শামসুর রাহমান-এর কবিতাwww.bangla-kobita.com ওয়েবসাইটে শামসুর রাহমান-এর প্রকাশিত কবিতাসমূহ।uuid:2782cc4c-711d-4403-b8f7-50c47540831c;id=11282024-03-28T22:31:05Zhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/bobecona/বিবেচনা 2024-03-11T03:44:57-04:002024-03-11T04:02:54-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>সেদিনও কি এমনি অক্লান্ত ঝরঝর বৃষ্টি হবে এ শহরে?<br />ঘিনঘিনে কাদা জমবে গলির মোড়ে সেদিনও কি এমনি,<br />যেদিন থাকব প'ড়ে খাটে নিশ্চেতন, নির্বিকার, মৃত?</p>
<br /><p>আলনায় খুব সহজে থাকবে ঝুলে সাদা জামা। <br />বোতামের ঘরগুলো যেন করোটির চোখ, মানে কালোর গহ্বর। <br />জুতো জোড়া রইবে প'ড়ে এক কোণে, যমজ কবর। কবিতার খাতা নগ্ন নারীর মতোই চিৎ হয়ে উদর দেখিয়ে টেবিলে থাকবে শুয়ে আর দেয়ালের টিকটিকি প্রকাশ্যেই করবে সঙ্গম।</p>
<br /><p>হয়তো কাঁদবে কেউ, আশা করা যেতে পারে; আত্মীয়-স্বজন কেউ কেউ শোকে ধোবে সত্তা। <br />ঘরে পুড়বে আগরবাতি আর কোরানের পূণ্য সব আয়াতে আয়াতে হবে গুঞ্জরিত চতুষ্কোণ। <br />বাজারে ছুটবে কেউ চাটাই, বাঁশের খোঁজে; <br /> কেউবা ফুঁকবে সিগারেট ঘন-ঘন, কেউ মৃদু বলবে <br /> অদূরে, প্রতিবেশী একজন : ‘লোকটা নাস্তিক ছিল, শরিয়তে মোটেই ছিল না মন, মসজিদে তার সাথে <br /> কখনো হয়নি দেখা,<br />এবং নিষিদ্ধ দ্রব্যে ছিল তার উৎসাহ প্রচুর।<br />কিন্তু তবু কেন জানি বাস্তবিক কখনো ভুলেও<br />পারিনি করতে ঘেন্না তাকে।<br />মারেনি লাঠির বাড়ি মাথায় কারুর কোনো দিন, <br /> উপরন্তু ছিল সদালাপী।'</p>
<br /><p>যেদিন মরব আমি, সেদিন কি বার হবে, বলা মুশকিল।<br />শুক্রবার? বুধবার? শনিবার? নাকি রবিবার?<br />যেবারই হোক,<br />সেদিন বর্ষায় যেন না ভেজে শহর, যেন ঘিনঘিনে কাদা না জমে গলির মোড়ে। <br />সেদিন ভাসলে পথঘাট,<br />পুণ্যবান শবানুগামীরা বড় বিরক্ত হবেন।</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/podotag/পদত্যাগ2024-02-18T13:01:41-05:002024-02-18T13:01:41-05:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>একটি হরিণ আজ হয়েছে নিখোঁজ<br />একটি যুবতী আজ হয়েছে বিধবা<br />ডোরাকাটা বাঘ তুমি পদত্যাগ করো।<br />একটি মায়ের বুক হয়েছে ব্যাকুল,<br />কিশোর ফেরেনি ঘরে, জ্বলেনি সন্ধ্যার বাতি আজ;<br />নেকড়ে তোমার<br />পদত্যাগ চাই।<br />একটি শহর আজ কালকূটে নীল,<br />বিষধর সাপ তোর পদত্যাগ চাই।</p>
<br /><p>১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৩<br />(অপ্রকাশিত/অগ্রন্থিত কবিতা)</p>
<br /><p>==========================<br />('পদত্যাগ’ কবিতিকার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে বলতে হবে, এটি লেখার আগের দিন ঢাকায় ছাত্র-পুলিশ সংঘর্ষ ও সান্ধ্য আইন জারি হয়। বন্ধ ঘোষণা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পরদিন ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রামের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে সান্ধ্য আইনের কড়াকড়ি করা হয়। কবিতিকাটি পড়ে বোঝা যায়, স্বৈরাচারী এরশাদের রাষ্ট্রপতি পদ থেকে পদত্যাগের দাবিই এটি লেখার মূল অনুপ্রেরণা। কবিতাটিতে সমকালীন বানানরীতি অনুসৃত হয়েছে।</p>
<br /><p>১৪ই ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইন'স ডে হিসাবে সারা বিশ্বে পরিচিত হলেও, বাংলাদেশের ইতিহাসে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ১৯৮৩ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি। অনেকে এই দিনটিকে পালন করেন 'স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস' হিসাবে।</p>
<br /><p>এই দিনেই সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে শুরু হয় ছাত্র আন্দোলন, কালক্রমে যেটি গণআন্দোলনে রূপ নিয়েছিল।</p>
<br /><p>তখন জেনারেল এরশাদের সামরিক সরকারের বিতর্কিত শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা প্রতিরোধ গড়ে তোলে।</p>
<br /><p>তখনকার শিক্ষামন্ত্রী ড. মজিদ খান ১৯৮২ সালের ২৩শে সেপ্টেম্বর একটি নতুন শিক্ষানীতির প্রস্তাব করেন। সেখানে প্রথম শ্রেণী থেকেই আরবি ও দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে ইংরেজি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়। উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য মাপকাঠি করা হয় মেধা অথবা পঞ্চাশ শতাংশ ব্যয়ভার বহনের ক্ষমতা।</p>
<br /><p>এই নীতি ঘোষণার পর থেকেই আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৮৩ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারিতে স্মারকলিপি দিতে শিক্ষার্থীরা মিছিল করে সচিবালয়ের দিকে যাবার সময় পুলিশ গুলি চালায়। এতে জয়নাল ও দীপালি সাহা সহ নিহত হন অন্তত ১০জন। </p>
<br /><p>১৪ ফেব্রুয়ারি সকালে মজিদ খানের শিক্ষানীতি প্রত্যাহার, বন্দীদের মুক্তি, গণমুখী, বিজ্ঞানভিত্তিক ও অসাম্প্রদায়িক শিক্ষানীতির দাবিতে আয়োজিত কর্মসূচিতে হাজার হাজার শিক্ষার্থী শান্তিপূর্ণ মিছিল নিয়ে সচিবালয়ের দিকে এগিয়ে যান। মিছিলটি হাইকোর্ট এলাকায় গিয়ে ব্যারিকেডের কারণে থেমে যায়। </p>
<br /><p>সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতারা যখন তারের উপর দাঁড়িয়ে বক্তব্য শুরু করেন, তখন পুলিশ গরম পানি ছিটাতে শুরু করে। লাঠিচার্জ ও টিয়ার শেল নিক্ষেপও শুরু করে পুলিশ। ছাত্ররা এ সময় ইট-পাটকেল ছুড়লে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। গোটা এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় পুলিশের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন জয়নাল নামের এক শিক্ষার্থী। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মারতে থাকে পুলিশ। এক পর্যায়ে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।</p>
<br /><p>গুলির সময় প্রাণ বাঁচাতে ছাত্ররা আশ্রয় নেন পাশের শিশু একাডেমিতে। সেখানে চলছিল শিশুদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কিন্তু তাতেও পুলিশ থামেনি। পুলিশের গুলিতে এ সময় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে আসা শিশু দীপালি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। অন্য শিশু ও অভিভাবকদের ওপরও পুলিশ লাঠিচার্জ চালায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আহতদের চিকিৎসার জন্য অ্যাম্বুলেন্স পাঠাতে চাইলেও পুলিশ ঢুকতে দেয়নি। এর মধ্যে ছাত্রদের লাশ গুম করে ফেলে পুলিশ।</p>
<br /><p>এদিকে জয়নালের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর ফুঁসে উঠেন ছাত্ররা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার্থী জয়নালকে শেষ বিদায় জানাতে ছাত্র-শিক্ষক, জনতার ঢল নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায়। জানাজায় অংশ নিতে আসা শিক্ষার্থীদের উপর ফের হামলা চালানো শুরু করে পুলিশ ও বিডিআরের যৌথ বাহিনী। অপরাজেয় বাংলার পাদদেশের সমাবেশ থেকে গণহারে শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করতে শুরু করে তারা। শিক্ষার্থীরা প্রতিরোধ করতে গেলে লাঠিচার্জ শুরু করে যৌথবাহিনী।</p>
<br /><p>আক্রমণ থেকে রেহাই পেতে এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা কলাভবন ও উপাচার্যের কার্যালয়ে ঢুকলে তাদের টেনে বের করে পিটিয়ে ট্রাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। জয়নালের লাশের সন্ধানে পুলিশ নির্বিচারে লাঠিচার্জ করেছিল চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীদের ওপর। কেবল সরকারি হিসেব মতেই এদিন ১ হাজার ৩৩১ জন ছাত্রকে গ্রেপ্তার করা হয়।</p>
<br /><p>পরদিন ১৫ ফেব্রুয়ারি জগন্নাথ কলেজের সামনে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করে ২ তরুণকে। তেজগাঁওয়ের ঢাকা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের ২ ছাত্রকে ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করা হয়। সদরঘাটে এক শিশুকে বেয়নেট দিয়ে হত্যা করা হয়। এই আন্দোলনের ছোঁয়া লেগেছিল চট্টগ্রামেও। সেখানে পুলিশের গুলিতে শহীদ হয়েছিলেন কাঞ্চন নামের একজন।</p>
<br /><p>এসবের প্রতিবাদে ১৫ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররা রাস্তায় নেমে আসেন। ঢাকার নানা এলাকায় পুলিশের সেঙ্গে চলে দিনভর তুমুল সংঘর্ষ। চট্টগ্রামে শহীদ হন মোজাম্মেল নামের এক ছাত্র। এক পর্যায়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়।</p>
<br /><p>১৪ এবং ১৫ ফেব্রুয়ারি মোট কতজন শহীদ হয়েছিলেন, তা আজও অজানা। তবে জাফর, জয়নাল, দীপালী, আইয়ুব, ফারুক, কাঞ্চনসহ বেশ কয়েকজনের নাম জানা যায়। এদিন সব লাশই গুম করেছিল এরশাদের পেটোয়া বাহিনী। </p>
<br /><p>ব্যাপক আন্দোলনের মুখে ১৭ ফেব্রুয়ারি সামরিক প্রশাসক হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ বলেন, 'জনগণের রায় ছাড়া শিক্ষা সম্পর্কে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না।' এক প্রেস নোটে বলা হয়, আটক ১ হাজার ২২১ জনকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। পরে ১৮ ফেব্রুয়ারি শিক্ষানীতি স্থগিত করে এরশাদ সরকার।</p>
<br /><p>উল্লেখ, শামসুর রাহমান ১৯৮৭ সালে এরশাদের স্বৈরশাসনের প্রতিবাদে দৈনিক বাংলার প্রধান সম্পাদকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। ১৯৮৭ থেকে পরবর্তী চার বছরের তিনি প্রথম বছরে ‘শৃঙ্খল মুক্তির কবিতা’, দ্বিতীয় বছরে ‘স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে কবিতা’, তৃতীয় বছরে ‘সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কবিতা’ এবং চতুর্থ বছরে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কবিতা’ লেখেন। ১৯৯১ সালে এরশাদের পতনের পর লেখেন ‘গণতন্ত্রের পক্ষে কবিতা।’ তথ্যঋণ : বিবিসি বাংলা, প্রথম আলো, দ্যা ডেইলি স্টার।</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/je-ondho-shundori-kade/যে অন্ধ সুন্দরী কাঁদে2023-01-29T16:21:43-05:002024-01-26T08:25:42-05:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>যে অন্ধ সুন্দরী কাঁদে রাত্রিদিন আমার নিঝুম<br />বুকের কন্দরে একাকিনী,<br />তাকে চিনি বলে মনে হয়। অনিন্দ্য কুসুম ঝরে<br />তার চুলে মধ্যরাতে, সকল সময়<br />হাটুতে থুতনি রেখে বসে থাকে চুপচাপ, হাতে<br />গালের মসৃণ ত্বকে তার সুস্পষ্ট কান্নার ছাপ।</p>
<br /><p>সে অন্ধ সুন্দরী<br />ব্যথিত বন্দিনী আজ। তার পায়ে কোনো<br />প্রাচীন নূপুর নয়, লোহার শেকল বাজে প্রহরে প্রহরে<br />প্রতিষ্ঠিত অন্ধকারে। কোনোদিন কোনো<br />দৃশ্য তার চোখে পড়বে না, এ সহজ সত্যটুকু<br />সে নিয়েছে মেনে। কারা তার খুব কাছে<br />পাকায় জটিল ঘোঁট, ফাঁদ পাতে আর<br />অকস্মাৎ খাপ থেকে খোলে তরবারি<br />নিঃশব্দে, এবং করে তাক<br />গোপন বন্দুক, সে দেখতে পাবে না কখনো কিছু।<br />অবশ্য হঠাৎ সে চমকে ওঠে কোনো কোনো শব্দ শুনে,<br />হাতড়ে বেড়ায়<br />নিজেরই বিষণ্ন ছায়া। কোথাও ইঁদুর আর ছুঁচো<br />পুরনো মাটির স্বাদে করে ছোটাছুটি,<br />হয়তো-বা বাদুড় ঝুলে থাকে ঘুণেখাওয়া কড়িকাঠে;<br />সে চমকে ওঠে<br />নিজের পায়ের শেকলের<br />ঈষৎ ঝংকারে বারে বারে।</p>
<br /><p>কখনো কখনো এক বিদঘুটে প্রবীণ জল্লাদ<br />দর্পণ দেখাতে নিয়ে আসে সেই অন্ধ সুন্দরীকে।<br />দর্পণের গায়ে হাত বুলোতে বুলোতে<br />রূপসী বন্দিনী<br />শাদা মার্বেলের মতো চোখে মেলে ধূধূ চেয়ে থাকে<br />অপ্রস্তুত এবং বিব্রত। বিদঘুটে<br />প্রবীণ জল্লাদ হো হো হেসে ওঠে, যেন<br />প্রচণ্ড তামাশা দেখে ফেলেছে সে বন্ধ কুঠরিতে<br />অবেলায়। কখনো শানায় অস্ত্র, কখনো বা নিছক হেলায়<br />গলা টিপে হত্যা<br />করার খেলায় মানে অভিনয়ে মাতে<br />যাত্রার খুনীর মতো। তারপর বিকট হাসিতে<br />কাঁপিয়ে সকল দিক হেলে দুলে করে সে প্রস্থান।</p>
<br /><p>যখন রাস্তায় আমি কোনো খাপছাড়া<br />তেজী তরুণকে দেখি হঠাৎ তখন<br />গাঁয়ে-কাঁটা দেওয়া অন্ধকারে<br />যে অন্ধ সুন্দরী কাঁদে আমার নিঝুম<br />বুকের কন্দরে তার পায়ের জটিল শেকলের<br />ঝংকার আমার মনে পড়ে যায়, মনে পড়ে যায়।</p>
<br /><p>(কাব্যগ্রন্থঃ যে অন্ধ সুন্দরী কাঁদে / প্রকাশকালঃ ১৯৮৪)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/mrittur-poreo/মৃত্যুর পরেও2023-01-29T16:02:22-05:002023-06-27T15:09:12-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>মৃত্যু মৎস্যশিকারীর মতো একদিন অতর্কিতে<br />ক্ষিপ্র গেঁথে নিয়ে যাবে আমাকে নিশ্চয় । এ-নশ্বর<br />শরীর বেবাক স্মৃতি অনুস্মৃতিসহ হবে নিশ্চিহ্ন ধূলিতে,<br />থাকবে পিছনে পড়ে জীবন-ঊর্মিল প্রিয় ঘর ।<br />রাত জেগে যে-কবিতা লিখেছি দু'চোখ রক্তজবা<br />করে তার ধ্বনিপুঞ্জ, প্রিয়তমা, তোমার সৌরভ<br />কিছুই হবে না অনুগামী । এই বিলুপ্তি অথবা<br />বিস্মরণ তিলমাত্র বাড়াবে না মৃত্যুর গৌরব ।</p>
<br /><p>যে-তুমি আমাকে ফেলে নৈরাশ্যের কঙ্কালবাসরে<br />চলে গেছ চোখের আড়ালে, শোনো, সকল সময়<br />উৎসবে কি দুর্বিপাকে কামনার উম্মাতাল ঝড়ে<br />তোমার আসার পথে আমার উন্মুখ চক্ষুদ্বয়<br />জ্বেলে রাখি । তোমার নিভৃত প্রতীক্ষায় কী অধীর<br />মৃত্যুর পরেও আমি রাখবো দু'চোখ খুলে স্থির ।</p>
<br /><p>(কাব্যগ্রন্থঃ যে অন্ধ সুন্দরী কাঁদে / প্রকাশকালঃ ১৯৮৪)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/mukhosh/মুখোশ2023-01-29T15:31:59-05:002023-06-27T19:33:35-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>এখন আমাকে রাশি রাশি ফুল ফুলের বাহারী তোড়া দিচ্ছো,<br />দাও করবো না<br />বারণ । কারণ চলৎশক্তিহীন । প্রজাপতি<br />কিংবা একরত্তি মাছি এসে যদি বসে নাকের ডগায়, সত্যি<br />পারবো না তাড়াতে ওদের হাত নেড়ে ।</p>
<br /><p>লোবান অথবা<br />আগরবাতির ঘ্রাণ আমাকে করে না আমোদিত । পড়ে আছি<br />চিত হয়ে দৃষ্টিহীন দৃষ্টি নিয়ে । হু হু কান্না অথবা গোলাপজল<br />উভয়ের প্রতি উদাসীন । আমাকে করাবে স্নান<br />যে লোকটা, চুলকাচ্ছে নধর পাছা তার । যে তন্বীর স্তন<br />হয়নি নমিত শােকে, তার<br />যৌবন আমাকে জপায় না আর জীবনের ।<br />আগড়ম বাগড়ম শ্লোক ।</p>
<br /><p>এখন আমাকে দিচ্ছো ফুল, দাও; দাও ঢেকে<br />আপাদমস্তক, উঠবে না নিষেধের<br />তর্জনী আমার । ট্রাকে চেপে কিছুক্ষণ <br />পরেই বেড়াতে যাবো বনানীতে । ফুরফুরে হাওয়া<br />লাগবে নিঃসাড় হাড়ে ।<br />আমি ভাঙা বাবুই পাখির বাসা এক,<br />বড়ো একা পড়ে আছি স্বপ্নহীন দীর্ঘ বারান্দায় ।</p>
