিলে !