আজ আমি একটি গল্প বলব,
নাহ্, ঠিক গল্প নয়।
তবে গল্পেরই মতো।
আমার কিশোরী জীবনের কথাতো,
গল্পই হবে, তবে তা বাস্তবের গল্প।
এই কথা গুলো হয়তো মিলে যাবে,
কারো জীবনের কঠিন সত্যের সাথে।
হয়তো কথা গুলো আপনাদের,
কুৎসিত লাগবে, নোংরা মনে হবে।
কিন্তু কথা গুলো বাস্তব,
চরম সত্য, এই আমার জন্য।
হয়তো আমার মতো অনেকেরই।


কষ্ট গুলো লুকিয়ে রেখেছি এতকাল,
পুষে পুষে বড় করেছি।
তাছাড়া কি আর করতে পারতাম,
যখন সদ্য বালিকা আমি।
যখন আমি ঘাসফড়িঙের মতো,
উড়ে বেড়ায় এখানে সেখানে।
আমার কাছে যখন পৃথিবীটা,
একটি স্বপ্নের স্বর্গরাজ্য।


অবুঝ বালিকা সদ্য পা দেওয়া বারতে,
সবে বুঝতে শিখছি এই ধরনীর মায়া।
ধূলিকণা ছেড়ে উঠে আসা,
বুঝি কি তখন এই সংসারের ছলাকলা।
আনন্দে হাসি খেলায় মেতে থাকতাম,
আশপাশে অনেককেই দেখতাম,
যাদের শকুন দৃষ্টি থাকতো আমার দিকে।
বুঝি নাই তখন কেন এ ললুপ দৃষ্টি,
কথার ছলে হাসির আদরে,
স্পর্শ করতো তারা সঙ্গোপনে।
অসস্তিতে গা ঘিনঘিন করত,
তবু সহ্য করতে হতো।


কাকে বলব কার বিরুদ্ধে বলব,
এরা যে আমার ই আপনজন।
মাকে কি বলতে পারি,
কি করছে দেখ তোমার বোনের স্বামী।
বলতে কি পারি দেখ মা,
কি চায় তোমার বুড়ো চাচা।
পারি না আমি, পারি নাই তখনো,
যখন বাদ যায় না মক্তবের হুজুরও।
নিজের সাথে নিজেই লড়ি,
আমি এখন কি যে করি।
যখন ঘরের জায়গিরও,
পড়ার ফাঁকে হাতড়ায় ও।


কষ্ট আমার কষ্ট গুলো,
উড়িয়ে বেড়ায় এখনো ধূলো।
নগ্নতার দৃশ্য গুলো,
এখনো আমার চোখে জল টলমল।
বয়সটা যখন একটু বাড়ল,
অত্যাচারের সীমা ছড়ালো।
নিজের মাঝেই নিজেই লুকি,
কেমনে আমি নিব ঝুকি।
কাকে বলব এই লজ্জার কথা,
কাকে বুঝাব এই মনের ব্যথা।
কেউ যেন বাদ যায় না,
সকল পুরুষ যেন হায়েনা।
লালসার ঐ নগ্ন চাহনি,
সে,হোক না কেন বোনের স্বামী।
তার কাছে তো আরোও সহজ,
সেযে আমার বোনের নাগর।
বোনকে বলি আড়ালে কিছু,
বোন উল্টো নেয় আমার পিছু।


যায় না কখনো আত্মীয়র বাড়ি,
সবাই ভাবে আমি আনাড়ি।
মুখ বুঝে সব সহ্য করি,
কাউকে কিছু বলতে না পারি।
কত বিভৎস নোংরা কদাকার,
সেই সব মুখ গুলো,
আমি আজও ভয়ে শিউরে উঠি।


আমার কিশোরী বেলার সেই সব স্মৃতি,
আজও মনে পড়লে কেঁদে উঠি।
আমার মতো রয়েছে এমনি,
সারা বাংলার অনেক কিশোরী।
যারা পারে না সইতে কিছু,
বলতে পারে না মুখে কিছু,
রয় যে তারা সয সময়ই ভীতু,
কে কখন নেয় তাদের পিছু।


সেই সব কিশোরীর বেড়ে উঠা,
থাকে পুরুষের প্রতি শুধুই ঘৃণা।
অসুস্থ চিন্তায় নগ্নতার ছায়া,
অনেকেই তারা হারিয়ে যায়।
তারা তো তারাই,
যারা আমাদের সন্তান,
তারা তো তারাই,
যারা করবে আগামীকে নির্মান।
একটি চারা যেমন দরকার একটি খুটি,
একটি কিশোরীর দরকার নিচে শক্ত মাটি
পরিবার কে হতে হবে আরোও আন্তরিক রাখতে হবে তাদের চোখ এদিক ওদিক।
বুঝতে হবে তাদেরকে তাদের মতো করে তারা যেন কখনো কোথাও ভুল না করে।


একটি কিশোরী একটি বালিকা,
হবে একদিন সে একজন গর্বিত মা।
আমাদের ভালবাসা দেবো বাড়িয়ে,
নয় তা নগ্নতা শুধুই ভালবাসা।
বেড়ে উঠবে সে হেসে খেলে,
প্রজাপতির মতো দুটি পাখা মেলে।
29-06-2013