<br /><p>তোমরা কি আজ আমাকে পরাতে চাও নওশার সাজ ?<br />পরাও, বারণ আমি করবো না এখন । যা খুশি<br />তোমরা করতে পারো, তবে সুর্মা কিংবা অন্য কোনো<br />মৃত্যুগন্ধী প্রসাধনে খুব বেশী বদলে দিও না<br />আমার নিজস্ব মুখ, যেমন চেহারা ঠিক তেমনটি থাক-<br />যেন ভিন্ন কারো মুখ আমার নিজের<br />মুখচ্ছদ ফুঁড়ে<br />বেড়িয়ে না পড়ে, দ্যাখো এখন মুখোশহীন আমি;<br />পুরোনো মুখোশ, যার চাপে<br />আমৃত্যু ছিলাম আমি অস্বস্তিকর ক্লিষ্ট ক্রীড়নক,<br />খসে গ্যাছে এক লহমায় । দোহাই তোমরা আর<br />দিও না আমার মুখে সেঁটে<br />অন্য কোনো দুর্বহ মুখোশ ।</p>
<br /><p>(কাব্যগ্রন্থঃ যে অন্ধ সুন্দরী কাঁদে / প্রকাশকালঃ ১৯৮৪)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/joydevpurer-muktijodha/জয়দেবপুরের মুক্তিযোদ্ধা2021-12-13T06:31:02-05:002023-06-27T15:21:44-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>জানি না তোমার নাম, তুমি রোজ সংবাদপত্রের<br />পাতায় বুলোতে কি না চোখ কিম্বা ঝোপ<br />শার্ট পরে ছিপ হাতে যেতে কি না পুরনো দিঘির<br />পাড়ে, আমার তা জানা নেই । সত্যি বলতে কী, ঠিক<br />তোমার বিষয়ে আমি কোনােদিন কারো কাছে কোনো<br />কাহিনী শুনিনি । শুধু যখন এদিকে আসি, দেখি<br />দাঁড়িয়ে রয়েছো তুমি আমাদের অনেক ওপরে-<br />ক্ষীণকায়, যেন রৌদ্রজলে একটু একটু করে<br />ক্ষয়ে গেছে ক্রমাগত সমুন্নত শরীর তোমার ।<br />তোমার শপথঋদ্ধ হস্তধৃত বন্দুকের নল<br />কম্পাসের কাঁটার মতন দিকচিহ্ন নির্দেশক ।<br />একদা জীবিত ছিলে, বস্তুত এখন মৃত; তবু<br />কখনো কখনো মনে হয় তোমার পাথুরে বুক<br />ঘন ঘন স্পন্দিত নিঃশ্বাসে । হে-অজ্ঞাত বীর, শোনো,<br />তোমার সংগ্রামী স্মৃতি মাছের কাঁটার মতো লেগে<br />আছে আমাদের বিবেকের শীর্ণ গলায় নিয়ত ।</p>
<br /><p>(কাব্যগ্রন্থঃ যে অন্ধ সুন্দরী কাঁদে / সেরা ৩০০ কবিতা, ফেব্রুয়ারী ২০১৮)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/vote-debo/ভোট দেবো2021-11-07T03:44:57-05:002023-06-27T18:32:33-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>তোমার ভোটাধিকার আছে বলে কজন নিঝুম প্রজাপতি <br />ক্যানভাসারের মতো উড়ে যায় গহন দুপুরে <br />আমার চুলের গুচ্ছ ছুঁয়ে, কান ছুঁয়ে ।<br />ব্যালটবাক্সের গায়ে বহুবর্ণ স্বপ্নের কামিজ ঢিলেঢালা,<br />নানান প্রতীক ওড়ে চতুর্দিকে । স্বর্ণকন্ঠ পাখিরা এখন <br />কেবলি স্লোগান গায়, পরীদের নাচ জমে ওঠে <br />বেবাক ব্যালটবাক্স ঘিরে । ভোট দিন ভোট দিন <br />বলে দেবদূত কতিপয় পা দোলান দূরে অলীক কার্নিশে ! </p>
<br /><p>সহসা বিলোন তারা রঙিন পুস্তিকা, ম্যানিফেস্টো,<br />করি না কখনো পাঠ । সেসব কাগজ, মনে হয়, <br />নীলিমায় উড়ে যাওয়া ভালো ; <br />ওরা মেঘে গেলে পাবে ভিন্ন অবয়ব, <br />কিছুটা সত্যতা পেতে পারে ।</p>
<br /><p>কতবার ভোটকেন্দ্র ছেড়ে আমি <br />এসেছি নিজের খুব কাছে ফিরে, পা মেলে আপন<br />হৃদয়ের একলা চত্বরে,<br />নতুন প্যাকেট থেকে তাজা সিগারেট বের করে <br />খানিক ভেবেছি কারো কথা, ধোঁয়া ছেড়ে <br />ভেবেছি সমুদ্রে হোমারের আর যেহেতু ইউলিসিস নই, <br />এসেছি আবার ফিরে জীর্ণ ঘরে মশার গুঞ্জনে,<br />স্বপ্নের চিবুক ধরে শুয়ে থাকি, কখনো চেয়ারে ঢুলি আর<br />অকস্মাৎ তড়িঘড়ি ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা চাই বলে করি পায়চারি ঘরময় ।<br />কখনো আমাকে ক্ষিপ্র শোকে স্বপ্ন, যেমন শশক লতাগুল্ম ।<br />তবু আমি ভোটকেন্দ্রে যাবো, বসবো সহাস্য মুখে <br />নতুন কাপড়-ঘেরা-এলাকায় প্রীতি ম্যাজিশিয়ানের মতো,<br />হঠাৎ উড়িয়ে দেবো রুমাল, পায়রা ।<br />ব্যালটপেপারে খুব ঝুঁকে <br />আমি ভালোবাসাকেই ভোট দিয়ে ঘরে <br />কিংবা পার্কে যাবো শিস বাজাতে বাজাতে ।</p>
<br /><p>(কাব্যগ্রন্থ : বাংলাদেশ স্বপ্ন দ্যাখে )</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/rupkotha/রূপকথা 2021-08-31T13:27:51-04:002023-06-27T18:35:13-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>আজব দেশের ধন্য রাজা<br />দেশজোড়া তার নাম। <br />বসলে বলে 'হাঁটরে তোরা',<br />চললে বলেন, 'থাম'। </p>
<br /><p>রাজ্যে ছিল সান্ত্রী-সিপাই<br />মন্ত্রী কয়েক জোড়া। <br />হাতিশালে হাতি ছিল <br />ঘোড়াশালে ঘোড়া। </p>
<br /><p>গাছের ডালে শুক সারীদের<br />গল্প ছিল কতো, <br />গল্পে তাদের রাজার কথা <br />ফুটতো খইয়ের মতো। </p>
<br /><p>চাষীর মাঠে ধান ফলে না<br />ফসল গেল কৈ?<br />রাজা বলে খাওগে সবাই<br />রাঙা ধানের খৈ।</p>
<br /><p>রাঙা ধানের খৈ পাব কৈ,<br />বললো দেশের প্রজা।<br />খৈ ফুরুল, দৈ ফুরুল<br />নেইকো পিঠের মজা।</p>
<br /><p>'আর কটা দিন সবুর করো',<br />বলেন রাজা হেসে,<br />' ফলবে মেওয়া সোনা-দানায়<br />রাজ্যি যাবে ভেসে।'</p>
<br /><p>এই না বলে স্বপ্নে রাজা<br />দেখেন সোনার ঘোড়া। <br />প্রজা দেখে রাজার মুকুট<br />কাগজ দিয়ে গড়া!</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/panthojon/পান্থজন2021-02-24T02:41:45-05:002024-01-21T08:17:53-05:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>বহু পথ হেঁটে ওরা পাঁচজন গোধূলিতে<br />এসে বসে প্রবীণ বৃক্ষের নিচে ক্লান্তি মুছে নিতে।<br />গাছের একটি পাখি শুধায় ওদের-<br />"বলতো তোমরা কারা?" প্রশ্ন শুনে পান্থজন<br />ঝুঁকে পড়ে নিজের বোধের<br />কাছে; বলে একজন "হিন্দুত্বের প্রতি আজন্ম আমার টান ।"<br />দ্বিতীয় জনের কণ্ঠ বাঁশির মতন<br />বাজে, "আমি বৌদ্ধ, হীনযান ।"<br />এবং তৃতীয় জন বলে, "আমি এক নিষ্ঠাবান<br />বিনীত খ্রীষ্টান,"<br />চতুর্থ পথিক করে উচ্চারণ, "আমার ঈমান<br />করেছি অর্পণ আমি খোদার আরশে,<br />আমিতো মুসলমান ।"</p>
<br /><p>পঞ্চম পথিক খুব কৌতূহলবশে<br />কুড়িয়ে পতঙ্গ এক বলে স্মিত স্বরে, "আমি মানবসন্তান।"</p>
<br /><p>(কাব্যগ্রন্থঃ এক ফোঁটা কেমন অনল ১৯৮৬)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/sayonara/সায়োনারা2020-10-20T00:22:34-04:002023-06-27T13:33:47-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>দূর ওসাকায় সন্ধ্যাবেলায়<br />প্লাটফর্মের আনাচে-কানাচে তাড়া;<br />কেউ বলে এলে এতদিন পরে,<br />কেউ-বা ব্যাকুল সায়োনারা, সায়োনারা।</p>
<br /><p>তোমাকে সেখানে দেখবো ভাবিনি,<br />দেখেই শিরায় জাগলো বিপুল সাড়া।<br />প্রথম দেখার নিমেষেই হাওয়া <br />বলে কানে সায়োনারা, সায়োনারা।</p>
<br /><p>ট্যাক্সিতে রাতে তুমি আর আমি,<br />নেচে উঠেছিল তোমার চোখের তারা।<br />ওসাকা-রাতের দৃশ্যাবলিতে <br />লেখা ছিল বুঝি সায়োনারা, সায়োনারা।</p>
<br /><p>সুন্দরীতমা দৈবদয়ায় <br />এসেছিলে কাছে, হৃদয় আত্মহারা।<br />চোখের পলকে সময় ফুরায়,<br />রটে চরাচরে--সায়োনারা, সায়োনারা।</p>
<br /><p>ওসাকার সেই শহর-মরুতে<br />বস্তুত তুমি মরূদ্যানের চারা,<br />আমার তামাটে সত্তা তোমার <br />ছায়ায় শুনেছে সায়োনারা, সায়োনারা।</p>
<br /><p>আমরা দু'জন করেছি ভ্রমণ;<br />তুমি হিরোশিমা; তুমিই কিয়োতো; নারা;<br />পায়ের তলায় হলদে পাতারা <br />করে ফিস ফিস--সায়োনারা, সায়োনারা।</p>
<br /><p>মন্দিরে দেখি বুদ্ধ মূর্তি,<br />শিল্পিত হাতে বইছে পুণ্যধারা,<br />তোমার ও-হাতে হাত রাখতেই<br />পাখি গেয়ে ওঠে সায়োনারা, সায়োনারা।</p>
<br /><p>কথায় কথায় বলেছিলে তুমি<br />কখনো দু'পাতা মিশিমা পড়েনি যারা,<br />তারা জানবে না জাপানি নারীকে;<br />তোমার দু'চোখে করি পাঠ সায়োনারা ।</p>
<br /><p>শেষ রাত্তির কেটেছে আলাপে, <br />শরীর তোমার যেন স্বপ্নের পাড়া।<br />লিফট-এ নামার কালে, মনে পড়ে,<br />বলেছিলে তুমি সায়োনারা, সায়োনারা।</p>
<br /><p>তোমার স্বদেশে প্রবাসী ছিলাম,<br />ছিলাম উদাস, কিছুটা ছন্নছাড়া।<br />হৃদয়ে আমার পরবাস আজ,<br />প্রাণে বাজে শুধু সায়োনারা, সায়োনারা।</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/meghna-nodir-teere/মেঘনা নদীর তীরে2020-08-18T18:03:55-04:002023-11-24T13:24:11-05:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>মেঘনা নদীর তীরে যদি <br />একটুখানি যাও, <br />তখন তুমি দেখতে পাবে <br />নানা রূপের নাও। </p>
<br /><p>ঢেউয়ের মাথায় ডিঙি চলে <br />নাচের তালে তালে, <br />মেশিন-অলা নৌকা যেন <br />ওড়ে নদীর গালে। </p>
<br /><p>মেঘনা নদীর তীরে আছে <br />পাড়াতলী গাঁও, <br />তোমায় নেবে বুকে টেনে <br />দেখতে যদি চাও। </p>
<br /><p>দেখবে তুমি সর্ষে ক্ষেতে <br />প্রজাপতির মেলা; <br />সূর্য ডোবার পরেই চলে <br />জোনাক পোকার খেলা।</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/boba-ojha/বোবা ওঝা2020-08-18T17:56:38-04:002023-06-27T13:25:24-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>আমায় দেখে হঠাৎ বলো <br />হাসছো কেন কেমন করে? <br />মাথায় আমার শিং ফুটেছে? <br />চোখ দুটো কি তৈরি খড়ে? </p>
<br /><p>সত্যি করে বলো শুনি- <br />গজালো কি লেজুড় কোনও? <br />মুখ কি আমার প্যাঁচার মতো- <br />বলতে হবে, বন্ধু শোনো। </p>
<br /><p>এই যে আমি বলছি কথা, <br />সে কথা কি যাচ্ছে বোঝা? <br />না কি শুধুই কিচির মিচির <br />করছে শুধু বোবা ওঝা।</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/photlo-hashi/ফুটলো হাসি2020-08-18T17:54:45-04:002023-06-27T19:02:09-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>হাঁটতে গিয়ে আমরা ক’জন <br />বিকেল বেলা <br />দিঘির পথে দেখি হঠাৎ <br />পাখির মেলা। </p>
<br /><p>হলদে, কালো, লালচে, সাদা <br />হরেক পাখি। <br />আমরা ওদের আদর করে, <br />কাছে ডাকি। </p>
<br /><p>মনে হলো, হঠাৎ ওরা <br />মাতলো নাচে। <br />ছড়ার ঢঙে দুলে দুলে <br />আসছে কাছে। </p>
<br /><p>খুশিতে মন উঠলো বেজে, <br />যেন বাঁশি। <br />সবার মুখে ফুলের মতো <br />ফুটলো হাসি।</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/daak/ডাক2020-07-07T18:50:11-04:002023-06-26T08:33:44-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>ছেলেবেলা হেসে খেলে কেটে গেছে, কৈশোরে হেঁটেছি<br />নিষ্কন্টক, পাথরবিহীন পথে এবং যৌবনে<br />পথ চলাতেই ছিল রাঙা পলাশের<br />জয়োল্লাস, পূর্ণিমার শান্ত মাদকতা আর অনিন্দ্য সংগীত<br />হৃদয়ের। অথচ যৌবনোত্তর কালে<br />আকাশ আচ্ছন্ন হলো কালো মেঘে, ঝড়ক্ষুব্দ কত<br />দিনরাত কাটলো উদ্বেগে, বারবার<br />জানা ও অজানা নানা শঙ্কায় উঠেছি কেঁপে নিজেরই ভিটায়।</p>
<br /><p>বিস্তর বয়স হলো, শরীরের কাঠামো বড়ই<br />নড়বড়ে, রকমারি অসুখের চোরাগোপ্তা মারে প্রায়শই<br />হচ্ছি কাবু। কী-যে হলো, আজকাল রজ্জু দেখলেই<br />বিষধর সর্প ব'লে ভ্রম হয়, আঁতকে উঠে ক'হাত পেছনে<br />হটে যাই, ঘিরে ধরে দুঃস্বপ্নের জাল অস্পষ্ট নিদ্রার কালে।<br />কত প্রতারণা আর কত যে জোচ্চুরি, খুব ঠান্ডা<br />মাথায় দিনদুপুরে সুপরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞ বস্তুত মনুষ্যরূপী<br />পশুদের বর্ধমান। অসহায় মানবের আর্তনাদে মেঘ,<br />নক্ষত্রের বুক দীর্ণ হর হামেশাই। কত মুখ<br />অবলীলাক্রমে হল বিকট মুখোশ কারও গোপন সংকেতে।</p>
<br /><p>কোজাগরী পূর্ণিমার জ্যোৎস্নাধারা পারে না ঘোচাতে<br />ঘাতকের রক্তপায়ী ছোরার খুনের ছাপ, ব্যর্থ অপরাধী<br />রিভলবারের কালি মোছাতে সর্বদা। ইদানীং<br />শুভ আত্মাহুতি দেয় অশুভের পঙ্কিল ডোবায়।</p>
<br /><p>কুচক্রী ছায়ার নীচে দিন কাটে, রাত<br />অনিদ্রার কাঁটায় নিয়ত ছিন্ন ভিন্ন; স্পন্দিত কম্পিত হৃদয়ে শুনি<br />একটি আবছা ডাক। আজকাল সেই ডাক আমার শরীর<br />ছুঁয়ে যায় ক্ষণে ক্ষণে, একদা যা' ছিল<br />অস্তিত্ববিহীন প্রায়। এখনতো নিজ গৃহকোণে<br />লেখার টেবিলে ঝুঁকে বই পড়া কিংবা কবিতার পঙক্তিমালা<br />রচনার ধ্যানকালে অথবা যখন প্রিয় বন্ধুমন্ডলীর<br />গুলজার আড্ডায় বেজায় মশগুল কিংবা চেনা শ্যামলীর<br />ওভারব্রিজের ভিড়ে হাঁটি, কবি-সম্মেলনে এক কোণে<br />চুপচাপ বসে থাকি, সে-ডাক আমাকে আচমকা<br />ভীষণ চমকে দেয়। এ-ও জানি, একদিন এই ডাক এমন <br /> অমোঘ,<br />দুর্নিবার হবে, গূঢ় অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাধ্য হবো, হায়, <br /> আত্মসমর্পণে!</p>
<br /><br />(প্রকাশিতঃ দেশ শারদীয় ১৪০৭)</p>
<br /><p>(এই কবিতাটি কবি, তাকে জানুয়ারী ১৮, ১৯৯৯ ইং তারিখে হত্যার উদ্দেশ্যে ব্যর্থ চেষ্টার পরবর্তী সময়ের অনুভুতি নিয়ে, রচনা করেছেন)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/trent/ট্রেন2019-08-03T15:24:02-04:002024-03-02T11:15:18-05:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>ঝক ঝক ঝক ট্রেন চলেছে<br /> রাত দুপুরে অই।<br />ট্রেন চলেছে, ট্রেন চলেছে<br /> ট্রেনের বাড়ি কই ?</p>
<br /><p>একটু জিরোয়, ফের ছুটে যায়<br /> মাঠ পেরুলেই বন।<br />পুলের ওপর বাজনা বাজে<br /> ঝন ঝনাঝন ঝন।</p>
<br /><p>দেশ-বিদেশে বেড়ায় ঘুরে<br /> নেইকো ঘোরার শেষ।<br />ইচ্ছে হলেই বাজায় বাঁশি,<br /> দিন কেটে যায় বেশ।</p>
<br /><p>থামবে হঠাৎ মজার গাড়ি<br /> একটু কেশে খক।<br />আমায় নিয়ে ছুটবে আবার<br /> ঝক ঝকাঝক ঝক।</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/ovishap-decchi/অভিশাপ দিচ্ছি 2019-08-03T15:05:55-04:002023-06-27T18:49:49-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>না, আমি আসিনি ওল্ড টেস্টামেন্টের প্রাচীন পাতা ফুঁড়ে,<br />দুর্বাশাও নই, তবু আজ এখানে দাঁড়িয়ে এই রক্ত গোধূলিতে অভিশাপ দিচ্ছি ।<br />আমাদের বুকের ভেতর যারা ভয়ানক কৃষ্ণপক্ষ দিয়েছিলো সেঁটে<br />মগজের কোষে-কোষে যারা পুঁতেছিল আমাদেরই আপন জনেরই লাশ <br />দগ্ধ, রক্তাপ্লুত যারা গণহত্যা করেছে শহরে গ্রামে টিলায় নদীতে ক্ষেত ও খামারে<br />আমি অভিশাপ দিচ্ছি নেকড়ের চেয়েও অধিক পশু সেই সব পশুদের।</p>
<br /><p>ফায়ারিং স্কোয়াডে ওদের সারিবদ্ধ দাঁড় করিয়ে নিমেষে ঝাঁ ঝাঁ বুলেটের বৃষ্টি<br />ঝরালেই সব চুকে বুকে যাবে তা আমি মানি না।<br />হত্যাকে উৎসব ভেবে যারা পার্কে মাঠে ক্যাম্পাসে বাজারে<br />বিষাক্ত গ্যাসের মতো মৃত্যুর বীভৎস গন্ধ দিয়েছে ছড়িয়ে,<br />আমি তো তাদের জন্য অমন সহজ মৃত্যু করি না কামনা।<br />আমাকে করেছে বাধ্য যারা-<br />আমার জনক জননীর রক্তে পা ডুবিয়ে দ্রুত সিঁড়ি ভেঙ্গে যেতে<br />ভাসতে নদীতে আর বনেবাদাড়ে শয্যা পেতে নিতে,<br />অভিশাপ দিচ্ছি, আমি সেইসব দজ্জালদের।<br />অভিশাপ দিচ্ছি ওরা চিরদিন বিশীর্ণ গলায়<br />নিয়ত বেড়াক বয়ে গলিত নাছোড় মৃতদেহ,<br />অভিশাপ দিচ্ছি প্রত্যহ দিনের শেষে ওরা<br />হাঁটু মুড়ে এক টুকরো শুকনো রুটি চাইবে ব্যাকুল<br />কিন্তু রুটি প্রসারিত থাবা থেকে রইবে দশ হাত দূরে সর্বদাই।</p>
