উত্তাল একাত্তর - স্বাধিকার সংগ্রাম
নিদারুণ দুর্বৃত্ত সময়, ভয়ঙ্কর রক্তক্ষরণ
ঘাতকের নিষ্ঠুরতায় জনিতার অকাল-প্রয়াণ
বজ্রাঘাতে বিধ্বস্ত জননী - বিষাদে ভাসে
অতলান্ত চোখের জল, হন্তারকেরা বড়ই অবিবেচক
সেকালের অরাজক নকশাল
মনুষ্য-বধে হস্তপ্রসারী, অজস্র হত্যা-খুনে পূর্ণ-অবাধ
আজো জানা হলোনা - মৃতের কি ছিল অপরাধ!
শুনেছি! ওরা নাকি চায় মানবতায় সাম্য আসুক
অথচ কী ভীষণ হিংস্র - ওরা মানবতার হন্তারক!


আমার মা ... !
সেই শুরু অহোরাত্রি সংগ্রাম
জীবন-জীবিকার লাগি
অমানুষিক প্রয়াস, প্রচেষ্টা অবিরাম
বন্ধু-সুহৃদ এড়ালো একে-একে
নিরন্তর অনটনে বিবর্ণ দহলিজ
অকূল পাথার, অসহায় নারী
মাঝ-সমুদ্রে এক হালভাঙ্গা জাহাজ
নিতুই অবহেলন, উপেখি স্বজন
সামর্থ্যের শেষ, পারলে ছিঁড়ে খায়
মুখোশ-আটা যে সুশীলজন
তবুও সচল অভিমুখগতি
নিঃসঙ্গ নিবারক জনিত্রী সকল প্রতিকূলতায়।


আঁচলে আগলে রাখি পঞ্চ-সন্ততি
বটবৃক্ষচ্ছায়া যেমন
অভিভাবিকা তিনি - পিতার মতন
পীড়িত অপত্যের শিয়রে বসি
রাত জাগি একাকী নিঃশব্দে সেবিকা
পার করে কত বিলাপহীন যামিনী
তিল-তিল সংগ্রাম, শত ঘাত-প্রতিঘাত
লভিছে শক্তি, গড়িছে বলিষ্ঠ প্রাণ
কভু সে ভাঙ্গেনি - প্রয়াস থামেনি।


পৃথগ্বিধা জন্মদাত্রী - পৃথ্বীমূলে প্রোথিত ‍অটল পর্বত
লিপ্সা-লালসে বিন্দুসম টলেনি
ব্যক্তিত্বে সুদীপ্ত সৌধ - নয় আত্মমান পরাহত
নীতিহীন অশুচিতায় কভু পরাভব মানেনি।


সুশিক্ষা বিলায়ে অপত্যে গড়ি নৈতিকতা
পরার্থপরতাই বড় সার্থকতা
সমৃদ্ধ-চিত্ত নিয়ে উদার আকাশ
আস্থাশীল-দৃঢ়প্রতিজ্ঞ স্বয়ম্ভর পারক
অবিচল-স্থিরতার মূর্ত-প্রকাশ
মধ্য গগনে প্রদীপ্ত পূর্ণশশী - পূর্ণিমা তিথির চাঁদ
এই বুঝি শেষ কষ্ট-অমানিশা
দিগন্ত-বিস্তারি প্রভাতী আলো, কালনিশির আঁধার কাটে
সত্বর ফুরাবে দুঃখ-তমসা।


হাল ধরি বড় ছেলে নব সংসার
আগমনী সুর বাজে অতিথ নবিস
কড়া নাড়ে দুয়ারে তৃপ্ত-অবসর
বসন্তের নব-ভোর-প্রভা স্নিগ্ধ পরশ
ত্বরায়ে ধরা দিবে প্রশান্তি অপার
কিন্তু হায়! হতভাগী জননী, দুঃখ-সারথি
কষ্টে গড়া জীবন - সয়নাকো সুখ
বক্ষে ভারী পাষাণ স্তূপ চাপি দীর্ঘতর
শেষ হয়েও শেষ - হয়নাকো দুখ।


মা আমার! জীবনাবধি সংগ্রাম অবিশ্রান্ত
বৈরিকাল-পর তব অশেষ পরিশ্রান্ত
আজীবন কাটে কষ্ট-তরী বায়
মৃত্যুবধি সুখের নাগাল না পায়
সহসা মরণব্যাধির ভীষণ আঘাত
মস্তিষ্কে রক্তপাত, চলত-শক্তিহীন নিঃসাড়
বাসা-বাধে সর্বাঙ্গে দুঃসহ-পক্ষাঘাত
অতি-অসহন বহ্নিদহন - সুস্থতা না পায়
জীবনবৃক্ষ-সার কুরে কুরে খায়
বেলা হলো অবশেষ – মৃত্যুযন্ত্রণা-কাতর
আপনজনাকে ডাকি - একটি নজর
অশ্রুধারা অবিরাম - নয়নযুগল
সহজ-সরল পথ নয়তো বিফল
মুখে নিয়ে কলেমা - হয় পরবাস
হে খোদা! মা-কে দিও জান্নাতবাস।


বুক-ভরা নিতল আক্ষেপ - পাথরচাপা কষ্ট
মা-কে পেয়েও পারিনি সেবিতে
ব্যর্থ-হতাশ আমি – দুর্ভাগা-দুরদৃষ্ট
আজি যখন সঙ্গতি দিল মোরে ধরা
এ ধরণীতে মা নেই, তব হতভাগা - অদৃষ্টহারা
মা আমার আদর্শ - মহনীয়া, প্রেরণা চিরকাল
মমতার স্পর্শ বোলায় আজো বুভুক্ষিত অন্তরতল।


ফিরোজ, সিদ্ধেশ্বরী, ২৩/০১/২০১৫


কিছু টুকরো-টুকরো স্মৃতি হতে লিখিত আমার দুখিনী মায়ের জীবনালেখ্য।