ডাহুক তার গলার ভেতর রাত্রিকে খানিক খেলিয়ে, খানিক
বাজাতে বাজাতে নিজের ভেতর স্থির হয়। ডাহুক গহনতায়
ডুব দিতে থাকে ক্রমাগত; ডাহুকের পালকগুলো রাত্রি
হয়ে ওঠে। রাত্রিময়তা রাত্রিকে স্পর্শ করে ডাহুককণ্ঠে।
ডাহুক আমাকে দেয় রাত্রি, যেমন সাকী ভরে তোলে সুরাপায়ীর পাত্র।
রাত্রি এমন এক প্রহরে প্রবেশ করে, যখন রাত্রি, ডাহুক আর এই আমার
মধ্যে কোনও ভেদচিহ্ন থাকে না। ডাহুক ফোঁটা ফোঁটা আঙুরের রস হয়ে
ঝরে, হয়ে যায় বিন্দু বিন্দু সুর।


ডাহুকের সুর আমাকে বহুদূর নিয়ে যায় ভিন্ন এক দৃশ্যের ভিতরে।
কে সেখানে দাঁড়িয়ে? তিন মাথা-অলা ভয়ঙ্কর এক প্রাণী দাঁড়ানো
আমার সামনে। গায়ক পাখিদের চিরশক্র এই প্রাণীর চারপাশে
ছড়ানো অনেক রক্তাক্ত পালক, বহু পাখির ছিন্ন মুণ্ডু, অর্ধভুক্ত যকৃৎ,
প্লীহা। আর কী অবাক কাণ্ড, সেই ভয়ঙ্কর প্রাণীর আমিষাশী
দন্ত-নখরের নাছোড় হিংস্রতাকে ফাঁকি দিয়ে এক দ্যুতিময়
পাখির কী তন্ময় উড়াল, সপ্ত সিন্ধু দিগন্তে অন্তহীন
প্রকৃতি-মাতানো কী গান!


   (মেঘলোকে মনোজ নিবাস কাব্যগ্রন্থ)