<br /><p>অভিশাপ দিচ্ছি ওদের তৃষ্ণায় পানপাত্র প্রতিবার<br />কানায়-কানায় রক্তে উঠবে ভরে, <br />যে রক্ত বাংলায় বইয়ে দিয়েছে ওরা হিংস্র জোয়ারের মত।<br />অভিশাপ দিচ্ছি আকণ্ঠ বিষ্ঠায় ডুবে ওরা অধীর চাইবে ত্রাণ<br />অথচ ওদের দিকে কেউ দেবে না কখনো ছুঁড়ে একখন্ড দড়ি।</p>
<br /><p>অভিশাপ দিচ্ছি স্নেহের কাঙ্গাল হয়ে ওরা<br />ঘুরবে ক্ষ্যাপার মতো এ পাড়া-ওপাড়া,<br />নিজেরি সন্তান প্রখর ফিরিয়ে নেবে মুখ, পারবে না চিনতে কখনো;<br />অভিশাপ দিচ্ছি এতোটুকু আশ্রয়ের জন্য, বিশ্রামের কাছে আত্মসমর্পণের জন্যে দ্বারে-দ্বারে ঘুরবে ওরা। <br />প্রেতায়িত সেই সব মুখের উপর<br />দ্রুত বন্ধ হয়ে যাবে পৃথিবীর প্রতিটি কপাট,<br />অভিশাপ দিচ্ছি...<br />অভিশাপ দিচ্ছি,....<br />অভিশাপ দিচ্ছি....</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/bondi-sibir-thake/বন্দী শিবির থেকে2019-08-03T14:34:39-04:002023-06-27T16:18:55-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>ঈর্ষাতুর নই, তবু আমি তোমাদের আজ বড় ঈর্ষা করি । <br />তোমরা সুন্দর জামা পরো, পার্কের বেঞ্চিতে বসে আলাপ জমাও,<br />কখনো সেজন্যে নয় । ভালো খাও দাও, ফুর্তি করো সবান্ধব সেজন্যেও নয়।</p>
<br /><p>বন্ধুরা তোমরা যারা কবি,<br />স্বাধীন দেশের কবি, তাদের সৌভাগ্যে আমি বড়ো ঈর্ষান্বিত আজ।<br />যখন যা খুশি মনের মতো শব্দ কী সহজে করো ব্যবহার তোমরা সবাই।<br />যখন যে শব্দ চাও, এসে গেলে সাজাও পয়ারে,<br />কখনো অমিত্রাক্ষরে, ক্ষিপ্র মাত্রাবৃত্তে কখনো-বা ।<br />সেসব কবিতাবলী, যেন রাজহাঁস দৃপ্ত ভঙ্গিমায় <br />মানুষের অত্যন্ত নিকটে যায়, কুড়ায় আদর।</p>
<br /><p>অথচ এদেশে আমি আজ দমবদ্ধ এ বন্দী-শিবিরে<br />মাথা খুঁড়ে মরলেও পারি না করতে উচ্চারণ<br />মনের মতন শব্দ কোনো।<br />মনের মতন সব কবিতা লেখার অধিকার ওরা করেছে হরণ।<br />প্রকাশ্য রাস্তায় যদি তারস্বরে চাঁদ, ফুল, পাখি<br />এমনকি নারী ইত্যাকার শব্দাবলী করি উচ্চারণ, কেউ করবে না বারণ কখনো।<br />কিন্তু কিছু শব্দকে করেছে বেআইনী ওরা ভয়ানক বিস্ফোরক ভেবে।</p>
<br /><p>স্বাধীনতা নামক শব্দটি<br />ভরাট গলায় দীপ্ত উচ্চারণ করে বারবার তৃপ্তি পেতে চাই। <br />শহরের আনাচে কানাচে প্রতিটি রাস্তায় অলিতে-গলিতে,<br />রঙিন সাইনবোর্ড, প্রত্যেক বাড়িতে স্বাধীনতা নামক শব্দটি <br />আমি লিখে দিতে চাই বিশাল অক্ষরে।<br />স্বাধীনতা শব্দ এত প্রিয় যে আমার কখনো জানিনি আগে। <br />উঁচিয়ে বন্দুক, স্বাধীনতা, বাংলাদেশ- এই মতো শব্দ থেকে ওরা<br />আমাকে বিচ্ছিন্ন করে রাখছে সর্বদা।</p>
<br /><p>অথচ জানেনা ওরা কেউ গাছের পাতায়, ফুটপাতে<br />পাখির পালকে কিংবা নারীর দু’চোখে পথের ধুলায়<br />বস্তির দুরন্ত ছেলেটার হাতের মুঠোয়<br />সর্বদাই দেখি জ্বলে স্বাধীনতা নামক শব্দটি।</p>
<br /><p>[২১ জুলাই ১৯৭১ তারিখে কবিতাটি ভারতীয় ‘দেশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ছদ্মনামে। মজলুম আদিব, যার অর্থ নির্যাতিত কবি]</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/sudhngsh-zabe-na/সুধাংশু যাবে না2019-08-03T14:22:48-04:002023-06-26T08:39:10-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>পাগলামী করিসনে বন্ধু সুধাংশু<br />সময় যে পার হয়ে যাচ্ছে<br />এবার যে তোর পালানোর বেলা<br />জিদ করিসনে বন্ধু, এখনই তুই পালা।<br />জানি তুই কী ভাবছিস বন্ধু সুধাংশু<br />দাঁড়িয়ে হাহাকারের ছোঁয়ায় জড়ানো শ্মশানসম বাস্তুভিটায়<br />সেই হারিয়ে যাওয়া প্রাণচঞ্চল দিনগুলো, আমাদের ছেলেবেলা<br />কিন্তু এবার যে তোর পালানোর বেলা, এবার তুই পালা।<br />আমি জানি নির্বাক দাঁড়িয়ে তুই কী ভাবছিস বন্ধু সুধাংশু<br />সেই একপাল বন্ধুগুলো ­ রামী, শেপু, কাকলী আরও অনেকে<br />প্রাণময় কোলাহলে কাটিয়েছি সকাল-দুপুর-সন্ধ্যা বেলা<br />কিন্তু এবার যে তোকে পালাতে হবে, এবার তুই পালা।<br />আমি বুঝি তোর শঙ্কা আগামী বিরহ বেদনার বন্ধু সুধাংশু<br />আড়াই যুগ ধরে তিলে তিলে গড়ে উঠা আত্মার সম্পর্ক ­-<br />এই বাস্তুভিটার সাথে আর একঝাঁক বন্ধুর ভালবাসা প্রাণঢালা।<br />কিন্তু এবার যে তোকে পালাতে হবে, এবার তুই পালা।<br />কোথায় সেই কল-কাকলীতে মুখরিত সবুজ সুন্দর কাপালী-ভিটাটি বন্ধু সুধাংশু<br />দু’টি জীর্ণ-শীর্ণ ঘর চির-দুঃখীর মতো দাঁড়িয়ে আছে আজ সেই কাপালী ভিটায়।<br />কোথায় সেই রামী, শেপু, কাকলী আরও সেই প্রিয় বন্ধুগুলা<br />ওরা যে সবাই পালিয়েছে, এবার তোর পালা।<br />তুই কি জানিস বন্ধু সুধাংশু<br />তোর বিদায়ে ভীষণ ব্যথা পাবে আমার ঐ ছ’বছরের অবুঝ বোনটি ‘নেহা’<br />কাটাবে কত সন্ধ্যা অধীর প্রত্যাশায়, সুধাংশু ভাইকে জড়িয়ে ধরবেঃ ­ কোথায় চকলেটগুলা?<br />তবুও তোকে পালাতে হবে যে, এবার তুই পালা।<br />আরও জানি বন্ধু সুধাংশু<br />তোর ষোড়শী বোনটি ‘মিলা’ দুষ্টামির ছলে আর বলতে পারবে নাঃ আলমদা তুমি এত কৃপণ কেন?<br />চলো মেলায় নিয়ে, কিনে দিতে হবে সুন্দর একটি মালা।<br />তথাপি তোকে পালাতে যে হবে, এবার তুই পালা।<br />তোকে যে বলা হয় নি বন্ধু সুধাংশু<br />মিলা’র সহপাঠী আমার ভাইটি ‘রিপন’ বলছিল সেদিনঃ ভাইয়া মিলা’টা যা সুন্দর হয়েছে না!<br />বলে দিয়েছি ওকে, সুন্দরী মেধাবী মিলা বিশ্ব জয় করবে, তোর মতো গর্দভটি ওর দিকে তাকাবে না।<br />তোর হাতে যে সময় নেই বন্ধু, এবার তুই পালা।<br />মিলাকে যে বিশ্ব জয় করতেই হবে বন্ধু সুধাংশু<br />অসাধারণ সুন্দরী মেধাবী মিলার জন্য এক ধর্ষিত, অচ্ছুৎ, অভাগী নারীর জীবন ­<br />হবে মানবতার জন্য এক অমার্জনীয় ব্যর্থতা।<br />তাই আমার কাতর মিনতি বন্ধু, এখনই তুই পালা।</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/barbar-fire-ase/বারবার ফিরে আসে2019-08-01T18:14:15-04:002023-06-26T08:33:09-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>বার-বার ফিরে আসে রক্তাপ্লুত শার্ট<br />ময়দানে ফিরে আসে, ব্যাপক নিসর্গে ফিরে আসে,<br />ফিরে আসে থমথমে শহরের প্রকাণ্ড চোয়ালে।<br />হাওয়ায়-হাওয়ায় ওড়ে, ঘোরে হাতে-হাতে,<br />মিছিলে পতাকা হয় বারবার রক্তাপ্লুত শার্ট।<br />বিষম দামাল দিনগুলি ফিরে আসে বারবার,<br />বারবার কল্লোলিত আমাদের শহর ও গ্রাম।</p>
<br /><p>‘আবার আসবো ফিরে’ ব’লে সজীব কিশোর<br />শার্টের আস্তিন দ্রুত গোটাতে-গোটাতে<br />শ্লোগানের নিভাঁজ উল্লাসে<br />বারবার মিশে যায় নতুন মিছিলে, ফেরে না যে আর।<br />একটি মায়ের চোখ থেকে<br />করুণ প্লাবন মুছে যেতে না যেতেই<br />আরেক মায়ের চোখ শ্রাবণের অঝোরে আকাশ হ’য়ে যায়।<br />একটি বধূর সংসার উজাড়-করা হাহাকার থামতে না থামতেই, হায়,<br />আরেক বধূর বুক খাঁ-খাঁ গোরস্থান হ’য়ে যায়,<br />একটি পিতার হাত থেকে কবরের কাঁচা মাটি<br />ঝ’রে পড়তে না পড়তেই<br />আরেক পিতার বুক-শূন্য-করা গুলিবিদ্ধ সন্তানের লাশ<br />নেমে যায় নীরন্ধ্র কবরে।</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/purborag/পূর্বরাগ2019-08-01T16:57:04-04:002023-06-27T10:36:56-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>জেনেছি কাকে চাই, কে এলে চোখে ফোটে<br />নিমেষে শরতের খুশির জ্যোতিকণা;<br />কাঁপি না ভয়ে আর দ্বিধার নেই দোলা<br />এবার তবে রাতে হাজার দীপ জ্বেলে<br />সাজাবো তার পথ যদি সে হেঁটে আসে।<br />যদি সে হেঁটে আসে, প্রাণের ছায়াপথ<br />ফুলের মতো ফুটে তারার মতো ফুটে<br />জ্বলবে সারারাত, ঝরবে সারারাত।<br />জেনেছি কাকে চাই, বলি না তার নাম<br />ভিড়ের ত্রিসীমায়; স্বপ্ন-ধ্বনি শুধু<br />হৃদয়ে বলে নাম, একটি মৃদু নাম।</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/kono-ekjner-jonno/কোনো একজনের জন্যে2019-08-01T16:54:18-04:002023-06-27T17:37:25-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>এতোকাল ছিলাম একা আর ব্যথিত,<br />আহত পশুর অনুভবে ছেঁড়াখোঁড়া।<br />দুর্গন্ধ-ভরা গুহাহিত রাত নিস্ফল ক্রোধে দীর্ণ,<br />শীর্ণ হাহাকার ছাড়া গান ছিলো না মনে,<br />জানি প্রাণে ছিলো না সতেজ পাতার কানাকানি<br />এমনকি মরম্নভূমির তীব্রতাও ছিলো না ধমনীতে,<br />স্বপ্ন ছিলো না, ছিলো না স্বপ্নের মতো হৃদয়।</p>
<br /><p>কে জানতো এই খেয়ালি পতঙ্গ, শীতের ভোর,<br />হাওয়ায়-হাওয়ায় মর্মরিত গাছ,<br />ঘাসে-ঢাকা জমি, ছায়া-মাখা শালিক<br />প্রিয় গানের কলি হয়ে গুঞ্জরিত হবে ধমনীতে, <br />পেখম মেলবে নানা রঙের মুহূর্তে ।<br />কে জানতো লেখার টেবিলে রাখা বাসি রম্নটি<br />আর ফলের শুকনো খোসাগুলো<br />তাকাবে আমার দিকে অপলক আত্মীয়ের মতো ?</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/tumi-bolechla/তুমি বলেছিলে2019-08-01T16:33:37-04:002023-06-26T08:39:43-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>দাউ-দাউ পুড়ে যাচ্ছে নতুন বাজার।<br />পুড়ছে দোকান-পাট, কাঠ,<br />লোহা-লক্কড়ের স্তূপ, মসজিদ এবং মন্দির ।<br />দাউ-দাউ পুড়ে যাচ্ছে নতুন বাজার।</p>
<br /><p>বিষম পুড়ছে চতুর্দিকে ঘর-বাড়ি ।<br />পুড়ছে টিয়ের খাঁচা, রবীন্দ্র রচনাবলি, মিষ্টান্ন ভাণ্ডার,<br />মানচিত্র, পুরনো দলিল ।<br />মৌচাকে আগুন দিলে যেমন সশব্দে<br />সাধের আশ্রয় ত্যাগী হয়<br />মৌমাছির ঝাঁক,<br />তেমনি সবাই পালাচ্ছে শহর ছেড়ে দিগ্বিদিক। <br />নবজাতককে বুকে নিয়ে উদ্ভ্রান্ত জননী<br />বনপোড়া হরিণীর মত যাচ্ছে ছুটে।<br />অদূরে গুলির শব্দ, রাস্তা চষে জঙ্গী জীপ। <br />আর্ত শব্দ সবখানে। <br />আমাদের দু'জনের মুখে খরতাপ। <br />আলিঙ্গনে থরো থরো তুমি বলেছিলে,<br />'আমাকে বাঁচাও এই বর্বর আগুন থেকে, আমাকে বাঁচাও,<br />আমাকে লুকিয়ে ফেলো চোখের পাতায়<br />বুকের অতলে কিংবা একান্ত পাঁজরে<br />আমাকে নিমেষে শুষে নাও চুম্বনে-চুম্বনে।'</p>
<br /><p>দাউ-দাউ পুড়ে যাচ্ছে নতুন বাজার,<br />আমাদের চৌদিকে আগুন,<br />গুলির ইস্পাতী শিলাবৃষ্টি অবিরাম ।<br />তুমি বলেছিলে আমাকে বাঁচাও ।<br />অসহায় আমি তাও বলতে পারিনি ।</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/bornnomala/বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা2019-07-31T20:05:14-04:002023-06-27T02:37:25-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>নক্ষত্রপুঞ্জের মতো জলজ্বলে পতাকা উড়িয়ে আছো আমার সত্তায়।<br />মমতা নামের প্রুত প্রদেশের শ্যামলিমা তোমাকে নিবিড়<br />ঘিরে রয় সর্বদাই। কালো রাত পোহানোর পরের প্রহরে<br />শিউলিশৈশবে 'পাখী সব করে রব' ব'লে মদনমোহন<br />তর্কালঙ্কার কী ধীরোদাত্ত স্বরে প্রত্যহ দিতেন ডাক। তুমি আর আমি,<br />অবিচ্ছিন্ন পরস্পর মমতায় লীন,<br />ঘুরেছি কাননে তাঁ নেচে নেচে, যেখানে কুসুম-কলি সবই<br />ফোটে, জোটে অলি ঋতুর সংকেতে।</p>
<br /><p>আজন্ম আমার সাথী তুমি,<br />আমাকে স্বপ্নের সেতু দিয়েছিলে গ'ড়ে পলে পলে,<br />তাইতো ত্রিলোক আজ সুনন্দ জাহাজ হয়ে ভেড়ে<br />আমারই বন্দরে।</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/ponddo-shom/পণ্ডশ্রম 2019-07-31T19:56:49-04:002023-06-26T08:37:54-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>এই নিয়েছে ঐ নিল যাঃ! কান নিয়েছে চিলে,<br />চিলের পিছে মরছি ঘুরে আমরা সবাই মিলে।<br />কানের খোঁজে ছুটছি মাঠে, কাটছি সাঁতারবিলে,<br />আকাশ থেকে চিলটাকে আজ ফেলব পেড়ে ঢিলে।<br />দিন-দুপুরে জ্যান্ত আহা, কানটা গেল উড়ে,<br />কান না পেলে চার দেয়ালে মরব মাথা খুঁড়ে।<br />কান গেলে আর মুখের পাড়ায় থাকল কি-হে বল?<br />কানের শোকে আজকে সবাই মিটিং করি চল।<br />যাচ্ছে, গেল সবই গেল, জাত মেরেছে চিলে,<br />পাঁজি চিলের ভূত ছাড়াব লাথি-জুতো কিলে।<br />সুধী সমাজ! শুনুন বলি, এই রেখেছি বাজি,<br />যে-জন সাধের কান নিয়েছে জান নেব তার আজই।<br />মিটিং হল ফিটিং হল, কান মেলে না তবু,<br />ডানে-বাঁয়ে ছুটে বেড়াই মেলান যদি প্রভু!<br />ছুটতে দেখে ছোট ছেলে বলল, কেন মিছে<br />কানের খোঁজে মরছ ঘুরে সোনার চিলের পিছে?<br />নেইকো খালে, নেইকো বিলে, নেইকো মাঠে গাছে;<br />কান যেখানে ছিল আগে সেখানটাতেই আছে।<br />ঠিক বলেছে, চিল তবে কি নয়কো কানের যম?<br />বৃথাই মাথার ঘাম ফেলেছি, পণ্ড হল শ্রম।</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/raj-khani/রাজকাহিনী2019-07-31T19:54:59-04:002023-06-26T08:38:13-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>ধন্য রাজা ধন্য,<br />দেশজোড়া তার সৈন্য!</p>
<br /><p>পথে-ঘাটে-ভেড়ার পাল।<br />চাষীর গরু, মাঝির হাল,<br />ঘটি-বাটি, গামছা, হাঁড়ি,<br />সাত-মহলা আছে বাড়ি,<br />আছে হাতি, আছে ঘোড়া।<br />কেবল পোড়া মুখে পোরার<br />দুমুঠো নেই অন্ন,<br />ধন্য রাজা ধন্য।</p>
<br /><p>ঢ্যাম কুড় কুড় বাজনা বাজে,<br />পথে-ঘাটে সান্ত্রী সাজে।<br />শোনো সবাই হুকুমনামা,<br />ধরতে হবে রাজার ধামা।<br />বাঁ দিকে ভাই চলতে মানা,<br />সাজতে হবে বোবা-কানা।<br />মস্ত রাজা হেলে দুলে<br />যখন-তথন চড়ান শূলে<br />মুখটি খোলার জন্য।<br />ধন্য রাজা ধন্য।</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/amar-mittur-pore/আমার মৃত্যুর পরেও যদি2019-07-31T19:54:07-04:002023-06-26T23:50:25-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>একটি পাখী রোজ আমার জানালায়<br />আস্তে এসে বসে, তাকায় আশেপাশে।<br />কখনো দেয় শিস, বাড়ায় গলা তার;<br />আবার কখনোবা পাখাটা ঝাপটায়।</p>
<br /><p>পালকে তার আঁকা কিসের ছবি যেন,<br />দু’চোখে আছে জমা মেঘের স্মৃতি কিছু;<br />নদীর স্বপ্নের জলজ কণাগুলি<br />এখনো তাঁর ঠোটে হয়তো গচ্ছিত।</p>
<br /><p>কাউকে নীড়ে তার এসেছে ফেলে বুঝি?<br />হয়তো সেই নীড়, আকাশই আস্তানা।<br />তাই তো চোখ তার এমন গাঢ় নীল,<br />মেললে পাখা জাগে নীলের উৎসব।</p>
<br /><p>যখন লিখি আমি টেবিলে ঝুঁকে আর<br />পড়তে বসি বই, তখন সেই পাখি<br />চকিতে দোল খায় আমার জানালায়-<br />খাতার পাতা জুড়ে ছড়িয়ে দেয় খুশি।</p>
