সহসা দর্শক কাতার হতে গুঞ্জন ওঠে
থামুন! হে সদাশয়
অন্তরে এক ব্যাকুলিত প্রশ্ন নিরত্যয়
থেমে গেলেন মহান বক্তা, জনসমুদ্রে যার ভাষণ মধুময়
বক্তা সম্মতির সুরে বলেন, জি! বলুন হে মহাশয়।
শ্রোতা শুধায় - প্রায় দশ বছর আগে
পথের মাঝে সুরাবিষ্ট দেখেছিলাম আপনায়
কোন পরিমোক্ষণ! কী সে যোজনা!
সুরা ছাড়ি হেথায় এলেন আপনা।


বক্তা ক্ষণকাল মাথা নীচু করে থাকে নিশ্চুপ
অতঃপর করে নিবেদন
জি মহাশয়! আমিই সেই আত্মহারা-মদ্যপ
বন্ধ ছিল সব পানশালা, সে রাত ছিল কদর
এক দোকানি হতে অনেক মিনতি পর
কিনেছিনু এক পূর্ণ-সুরাপাত্র এক শর্তে তার
কুলায় ফিরে হতে হবে মদালসে বিভোর।


গৃহে ফিরে দেখি সালাতে মগ্ন দয়িতা
নিজ কক্ষে যাই, টেবিলে সে সুরাপাত্র রাখি
অকস্মাৎ দৌড়ে এলো ত্রৈবর্ষিক দুহিতা
ধাক্কা খেলো টেবিলে, ভেঙ্গে গেল সুরাধার
খিলখিল হাসি শেষ হয়না অবুঝ মেয়ের
ভাঙ্গাপাত্র ফেলে নিদ্রিত হলাম সে-বার
সে রজনী কেটেছিল সুরাবিহীন আমার।


এক বছর বাদ ফের এলো মহিমান্বিত লাইলাতুল কদর
পূর্ণ-সুরাপাত্র নিয়ে এলাম ঘরে পুনর্বার
টেবিলে রাখি, সহসা দৃষ্টি পড়ে সে পাত্রের উপর
কান্নায় বুক ভাঙ্গে মোর
তিন মাস হলো কন্যা ত্যাজিছে মায়া এ ধরণীর
সুরাপাত্র বাইরে ফেলি, তন্দ্রালসে ঘুমিয়ে পড়ি
স্বপ্নাবিষ্ট সে রাত আমার সম্বিত দিল ফিরি।


সে নিশীথে এক স্বপ্ন দেখি ...
বিস্মিত বড় - ভীষণ মোটা এক সাপ তাড়া করছে আমায়
দিশেহারা আমি, ভয়ে দৌড়াই - শুধু দৌড়াই
হঠাৎ, এক দুর্বল বৃদ্ধের দেখা মিললো সেথায়
অতিশয় ক্লান্ত হয়ে তারই মদত চাই
কিন্তু বৃদ্ধ বলে সে অতি দুর্বল, ক্ষুধার্ত ও নিরুপায়
অথচ সাপ খুবই বলবান, তাই সে অসহায়
বরং তুমি ঐ পাহাড়ের ডানে যাও উঠি
তার কথামতো আমি পাহাড় পানে ছুটি
ধেয়ে আসে পশ্চাতে ভয়ঙ্কর এক সাপ
আর সম্মুখে - পাহাড়ের পরে বিশাল অগ্নিকুণ্ড
দাউদাউ জ্বলে, সে-কী ভীষণ উত্তাপ!


আমি ভীত হয়ে পাহাড়ের ডান দিকে যাই ছুটি
চোখে আসে এক বিশাল সুদৃশ্য উদ্যান
সেথায় শিশুরা খেলছে লুটোপুটি
উদ্যানের প্রহরী শিশুদের ডেকে কয়
তোমরা দেখতো লোকটিকে, তাকে সাপে ধরবে
না-হয় সে অগ্নিতে হবে ক্ষয়
প্রহরীর ডাকে শিশুরা আসে এগিয়ে
তাদের মাঝে আমার ছোট্ট সেই সে মেয়ে।


মেয়েটি আমার ডানহাত ধরে জড়িয়ে
বা-হাতে সাপটিকে করে চপেটাঘাত
সাপটি ভয়ে থর-থর, ত্বরিত যায় পালিয়ে
আমি বিষ্ময়ে হতবাক, মা! তুমি ছোট্ট মেয়ে
অথচ সাপ কত বড়, কেন ভয় পেলো তোমায়!
ছোট্ট মা আমার সাড়া দেয়
আমি যে জান্নাতি মেয়ে, তাই সাপের এত ভয়।


বাবা ... ! তুমি বুঝেছ কি ঐ সাপের স্বরূপ?
না ... তো মা! বাবা, ও-যে তোমার নফস্‌
এত বেশী রসদ দিয়েছো তাকে, সে আজ বলবান এরূপ
তোমায় তাড়িয়ে এনেছে ঐ জাহান্নামের সমীপ
বাবা ... ! তুমি কি জান পথের সে বৃদ্ধ কে?
এখানে আসার পথ দেখিয়েছে তোমাকে
না ... তো মা! বাবা, সে-যে তোমার রুহ্‌
তাকে-তো তুমি দাওনি আহার যথার্থ
তাই আজ সে এত দুর্বল আর ক্ষুধার্ত।


ঘুম ভেঙ্গে গেল, চোখ মুদলেই এখনো ভাসে
রুহের বিশীর্ণ দেহ, সেকি ভয়ঙ্কর নফস্‌ - ভীষণ কদাকার
সেই থেকে রুহের রসদ লাগি আমার ব্যগ্রতা অপার
সদা ব্যাপৃত থাকি বর্জনে নফসের যত আহার
আমি কাঁদি, শুধু ক্ষমা চাই, আমি মালিক বিন দিনার।


(ইতিহাসের সাধক মালিক বিন দিনারের ঘটনা অবলম্বনে)


ফিরোজ, সিদ্ধেশ্বরী, ০৭/০৯/২০১৫