আসলে তার নাম ঠিকানা প্রকাশ করতে তিনি রাজি না থাকায়-এ গল্পে তার নাম দিয়েছি শান্তি,মূলত বয়স এখন তেত্রিশ। কিন্তু তিনি যেন সেই ষোল বয়েসের যুবতি। বাকি টুকুন নিজেই চিন্তা করুন,ষোল বয়েসে তাহলে কেমন ছিলেন তিনি। আজ থেকে বিশ বছর যাবৎ তার পাশের গ্রামের এক ছেলের সাথে সংসার করছে। শশুর-শাশুড়ি নিজের মেয়ের মতই আদর যত্নে রাখে। যেমন সন্দুরি,তেমনই আচরন-ব্যাবহার! স্বামির আর্থিক অবস্থা দূরবল হলেও তাকে কখনো খাওয়ায় ও বাহারি কাপড় পরিদানে কমতি রাখেনা। বর্তমানে কোনো মেয়ে না'থাকলেও,১৮ ও ১৩ বছর বয়সী দুজন ছেলে আছে! শশুড়-শাশুড়ীর আদর,স্বামীর  ভালোবাসা আর সন্তানের মমতা মেখে ভালোই চলছে তার সংসার জীবন। কিন্তু পিছেনে ঘটে যাওয়া-হঠাৎ একদিনের সামান্য একটি ভুলে তার জীবনটা উল্টো স্রোতে বাসতে শুরু করেছে।


২০ বছর আগের কথা,বিয়ের পর গ্রামে শশুড় শাশুড়ি আর স্বামীকে নিয়ে ২টি বছর আনন্দে কাটলেও। বড় ছেলে জন্ম নেওয়ার ছয় মাস পরেই শহরে চলে আসে তারা। সেটি ছিলো ২০০১ইং সনের দিকে। শহরে এসে তার স্বামী দৈনিক উপার্জনের একটি কাজ পেলেও। তাতে যে টাকা আসে তা দিয়ে কিছু মতো স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে থাকা খাওয়ায় শেষ হয়ে যায়। তাবুও হাল ছাড়েনি,ছেলেকে নিয়ে ঘসে মেজে বেশ ভালোই চলছে সংসার। এর পাচ বছর পর জন্ম হয় ছোট ছেলের। তার স্বামীর রোজগারটা অল্প হলেও,তারা সুখে শান্তিতে আনন্দেই দিন কাটায়। প্রতি বছর দুই বার গ্রামে যায়। শুধু সেই দুই ঈদের সময়। এবার ছোট ছেলের বয়স পাঁচ পেরিয়ে যাছে।ব


পাঁচ বছর পর ছেলে দুজন তববনখন বেশ ভালোই বড় হয়েছে,আর্থিক সংকটে থাকায় ছেলে দুজনকে প্রাথমিক শিক্ষাটাও শুরু করাতে পারেনী। শহরের চার দেয়ালের মাঝে বন্দি থেকেও,সারাদিন মা-ছেলে হাসি আনন্দেই কাটায়। তারই ফাকে সেবারও সন্তানদের সাথে নিয়ে গ্রামে আসে তারা। এবার গ্রামে এসেই শুনতে পারে তার পাশের বাড়ির এক মেয়ের প্রেম করে বিয়ে হয়েছে। একদিন সেই মেয়ে ছেলে দুজনেই তাদের বাড়ি এসেছে,মেয়েটির তুলনায় ছেলেটি ছিলো অনেক স্মার্ট ও সুন্দর। তাই মেয়েটিকে দেখেই শান্তি বলে উঠে;"এমন মেয়ে কি সুন্দর ছেলের সাথে প্রেম করেছে!" কথাটা শোনে শান্তির স্বামী তারদিকে একটু চোখ লাল করে তাকিয়ে থাকে। সন্ধায় একটু রাগি মাথায় তাকে বলে;"বিকেলে ওমন কথা বললি কেনরে-ঐ ছেলেরে তোর মনে ধরছে নাকি?"
অথচ আগে কখনই শান্তিকে "তুই" করে বলেনি। শান্তি কিছু না বলেই অন্য কজে চলে যায়। সেই একটি কথা থেকে শুরু শান্তির কষ্ট; রাতে ঘুমাতে গেলে বিছানায় ঘুমাতে দেয়না,মনের কষ্ঠটা মনেই লুকিয়ে-মেজেতে রাত কাটায় শান্তি। সকালে খাবার খেতে বসলে শান্তিকে এড়িয়ে চলে তার স্বামী,তার হাতের রান্না ভালো লাগেনা,গরম ডাউলের পাতিল তার পায়ের উপর ছুড়ে মারে-নিমিশেই ঝলশে যায় দু-পা। এবার আর লুকিয়ে রাখতে পারেনা। তার চিৎকারে ছুটে আসে শাশুড়ি ও প্রতিবেশীগন;"কেন বউমাকে এমন আঘাত করলি?" এ প্রশ্নের জবাব না দিয়েই,খালি পেটে বাড়ী থেকে বেরিয়ে যায় শান্তির স্বামী। শশুড়-শাশুড়ী তাকে অনেক যত্নে রাখলেও,সেই থেকে দিনের পর দিন এভাবেই তাকে নানান অত্যাচার করে তার স্বামী,যা পরে শুধরে যাবে বলে নিরবে সহে যায় শান্তি।