<br /><p>আমার মৃত্যুর পরেও যদি সেই<br />সুনীল পাখি আসে আমার জানালায়,<br />আবার শিস দেয়, আমার বইখাতা<br />যদি সে ঠোকরায়, দিও না বাধা তাকে।</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/akti-pothogarp/একটি ফটোগ্রাফ2019-07-31T19:42:55-04:002024-03-14T01:50:49-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>এই যে আসুন, তারপর কী খবর?<br />আছেন তো ভালো ? ছেলেমেয়ে ?’ <br />কিছু আলাপের পর, দেখিয়ে সফেদ দেয়ালের শান্ত ফটোগ্রাফটিকে<br />বললাম জিজ্ঞাসু অতিথিকে–<br />‘এই আমার ছোট ছেলে, যে নেই এখন,<br />পাথরের টুকরোর মতন<br />ডুবে গেছে আমাদের গ্রামের পুকুরে<br />বছর-তিনেক আগে, কাক-ডাকা গ্রীষ্মের দুপুরে।’<br />কী সহজে হয়ে গেলো বলা,<br />কাঁপলো না গলা এতটুকু, <br />বুক চিরে বেরুলো না দীর্ঘশ্বাস, চোখ ছলছল করলো না <br />এবং নিজের কন্ঠস্বর শুনে<br />নিজেই চমকে উঠি, কি নিস্পৃহ, কেমন শীতল ।<br />তিনটি বছর মাত্র তিনটি বছর<br />কতো উর্ণাজাল বুনে কেটেছে, <br />অথচ এরই মধ্যে বাজখাঁই<br />কেউ যেন আমার শোকের নদীটিকে কতো দ্রুত রুক্ষ চর করে দিলো। <br />অতিথি বিদায় নিলে আবারো দাঁড়াই<br />এসে ফটোগ্রাফটির মুখোমুখি প্রশ্নাকুল চোখে, ক্ষীয়মান শোকে।<br />ফ্রেমের ভেতর থেকে আমার সন্তান<br />চেয়ে থাকে নিষ্পলক, তার চোখে নেই রাগ কিংবা অভিমান।</p>
<br /><p>সংকলিত (শামসুর রাহমান)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/utorr/উত্তর2019-07-31T19:07:44-04:002023-06-26T22:40:40-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>তুমি হে সুন্দরীতমা নীলিমার দিকে তাকিয়ে বলতেই পারো<br />‘এই আকাশ আমার’<br />কিন্তু নীল আকাশ কোনো উত্তর দেবেনা।</p>
<br /><p>সন্ধ্যেবেলা ক্যামেলিয়া হাতে নিয়ে বলতেই পারো,<br />‘ফুল তুই আমার’<br />তবু ফুল থাকবে নীরব, নিজের সৌরভে আচ্ছন্ন হয়ে।</p>
<br /><p>জ্যোত্স্না লুটিয়ে পড়লে তোমার ঘরে,<br />তোমার বলার অধিকার আছে, ‘এ জ্যোত্স্না আমার’<br />কিন্তু, চাঁদিনী থাকবে নিরুত্তর।</p>
<br /><p>মানুষ আমি আমার চোখে চোখ রেখে<br />যদি বলো, - ‘তুমি একান্ত আমার’, কী করে থাকবো আমি নির্বাক ?<br />"তারায়-তারায় রটিয়ে দেবো, ‘আমি তোমার, তুমি আমার’।</p>
<br /><p>সংকলিত (শামসুর রাহমান)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/he-priyo-kolponalota/হে প্রিয় কল্পনালতা2018-02-17T18:19:41-05:002023-06-26T12:44:06-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>কখনো কখনো ওরা আসে না, আবার কখনো বা<br />যুদ্ধ-ফেরতা সৈনিকের মতো এসে পড়ে, রচে শোভা<br />শূন্যতায়; মগজের পুকুরে সাঁতারপ্রিয় হৃদয়ের তন্ত্রী<br />কী রুদ্র ঝংকারে ছিঁড়ে সুবিস্তৃত রৌদ্রের ভেতরে যায়, যন্ত্রী<br />হ’য়ে ঘোরে, শাড়ির পাড়ের মতো রাঙা পথে, পতিত বাগানে।<br />বাউল বাউল ব’লে রসালো জ্যোৎস্নায় খুব মেতে ওঠে গানে।</p>
<br /><p>ওরা অলৌকিক ম্যানিফেস্টোর ডানায় ভর ক’রে<br />দ্রুত বিলি হ’য়ে যায় শহরের আনাচে কানাচে। গুঞ্জরিত ঘরে ঘরে<br />এবং স্থানীয় আঁদ্রে ব্রেতো করলে কৃপা বেহদ গাঁওয়ার সব<br />লজিকের বুকে-পিঠে রূপালি চাবুক হেনে আনকোরা রব<br />তুলে খিল ভরপুর জ্যোৎস্নায় বেবাক স্বপ্নাহত হয়।<br />দুস্থ চন্ডীমন্ডপের বুলির আড়ালে কতিপয়<br />শব্দ জাগে বলীয়ান নব্যতায়, কবিসংঘ পেয়ে যায় বিরল ভুবন,<br />স্বপ্নাদ্য বলাই যায়। রঙিন কুপন</p>
<br /><p>হাতে নিয়ে টপলেস পরীরা আঁধারে পরিচারিকার মতো<br />ব্যস্ততায় সঞ্চারিণী; মেঝে ফুঁড়ে ভৌতিক আলোয় উঠে আসে<br />অবিরত<br />অপরূপ শব আর শুয়োরের মুণ্ডু। পিরিচে যুল স্তন, যাত্রী<br />সবুজের দিকে ক্রমাগত। বইয়ের কবরে কে ঘুমায়? রাত্রি<br />চোলিতে নক্ষত্র গেঁথে চন্দ্রমাকে আনে বুদোয়ারে<br />নিরিবিলি প্লুত দৃষ্টি হেনে; অতিশয় মৌন হাড়ে<br />জ্যোৎস্না বোনে অন্তহীন কিংবদন্তী। এই তো প্রফুল্ল জোনাকিরা<br />গুল্মলতায় খেলে লুকোচুরি-বনময় কী আদিম ক্রীড়া।</p>
<br /><p>হে প্রিয় কল্পনালতা এসো তুমি উন্মাদিনী ওফেলিয়া সেজে<br />আমার এলসিমোরে, হে দয়িতা, পাখাবতী, শবাকীর্ণ ষ্টেজে।</p>
<br /><p> (আদিগন্ত নগ্ন পদধ্বনি কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/se-rate-amar-ghore/সে-রাতে আমার ঘরে2018-02-17T18:19:05-05:002023-06-26T08:38:30-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>সে-রাতে আমার ঘরে এক ঝাঁক উৎফুল্ল জোনাকি<br />বললো এসে-একটি কবিতা দিতে এসেছি তোমাকে।<br />অন্তর্হিত জোনাকির পরে একটি বাদুড় খুব<br />আনন্দে ঘনিষ্ঠ হয়ে কড়িকাঠে জানালো সস্নেহে-<br />একটি কবিতা দিতে এসেছি তোমাকে। অনন্তর<br />একজন মহিলার মুখ জানালায় ফুটে ওঠে,<br />নীলিমানিমগ্ন সুর তার ভাসে, যেন সমুদ্রের<br />ফেনাময়ঃ একটি কবিতা দিতে এসেছি তোমাকে।</p>
<br /><p>সেই স্বর ডুবে গেলে কতিপয় প্রাচীন কংকাল<br />কবরের মাটি ফুঁড়ে, ঘরের দেয়াল ফুঁড়ে এসে<br />বললো গাঢ়ঃ একটি কবিতা দিতে এসেছি তোমাকে।<br />অথচ শব্দের দূত ওড়ায়নি তখনো নিশান,<br />তখনো অদৃশ্য ওরা প্রেতলোকে, জীবাশ্মের মতো<br />স্তব্ধ, আমি প’ড়ে থাকি এক কোণে, ব্যর্থ অসহায়।</p>
<br /><p> (আদিগন্ত নগ্ন পদধ্বনি কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/shanti-pai/শান্তি পাই2018-02-17T18:18:31-05:002023-06-27T17:27:36-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>যখন তুমি অনেক দূরে থেকে<br />এখানে এই গলির মোড়ে আসো,<br />উঠোনে দাও পায়ের ছাপ ত্রঁকে,<br />শান্তি পাই।<br />যখন তুমি দেহের বাঁকে বাঁকে<br />স্মৃতির ভেলা ভাসাও, তোলো পাল,<br />মুক্ত করো যমজ পায়রাকে<br />শান্তি পাই।</p>
<br /><p>যখন তুমি আমার পিপাসায়<br />নিমেষে হও আঁজলাভরা জল,<br />দৃষ্টিজাল ছড়াও কী আশায়,<br />শান্তি পাই।</p>
<br /><p>যখন তুমি ঠোঁটের বন্দরে<br />বিছিয়ে দাও গালিচা রক্তিম,<br />প্রভাত জ্বালো চোখের কন্দরে,<br />শান্তি পাই।</p>
<br /><p>ঝঞ্ঝাহত উজাড় এ বাগানে<br />আন্দোলিত তুমিই শেষ ফুল!<br />জাগাও তুমি সবুজ পাতা প্রাণে,<br />শান্তি পাই।</p>
<br /><p>যখন তুমি দুপুরে ঘুমে আসো,<br />তোমার বুকে অতিথি প্রজাপতি;<br />থম্কে থাকে ভয়ে সর্বনাশও,<br />শান্তি পাই।</p>
<br /><p>যখন তুমি জলের গান হয়ে<br />আমার দেহে আমার মজ্জায়<br />কী উজ্জ্বল জোয়ারে যাও ব’য়ে,<br />শান্তি পাই।</p>
<br /><p>যখন তুমি আমার ঠোঁটে রাখো<br />একটি লাল গোলাপ, আত্মায়<br />ঝরাও পাতা আবেগভরে ডাকো,<br />শান্তি পাই।</p>
<br /><p>যখন তুমি হাওয়ায় দাও মেলে<br />তিমির-ছেঁড়া আমার এ পতাকা,<br />কিংবা আসো বিরূপ জল ঠেলে,<br />শান্তি পাই।</p>
<br /><p> (আদিগন্ত নগ্ন পদধ্বনি কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/lenden/লেনদেন2018-02-17T18:17:28-05:002023-06-26T13:40:18-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>হঠাৎ তিনি আমার স্মৃতির বনস্থলি রোমাঞ্চিত<br />করলে আমি প্রবেশ করি ছেলেবেলার শ্যামল মুঠোয়।<br />চোখের কোণে হারিয়ে-যাওয়া সুদূর চোখের, শীর্ণ হাতের,<br />তাঁর সে গায়ের হলদে কোটের ইতস্তত ঝলক লাগে।</p>
<br /><p>হলদে কোটে কেমন যেন চুরুট চুরুট গন্ধ ছিলো,<br />চোখের কোণে সে কোন্ ঝিলের ইস্পাতী এক ঝিলিক ছিলো।<br />টাঙ্গি হাতে ভালুক টালুক খুব মেরেছেন হেলায় ফেলায়-<br />তাঁর বিষয়ে আরো বহু এমনিতরো গল্প ছিলো।</p>
<br /><p>হলদে কোটের সিংহপুরুষ সুদূর আমার ছেলেবেলায়<br />দিয়েছিলেন হাতে তুলে একটি পুতুল, মনে পড়ে।<br />মনে পড়ে, পুতুলটাকে কোথায় যেন, কখন যেন<br />হারিয়ে ফেলে সেই ছেলেটা দুঃখ খুবই পেয়েছিলো।</p>
<br /><p>তেমন পুতুল আর দেখিনি ভূভারতে, দোকান-পাটে<br />তন্ন তন্ন করেও আমি পাইনি খুঁজে দেশ-বিদেশে।<br />তেমন পুতুল ঝরে শুধু অলৌকিকের মুঠো থেকে?<br />স্মৃতির সুতোয় লটকে থাকে নীল্চে নীল্চে দুর্বলতা।</p>
<br /><p>সেই যে তিনি পুতুল দিয়ে সাত সকালে নিলেন বিদায়<br />আর দেখিনি তাঁকে আমি এই শহরে, অন্য কোথাও।<br />তখন থেকে খুঁজছি তবু দেননি তিনি আমায় দেখা,<br />জ্বলছে মনে ভিন্ন কালের হলদে কোটের উদাস আভা।</p>
<br /><p>যদি তাঁকে একটা কিছু দিতে পারার একটুখানি<br />সুখের সময় পেতাম তবে ধন্য হতাম রুক্ষ বেলায়।<br />তাঁরই জন্যে দুঃখ-সুখের পদ্য বিছাই দোরে দোরে,<br />হঠাৎ যদি বিবাগী সিএ বর্ষীয়ানের চোখে পড়ে!</p>
<br /><p> (আদিগন্ত নগ্ন পদধ্বনি কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/mukut/মুকুট2018-02-17T18:16:36-05:002023-06-26T08:37:11-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>কোত্থেকে এলেন তিনি? কন্টকিত দুঃস্বপ্ন-দুনিয়া<br />থেকে না কি? যেন এ শহরে প্রবেশের ছাড়পত্র<br />পান নি এখনো কিংবা পেলেও জরুরি সে দলিল<br />হাতছাড়া হয়ে গেছে। খুঁজছেন শ্যামা ও মুনিয়া,<br />খুঁজছেন খরগোশ ফের কি সব দু’চার ছত্র<br />আওড়ান, বোঝা দায়। কখনো-বা ইতস্তত ঢিল<br />দেন ছুঁড়ে, গায়ে তাঁর শতচ্ছিন্ন অদ্ভুত পিরান,<br />পদযুগ নগ্ন ধূলিম্লান। পিরানের ভাঁজে ভাঁজে,</p>
<br /><p>দ্যাখে পুরবাসী, ঝলসিত কী যে নক্ষত্রের মতো<br />সর্বক্ষণ। গাত্রাবাস আমোদিত অনেক বিরান<br />প্রান্তর এবং জলাভূমির প্রাচীন গন্ধে। বাজে<br />শরীর বীণার মতো; মুকুট শোভিত সমুন্নত<br />মাথা তাঁর। ব্যবসায়ী, ফড়ে, হা-ঘরে, চাকুরে<br />লোলুপ তাকিয়ে থাকে; উদাসীন তিনি যান দূরে।</p>
<br /><p> (আদিগন্ত নগ্ন পদধ্বনি কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/matamohir-modhyanho/মাতামহীর মধ্যাহ্ন2018-02-17T18:16:08-05:002023-06-26T21:28:43-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>ত্র্যালবামের এই চেনা জানা<br />সংসারে আজ নেই যে তিনি।<br />কেমন ধূসর, কতো ধূসর ক্রমান্বয়ে<br />হলেন তিনি, বলতে পারো মনো-মুকুর?</p>
<br /><p>গলির কোলে আটচালাটা<br />অষ্টপ্রহর আদর খেতো<br />রৌদ্র ছায়ার। কখনো বা উঠতো কেঁপে<br />বদমেজাজী হাওয়ার ভীষণ ধমক খেয়ে!</p>
<br /><p>আটচালাটা তাঁরই ছোঁয়ায়<br />হয়েছিলো আয়ুষ্মতী।<br />সেই কবেকার খেজুর পাতার ঝিলিমিলি<br />ঝালর রচে আজো এমন দূর দশকে।</p>
<br /><p>একলা দুপুর উদাস হতো<br />আমার মাতামহীর বুকে।<br />রৌদ্র যখন পারদ হ’য়ে টলটলাতো,<br />বলতেন তিনি, ‘দুপুর তুমি কার বলো তো?’</p>
<br /><p>শীতল পাটির স্নিগ্ধতাকে<br />নিতেন শুষে দেহের ভেতর।<br />হঠাৎ কখন বুক জুড়ে তাঁর উঠতো কেঁপে<br />প্রাচীন কোনো পথের রেখা, জানতো না কেউ।<br />এক নিমেষে শীতলপাটি<br />বদলে হতো কাঁটার ভুবন।<br />কখনো ফের তাঁর আয়ত চোখের নিবাস<br />যেতো ভেসে কংকাবতীর চোখের আলোয়।</p>
<br /><p>যাদব চক্রবর্তী মশাই<br />হিশেব টিশেব শেখান নিকো,<br />তবুও তার কাঠের বাক্সে মুদ্রাগুলো<br />হিশেব মতো উঠতো নেচে পরীর মতো।</p>
<br /><p>কিন্তু যখন বেহিশেবী<br />নাছোড় দুপুর আলু থালু<br />করতো তাঁকে, তখন স্মৃতির পরগণাতে<br />উড়তো শুধু পাগলা ঘোড়ার ক্ষুরের ধূলি।</p>
<br /><p>যায়না দেখা কোথাও তাঁকে<br />সকাল সন্ধ্যা দ্বিপ্রহরে,<br />মাঝে-মধ্যে বিষাদ সিন্ধু ছাপিয়ে উঠে<br />উদ্ভাসিত মাতামহীর মুখের রেখা।</p>
<br /><p> (আদিগন্ত নগ্ন পদধ্বনি কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/maifele/মাইফেলে2018-02-17T18:13:42-05:002023-06-26T08:36:48-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>সে রাতে ছিলেন তিনি মাইফেলে। আশি বছরের<br />ম্লান খড়কুটো তাঁর সমগ্র সত্তায়।কী উদাস<br />চক্ষুদ্বয়, শিরাপুঞ্জে বয় মাঘ, শুধু দীর্ঘশ্বাস<br />ঘিরে রয় তাঁকে; দেখছেন ঘরে ঝাড় লণ্ঠনের<br />শোভা নেই; মনে পড়ে, বাইজীর ব্যস্ত নূপুরের<br />মতো বেজেছিলো কত প্রহর এবং বারোমাস<br />ছিলো বেনো সুরের নক্শায়! অন্য নিবিড় আকাশ<br />চকিতে উঠতো জেগে আড়ালে ধামার, খেয়ালের।</p>
<br /><p>ঈষৎ নোয়োনো মাথা তুলে প্রতিপক্ষ শূন্যতার<br />মূক পটে আঁকলেন উদারার গান্ধার মধুর-<br />তখন বাইরে অমাবস্যা, ঘরে অঝোর পূর্ণিমা।<br />দেখি না পাঞ্জবি কিংবা কালো মখমলের টুপি তাঁর,<br />এমন কি চোখ-মুখ। এখন তো নিজে তিনি সুর,<br />শুধু সুর, অজর তরুণ এক, লুপ্ত সব সীমা।</p>
<br /><p> (আদিগন্ত নগ্ন পদধ্বনি কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/montaj/মন্তাজ2018-02-17T18:12:29-05:002023-06-26T08:37:05-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>এই তো হরিণ ছোটে, রত্নরাজি ওড়ায় সুতীক্ষ্ম খুরে, ফুলের মেঘের<br />নরম সংকেত জেগে ওঠে; মুঞ্জরিত গুপ্ত ক্ষেত। আবেগের<br />গলায় পা রেখে দেখেছিতো, তবু জলজ্যান্ত স্বর<br />সোনালি ঘন্টার মতো বাজে চতুর্দিকে আর ঘর<br />বাড়ি উল্টোপাল্টা ছুটে যেতে চায় আকাশের সুনীল মহলে।<br />আপিশ ফটক ছেড়ে পথে নামি, ঠিক সন্ধে হ’লে,<br />কখনো বা আরো পরে বাড়ি ফিরি, বাসের টিকিটে<br />আলতামিরার চিত্র, শিং উঁচানো রৈখিক বাইসন, খিটখিটে<br />বুড়োটা ভীষণ উক্তিময়, হঠাৎ চোয়ালে তার গাছের বাকল পরা<br />রমণী ঝিকিয়ে ওঠে, নিসঙ্গ আমার কাঁধে। কড়া<br />নাড়লেই দরজাটা যাবে খুলে যথারীতি, জামা-<br />জুতো ছেড়ে লম্বা হবো কিছুক্ষণ। ঘনিষ্ঠ পা’জামা<br />চোখের পলকে শূন্যে তাঁবু হয়, ওড়ে; কী প্রাচীন হ্ণদে ঝুঁকে<br />মজি ছায়াবিলাসে, সহসা কারা যেন লাঠি ঠোকে<br />কঠিন মাটিতে, আসে তেড়ে দুর্বার চাদ্দিক থেকে।<br />আমি তো নিবিয়ে আলো শুয়ে পড়ি চাদরে গা ঢেকে।</p>
<br /><p>চোখ বুজলেই দেখি পিতৃপুরুষের কবরস্থানের খুব<br />ডাগর ডোগর ঘাস, সবুজ ছাগল; ডাবা হুঁকো ক্ষিপ্র ডুব<br />দিয়ে সরোবরে মানস হংসের মতো প্লুত শোভা<br />রচনার পরে নাচতে নাচতে দোতারার কুয়াশায়<br />আমার বাড়িটা একি প্রকাশ্যেই মহিলার মুখ হ’য়ে যায়।</p>
<br /><p> (আদিগন্ত নগ্ন পদধ্বনি কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/byaktigoto-raja/ব্যক্তিগত রাজা2018-02-17T18:11:13-05:002023-06-26T08:33:36-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>ব্যক্তিগত রাজার কাছে হাঁটু গেড়ে<br />যাচঞা করি একটি কিছু<br />ইতল বিতল।<br />দৃষ্টিতে তাঁর চন্দ্র ধরে, সূর্য ধরে;<br />জ্বলছে হাতে রক্তজবা<br />চমৎকার।<br />শস্য ক্ষেতে তাঁর পতাকা নিত্য ওড়ে,<br />ফুলের তিনি খুব উদাসীন<br />অধীশ্বর।</p>
<br /><p>সকাল যখন সকাল থেকে<br />যাচ্ছে স’রে অনেক দূরে<br />কিংবা কাছে,<br />রাত্রি আবার রাত্রি থেকে,<br />আমার করুণ অঞ্জলিতে<br />অন্ধকারে উঠবে ফুটে পদ্ম কোনো?</p>
<br /><p>বুকের ভেতর মাছরাঙা আর<br />দীপ্ত আঁশের মৎস্য নিয়ে<br />ঐতো আমার সন্ত রাজা<br />ফুটপাতে নীল একলা হাঁটেন।<br />পার্কে ব’সে বেলুন ছাড়েন,<br />কিংবা বাসের পাদানিতে<br />ঝুলে ঝুলে যান যে কোথায়!<br />কখনো ফের জনসভায়<br />অনেক মুখের একটি মুখে<br />যান মিশে যান,-<br />আবার কখন চিমটে বাজান বৃক্ষতলায়।<br />ব্যক্তিগত রাজা যিনি তিনি বেবাক পোশাক খুলে<br />ঐ চলেছেন ভেসে ভেসে</p>
