হঠাৎ কোত্থেকে বলা নেই কওয়া নেই অসংখ্য শকুন
উড়ে এসে জুড়ে বসলো বস্তির খুব কাছে। পুরো জায়গা
কালো আসমানের বিরাট এক অংশ হয়ে প্রতিভাত সব
পথিকের দৃষ্টিতে। একজন বুড়োসুড়ো লোক টলতে টলতে
ভুলক্রমে প্রায় শকুনের ঝাঁকের গা ঘেঁসে হেঁটে যাওয়ার ক্ষণে
মুখ থুবড়ে পড়ে গেলো মাটিতে।
অবসন্ন, প্রায়-অচেতন বৃদ্ধটিকে ছেঁকে ধরলো শকুনের
পাল। ওদের হিংস্র, তীক্ষ্ণ ঠোকর মানুষের মাংসের ঘ্রাণ
আরও বেশি লোভাতুর এবং ক্ষুধার্ত করে তুললো। শকুনের পালের
হামলা বৃদ্ধকে বড় বেশি কাতর করে তোলে। লোকটি হিংস্র
চঞ্চুগুলোর হামলা থেকে রেহাই পাওয়ার তীব্র বাসনায়
গা ঝাড়া দিয়ে উঠতে চায়। শীর্ণ হাত দু’টো দিয়ে জাঁহাবাজ
শকুনদের ক্ষুধার্ত, আক্রমণাত্মক ঠোঁট বড় বেশি
তেজী, মাংসলোভী হয়ে ওঠে।


বৃদ্ধটি নিজের দু’টি হাতকেই বড় বেশি জখমি, ছেঁড়া খোঁড়া
হতে দেয় নিরুপায় হয়ে। কয়েকবার কোনও কোনও শকুনের
টুঁটি চেপে ধরে, ছিঁড়ে ফেলতে চায় হিংস্র আক্রমণকারীদের
মুণ্ডু, ছুড়ে ফেলার তীব্র বাসনায় জ্বলে ওঠে বারুদের মতো, কিন্তু
অবসন্ন শরীর তাকে মাটিতে চেপে ধরে, শকুনের পাল তার
ওপর সওয়ার হয় ভয়ঙ্কর হিংস্রতায়। কিছুক্ষণ পর
শকুনের পাল সরে আসে কিয়দ্দূরে। ওদের ছেড়ে-আসা
জায়গায় পড়ে থাকে কয়েকটি মানবিক হাড়।


জ্যোৎস্নারাতে বুড়োর হাড়গুলো সজীব, সুন্দর হয়ে
একজন অপরূপ মানব হয়ে আসমানে ভাসে।


  (গোরস্থানে কোকিলের করুণ আহবান কাব্যগ্রন্থ)