কিছুদিন পর আবার শহরে চলে আসে তারা। কিন্তু এবার তাদের মাঝে যেন ধন্দ লেগেই থাকে। আগের মতো আর ডাল ভাত খেয়েই শান্তি শান্তিতে ঘুমাতে পারেনা না। তার স্বামী আর আগের মতো ভাল বাসার আচরণ করেনা। বরং এটা ভুল হয়েছে-ওটা ভুল হয়েছে,ভিন্ন অভিযুগে বিসরি সব গালাগালি করে শান্তিকে। শুধু গালাগালি করেই শান্ত হয়না,কিছু হতে নাহতেই গায়ে হাত তুলে। তার কিছুদিন পর শান্তিকে সেই শহরের একটি গার্মেন্টসে ভর্তি  করে দেয়। তাদের ভাসা থেকে গার্মেন্টসে পাঁচ মিনিট হেটে যেতে সময় লাগে। যেখানে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কাজ করে। আবার ভাসায় গিয়ে রান্না সহ সমস্ত কাজ শেষ করতে হয় তার। কোনো কাজে একটু ভুল হলেই বেল খুলে পিটায় তার স্বামী। ধিরে ধিরে নেশাও করতে শুরু করে। রাতে নেশা করে এসে সিগারেটের আগুন ঘাড়ে চেপে ধরে। এভাবে অসহনশীল অত্যাচার চালিয়ে যায় শান্তির উপর। কিছুদিন পর গ্রাম থেকে শান্তির বাবা আসে,এসে দেখে; বোটি দা ছুরে মারায়-তার বাম কাধে একটি জখম হয়ে আছে। প্রাথমিক ভাবে দাওয়াই লাগিয়ে রেখেচছে। সেবার তার বাবা আর সয়তে পারেনা,তাকে নিয়ে চলে যায় নিজ গ্রামে। কিন্তু কয়েক দিন পর যখন তার স্বামী তাকে নিতে যায়,তার বাবা-মা আসতে নিষেদ করলেও-তিনি স্বামীর সাথে চলে আসে শহরে। কয় এক দিন যেতে না যেতেই আবার একই রকম অত্যাচার। শুধু একটিই প্রশ্ন;"ঐ ছেলেরে তর মনে দরেছে নাকি।" এভাবে চার-পাচ মাস চলে যায় এখন মাদক দ্রব্য ভাসাতেই নিয়ে এসে খায়। কিছু বলতে গেলেই লাঠিপিটা করে আর নুংড়া সব গালি দেয়। এবার সে নিজেই জিত বেধেছে; "আর থাকবনা তার সংসারে-এতো যন্ত্রতা আর সহ্য হয় না।" নিজেই ছেলেদের নিয়ে গ্রামে চলে যায় শান্তি। কিন্তু কিছুদিন পর তার স্বামী যখন নিতে আসে তিনি আর থাকতে পারেনা,সব যন্ত্রণা ভুলে তার স্বামীর সাথে চলে আসে। আবারও ভালোই চলছিল তার সংসার,মনে করে ছিলো সেইসব শুধরে গেছে। কিন্তু না,সারাক্ষণ সেই একটি প্রশ্নের উপরেই নানান নির্যাতন চালিয়ে যায়। তিন-চার মাস পর আরও একবার চলে যায় যখন তিনি সয়তে পরেনা। সেবার যেন আর তার স্বামীর সাথে না আসে তার জন্য তার বাবা মা ভাই সকলে ভালো করে বুজাই। অবশেষে এ কথাও বলেন;"তুই যদি আবার তোর স্বামীর সাথে যাস,তোর সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক থাকবে না।" কিন্তু তাদের কথা শোনেই না, ববরং তিনি আরো বলে;"যত কষ্টই দেখ সে যে আমার স্বামী-আমার বেহেস্ত।" বাবা মা সকলকে ত্যাগ করে স্বামীর সাথেই চলে আসে। এতো যন্ত্রণার মাজেও স্বামীকে ছাড়েনা। বরং গার্মেন্টসে কাজ করে টাকা এনে স্বামীকে দেয়। সেই টাকা থেকে বছরে একটা শাড়ীও কখনো কিনে দেয়না। সেই টাকা দিয়েই খাওয়া খরচো ভাসা ভাড়া ইত্যাদি খরচ যোগায়। তার স্বামী আগের মতো আর ঠিক ভাবে প্রতিদিন কাজও করেনা। যদিও কয় এক টাকা রোজগার করে,তা নিজে মাদকসেবন করেই শেষ করে। মাজে মাজে যখন কাজে না যায় তখন শান্তির কাছে টাকা চায় নেশার দ্রব্য কেনার জন্য। টাকা না দিলেই মাইর ধর করে,ঘরের জিনিস পত্র ভাংচুর করে। শান্তি সহ্য করতে না পেরে পাশের বাসার লোকদের থেকে কিছু টাকা এনে দেয়। এই ভাবে আরও চার বছর চলে যায়।