<br /><p>জ্যোৎস্নাস্রোতে, রৌদ্রমায়ায়।<br />আমি কি তাঁর অমন গহন ছায়া তুলে<br />আমার চোখে পাগল হবো?<br />ঘোর দুপুরে দিলেন ছুঁড়ে কাঁটার মুকুট<br />নগ্ন হাতে আমার মাথাআ লক্ষ্য ক’রে।<br />ব্যক্তিগত রাজা আমার অগাধ রোদে<br />একলা হাঁটেন, একলা হাঁটেন<br />সত্তাজোড়া অসুখ নিয়ে<br />একলা হাঁটেন।</p>
<br /><p>বৈতরণী অন্ধকারে বনবাদাড়ে<br />পায়ের রক্তে যন্ত্রণারই পুষ্প এঁকে<br />একলা হাঁটেন, একলা হাঁটেন<br />ধূসর কোনো ইস্টিশানে,<br />মেঘে মেঘে একলা হাঁটেন।</p>
<br /><p> (আদিগন্ত নগ্ন পদধ্বনি কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/bichched/বিচ্ছেদ 2018-02-17T18:10:21-05:002023-06-26T08:33:15-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>রোল কল করলেই সাড়া দেবে, এমন তো নয়।<br />কিন্তু আছে, একমুঠো রাঙা কোমলতা।<br />লিখবে না, শিখবে না কিছু, নয় ছয়<br />ইত্যাদি কিছুই নয়, ঐতো মাঝে-মধ্যে মাথা নাড়ে<br />ঈশ্বর জপালে কোন শ্লোক। ওখানে থাকারই কথা<br />তার যতক্ষণ থাকা যায়। কখন কে কাড়ে,<br />ভয়, এই ভয়।</p>
<br /><p>রেখো না ফ্লাওয়ার ভাসে, হায়<br />প্রকৃতির থেকে বিচ্ছিন্নতা হেতু ফুল<br />কী বিপুল<br />শূন্যতায় অবেলায় অতিশয় জীর্ণ হ’য়ে যায়।</p>
<br /><p> (আদিগন্ত নগ্ন পদধ্বনি কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/bichar/বিচার2018-02-17T18:08:37-05:002023-06-27T11:48:45-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>সে জানে বিচার হবে তার। কেন? সে-কথা অজ্ঞাত<br />জানে না কী তার অপরাধ। এ কেমন্ কাঠগড়া,<br />সাক্ষী সাবুদও বা কী রকম? বিচারক অনাগত, শুধু<br />চৌদিকে বোলেল্লা হল্লা। কেউ কেউ চোখের ঠোকর<br />মারে তাকে, কেউ কেউ ইতর ভাষায় কী-যে বলে,<br />মলিন ছাতার বাট কিংবা ছড়ি দিয়ে মাঝে-মধ্যে<br />কেউ বা খোঁচায়। ধন্দে করুণ সে, অসহায় আজ</p>
<br /><p>ভুলেছে নিজের নামধাম। অকস্মাৎ ফিসফাস,<br />হয়তো বা এসেছেন তিনি, মানে বিচারক। সে-ও<br />চালায় নিস্পৃহ দৃষ্টি, তার রুক্ষ চুল, চার দিন<br />না-কামানো দাড়ি, শিরদাঁড়া বেয়ে মুহূর্ত গড়ায়।</p>
<br /><p>না, ধর্মাবতার আসেন নি। পুনরায় হট্রগোলা,<br />অট্রহাসি, একজন তাকে ক্ষিপ্র চিমটি কেটে দূরে<br />সরে যায়, অন্যজন নিপুণ ধাক্কায়<br />হঠাৎ মাটিতে ফেলে ছোঁড়ে লাথি, যেন সে টিনের<br />কৌটো; কেউ কর্কশ মধ্যাহ্নে তার মুখের নিকট<br />টলটলে জলভরা গ্লাশ নিয়ে পর মুহূর্তেই<br />ঝটিতি সরিয়ে নেয় হাত।</p>
<br /><p>তৃষ্ণা বাড়ে আরো, দ্যাখে, মৎস কন্যা সমস্ত শরীরে<br />অভ্রের মতন জলকণা নিয়ে অদূরে দাঁড়ানো<br />এ অশ্লীল ভিড়ের মধ্যেই।<br />দ্যাখে কযেকটি হাড়, হয়তোবা নাবিকের, নেচে<br />নেচে আসে, দ্যাখে মৃত ভস্ম ঝেড়ে ফিনিক্স আবার<br />জেগে ওঠে। বিচারক অনাগত। অধৈর্য, অশান্ত<br />দর্শকেরা মেতে ওঠে অলৌকিক দাঁড়িপাল্লা হাতে,<br />দেয় রায়-তাকে শত কুটি করে রক্ত গোধূলিতে<br />নদীতে ভাসাতে হবে। তার শরীরের টুকরোগুলো,<br />দেখলো সবাই, দ্রুত হয়ে গেলো এক শো গোলাপ।</p>
<br /><p>‘এমন মামলা ঘটে, এতে কিছু নতুনত্ব নেই;<br />ব’লে তারা গোলাপের পাপড়ি<br />কুটি কুটি ছিড়ে ফের ওড়ালো অনেক ধূলো-ধোঁয়া।</p>
<br /><p> (আদিগন্ত নগ্ন পদধ্বনি কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/bodle-feli/বদলে ফেলি2018-02-17T18:06:25-05:002023-06-26T08:33:20-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>আমি যে এই আমির খোলস ছেড়ে ছুঁড়ে যখন তখন<br />বেরিয়ে আসি,<br />রৌদ্রেপোড়া জ্যোৎস্না মোড়া এই সমাচার তোমার চেয়ে<br />ভালো ক’রে কেউ জানে না।<br />ফুটফুটে খুব সকালবেলা কিংবা ধরো পিতামাতার<br />বুক-কাঁপানো ঘুম-তাড়ানো ডাগর কোনো মেয়ের মতো<br />মধ্যরাতে<br />এই যে আমি ঘরে বাইরে কেমন যেন হ’য়ে উঠি,<br />তোমার চেয়ে বেশি বলো<br />কেই বা জানে?</p>
<br /><p>আমাকে এক ভীষণ দানো তাড়িয়ে বেড়ায় অষ্টপ্রহর,<br />তীব্র খাঁ খাঁ খিদের চোটে আমার মাংস<br />অস্থি মজ্জা চেটে চুটে হরহামেশা সাবাড় করে।<br />লকলকানো চুল্লিতে দেয় হেলায় ছুঁড়ে,<br />অথবা সে অগ্নিমান্দ্যে ভুগলে তখন খামখেয়ালি খেলায় মাতে।<br />তপস্বী এক বেড়াল সেজে ঘুরে বেড়ায় আশে পাশে<br />আমার ঘরে।</p>
<br /><p>রাত্রিবেলা অনেক দামী রত্ন স্বরূপ দু’চোখ জ্বেলে<br />আঁধার লেপা চুপ উঠোনে কিংবা কৃপণ বারান্দাটায়<br />আলস্যময় কোমল পশুর গন্ধ বিলায়<br />এবং আমি ইঁদুর যেন।<br />আবার কখন রুক্ষ মরু চতুর্ধারে জ্বলতে থাকে,<br />বুকের ভেতর শুশুনিয়া, হাতড়ে বেড়াই জলের ঝালর;<br />মুখের তটে ঝরে শুধুই তপ্ত বালি; কখনো-বা পায়ের নিচে<br />বেজে ওঠে বেগানা হাড়।<br />এই যে এমন দৃশ্যাবলি উদ্ভাসিত যখন তখন,<br />তুমি ছাড়া কেউ দেখে না।<br />হঠাৎ দেখি, মুখোশ-পরা আবছা মানুষ দু-রঙা ঐ<br />ঘুঁটিগুলো সামনে রেখে বললো এসে,<br />‘তোমার সঙ্গে খেলবো পাশা।<br />জনবিহীন জাহাজ-ডেকে দ্যুতক্রীড়ায় মত্ত দু’জন<br />ডাকিনীদের নিশাস হয়ে বাতাস ফোঁসে চতুর্দিকে,<br />মাঝে মধ্যে চোখে-মুখে ঝাপ্টা লাগে লোনা পানির।<br />প্রতিযোগীর শীর্ণ হাতের ছোঁয়ায় হঠাৎ চমকে উঠি,<br />যেন আমি ইলেকট্রিকের শক পেয়েছি অন্ধকারে।<br />প্রতিযোগী কিতাব নিসাড়, নীল-শলাকা আঙুলগুলো<br />দারুণ শীতে মৃত কোনো সাপের মতো ঠাণ্ড এতো-<br />শিউরে উঠি।<br />মুখোশধারীর চক্ষু তো নেই, শুধুই ধু ধু যুগ্ম কোটর।</p>
<br /><p>ভীষণ দানো দুরন্ত সেই পেলব বেড়াল এবং কালো<br />মুখোশ-পরা আবছা মানুষ আসলে সব</p>
<br /><p>তুমিই জানি।<br />ভূমন্ডলে তোমার চেয়ে চমকপ্রদ চতুর কোনো বহুরূপী<br />কে-ই বা আছে?</p>
<br /><p>আপন কিছু স্বপ্ন তোমায় বাট্রা দিয়ে খাট্রা মেজাজ<br />শরীফ করি।<br />তোমার জন্যে টুকরো টুকরো সত্তাটাকে নিংড়ে নিয়ে<br />রূপান্তরের গভীরে যাই কখনো বা কেবল চলি।<br />জানিনা হায়, সামনে কী-যে আছে পাতা-<br />ফুল্ল কোনো মোহন রাস্তা কিংবা বেজায় অন্ধ গলি।<br />তোমার জন্যে সকাল সন্ধ্যা নিজেকে খুব বদলে ফেলি,<br />অন্তরালে বদলে ফেলি।</p>
<br /><p>তোমার জন্যে চড়ুই হয়ে চঞ্চু ঘষি শ্বেত পাথরে,<br />কখনো ফের স্বর্ণচাঁপায় এক নিমিষে হই বিলীন।<br />কখনো বা পিঁপড়ে হ’য়ে দুর্গ বানাই ব্যস্তবাগীশ<br />ছুটে বেড়াই দেয়াল পাড়ায়।</p>
<br /><p>তোমার জন্যে হই শহুরে শীর্ণ কুকুর, দীর্ণ বুকে গাড্ডা থেকে<br />পান করি জল;</p>
<br /><p>তোমার জন্যে হই আসামী ফাঁসির এবং নোংরা সেলে<br />ব’সে ব’সে নিষিদ্ধ ঐ বহর্জীবন নিয়ে কেমন জ্বরের ঘোরে<br />উল্টাপাল্টা স্বপ্ন দেখি, ক্বচিৎ কোনো শব্দ শুনি।<br />তোমার জন্যে যখন তখন নিজেকে খুব বদলে ফেলি, আমূল আমি<br />বদলে ফেলি।</p>
<br /><p> (আদিগন্ত নগ্ন পদধ্বনি কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/fire-jao/ফিরে যাও2018-02-17T18:05:23-05:002023-06-26T08:34:41-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>ফিরে যাও আমার দুয়ার থেকে তোমরা এখন<br />ফিরে যাও; কিছুতেই তোমাদের দেবো না মাড়াতে<br />আমার চৌকাঠ! তোমরাতো রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে<br />নিরুদ্দেশ যাত্রায় দিয়েছো পাড়ি কতো না সমুদ্র<br />অথবা বীরভূমে ধু ধু হয়েছো তৃষ্ণার জল তাঁর<br />প্রহরে প্রহরে আর নজরুল জ্যৈষ্ঠের দুরন্ত<br />মেঘের মতন বাবরি দুলিয়ে মোহন বলাৎকার<br />করেছেন তোমাদের ওপর প্রত্যহ। কবেকার।</p>
<br /><p>জীবনানন্দের জন্যে চকিতে করেছো উন্মোচন<br />করুণ শঙ্খের মতো স্তন এবং সুধীন্দ্র দত্ত<br />নিখিল নাস্তির মৌনে ডুবে তোমাদের নাভিমূলে<br />যৌনাঙ্গের অগভীর কেশে রেখেছেন মুখ ভুলতে<br />মনস্তাপ। তোমরাতো সাজিয়েছো বিষ্ণুদে’র ঘর<br />রাত্রিদিন, দিয়েছো সন্ধ্যায় তুলে শ্বেত বাহু মুখ।<br />এখনো তো বুদ্ধদেব বসুর শয্যায় তোমাদের<br />ব্রার টুক্রো সিঁদুরের রঙ প’ড়ে থাকে ইতস্তত।</p>
<br /><p>ফিরে যাও, আমার দুয়ার থেকে ধিক্কার কুড়িয়ে<br />ফিরে যাও। তোমাদের চোখে তুলে রাখবার ইচ্ছে<br />মৃত টিকটিকি হ’য়ে আছে, বুকে নেবো না উৎফুল্ল।<br />বলে দিচ্ছি, ছলাকলা ব্যর্থ হবে; বিসমিল্লাহ খান<br />যতই বাজান তাঁর পুষ্পিত সানাই, তোমাদের<br />হাত ধ’রে আনবো না বাসরে কখনো। তোমরাতো<br />উচ্ছিষ্ট উর্বশী; ফিরে যাও, ফিরে যাও, যদি পারো<br />নতুন পাতার মতো সজীব শিহর নিয়ে এসো।</p>
<br /><p> (আদিগন্ত নগ্ন পদধ্বনি কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/prayishchitto/প্রায়শ্চিত্ত2018-02-17T18:04:01-05:002023-06-26T18:35:15-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>প্রত্যহ কিছু না কিছু দৃশ্য আমি চুরি ক’রে নিই।</p>
<br /><p>ভিন্ন চরিত্রের রৌদ্র, আলাদা জ্যোৎস্নার<br />বিনম্র কম্পন, অগোচর রাস্তা এবং গ্রন্থের<br />অত্যন্ত রহস্যময় লিপি চুরি করে নিই; সিঁড়ির আড়ালে<br />ছায়াচ্ছন্ন মোহন মিথুন মূর্তি, লোপামুদ্রা ভীষণ বিব্রত<br />শাড়ির আঁচল নিয়ে; একজন বৃদ্ধ, বর্তমানচ্যুত কাছিমের মতো<br />মুখে বর্ষিয়সী মহিলার অবয়বে<br />বসন্তের চেলি দেখে কেমন বিহ্বল। বালকের<br />হাতে গাছ তুলে দেয় ফুল, পুর্ণিমার অন্তঃপুরে<br />কেউ সিদ কেটে<br />অভাবিত রূপালি প্লাবনে ভাসে, স্বদেশী ম্যাডোনা<br />সন্তানের সৎকারের জন্যে পাতে শোকশীর্ণ হাত-<br />কখনো এসব দৃশ্য, কখনো বা অন্য ধরনের<br />দৃশ্যাবলি প্রত্যহ কিছু না কিছু চরি ক’রে নিই।</p>
<br /><p>কোত্থেকে হঠাৎ প্রজাপতি, শ্যামা এসে<br />সহমর্মিতায় দুলে বলেঃ<br />‘এমন তস্কর তুমি আলো-আঁধারিতে,<br />তবে কি পাড়ায় বলো নিন্দে রটবে না?’<br />কখনো মৌচাকে</p>
<br /><p>যদি পড়ে ঢিল, আমি রবীন্দ্রনাথের<br />আপদের মতো করবো ব্যাখ্যা কৃতকর্মের এবং<br />দোরে দোরে কবিতার ফুল চন্দন দিয়ে, যতদিন বাঁচি,<br />প্রায়শ্চিত্ত করবো বারংবার।</p>
<br /><p> (আদিগন্ত নগ্ন পদধ্বনি কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/prarthona/প্রার্থনা2018-02-17T18:02:56-05:002023-06-26T09:36:47-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>ফুলকে সুন্দর বলা হয়, পাখিকেও, নক্ষত্রের<br />নদীর রূপের খ্যাতি আছে যার পর্বতমালার<br />সৌন্দর্য কীর্তিত বিশ্বময়। তুমি বস্তুজগতের<br />অন্তর্গত, প্রকৃতির ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশিনী, কিন্তু<br />তোমার এবং তার সুষমায় পার্থক্য অনেক।<br />তোমাকে সুন্দরী বলা চলে, অন্তত আমি তো<br />তাই বলি; চোখ মুখ, চুল গ্রীবা অথবা চিবুক<br />-সবকিছু যেন সমন্বিত ইন্দ্রজাল বাস্তবিক।</p>
<br /><p>অথচ যখন তুমি বয়সের ভারে হবে নত,<br />পরিত্যক্ত ভাঙা হাটে, হবে লুপ্ত ইন্দ্রজাল, হায়,<br />মসৃণ পেলব ত্বকে অদৃশ্য লাঙল যাবে রেখে<br />শুকনো গাঢ় রেখাবলী। অতএব, হে নিরুপমা, আজ<br />জানাই প্রার্থনা, লোভাতুর কাফ্রি-মৃত্যু অন্ধকারে<br />এক্ষুণি তোমাকে নিয়ে যাক লুটে প্রেমিকের সাজে।</p>
<br /><p> (আদিগন্ত নগ্ন পদধ্বনি কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/probasi/প্রবাসী2018-02-17T18:01:54-05:002023-06-26T09:25:50-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>তুইও যাচ্ছিস চ’লে ক্রমশ যাচ্ছিস চ’লে কেমন জগতে।<br />তোর জগতের কোনো সুস্পষ্ট ভূগোল কোনোমতে<br />ত্রঁকে দিতে পারলেও হয়তো বা হতো বোঝাপড়া বড়ো জোর<br />নিজের মনের সঙ্গে। কাফকা অনধিগম্য তোর,<br />ভূতলবাসীর আর্ত অস্তিত্বের উপাখ্যান ওরে<br />তোর তো জানার কথা নয়, তবু কেন কোন সে বিপাকে, ঘোরে<br />ক্রমশ যাচ্ছিস চ’লে অমন জগতে? কোন মন্ত্র<br />করেছে দখল তোকে, কার ষড়যন্ত্র<br />করছে বিচ্ছিন্ন তোকে মার্বেল, পাখির বাসা আর<br />জনক জননী থেকে? কেবলি আড়ালে ডাকে’ কোন অন্ধকার?</p>
<br /><p>ফুটফুটে শার্ট আর হাফপ্যান্ট প’রে, আড়াআড়ি<br />ঝুলিয়ে সুনীল ব্যাগ, মায়ের আদর খেয়ে খুব তাড়াতাড়ি<br />যখন যেতিস রোজ মর্নিং ইশকুলে, কী-যে ভালো<br />লাগতো তখন। সারাক্ষণ তোর পথ চেয়ে আলো<br />থাকুক কল্যাণ হয়ে, বলতাম মনে মনে। হায়,<br />চুকেছে ক্লাশের পাট আজ, বইপত্র ধুলিম্লান, অসহায়<br />রঙিন মার্বেলগুলো কোথায় যে আছে প’ড়ে। কখনো হাসিস<br />অকস্মাৎ অকারণ কাঁদিস কখনো- এ কেমন খেলা তোর?<br />পাখি শিস<br />দিলেও সম্প্রতি তুই হোসনে খুশিতে তরঙ্গিত। ঘরের যে কোনো কোণ<br />বেছে নিয়ে থাকিস নিঃসঙ্গ ব’সে; ক্রীড়াপরায়ণ ভাই বোন<br />ডেকেও পায় না কাছে তোকে-এই অলক্ষুণে দৃশ্য<br />দেখে দেখে বড়ো কন্টকিত আমি, ভয়ানক নিঃস্ব।</p>
<br /><p>এখন নিঃসঙ্গ আমি, পরিপার্শ্ব কর্কশ বিমুখ, উপরন্তু<br />অত্যন্ত বিরল বন্ধু। বুঝি তাই হৃদয়ের তন্তু<br />কেমন বেসুরো বাজে। হে বালক, হে পুত্র আমার, তুইও শেষে<br />নিলি ঠাঁই গোধূলি জগতে? এ কেমন ভিন দেশে<br />অকালে জমালি পাড়ি? রাত্রিদিন আমাদের সঙ্গে বসবাস<br />ক’রেও প্রবাসী সারাক্ষণ। নীলাকাশে শুকনো ঘাস<br />কিংবা শুধু ঝাঁক ঝাঁক পোকা ও মাকড়<br />দেখিস কি চতুষ্পার্শ্বে? না কি ভয়ংকর হিচককী কাকে ঘর<br />বারবার অতিশয় ভ’রে যেতে দেখে অবিরত<br />দু’হাতে ফেলিস ঢেকে মুখ মন্ত্রচালিতের মতো।</p>
<br /><p> (আদিগন্ত নগ্ন পদধ্বনি কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/protijogi/প্রতিযোগী2018-02-17T18:01:06-05:002023-06-26T09:01:32-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>আমার যুগল পা রক্তে ভাসে।</p>
<br /><p>যেখানে নিজস্ব পদচ্ছাপ<br />আঁকার সাধ ছিলো আশৈশব,<br />সেখানে পৌছুনো সহজ নয়।<br />ছিলো না সম্বল তেমন কিছু<br />খানিক ছিলো শুধু অহংকার।</p>
<br /><p>গড়তে চাইনি তো অকূল নদী,<br />দিগ্বলয় কিংবা পাহাড়ও নয়।<br />গড়ার সাধ ছিলো অন্তরালে<br />একটি চৌকাঠ স্বর্ণময়।</p>
<br /><p>তোমাকে প্রতিযোগী ভেবেই আমি<br />হয়েছি পথচারী অচিন পথে।<br />তাই কি তুমি সেই রুক্ষ পথে<br />রক্তপায়ী কাঁটা বিছিয়ে দিলে?</p>
<br /><p> (আদিগন্ত নগ্ন পদধ্বনি কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/procchonno-ekjon/প্রচ্ছন্ন একজন2018-02-17T18:00:23-05:002023-06-26T08:41:51-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>ভরাট দুপুর আর নিশুতি রাত্তির নিয়ে বুকে<br />প্রত্যহ সে করে চলাফেরা<br />আশেপাশে, কথোপকথনে মাতে পথ ঘাটে যদি<br />ইচ্ছে হয় শুধায় কুশল পাত্রমিত্রদের। কখনো সখনো<br />তাকে যায় দেখা রেললাইনে, কখনো ডোবার ধারে<br />কাটায় ঘন্টার পর ঘন্টা, কী যেন অধীর দেখে নিস্তরঙ্গ<br />জরৎ সবুজ জলে, আঙুলে বসন্ত নিয়ে কখনো চালায়<br />ব’সে মাপে অন্ধকার, জ্যোৎস্না, কখনো-বা<br />ল্যাস্পপোস্টে ব’সে থাকে দু’হাত বাড়িয়ে<br />আকাশের দিকে, যেন নেবে করতলে<br />চমৎকার আসমানী পণ্য-<br />চাঁদের ভগ্নাংশ, নক্ষত্রের ফুলকি অথবা নীলিমা<br />যা’ পড়ে পড়ুক।</p>
