এই কবিতাটাকে আমি একটা রবীন্দ্র সঙ্গীতের দুটো ছত্র দিয়ে শুরু এবং শেষ করছি)


((জীবন মরণ সুখ দুখ দিয়ে বক্ষে ধরিব জড়ায়ে))
-----------------------------------------
ফোর কার গ্যারাজ বাড়ির শাণ, মারসেডিজ, Lamborghini,
হাজার ওয়াট আলো ভরা অন্ধকার ছেড়ে
আমেরিকা থেকে চলে যাবার আগে
তুমি এলে তোমার একটা হুইল ভাঙ্গা রং'চটা সুটকেস নিয়ে,
যেটা কলকাতায় তোমার ভাই কিনে দিয়েছিলো অনেক অনেক দিন আগে
যেটা নিয়ে তোমার কলেজে থাকতে প্রথম এক্সকারসান !


তুমি আমার এই ক্ষুদ্র ঘরে রেখে গেলে তোমার সব নিজস্ব সম্পত্তি
কলকাতার নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে ছিলে তুমি
বেশী কিছু নিজস্ব ছিলোনা তোমার,
ক'টা প্রিয় কবিতার বই, যার অনেকটা তুমি আগেই কারণে অকারণে
উপহার দিয়েছিলে আমাকেই, গানের স্বরলিপি, দুটো সরু সোনার চুড়ি, সস্তা হাত ঘড়ি,
খুব সরু গলার চেন যেটা তুমি কলকাতায় ভার্সিটি যাবার সময় পরতে,
কিছু ছবি ছাবা যার সবগুলোই কলকাতায় তোমার বন্ধু বান্ধবি আর
জলের পাইপ বেয়ে ওঠা তোমার বেগুনী বোগেনভিলার!


বিয়েতে তোমার দিদিমা'র দেয়া ভারী কানের দুল, যেদুটো পরলে নাকি তোমার কান ব্যথা করতো,
যেটা শুধু তুমি একমাত্র উইপিং উইলো কিংবা শিরীষ তলায় পরে নিতে,
জাম রং টাংগাইল শাড়ী যেটা কিনা আমিই তোমাকে দিয়েছিলাম,
মেরুন জামা, তারপর শাড়ির ভাঁজে লুকোনো আরো কিছু ব্যাক্তিগত জিনিস
যা কিনা সব কলকাতায় কেনা ছিলো।


এ দেশে ওনার কিছুই তুমি নিজের করে নাওনি,
বা নিতে পারোনি, বা নিতে দেয়া হয় নি,
সেটা খুলে মেলে তুমি আমাকে বলোনি কখনও,
তুমি এই ক্ষুদ্র ঘরে তোমার সমস্তকিছু গচ্ছিত রেখে গেলে
তার সাথে শাম্পু করা এক গোছা মসলিন চুল।


তোমার সুটকেসটা খুললে আমি তোমার গন্ধ পেতাম!
বলে গেলে
"যখন তখন বেশি খুলবেনা, তোমার কষ্ট হবে, আর সেটা ভেবে আমারও কষ্ট হবে,
তুমি জানো?
কলকাতার বাসায় আমার জানালা দিয়ে বৃষ্টি ভেজা দমকা বাতাস এসে
আমাকে বলে দেবে তোমার এই সব কষ্টের কথা, বাতাস তোমার মেঘদূত
আল্পস্ আর হিমালয় পেরিয়ে সে আমার কাছে আসবে, আমি জানি,
ভয় নেই, সেটা পথ হারাবে না।


আরতো মাত্র একটা বছর, আমার এই অগ্নিপরীক্ষা মা বাবার কাছে,
দেখতে দেখতে কেটে যাবে, দেখে নিও!
এই নাও আমি আমার সমস্ত সম্পত্তি,
তোমার কাছেই রেখে গেলুম,
একমাত্র আমাকে ছাড়া! পরে দেখে নিও,
একদিন হঠাৎ তোমাকে আগে থেকে না জানিয়ে
"মুক্ত" আমি তোমার এই দরজায়! করবো সে গান
"তোমার দ্বারে কেন আসি ভুলেই যে যাই"
------"
তোমাকে ছাড়া যে একেকটা দিন যেন এক একটা বছর!
--------------------------------


((নিজ হাতে তুমি গেঁথে নিয়ো হার, ফেলো না আমারে ছড়ায়ে।))