এবার অনেক টাকা ঋৃন ও কয় এক মাসের ভাসা ভাড়াও বাকী রয়েছে। দুপরে ভাসায় এসে কোনো খাবার না পেয়ে ঘরে কিছু হাড়ি পাতিল ছিল কুপিয়ে কুপিয়ে নষ্ট করেছে। শান্তি কিছু চিড়া মুরি খেতে দিলে না খেয়ে তাকে আরও ভান্ঙা পাতিল দিয়ে পিটায়। ব্যাথার যন্ত্রনায় শান্তি বলে;"কেন তুমি আমার সাথে এমন করো?"
তার স্বামী আরেকটা থাপ্পর মেরে বলে;"তোর কেমন ছেলে পছন্দ আমাকে দেখা,আমি নিজে তার হাতে তোরে তুলে দিবো!" অথচ তখন শান্তির দুজন ছেলে সন্তান,বড় ছেলের বয়স তখন ১৭।
তার স্বামী বন্ধুদের সাথে নিয়ে নিজের ঘরে বসে নেশা করে। একজন বন্ধু প্রায়ই শান্তির দিকে তাকিয়ে থাকতো,আর শান্তির সুন্দর্যে বেশ প্রশংসা করতো।
শান্তি সেটা বুজতে পেরে তার স্বামিকে কথাটা বলে দেয়। পরদিন তার স্বামী সকল বন্ধুকে বলে;"তোরা আমার ভাসায় এসে নেশা করস ভালো,আমার বউয়ের দিকে যদি কেউ তাকাস আমি তার চোখ তুলে ফেলবো।"
শান্তি ভেবেছিল তার স্বামী ভালো হয়ে গেছে কিন্ত কিছুদিন যেতে নাযেতেই আবার একই অত্যচার। শান্তি সব যন্ত্রনা সহে আসছে,মাজে মাজে যখন সহ্য করতে না পারে নিজিকে শেষ করে দিতে চায়। কিন্তু সেটিও করা হয়না তার মন বাধা দেয়;"আত্মহত্যা মহা পাপ- অপর দিকে দুজন সন্তান, তাদের কি হবে!"


কিছু দিন পর পরেই হাত ব,পা ব্যাথা,ঘুসি মেরে নাক বুু দেয়,ইত্যাদি ক্ষত নিয়ে গার্মেন্টসে আসে। কেউ জিঞ্জাসা করলেও বলেনা। আরো এটা সেটা বলে এড়িয়ে যায়। কারন তিনি জানেনু গার্মেন্টসে কর্মরত বেশির ভাগ মেয়েদের কোনোনা কোনো কষ্ট থেকেই থাকে। তাই নিজের কষ্ঠটা তাদের মাজে বলে তাদের  আর কষ্ঠ দিতে চাইনা।


এই তো সেদিন ০১/০৯/২০১৯ইং তারিখে ছোট ছেলেকেও গার্মেন্টসে ভর্তি করে দেয়,ছেলেটির বয়স ১৩ বছর-কাজে মন বসেনি সেদিনই চলে আসে। এই নিয়ে ছেলেকে বাবায় ইচ্ছা মতো মার দেয়। ঘরের জিনিসপত্রও ভাংচুর করে। এক পর্যায়ে চিরুনি দিয়ে মাথার উপর বাড়ি দিলে,তার মা বাধা দেয়। উলটো শান্তিকেই মারে; দুটো চিরুনি দিয়ে শান্তির চোখে মুখে আঘাত করে। দুই হাত দিয়ে তার গলা চেপে ধরে। শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল প্রায়,তার চিতকারে পাশের ভাসার লোকজন এসে ছাড়ানোর চেষ্টা করলে,তাদেরকেও ভান্ঙা কাচের টুকরো দিয়ে ভয় দেখায়। অনেক চেষ্ঠার পর ছাড়ায়। পর দিন গার্মেন্টসে আসলে সবাই দেখে শান্তির ডান চোখটা ফোলে জখম হয়ে আছে আছে। গলায় জখম হয়ে আছে। এবার আর কেউ ছাড় দেয়না, সকলে শোনতে চাই;"কী হয়েছে?"
আর সেদিনই সব খুলে বলে তার উল্লাসিত ভাবাপন্ন মনের ভিতরে লুকিয়ে থাকা দুখের কথা। কাথা গুলো বলার সময় তার চোখর পানি যেন অজড়ে জড়ছে! সাথে যারা শোনছে তারাও আর চোখর পানি আটকাতে পারেনি।


এখন তিনি বলেন;"আমি আর সয়তে পরছিনা,যদি কোন মহান মানুষ বলে দিতো; (আমি এখন কি করবো?) আমার দুখের ভাগি কি কেউ নেই,যার সামন্য উপদেশে আমার জীবনটা বদলেও যেতে পারে। এই যন্ত্রণার শাস্তি থেকে মুক্তি পেতাম। দয়া করে সকলে জানাবেন,এখন কী করবো আমি? সকলে আমার জন্য দোয়া করবেন।"