<br /><p>ঘরে এসে ঢুকলেই দ্যাখে চার দেয়ালের একটাও<br />নেই কাছেধারে, ছাদ মেঘ হয়ে ভাসে, ‘ঘর তবুতো ঘর”<br />ব’লে সে গভীর নিদ্রা যায় নগ্ন উদার মেঝেতে।<br />স্বপ্নের চাতালে।</p>
<br /><p>লাল বল অতিশয় চপল এবং<br />সবুজ পুষ্পতি ট্রেন বাজায় বিদায়ী বাঁশি, ট্রাফিক পুলিশ<br />চিনির পুতুল হয়ে দিকদর্শী অত্যন্ত নিপুণ।</p>
<br /><p>সে ঘুমের ঘোরে হেসে ওঠে, যখন ভারিক্কী এক<br />কাকাতুয়া আপিসের বড় কর্মকর্তার ধরনে।</p>
<br /><p>কার্যকারণের</p>
<br /><p>হদিশ খুঁজতে গিয়ে বেজায় গলদঘর্ম হন।<br />নিদ্রাল শিয়রে ব’সে পাখি বলে এ কেমন টেঁটিয়া মানুষ,<br />কেমন দুনিয়াছাড়া ঘুমোচ্ছে নিটোল কী-যে, যেন<br />চতুর্ধারে নেই কোনো বালা মুসিবৎ।<br />সে ঘুমের ঘোরে হেসে ওঠে, ভীষণ স্তম্ভিত পোকা ও মাকড়।</p>
<br /><p> (আদিগন্ত নগ্ন পদধ্বনি কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/parabol/প্যারাবল2018-02-17T17:59:18-05:002023-06-26T08:37:49-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>নাড়েন সবল হাত ছুটে আসে নফরের দল<br />তড়িঘড়ি চতুঃসীমা থেকে। তাঁর প্রবল নির্দেশে<br />সমুদ্রে জাহাজ ভাসে, অবিরাম চাকা ঘোরে কল-<br />কারখানায়, তৈরি হয় সেতু দিকে দিকে; দেশে দেশে<br />নিমেষে জমান পাড়ি রাষ্ট্রদুতগণ, কারাগারে<br />জমে ভিড়, সৈন্য বাড়ে রাতারাতি, কানায় কানায়<br />ভ’রে ওঠে অস্ত্রাগার, এমন কি আগাড়ে ভাগাড়ে<br />শকুনের বসে ভোজ। কিন্তু ছোট কোমল ডানায়।</p>
<br /><p>ভর ক’রে পাখি আসে ডালে তাঁর নির্দেশ ছাড়াই-<br />বিখ্যাত কোকিল। ডাকে অন্তরালে, নির্ভীক স্বাধীন।<br />হঠাৎ বলেন তিনি, ‘পাখিটাকে কী ক’রে তাড়াই?<br />থামা তোর গান, নইলে দেবো শাস্তি ওরে অর্বাচীন।<br />তবু সুর আসে ভেসে। কোকিল নয়কো কারো দাস,<br />কখনো পারে না তাকে স্তব্ধ করতে কোনো সর্বনাশ।</p>
<br /><p> (আদিগন্ত নগ্ন পদধ্বনি কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/postar/পোস্টার2018-02-17T17:58:09-05:002023-06-26T08:37:57-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>পথে বেরুলেই পড়ে চোখে। সকাল দুপুর কিংবা<br />বিকেলের খরচা-হ’য়ে-যাওয়া রোদে অত্যন্ত গোচরে<br />আসে ওরা, যেমন দোকানপাট, রাস্তার কুকুর,<br />রঙিন সাইনবোর্ড, কৃষ্ণচূড়া, গম্বুজের পায়রা অথবা<br />ট্রফিক পুলিশ। বুকজোড়া দাবিদাওয়ার নানা<br />উল্কি নিয়ে ওরা স্পষ্ট উপস্থিত দেয়ালে দেয়ালে,<br />প্রগলভ্ পোস্টার, বারো মাস তেরো পার্বণের সাজ<br />এই শহরের; রৌদ্রে জলে চেয়ে থাকে অপলক।</p>
<br /><p>এবং চলতি পথে বেকার যুবক বাসযাত্রী কেউ কেউ,<br />ক্লান্ত কবি, মেজো সেজো কর্মচারী নানা দপ্তরের,<br />সিমেমাগামিনী তন্বী, ফেরিঅলা, দুস্থ বুড়োসুড়ো<br />লোক, ভিড়ভাট্রা অপছন্দ যার- সবাই পাঠক<br />দারুণ মুখর সব পোস্টোরের। অলজ্যান্ত কিছু<br />অক্ষর নক্ষত্র হ’য়ে ভাসে তাদের নিজস্ব নীলিমায়।</p>
<br /><p>আমারও বিষম ইচ্ছে, সমস্ত শহরে দেবো সেঁটে<br />একটি পোস্টার গরীয়ান, শুধু করবো সে লৌকিক<br />ভাষার কিছুটা হেরফের- আমার একান্ত দাবি,<br />চাই, তাকে চাই, শুধু তাকে উৎসবে দুর্ভিক্ষে রাষ্ট্র-<br />বিপ্লবে তাকেই চাই সর্বদাই। আমার পোস্টার<br />মেলবে সুস্নিগ্ধ চোখ, হ’য়ে যাবে নবীন মাথুর।</p>
<br /><p> (আদিগন্ত নগ্ন পদধ্বনি কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/peye-jai/পেয়ে যাই2018-02-17T17:57:08-05:002023-06-26T08:37:50-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>কখনো কিছু না কিছু পেয়ে যাই, বন্ধু উপহার<br />পাঠান হঠাৎ কিংবা প্রবাসী ভায়ের চিঠি আসে<br />সুদূর শহুরে ঘ্রাণ নিয়ে, কখনো দেয়ালে এসে<br />বসে সুদর্শনা পোকা, যেন তার কপালের টিপ।</p>
<br /><p>কখনো বা পেয়ে যাই অন্ধকারে আমার ঠোঁটের<br />তীরে তার দীপ্ত তন্বী অধর তরণী। অন্য ঘর<br />থেকে ভেসে-আসা চঞ্চল চুড়ির কাচরেলা শব্দে<br />বুকে জেগে ওঠে লক্ষ অশ্বারোহী; ক্ষুরধ্বনি পাই।</p>
<br /><p>কোনো কোনোদিন খুব শান্ত হরিদ্রাভ অপরাহ্নে<br />সেলাইয়ের কাজ ছেড়ে কখনো মা এমন তাকান<br />নিবিড় আমার দিকে, সমস্ত শৈশব দুলে ওঠে-<br />চকিতে আবার পাই তাঁকে কাছে সতেজ তরুণী।</p>
<br /><p>কখনো গলির খঞ্জ কিংবা বন্ধ নীলাভ দরজা<br />আমার মগজে কবিতার কিছু পঙ্ক্তি গুঁজে দেয়।</p>
<br /><p> (আদিগন্ত নগ্ন পদধ্বনি কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/no-exit/নো এক্সিট2018-02-17T17:56:29-05:002023-06-26T08:37:23-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>আমাকে যেতেই হবে যদি, তবে আমি<br />যীশুর মতন নগ্ন পদে চলে যেতে চাই। কাঁধে<br />ক্রূশকাঠ থাকতেই হবে কিংবা কাঁটার মুকুট<br />মাথায় পরতে হবে, এটা কোনো কাজের কথা না।<br />এসব মহান<br />অলংকার আমার দরকার নেই। বাস্তবিক আমি<br />এক হাত নীল ট্রাউজারের পকেটে রেখে অন্য হাত নেড়ে নেড়ে<br />সিঁড়ি বেয়ে ‘আচ্ছা চলি, তাহলে বিদায়’ ব’লে একটি উচ্ছিষ্ট<br />রাত্রি ফেলে রেখে<br />নির্জন পেছনে<br />অত্যন্ত নিভৃত নিচে, শিরদাঁড়াময়<br />নক্ষত্রটোলার পত্রপত্রালির ঈষৎ দুলুনি নিয়ে<br />খুব নিচে চলে যেতে চাই।</p>
<br /><p>অবশ্য সহজ নয় এভাবে চকিতে চলে যাওয়া। ত্র্যাশট্রেতে<br />টুকরো টুকরো মৃত সিগারেট, শূন্য গ্লাশগুলো<br />বৈধব্যে নিস্তব্ধ আর টেবিলে বেজায় উল্টোপাল্টা পান্ডুলিপি<br />-প্রস্থানের আগে<br />এই সব খুঁটিনাটি বেকুব অত্যন্ত আর্তস্বরে কিছু ডাক দেয়।</p>
<br /><p>তখন আমার বুকে তিন লক্ষ টিয়ে<br />তুমুল ঝাঁপিয়ে পড়ে, কয়েক হাজার নাঙা বিকট সন্যাসী<br />চিমটে বাজাতে থাকে চতুর্ধারে, পাঁচশো কামিনী<br />দুলুনিপ্রবণ স্তন বের করে ধেই ধেই নাচ শুরু করে।<br />আর আমি চোখ-কান বন্ধ ক’রে সাত তাড়াতাড়ি<br />বিদায় বিদায় ব’লে ক্ষিপ্র দৌড়বাজের মতন<br />ছুটে যাই, ছুটে যাই দূরে অবিরত। ইচ্ছে হলেও প্রবল<br />কাউকে দিই না অভিশাপ; এতদিনে জেনে গেছি<br />আমার কর্কশ অভিশাপে</p>
<br /><p>কোনো নারী গাছ কিংবা প্রতিধ্বনি হবে না কখনো,<br />অভিজ্ঞান অঙ্গুরীয় ফেলবে না হারিয়ে নৌকোয় কোনো শকুন্তলা,<br />এমন কি খসবে না একটিও পালক বিবাগী মরালের।<br />সার্কাস ফুরিয়ে গেলে এক্রোব্যাট অথবা ক্লাউন<br />সবাই বিষণ্ন হয় অগোচরে হয়তো বা। কেউ ছেড়ে চুল,<br />অন্ধকার তাঁবুর ভেতর কেউ খায় হাবুডুবু<br />দুঃস্বপ্নের ক্ষুধার্ত কাদায়,</p>
<br /><p>কেউ বা একটি লাল বলের পেছনে<br />ছুটতে ছুটতে কৈশোরের সমকামী প্রহরে প্রবেশ করে,<br />বমিতে ভাসায় মাটি কেউ, কেউ উত্তপ্ত প্রলাপে!</p>
<br /><p>হে আমার বন্ধুগণ, দোহাই আপনাদের, দেরি সইছে না;<br />দিন বলে দিন,<br />তা’হলে আমি কি এই সার্কাসের কেউ? আপনারা<br />যে যাই বলুন, এই গা ছুঁয়ে বলছি মাঝে-মধ্যে,<br />না, ঠিক হলো না, প্রায়শই বলা চলে,<br />নিজেকে ভীষণ অপরাধী মনে হয়। স্বজনের লাশ<br />কবরে নামিয়ে চটপট</p>
<br /><p>ঢোক ঢোক গিলতে পারি মদ খুব ধোঁয়াটে আড্ডায়,<br />প্রিয়তম বন্ধু<br />আত্মহত্যা করেছে শুনেও নিদারুণ<br />মানসিক নিপট খরায়<br />অবৈধ সংগম ক’রে ঘামে নেয়ে উঠতে পারি সহজ অভ্যাসে।</p>
<br /><p>আমাকে যেতেই হবে যদি, তবে আমি<br />যীশুর মতন নগ্ন পদে চলে যেতে চাই। অথচ হঠাৎ<br />একজন তারস্বরে বলে ওঠে, ‘নো এক্সিট, শোনো<br />তোমার গন্তব্য নেই কোনো’। না থাকুক, তবু যাবো,<br />দিব্যি হাত নেড়ে নেড়ে চলে যাবো, কেউ</p>
<br /><p>বাধা দিতে এলে<br />বিষম শাসিয়ে দেবো, লেট মি এলোন, স’রে দাঁড়াও সবাই……<br />লক্ষ্মী কি অলক্ষ্মী আমি চাই না কিছুই, চাই শুধু যেতে চাই।</p>
<br /><p> (আদিগন্ত নগ্ন পদধ্বনি কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/nirupomar-kache-prostab/নিরুপমার কাছে প্রস্তাব2018-02-17T17:55:39-05:002023-06-27T10:36:19-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>বকুলতলায় যাবে? তুমি বড়ো সন্দেহপ্রবণ,<br />সেখানে, বিশ্বাস করো, সাপখোপ নেই, মাস্তানের<br />আড্ডা নেই। বিপদের আবর্তে তোমাকে কোনোদিন<br />ডোবাতে পারি না। পাখি আসে সেখানে এবং<br />কয়েকটি প্রজাপতি হয়তো-বা। কবিতার বই<br />ইচ্ছে করলে আনতে পারো, পাশাপাশি পড়বো দু’জন।</p>
<br /><p>সেকেলে টেকেলে যা-ই ভাবো, প্রাণ খুলে যত দুয়ো<br />দাও আধুনিকা, তবু তোমাকেই বকুলতলায়<br />নিয়ে যাবো; করো না বারণ। যদি পাখি না-ও ডাকে,<br />না-ও থাকে এক শিখা ঘাস সেই বকুলতলায়,<br />তবু নিয়ে যাবো। না, ওভাবে ফিরিয়ে নিও না মুখ,<br />ভেবো না আমার নেই কালজ্ঞান। বস্তুত আমিও</p>
<br /><p>অনেক উত্তাল দীপ্র মিছিলে শামিল হ’য়ে যাই,<br />যখন ভিয়েতনামে পড়ে বোমা, আমায় হৃদয়<br />হয় দগ্ধ গ্রাম মেঘে মেঘে খুনখারাবির চিহ্ন<br />খুঁজে পাই; উপরন্তু বসন্তের পিঠে ছুরি মেরে<br />হত্যাকারী সেজে বসে আছি। কেন এ প্রহরে<br />তোমাকে হঠাৎ দূরে বকুলতলায় যেতে বলি?</p>
<br /><p>বহুকাল হলো আমি অতিশয় নষ্ট হয়ে গেছি।<br />আমার ভেতর এক দুঃস্বপ্ন-দুনিয়া পরিব্যাপ্ত,<br />ভয়াল নখরময় প্রাণীকুল অন্তর্গত তন্তু<br />ছিঁড়ে খুঁড়ে খায় সর্বক্ষণ এবং জীবাশ্মগুলো<br />জ্যান্ত হয়ে ওঠে ভয়াবহভাবে হঠাৎ কখনো।<br />বহুকাল হলো আমি অতিশয় নষ্ট হয়ে গেছি।<br />বকুলতলায় ব্যাপ্ত আমার উধাও শৈশবের<br />উন্মুখর দিনগুলি, সেই রাঙা পবিত্রতা তোমার সত্তায়<br />মেখে দিতে চাই। তবু, হে মহিলা, তুমি কি যাবে না?</p>
<br /><p> (আদিগন্ত নগ্ন পদধ্বনি কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/natok/নাটক2018-02-17T17:54:45-05:002023-06-26T08:37:14-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>নাটক চলছে সগৌরবে আর দর্শকে দর্শকারণ্য, তিল<br />ধারণের ঠাঁই নেই কোনোখানে। কুশীলবদের অবয়ব<br />দৈত্যমার্কা নয়, যমদূত নয় ওরা, বাস্তবিক<br />মাটির মানুষই বলা চলে। দৃশ্যে আছে কিবা নেই,<br />বোঝা দায়। উইংস-এর আড়ালে নিপুণ<br />নেপথ্য-কথক অনর্গল আওড়ায় বাক্য বাক্যাংশ এবং<br />সেই মতো নানা কুশীলব কী যে বিড়বিড় করে প্রতি অঙ্কে।<br />দৃশ্য আছে ঠিকঠাক, অথচ তেমন নাটকীয়তাই নেই।</p>
<br /><p>আমিও দর্শক এই নাটকের। জড়োসড়ো, বোকা ভঙ্গিমায়<br />আছি এক কোণে ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টি মেলে। কখবো না<br />চোখ বুজে থাকি, শুনি, বলে কেউ-নাটকটা মজাদার বুঝোছা বান্ধব?<br />প্রতি পদে ত্র্যাকশন দেখছো না? বিষম রোমাঞ্চকর লাগে।<br />নাটকের বিষয় বাস্তবধর্মী চমৎকার, মানে হত্যা।<br />রূপক প্রতীক নেই, ব্যাপারটা খোলামেলা খুবই।</p>
<br /><p>এ নাটকে আগাগোড়া প্রতিটি দৃশ্যেই মনোহর<br />নানান খেলার সাজে হত্যা করে পায়চারি। কখনো সে করে<br />নান্দীপাঠ, কখনো বা ভূমিকা ছাড়াই স্বয়ংক্রিয়<br />নৈপুণ্যে বাড়ায় হাত, পিয়ানো বাজায়, মোমগন্ধী সুরে গায়<br />গান, ছড়ি নেড়ে নেড়ে স্বগত ভাষণে ওঠে মেতে,<br />মাথায় টুপিটা খুলে নিয়ে করে বাউ। হত্যা যেন<br />ফুরফুরে চড়ুইভাতি চৌরাস্তায় কিংবা বন-বাদাড়ে, টিলায়।</p>
<br /><p>কখন যে গুলি কার খুলি চকিতে উড়িয়ে দেবে,<br />শীতল মাথায় কে বা খুন করতে করতে হেসে হবে খুন ,<br />পড়বে লুটিয়ে কৌচে অথবা ভায়ের<br />বন্ধুর গরম ঝটিতি রুমালে মুছে নিয়ে<br />গুনগুনিয়ে ফিরবে নিষিদ্ধ আস্তানায় ট্রালা লালা-<br />সঠিক যাবে না বলা। এ নাটকে হত্যা মানে চৈত্রে কি আশ্বিনে<br />বিকেলে পুকুর পাড়ে ছিপ ফেলে মাছ ধরা অথবা ফুলের<br />পাপড়ি কিংবা গাছের সবুজ পাতা ছেঁড়া,<br />দাঁতে ঘাস কাটা।</p>
<br /><p>এ নাটকে কুশীলব যখন তখন ছোঁড়ে পিস্তল, বন্দুক,<br />যেমন বালক সুখে বাগিয়ে সাধের টয় গান<br />যথেচ্ছ ট্রিগার টেপে। রুমাল চাপে না কেউ চোখে,<br />হেসে যাচ্ছে গড়াগড়ি; দর্শকেরা দেয় তালি কী উল্লাসে!<br />আমিও কি তাদের সামিল হবো? নিজের অজ্ঞাতে<br />তুমুল বাহবা দেবো পাত্র-পাত্রীদের? নাকি দ্রুত<br />সিট ছেড়ে চলে যাবো? লতার আড়ালে যাবো অলক্ষ্যে সবার<br />অথবা খুঁড়বো গর্ত, তুলবো মিনার? কিংবা নাট্যকার সমীপে ব্যাকুল<br />হাঁটু গেড়ে করজোড়ে করবো নিবেদন-নাটকের<br />বিষয়টা আগাগোড়া পাল্টে দিন হে দ্রষ্টা, হে স্রষ্টা দয়াময়!</p>
<br /><p> (আদিগন্ত নগ্ন পদধ্বনি কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/tumii-gontobyo/তুমিই গন্তব্য2018-02-17T17:54:08-05:002023-06-26T08:39:46-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>সকালে গলির মোড়ে, দ্বিপ্রহরে রেস্তোঁরায়, অপরাহ্নে পার্কে,<br />সন্ধেবেলা বাস-স্টপে, মধ্যরাতে ইস্টিশানে কিংবা<br />গিজগিজে বাণিজ্যিক এলাকায়, দরজির দোকানে, ঘ্রাণময়<br />সেলুনে বকুলবনে, যেখানেই যখন ডাকোনা কেন তুমি,<br />তোমার কাছেই যেতে হয়।</p>
<br /><p>কী শীত কী গ্রীষ্ম<br />সকল ঋতুতে</p>
<br /><p>তোমার কাছেই যেতে হয়। নিমেষেই কী বিপ্লব<br />বিস্ফোরিত অস্তিত্বের নিঝুম পাড়ায়। অকস্মাৎ<br />অন্তরাল থেকে নীল পতাকা উড়িয়ে দাও আর<br />রক্তচক্ষু ট্রাফিক বাতির মতো পিতার নিষেধ,<br />মাতার কাতর অনুনয়,<br />হৈ হুল্লোড়ময় রাস্তার কিনারে ফেলে রেখে<br />তড়িঘড়ি পা বাড়াই তোমারই উদ্দেশে। বার-বার<br />ঝঞ্ছাহত চৈতন্যের দায়ভাগ নিয়ে<br />তোমার কাছেই যেতে হয়।</p>
<br /><p>কোনো কোনো রাতে কাক না জাগার আগেই কী ছলে<br />আমাকে জাগিয়ে দাও। শোচনীয় পিপাসায় গলা<br />কাঠ হ’য়ে যায়, তুমি জলের বদলে স্পঞ্জ থেকে<br />বিন্দু বিন্দু সির্কা নিংড়ে দাও। কখন যে হেলাভরে<br />আমাকে দেয়াল ঠুকে খুন করো কর্কশ পেরেকে,<br />চৈত্য থেকে টেনে এনে আবার বাঁচাও-বোঝা দায়।<br />নিজের রক্তের নক্শা দেয়ালে মেঝেতে দেখে দেখে<br />কতো যে নিষ্ফল বেলা কাটে, পাই না তোমার সাড়া<br />বহুদিন। যেন তুমি নেই<br />ত্রিলোকে, ছিলে না কোনোদিন।<br />পুনরায় অকস্মাৎ বেজে ওঠে রক্তের ভেতর<br />সোনাটার মতো<br />তোমার গোপন টেলিগ্রাম।<br />আলুথালু গৃহিণী নদীকে<br />প্রবল আনেন ডেকে চোখে,<br />আমার পায়ের তটে আছড়ে পড়েন বার-বার,<br />মেয়েটা কেবলই টানে পাঞ্জাবির খুট আর আমি<br />যেন শক কিংবা হুন, দু’পায়ে মাড়িয়ে<br />আঁচল, পুতুল ছুটে যাই ভূতগ্রস্ততায়<br />যা’ কিছু সম্মুখে পাই<br />লন্ডভন্ড ক’রে সব ছুটে যাই। জানি,<br />তুমিই গন্তব্য চিরদিন।</p>
<br /><p>কোন্ ইন্দ্রজাল ধরো অক্ষি তারকায়?<br />হাতের মুদ্রায়?<br />বাসি স্বপ্নে মশগুল তাজা যুবা, বিবেচক প্রৌঢ়,<br />এমনকি শ্লেষ্মা-কবলিত বেতো বৃদ্ধ,<br />যাঁর ভূরুসুদ্ধ কী রকম শাদা হয়ে গেছে, তারা<br />তোমার পেছনে ছোটে দিগ্ধিদিক, তবে<br />কেন আমি মিছেমিছি দাঁড়াবো সংকীর্ণ কাঠগড়ায়?<br />খেলাচ্ছলে ফেলে যাও আমার দুয়ারে<br />কী উজ্জ্বল রাঙা চিরকুট, বুঝি তোমারই ঠিকানা।<br />এবং আড়াল থেকে দ্যাখো খুঁজে পাই কিনা, দ্যাখো<br />অপার কৌতুকে<br />আমার সকল কিছু পাতালে ভাসিয়ে।<br />আমি তো কুড়িয়ে সেই লিপি সংসার শ্মশান ক’রে ছুটি।</p>
<br /><p>বুকের ভেতর কম্পমান বেয়াল্লিশ বছরের ভীতু হাড়,<br />যদি বনবাদাড় পেরিয়ে, সারা রাত খাদ ঘেঁষে<br />হাঁটার পড়েও,<br />টপ্কে অজস্র কাঁটাতার<br />বৈদ্যুতিক বেড়া<br />আখেরে সেখানে গিয়ে তোমাকে না পাই,<br />যদি পৌঁছে যাই, হায়, ভুল ঠিকানায়!</p>
<br /><p> (আদিগন্ত নগ্ন পদধ্বনি কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/tini-surjaster-lok/তিনি সূর্যাস্তের লোক2018-02-17T17:53:05-05:002023-06-26T08:39:23-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>তিনি সূর্যাস্তেরই লোক; অবশ্য অজস্র সূর্যোদয়<br />সত্তায় রেখেছে জমা অন্তর্লীন আভা, ছড়িয়েছে<br />প্রাণবীজ পলে পলে তন্তুতে তন্তুতে আন্তরালে,<br />তবু অস্তরাগ<br />ডাক দেয় তাঁকে বারবার। এত যে কুহক আছে<br />সেই বর্ণময় নিরুচ্চার ডাকে, তিনি</p>
<br /><p>জানেন নি আগে।<br />বেশভূষা জীর্ণ আভিজাত্যের সুদূর ঘ্রাণে ভরপুর, চোখে<br />দেয়ালে দেয়ালে খোজে চিত্রমালা পূর্বপুরুষের। কখন যে<br />চোখের দিগন্তে মেঘ জমে ম্লান রক্তজবার মতন, প্রাণে<br />সুরেলা ধ্বনির প্রেত নেচে ওঠে, দর্পণে দর্পণে<br />প্রতিবিম্ব নানা দোলাচলে ভাসমান অপসৃত।<br />কখনো-বা ফ্রয়েডীয় লোকে</p>
<br /><p>নিজের অস্তিত্ব কী উদ্ভভট<br />ঘেরাটোপে ছায়াচ্ছন্ন দেখে চমকে ওঠেন খুব, বারবার<br />পালা ক’রে দ্বৈত সত্তা যায় হেঁকে কর্কশ প্রান্তরে,<br />কখনো নদীর বাঁকে কখনো অরণ্যে, কখনো বা<br />বালিয়াড়ি ঘেঁষে, চোরাবালিতে কখনো।</p>
<br /><p>রুমালে চাপেন নাক যখন তখন। পচা গন্ধে<br />টেঁকা দায় ভেবে নক্শাময় আলমারি খুলে তিনি<br />আতরের উজাড় শিশিটা নেড়ে চেড়ে হয়ে যান<br />দীর্ঘশ্বাস, দুর্গন্ধের থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন ক্রমশ,<br />অথচ নাছোড় গন্ধ করছে বিব্রত তাঁকে রাত্রিদিন।<br />বুঝি এই স্বস্তি তাড়ানিয়া</p>
<br /><p>গন্ধ তাঁর অস্তিত্বেরই। তবে কি নিজেরই শব ব’য়ে<br />বেড়াচ্ছেন ভাবলেশহীন? ধ্বংস্তূপ</p>
<br /><p>অথবা পাখির<br />দগ্ধ বাসা চোখে পড়লেই স্বগৃহের কথা মনে পড়ে তাঁর।</p>
<br /><p>এখনতো চোখ নেই গ্রন্থের পাতায় কিংবা জরুরি দলিলে,<br />আপাতত নিসর্গের মিতালিতে নিস্পৃহ, কী এক<br />নিষ্করুণ শোভাযাত্রা দৃষ্টির সম্মুখে। দেখছেন অতিদ্রুত<br />গজাচ্ছে বিষাক্ত প্রাণীভুক গাছ বসতবাটির<br />চতুর্ধারে, আর পরগাছা ক্রমশ উঠছে বেড়ে<br />নিজেরই শরীরে তাঁর, কংকালের বুকে কাক জুড়েছে পাঁচালি।<br />বারান্দায় পায়রার ঝাঁক<br />বাজপাখি হয়ে তেড়ে আসে, নিরীহ পুতুলগুলো<br />হয়ে যায় ঘাতকের মতো অবিকল, দেখছেন<br />তিনি; শয্যাতল থেকে কতিপয় মৃত নীল হাত<br />শূন্য পেয়ালার দিকে কেবলি পৌঁছুতে চায়, পদহারা<br />জুতোগুলো নৃত্যপর চতুর্দিকে, কড়িকাঠে অসংখ্য যুবতী<br />দমবন্ধু ক্রূর অবেলায়</p>
<br /><p>উদ্বন্ধনে ভয়ানক নিষ্প্রভ এবং আশেপাশে<br />পুরোনো সিঁড়ির ধাপে বারান্দায় ছাদে দন্তহীন<br />বৃদ্ধেরা ক্রন্দনরত, উন্মত্ত শিকারী কুকুরের<br />পাল ক্রমাগত<br />খুঁড়ছে ঘরের মেঝে, তিনি দেখছেন। চোখে তাঁর<br />উৎসবমুখর নৌবহর ডুবে যাচ্ছে এবং বুকের মধ্যে<br />ভস্মীভূত ঘরবাড়ি, জঠরে ক্রোধান্ধ বাঘ, রুক্ষ<br />মরুভূমি প্রসারিত ঘরে।</p>
<br /><p>আতংক বিলাস নয় তাঁর, বাস্তবিক<br />ভীতির পেরেকে কন্টকিত সত্তা, কবন্ধের দল<br />স্মৃতির ওপরে কুচকাওয়াজ করছে অবিরাম।<br />তিনি তো দর্পণ স্বকালের।</p>
<br /><p>শোনেন অবাক হয়ে কতো<br />নতুন শব্দের ঝাঁক, নব্য গায়েনের নীলাম্বর-ছোঁয়া স্বর<br />কেমন অস্বস্তিকর অথচ বাঁচার মীড়ে মীড়ে<br />ঝংকৃত পথের ধারে। কেউউ ‘সূর্যাদয় চাই’ বলে<br />চৌরাস্তায় আকর্ষণ করে ভিড় আর<br />বিষাদের প্রতিমূর্তি তিনি</p>
<br /><p>জনশূন্যতায় বন্ধ আপন প্রকোষ্ঠে<br />নিজেকে মেশান শুধু দূরগামী মেঘে, তিনি সূর্যাস্তেরই লোক।</p>
<br /><p> (আদিগন্ত নগ্ন পদধ্বনি কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/tobe-mononeo/তবে মননেও2018-02-17T17:52:42-05:002023-06-26T08:39:26-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>আড়ালেই থাকি, ত্রস্ত সর্বদাই; ব্যস্ত ভিড় ঠেলে<br />কবুই ভরসা ক’রে সম্মুখে এগিয়ে যাওয়া আজো<br />হলো না আমার। পাদপ্রদীপের আলো কোনোদিন<br />পড়বে না মুখে জানি। তা ব’লে ভাগ্যের কথা তুলে<br />বারোমাস কাউকে দিই না দোষ। হাটে মাঠে নয়,<br />মৃদু আলো-আঁধারিতে গৃহকোণে একা একা কাটে</p>
<br /><p>প্রায়শ আমার বেলা। খেয়ালের বশে বাস্তবের<br />সঙ্গে খেলি কানামাছি-লেখার টেবিলে অকস্মাৎ<br />দেখে ফেলি ডোরাকাটা উদ্দাম জেব্রার দল কিংবা<br />গন্ডারের একরোখা দৌড়, কখনো লেগুন নম্র<br />ওঠে জেগে আদিম জলের মায়া নিয়ে। স্নানার্থিনী<br />কটি থেকে দেয় ছেড়ে প্রাচীন বাকল, প্রেমবিদ্ধ<br />বংশীবাদকের সুরে পাথর, মরাল আসে ছুটে,<br />সিংহ আর মেষ থাকে শুয়ে পাশাপাশি, কখনো বা<br />জিরাফ বাড়ায় গলা বইয়ের পাহাড় ফুঁড়ে, দেখি<br />বারংবার টেবিলের ইন্দ্রজালঃ ট্রয়ের প্রাচীর<br />শালের ঘর্মাক্ত আলোয় বড়ো বেশি নিঃস্ব, যেন<br />প্রেতপুরী; এক কোণে বাংলার মাটিলে ঘর<br />প্রস্ফুটিত, অন্যদিকে পদ্যাক্রান্ত নিশি-পাওয়া কাফে।</p>
<br /><p>বইয়ের পাতায় খুঁজি মুক্তির সড়ক বদ্ধ ঘরে<br />প্রত্যহ, তত্ত্বের ঢক্কা নিনাদে কখনো কানে মনে<br />লাগে তালা; অহর্নিশ মননের রৌদ্রজলে বাঁচা<br />সার্থক মেনেছি, তবু জানি সারাক্ষণ দর্শনের<br />গোলক ধাঁধায় ঘুরে তথ্যের খড়-বিচালি ঘেঁটে<br />ক্লান্ত লাগে, বুদ্ধির সম্রাট ভয়ানক মুখোশের<br />আড়ালে প্রচ্ছন্ন থেকে হানেন সন্ত্রাস। বাস্তবিক<br />মননে থাকলে মেতে সর্বদা অথবা শিল্পে ম’জে<br />রইলে অগোচরে মনে জটিল অরণ্য জেগে ওঠে,<br />জীবন-বিরোধী শ্বাপদের খুরে মগজের কোষ<br />ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যায়। তাই বদ্ধ ঘর ছেড়ে দূরে<br />মাঝে-মধ্যে যাওয়া ভালো, ভালো সূর্যাস্তের স্তবময়<br />টিলায়, নদীর শান্ত বাঁকে যাওয়া। তবে মননেও<br />খেলবে উদার হাওয়া, শিল্প হবে দীপ্র, মানবিক।</p>
<br /><p> (আদিগন্ত নগ্ন পদধ্বনি কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/tokkhok/তক্ষক2018-02-17T17:44:39-05:002023-06-27T14:28:09-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>আমার ঘরে ডাকে, রাত্রিদিন ডাকে<br />ভয়াল সুরে এক চতুর তক্ষক।<br />স্বস্তি নেই মনে, ঘুরছি এলোমেলো,<br />অথচ সে-ই নাকি আমার রক্ষক!</p>
<br /><p>নানান ছলে তার সঙ্গে অবিরাম<br />খুঁজছি বস্তুত সুযোগ সন্ধির।<br />ভীষণ তার ডাকে নিয়ন্ত্রিত আমি,<br />বাস্তবিক এ জীবন বন্দীর।</p>
<br /><p>অন্ধকার যেন জ্যান্ত অতিশয়,<br />চতুর্ধারে আলো এখন কী দুস্থ।<br />ধ্বস্ত চোখ মুখ, চৈতন্যে আঁধি;<br />ঘুরছি নরলোকে একাকী, অসুস্থ।</p>
<br /><p>রক্তে জমে শুধু তুষারকণা, প্রাণে<br />শংকা সর্বদা গুপ্ত হত্যার<br />দিগ্বলয়ে ঘোর মত্ত বৈশাখী,<br />কাঁপছে থরোথরো ভিত্তি সত্তার।</p>
<br /><p>দুঃস্বপ্নে চেনা শহর লুণ্ঠিত;<br />অগ্নি ক্রমাগত করছে বনগ্রাস।<br />রণচন্ডী মাটি দেয় না নির্ভর,<br />নিখিল প্রাণীকুলে ব্যাপক সন্ত্রাস।</p>
<br /><p>এড়াতে পারিনা যে ঘরের শক্রুকে;<br />আড়াল থেকে দ্যাখে চতুর তক্ষক।<br />দেয়ালে ঠুকি মাথা, কখনো ঢাকি মুখ,<br />তবে কি সে-ই হবে আমার ভক্ষক?</p>
<br /><p> (আদিগন্ত নগ্ন পদধ্বনি কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/jiboshmo/জীবশ্ম2018-02-17T17:43:58-05:002023-06-26T08:35:28-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>ঘরের জন্যেই ঘুরি, সারাদিনমান ঘুরি, অথচ কোথাও<br />চার দেয়ালের কিংবা জ্যোৎস্না-ছাওয়া, রৌদ্রের গুঞ্জনময় কোনো<br />ছাদের নিশ্চিন্তি নেই। থিয়েটার গিয়ে দেখি, হায়,<br />এ কেমন বেয়াড়া উদ্ভট স্থান? মঞ্চ নেই, অভিনেতা নেই,<br />নেই দর্শকের ভিড়। একজন বিড়বিড় বিষম অস্পষ্ট<br />কী একটা পড়ছেন, খুব দ্রুত ওল্টাচ্ছেন পাতা, হয়তো বা নাট্যকার,<br />কিন্তু পান্ডুলিপি তাঁর বর্ণমালাহীন। কী-যে হয়,<br />আমি বাগানের কাছে যেতে চেয়ে নিষ্পাদপ মরুন গভীরে<br />চলে যাই। নক্ষত্রপ্রতিম পত্রপূর্ণ<br />গাছ দেখবো না কোনখানে, এ কেমন বেখাপ্পা বসতি?</p>
<br /><p>ওখানে কে পড়ে আছে, অধো মুখ, দোমড়ানো টিনের মতন?<br />কাটা সেপাইয়ের ভাগ্যের ভূগোল কাঁটাতার-দীর্ণ,<br />নির্দয় কর্দমময়। তার কাছে ফুল হাতে যাই,<br />ফুল ধুলো হ’য়ে যায়। তবে কি আমিও<br />ধস্-আতংকিত</p>
<br /><p>খনি-শ্রমিকের মতো ভূ-গর্ভস্থ কয়লার দেয়ালে<br />ভীষণ আটকা পড়ে গেছি উদ্ধারের অতীত? তবে কি<br />আঙুল রক্তাক্ত ক’রে লুপ্ত হবো খনিজ আড়ালে?<br />যেখানে দাঁড়িয়ে আছি, সে-জমিনও আজ<br />যথেষ্ট অনড় নয়, খুঁটিগুলো কেবলি এলিয়ে পড়ে। দৃঢ়<br />ভূমি কোথাও কি নেই? যেদিকে তাকাই,<br />সাগর শুকিয়ে যায়, ঝরনা রূপান্তরিত পাষাণে,<br />মায়ের সিন্দুক প্রতিধ্বনিময় গুহা, অশরীরী<br />তান্ডবে দুঃস্বপ্নাকীর্ণ। তাকালে গাছের দিকে, পাতা<br />পোড়া মাটি হয়ে ঝরে, শেকড় সাপের মতো ফণা তুলে আসে।<br />এমন কি তোমাকেও দেখি না মিটিয়ে তৃষ্ণা, পাছে<br />তোমার গহন ঐ নয়ন পল্লব ভস্মীভূত হয়, তুমি<br />নিমেষে জীবাশ্ম হয়ে যাও।</p>
<br /><p> (আদিগন্ত নগ্ন পদধ্বনি কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/chair-oswostikor/চেয়ার অস্বস্তিকর2018-02-17T17:42:55-05:002023-06-26T08:33:35-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>চেয়ার অস্বস্তিকর, উঠে দাঁড়ালেও স্নায়ুতন্ত্রী<br />হয়না ঝংকৃত নিরাপদ মৃদু তালে, ফুলগুলি<br />ব্যর্থ আজ। উদ্বেগের খচখচে কাঁটা ক্রমাগত<br />বিঁধছে আমার মনে; ক্ষণে ক্ষণে হাওয়ায় হাওয়ায়<br />কেমন পাশব গন্ধ ভাসে, আমার দু’কাঁধে কিছু<br />বিসদৃশ ঘটে যাবে যেন! পাখনা গজাবে নাকি</p>
<br /><p>অকস্মাৎ? আমি, শামসুর রাহমান, অবশেষে<br />কাফকার গ্রেগর শামসা হয়ে যাবো? আমি বড়ো<br />বেশি ছোটো হয়ে যাচ্ছি, মনে হয়; কীট পতঙ্গের<br />মতোই আমি কি তবে দেয়ালে বসবো? মৃত্তিকায়<br />খাবো লুটোপুটি কিংবা নোংরা শুঁড়ে নিয়ে নিরুদ্বেগ<br />নর্দমার ধারে উড়ে যাবো আবর্জনা ভালোবেসে?</p>
<br /><p>ভাগ্যিস এসেছো তুমি এ মুহূর্তে, তোমার দৃষ্টির<br />স্পর্শে আজ আমার মনুষ্যরূপ রয়ে গেলো শেষে।</p>
<br /><p> (আদিগন্ত নগ্ন পদধ্বনি কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/choturpodi/চতুর্দপদী2018-02-17T17:41:54-05:002023-06-26T12:53:22-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>পায়রার পালকের রোদ তোমার হাতেরও রোদ,<br />দেয়ালের শ্যামলিমা তোমার মুখেরও শ্যামলিমা।<br />যখন দোয়েল শ্যামা ডাকে, অস্তিত্বের চতুঃসীমা<br />তোমার সঙ্গীতময় হয় অনুরূপ; অনুরোধ<br />করে চন্দ্রমল্লিকার কোমলতা তোমার নিকট<br />বিশদ থাকার জন্যে, অথচ সত্তায় হু হু চিতা<br />সর্বদা বেড়াচ্ছো ব’য়ে হে বিষাদময়ী, হে বনিতা<br />নৈঃসঙ্গ্যের। ধোঁয়াক্লিষ্ট হৃদয়ের কাটেনা সঙ্কট।</p>
<br /><p>চাইনা তোমাকে বন্দী করুক অসিত হাহাকার।<br />আমিতো নির্লিপ্তিপ্রিয় নই; নিশ্চিত আমিও চাই<br />ঝরুক আমার বৃষ্টি তোমার চিতার রূপানলে,<br />তোমার সত্তায় হোক ব্যাপ্ত বকুলের শিষ্টাচার।<br />দু’হাতে কুড়িয়ে স্বেদমুকুলিত প্রহরের ছাই<br />বলবো না, প্রেম মুঞ্জরিত কেবল দাহঘ্ন জলে!</p>
<br /><p> (আদিগন্ত নগ্ন পদধ্বনি কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/gondar-gondar/গন্ডার গন্ডার2018-02-17T17:41:17-05:002023-06-26T08:34:57-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>বাঁচতে পারবে? কী করে বাঁচবে? চৌদিকে ক্রূর<br />কী একটা যেন তোমার গন্ধ বেড়াচ্ছে শুঁকে;<br />বুঝি ছায়াটাও কালো ইস্পাতী নখর-ফলায়<br />ফেলবে উপড়ে। বাইরে সদাই কতো সুচতুর<br />ফাঁদ পাতা থাকে, কন্টকময়; সুখে কি অসুখে<br />নির্বান্ধব, বেখাপ্পা তুমি চলায় বলায়।</p>
<br /><p>কাদায় নুড়িতে এবং খোয়ায় নিজের রক্ত<br />দেখেও তোমার শিরায় গলিতে তুহিন প্রবাহ<br />বয় না, শুধুই লোহার অনেক হিজিবিজি শিক<br />চোখে এঁটে দেয় খাঁচার নকশা। আর অলক্ত<br />ভ্রান্তিবশতঃ মগজের ঝোপে হানে দাবদাহ।<br />জটিল ধোঁয়াটে স্বপ্নগুহায় ঘোরে বৃশ্চিক।</p>
<br /><p>আত্মগোপন করতে কি চাও পাতার লুকোনো<br />সবুজ দুর্গে? বৃক্ষ মাচায় পাবে আশ্রয়?<br />সঙ্গ নেবে কি পাতালনিবাসী কাঁকড়া কোনো?<br />নিসর্গপ্রীতি আর বিপদের বিবাদ চুকোনো<br />সহজ তো নয়। বস্তুত তুমি খুঁজছো অভয়<br />তীব্র সত্তা-সঙ্কটে এই বিজনে এখানে।</p>
<br /><p>বাদামের খোলে ঢুকেও তোমার নেই নিস্তার।<br />অলিগলি আর সদর রাস্তা, বাস ডিপো আর<br />জাহাজঘাটের মাটি ফুঁড়ে ঐ আসছে কেবল<br />আসছে উড়িয়ে ধুলোবালি ক’রে ত্রাস বিস্তার।<br />চৌদিক থেকে আসছে নিয়ত রাগী গন্ডার<br />হাজার হাজার; রৌদ্রে খড়্গ করে ঝলমল।</p>
<br /><p>বৃথাই লুকোনো, বরং পাতার দুর্গপ্রাকার<br />গাছের কোটর কিংবা শুকনো বাদামের খোল<br />থেকে দ্বিধাহীন বেরিয়ে আসাই শ্রেয় অবশ্য।<br />গন্ডার শুধু গন্ডারে আজ সব একাকার,<br />খণ্ডিত তুমি নিরুপায় শোনো ধ্বংসের রোল;<br />তোমার বিলয়ে ফলবে অন্য কারুর শস্য।</p>
<br /><p> (আদিগন্ত নগ্ন পদধ্বনি কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/gouno-shilpo/গৌণ শিল্প2018-02-17T17:39:55-05:002023-06-26T08:34:59-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>আমার ব্যর্থতা, কালো, সাংকেতিক ব্যর্থতা কখনো<br />লতাপাতা কিংবা পাখপাখালির আড়ালে লুকিয়ে<br />থাকে, কখনো-বা<br />ওষ্ঠের কিনারে তিক্ত স্বাদ রেখে যায়।</p>
<br /><p>আমার নৈবেন্য নেয় বারবার ব্যর্থতার হা হা এভেনিউ।<br />শব্দ কতিপয়,<br />অসফল, দিশেহারা, বুঝি পিতৃমাতৃহীন পথের সন্তান,<br />এলেবেলে খেলে মৃত অন্ধকারে, ঘুমায় কবরে।<br />লতাগুল্মময় কবরের পাশে নতজানু কম্পমান, ডাকি<br />বারবার ঝোড়ো হৃদয়ের তীব্র আর্তি নিয়ে, ওরা<br />নিঃস্পন্দ নিঃসাড় যেন মেঘের আড়ালে বিকলাঙ্গ চন্দ্রকণা<br />অথবা এমন লখিন্দর যার গলিত শরীরে<br />পারবে না চল্কে দিতে প্রাণধারা বেহুলা কখনো।</p>
<br /><p>ওদেরতা চমৎকার সেজেগুজে, শার্টের কলার<br />উল্টিয়ে শোভন আর টুপিতে পালক গুঁজে পথে<br />বেরুনোর কথা ছিলো,<br />কথা ছিলো, ওরা যাবে ড্রইংরুমের সুশীতল পরিবেশে,<br />বসবে সোফায়, লাল গালিচায়, দেবে জুড়ে নিভৃত আলাপ,<br />কথা ছিলো, ওরা যাবে ভেজা-ভেজা অন্ধকারময় গ্রন্থাগারে,<br />মেলাবে আপন হাত তত্ত্বপরায়ণ, তথ্যঠাসা অধ্যাপকদের সঙ্গে,<br />তরুণ তরুণীদের ভিড়ে করবে রগড় পার্কে করিডরে<br />আলো আঁধারিতে<br />কাফেটারিয়ায়,<br />কথা ছিলো, ওড়াবে অজস্র টিয়ে বাণিজ্যিক এলাকার লাল<br />পেট্রোল পাম্পের কিছু সম্ভ্রান্ত ওপরে,<br />মধ্যবিত্ত ছাদে, চিলেকোঠায় গলির মোড়ে আর<br />খবরের কাগজের হুজুগে পাড়ায়,<br />অথচ এখন ওরা লতাপাতা কিংবা পাখির ডানার<br />অথবা ঠোঁটের ছায়াচ্ছন্নাতায় গভীর লুকোনো<br />এবং তাদের সঙ্গে আমার শ্যামল শৈশবের কিছু বেলা<br />যৌবনের অলৌকিক রথ,<br />দীপ্র, ভগ্ন, স্মৃতি আচ্ছাদিত, শ্যাওলায় কারুময়,<br />আমার আশার কীর্তনিয়া<br />করেছে প্রস্থান গৌণ শিল্পের আড়ালে।</p>
<br /><p> (আদিগন্ত নগ্ন পদধ্বনি কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/khulona-e-mukh/খুলোনা এ মুখ2018-02-17T17:36:26-05:002023-06-26T08:36:08-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>তোমাকে দেখলে ভয় পাই খুব, বুকের ভেতর<br />অশ্বক্ষুরের প্রখর শব্দ, জাগে কলরব<br />প্রাকারে প্রকারে। ক্রূদ্ধ মশাল, কাঁপে থরথর<br />ঘুমধরা হাড়, চোখে ভাসমান বেকসুর শব।</p>
<br /><p>তোমার অমন ভবিষ্যময় চোখে তাকালেই<br />পারমাণবিক ভস্ম আমাকে করে দ্রুত গ্রাস<br />হাতড়ে হাতড়ে কোনো সূত্রের পাই না যে খেই,<br />পায়ের তলায় মাটি অস্থির, বর্বিত ত্রাস।</p>
<br /><p>দোহাই তোমার এক্ষুণি ফের খুলোনা এ মুখ।<br />ফস ক’রে তুমি কী যে ব’লে দেবে, দেয়ালের দিকে<br />তর্জনী তুলে স্তোত্র পাঠের উদাত্ত সুখ<br />চোখে নেবে কিছু হয়তো আনবে কাল-রাত্রিকে।</p>
<br /><p>তোমার ভীষণ ভাবী কথনের নেই কোনো দাম<br />মাঠে কি পার্কে, কলোনীতে, মেসে, গলির গুহায়।<br />আত্মাকে ঢেকে খবর-কাগজে যারা অবিরাম<br />প্রমত্ত তারা দেয়ালে কিছুই দেখে না তো, হায়।</p>
<br /><p>অন্যে বুঝুক না বুঝুক আমি জানি ঐ ঠোঁট<br />নড়লেই কালবৈশাখী দেবে দিগন্তে হানা,<br />প্রলয়ের সেনা গোপনে বাঁধবে নির্দয় জোট<br />হত্যার সাথে, ঝাপটাবে খুব নিয়তির ডানা।</p>
<br /><p>তুমি বলেছিলে, জননী তোমার কুক্কুরী-রূপ<br />পাবে একদিন, জনক সর্বনাশের বলয়ে<br />ঘুরপাক খেয়ে হবেন ভীষণ একা, নিশ্চুপ;<br />নগরে ধ্বনিত হবে শোকগীতি লম্বিত লয়ে।<br />দেবতা তোমার জিহ্বায় কেমন অভিশাপ ঘিরে<br />দিয়েছেন, তার ছায়ায় প্রতিটি গহন উক্তি<br />ধ্বংস রটায় আধা-মনস্ক মানুষের ভিড়ে<br />খুলবে না মুখ-এলো করি এই চরম চুক্তি।</p>
<br /><p> (আদিগন্ত নগ্ন পদধ্বনি কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/kono-kono-muhurte-hotath/কোনো কোনো মুহূর্তে হঠাৎ2018-02-17T17:35:18-05:002023-06-27T15:08:24-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>সকল সময় নয়, কোনো কোনো মুহূর্তে হঠাৎ<br />তোমাকে হাওয়ার পাই, পাই সিগারেটের ধোঁয়ায়।<br />কখনো দরজা খুলে দাঁড়ালেই স্মিত অন্ধকারে,<br />কখনো বা সুরভিত বারান্দায় মৃদু চন্দ্রলোকে,<br />গোলাপের অন্তঃপুরে, কখনো সড়কে, মৃত্যু আর<br />জীবনের গুঞ্জরণময় হাসপাতালের বেডে<br />সহসা তোমাকে দেখি। গাছগাছালির অন্তরালে<br />মেঘের উড্ডীন দ্বীপে, এমন কি গোষ্পদেও তুমি।</p>
<br /><p>তুমি এলে আমার চৌদিকে অবলীলাক্রমে দৃশ্য<br />কেবলি পাল্টাতে থাকে, তুমি এলে হাজার হাজার<br />নক্ষত্রের তোড়া আমার সম্মুখে দীপ্র উপস্থিত,<br />সুনীল সমুদ্র ওঠে দুলে, দিগন্তের পাড় চিরে<br />উদ্ভাসিত জাহাজের গর্বিত মাস্তুল; নীল জলে<br />কুহকের কেশপাশ, জাগে প্রতিধ্বনিময় দ্বীপ।</p>
<br /><p>তুমি এলে একরাশ ভেলভেটপ্রতিম গোলাপ<br />মোহন আলাপে মাতে বেহালার সাথে, মাথাভরা<br />অজস্র উকুন নিয়ে রুক্ষ্ম, একাকিনী ভিখারিনী<br />খিস্তি খেউড়ের মধ্যে অকস্মাৎ পুঁটলি দুলিয়ে<br />গায় ঘুমপাড়ানিয়া গান এবং ভাগাড়ে কতো<br />পোকাকীর্ণ পশুর নিথর চোখে ভাগবত লীলা!<br />তুমি এলে কংকালের দশটি আঙুল ঘুণধরা,<br />হিহি অন্ধকারে নেচে ওঠে অর্গানের রীডে রীডে।</p>
<br /><p>কতদিন তোমার জন্যেই ধুই সিঁড়ি অনুরাগে,<br />সযত্নে সাজাই ফুল করোটিতে, পোড়াই লোবান,<br />জ্বলে বাতি পিলসুজে কিন্তু তুমি আসো না তখন।<br />যখন প্রস্তুতি নেই, আয়োজন-রহিত যখন<br />আমি, এলোমেলো, বিভ্রান্তির চক্রে ঘূর্ণমান রুক্ষ,<br />তখনই ঝাঁপিয়ে পড়ো কী প্রবল আমার ওপর।</p>
<br /><p>চুমোয় চুমোয় রক্তে বাজাও দীপক, দৃষ্টি মেলে<br />তোমার উদ্ভিন্ন দিকে ভাবি শুধু, তুমি কি এমনই?<br />তোমার সুগন্ধে আমি এতো বার হই সমাচ্ছন্ন,<br />তোমারই ভেলায় ভাসি, তবু আজো তোমাকে বুঝি না।</p>
<br /><p> (আদিগন্ত নগ্ন পদধ্বনি কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/kigbodonti/কিংবদন্তী2018-02-17T17:33:41-05:002023-06-26T08:36:14-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>ধারে কাছেই একটা বাড়ি মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকে,<br />সেখানে রোজ নিরিবিলি চাইতো যেতে।<br />কিন্তু আমার হয় না যাওয়া কোনোদিনই।<br />ফটকে নেই দৈত্যপানা মুখের মানুষ,<br />কুকুর টুকুর নেইকো কিছুই;<br />সকালবেলা কিংবা কোনো রক্তজবা-কমান গোধূলিতে<br />কিংবা ঝোড়ো হাওয়ার রাতে সেই বাড়িতে<br />তবু আমার হয় না যাওয়া কোনোদিনই।</p>
<br /><p>সেই বাড়িতে থাকে যারা, নয়তো তারা শত্রু আমার।<br />তীক্ষ্ম ছুরি, কিংবা ধরো বিষের পাত্র<br />আমার জন্যে রাখে না কেউ।<br />কিন্তু তবু এই আমিটার সত্যিমিথ্যে<br />সেখানে হায় হয় না যাওয়া কোনোদিনই।<br />সেখানে এক নিরুপমা বসত করে<br />চারদেয়ালের অন্তরালে।<br />সুরের মিহি নকশা দিয়ে সাজায় প্রহর মনের মতো,<br />শূন্যে ফোটায় রক্তগোলাপ হৃদয় যেন।<br />গাছের পাতায় আদর রাখে ইতস্তত।<br />শেখায় কথা কেমন সুরে দাঁড়ের সবুজ পাখিটাকে।<br />নিরুপমার ভোরের মতো হাসির ছটায়<br />দেয়ালগুল এক পলকে<br />উৎসবেরই নামান্তর।<br />কখনো ফের সেই বাড়িটা রাত্রিমাখা<br />উদাসী এক মেঘ হ’য়ে যায়<br />যখন সে তার কান্নাপাওয়া শরীরটাকে<br />দেয় লুটিয়ে শূন্য খাটে।<br />সিংদরজায় অদৃশ্য দুই পশু আছে,<br />তাদের মুখে লুপ্ত চাবি।<br />কোন্ খাবারে তৃপ্ত কেবা, নেই কো জানা;<br />তাইতো দুয়ার বন্ধ থাকে<br />এবং আমার হয় না যাওয়া কোনোদিনই।</p>
<br /><p> (আদিগন্ত নগ্ন পদধ্বনি কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/koraghat-howa-chai/করাঘাত হওয়া চাই2018-02-17T17:33:00-05:002023-06-26T08:36:35-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>আমার আপন দরজায় মাঝে-মধ্যে করাঘাত হওয়া চাই,<br />করাঘাত হওয়া ভালো। যদি<br />কোনো বন্ধু-বান্ধব হকার কিংবা গয়লা<br />আমার আপন দরজায় এসে কড়া নাড়ে কখনো সখনো,<br />খুব ভালো হয়।<br />কিন্তু কেউ চুপচাপ এসে চলে গেলে বন্ধ দোরে<br />রেখে গেলে এক গুচ্ছ ফুল<br />কিংবা চিরকুট শব্দহীন,<br />আমি সেই উপহার কখনো গ্রহণ করবোনা।<br />আমি তো আমার দরজায় মাঝে-মধ্যে আচমকা<br />করাঘাত চাই।</p>
<br /><p>নইলে চতুর্দিকে ব্যস্তবাগীশ উইয়ের ঝাঁক ‘প্রভু প্রভু’ শব্দে<br />গড়বে বল্মীক কতো, আমি<br />অতিশয় ঢাকা পড়ে যাবো।</p>
<br /><p>বৃক্ষের ছায়ায় ভিন্ন গাছ<br />পক্ষীর ডানায় অন্য পাখি<br />তটিনীর গহনে অপর নদী দেখে, মৃত্তিকায়<br />নক্ষত্রের গুঁড়ো মেখে, গন্ডদেশে ধেনো শিল্পরসের উদাস<br />চটচটে দাগ নিয়ে খোয়ারিতে ম’জে<br />বসবাস করতে করতে আজীবনের সঙ্গে তুই তোকারিতে মেতে<br />অনেক সোনালি সুতো ছিঁড়ে খুঁড়ে<br />জীবনেরই বিরুদ্ধে বিপ্লবী হয়ে যাই।<br />তখন আমার দরজায় মাঝে-মধ্যে করাঘাত হওয়া চাই।</p>
<br /><p>কৃষ্ণকলি নৈঃসঙ্গ্যের ওষ্ঠ থেকে ওষ্ঠ তুলে<br />কখনো বলিনা-<br />লোকালয় আমার ভেতর<br />প্রবেশ করুক।<br />আমার নিজের মধ্যে বিস্ফোরক দ্রব্যের মতন<br />রেখেছি যেসব উপদ্রব জমা, তাড়ানো সহজ নয় তাদের কখনো;<br />ওদের বিশদ তাড়নায় আমি রণক্ষেত্রে পারতাম যেতে<br />পারতাম মধ্যপ্রাচ্যে তেলের ফোয়ারা খুলে দিতে,<br />পারতাম মেরু অভিযানে হতে স্কটের দোসর, পারতাম<br />সইতে ক্রূর তুষার-কামড়।</p>
<br /><p>কিন্তু শুধু সারাবেলা মগজে ভ্রমর নিয়ে পুরোনো চৌকাঠে<br />চন্দন বুলোই, ফুলপাতা হয়,<br />কখনো কারুর<br />অলৌকিক মুঠোয় নিমেষে চলে যাই বার-বার।<br />সেই মুঠো থেকে<br />কখনো সখনো আমি নিষ্কৃতি প্রার্থনা করি ব’লে<br />আমার আপন দরজায় মাঝে-মধ্যে করাঘাত হওয়া চাই।</p>
<br /><p> (আদিগন্ত নগ্ন পদধ্বনি কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/odelisk/ওডেলিস্ক2018-02-17T17:32:16-05:002023-06-26T16:26:40-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>সে রাতে তুমিই ছিলে ঘরের মিয়ানো অন্ধকারে<br />বিছানায় উন্মোচিত। তোমার বিশদ<br />ডাগর নগ্নতা আমি আকুল আঁজলা ভ’রে পান<br />ক’রে বারবার<br />মৃত্যুকে তফাৎ যাও বলবার দীপ্র অহংকার<br />অর্জন করেছিলাম। নিপোশাক তোমার শরীর<br />জ্যোৎস্না-কমান ধোয়া মসজিদের মতো<br />তখন বস্তুত<br />আমার চোখের নিচে। স্তনপল্লী জ্বলে,<br />যেমন সন্তের জ্যোতিশ্চক্র অবলীলাক্রমে আর<br />তৃষ্ণাতুর ওষ্ঠ রেখে নাভির লেগুনে<br />ভেবেছি তোমার<br />সুদূর প্রপিতামহী কেউ এমনি সাবলীল নগ্নতায় ভেসে<br />কারুর চোখের আভা করেছে দাবি।</p>
<br /><p>তোমার শরীর<br />কোথাও নিরালা পথ, মসৃণ অথবা তরঙ্গিত,<br />কোথাও বা সুরভিত ঝোপ, আমার ওষ্ঠ-পথিক<br />ক্রমাগত আঁকে পদচিহ্ন সবখানে। কে জানতো<br />এমন পুরোনো গাঢ়, প্রায় আর্তনাদের মতোই<br />ডাক, শিখাময় ডাক মাংসের আড়ালে থাকে, থাকে<br />লুকোনো এমন বিস্ফোরণ!</p>
<br /><p>সেই নিরঞ্জন রাতে আমার তামাম নিঃসঙ্গতা<br />ঈষৎ স্পন্দিত<br />নগ্নতার দিকে হাত দিয়েছিলো বাড়িয়ে এবং<br />তোমার সপ্রাণ চুললগ্ন বেলফুল<br />কী কৌশলে আমার বয়স নিয়েছিল চুরি ক’রে।<br />আমার সকল রোমকূপ পল রবসনী সুরে<br />সে মুহূর্তে গীতপরায়ণ-আমি তোমার দিকেই ছুটে যাই,<br />যেমন ওড়ার বাসনায় ছটফতে পাখি আকাশের নীলে,<br />যেমন লাঙল নগ্ন ফসলাভিলাষী রিক্ত মাঠে।</p>
<br /><p>প্রেমিক সেকেলে শব্দ, তবু আমি তাই ইদানীং।<br />তুমি নরকের দ্বার, ত্রিলোকে রটায় অনেকেই,<br />আমি সেই দ্বারে নতজানু, নির্গ্রন্থ পুরুষ এক<br />স্বর্গের প্রকৃত সংজ্ঞা অভিধা ইত্যাদি<br />প্রবল ভাসিয়ে দিই আমার স্বকীয় শোণিতের কোলাহলে।<br /> (আদিগন্ত নগ্ন পদধ্বনি কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/ekti-shishuke/একটি শিশুকে2018-02-17T17:30:58-05:002023-06-26T08:34:34-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>যদি চাও, ভরে দিতে পারি এই ভোরের অঞ্জলি<br />গল্পের অজস্র ফুলে। শোনো বাঘ-ভাল্লুকের নয়,<br />অথবা পরীরও নয়, চেনা মানুষেই গল্প বলি।<br />করবো না নামোল্লেখ কিংবা করবো না নয় ছয়<br />ঘটনাবলিকে সত্যি। একরত্তি মেয়ে তুমি, তাই<br />বুঝরে না কাহিনীর সন্ধ্যাভাষা। একটি পুরুষ</p>
<br /><p>জীয়ন কাঠির স্পর্শে চেয়েছিলো জাগাতে হৃদয়<br />মহিলার স্বপ্নাবেশে। বাস্তবের কর্কশ বুরুশ<br />খানিক রগড়ে দিলো তাকে, বাসনার ছিনতাই<br />দেখলো স্বচক্ষে, সে মহিলা, মানে, তোমার জননী<br />স্যুইচ টেপেনি তার ঘরে কিংবা খাবার টেবিল<br />সাজায়নি কোনোদিন। তার অস্তিত্বের রাঙা ধ্বনি<br />অন্যত্র পেলব বাজে, তুমি জানো। দিয়েছে সে খিল<br />একদা-র কপাটে নিপুণ; শোনো, তুমি প্রজাপতি<br />হ’য়ে ঘোরো, পুতুলের বিয়ে দাও, চালিয়ে কুরুশ<br />ইচ্ছেমতো তুলো ফুল যৌবনে রুমালে, নেই ক্ষতি<br />কারুর হৃদয়ে জ্বেলে তারাবাতি, সাজিয়ে নহবৎ<br />নাড়িও না ভুলে তুমি আরেক জনের ঘরে নথ।</p>
<br /><p> (আদিগন্ত নগ্ন পদধ্বনি কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/ekti-kobitar-jonye/একটি কবিতার জন্যে2018-02-17T17:30:06-05:002023-06-26T08:34:30-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>বৃক্ষের নিকটে গিয়ে বলিঃ<br />দয়াবান বৃক্ষ তুমি একটি কবিতা দিতে পারো?<br />বৃক্ষ বলে, আমার বাকল ফুঁড়ে আমার মজ্জায়<br />যদি মিশে যেতে পারো, তবে<br />হয়তোবা পেয়ে যাবে একটি কবিতা।</p>
<br /><p>জীর্ণ দেয়ালের কানে বলিঃ<br />দেয়াল আমাকে তুমি একটি কবিতা দিতে পারো?<br />পুরোনো দেয়াল বলে শ্যাওলা-ঢাকা স্বরে,<br />এই ইট সুরকির ভেতর যদি নিজেকে গুঁড়িয়ে দাও, তবে<br />হয়তোবা পেয়ে যাবে একটি কবিতা।</p>
<br /><p>একজন বৃদ্ধের নিকটে গিয়ে বলি, নতজানু,<br />হে প্রাচীন দয়া ক’রে দেবেন কি একটি কবিতা?<br />স্তব্ধতার পর্দা ছিঁড়ে বেজে ওঠে প্রাজ্ঞ কণ্ঠ- যদি<br />আমার মুখের রেখাবলী<br />তুলে নিতে পারো<br />নিজের মুখাবয়বে, তবে<br />হয়তোবা পেয়ে যাবে একটি কবিতা।</p>
<br /><p>কেবল কয়েক ছত্র কবিতার জন্যে<br />এই বৃক্ষ, জরাজীর্ণ দেয়াল এবং<br />বৃদ্ধের সম্মুখে নতজানু আমি থাকবো কতোকাল?<br />বলো, কতোকাল?</p>
<br /><p> (আদিগন্ত নগ্ন পদধ্বনি কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/e-rokomi-hoy/এ রকমই হয়2018-02-17T17:29:25-05:002023-06-26T08:34:10-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>এ রকমই হয়, দিব্যি হয়ে আসছে অনেককাল থেকে।<br />যুগে যুগে গ্রাম ও শহর<br />বাদুড়ের পাখার মতন অন্ধকারে যায় ঢেকে<br />অকস্মাৎ। জাহাজের সম্পন্ন বহর<br />সন্ত্রস্ত বন্দর ছেড়ে ছোটে আর্তরবে<br />মধ্য-সমুদ্রের গাঢ় নীলিমায়, পারে না এড়াতে<br />ভরাডুবি; এরকমই হয়, বারবার হবে।</p>
<br /><p>দ্বৈপায়ন বণিক বেড়াতে<br />এসে দূর দেশে মশলার ঘ্রাণে গড়ে রাজ্যপাট।<br />দ্বিগ্ধিজয়ী বীরের অশ্বের পদাঘাতে চতুর্ধারে<br />ঘন ঘন ওঠে হাহাকার, নিমেষে উজাড় ত্রস্ত পথঘাট-<br />মড়কে এমনই হয়, সবাই পালায় ঊর্ধ্বশ্বাসে বনবাদাড়ে।</p>
<br /><p>অনেক শহর পোড়ে, ভাঙে গ্রাম, গ্রন্থের পাতায়<br />প্রমত্ত অশ্বের বিষ্ঠা জমে, খোঁড়া তৈমুর অথবা হিটলার<br />সবাই সোৎসাহে ক্রূর জামার হাতায়<br />নাচায় কংকাল, নগরের আগুনে তুমুল সেঁকে হাত আর<br />দেয় ছুঁড়ে অন্ধকূপে কিংবা গ্যাস চেম্বারে তাদের,<br />যারা কাড়া নাকাড়ার তালে রাজ-রাজড়ার সুরে<br />ওঠেনা যান্ত্রিক নেচে, বোঝে যারা কুটিলতা নানান ফাঁদের।<br />চিরকাল খেলা একই, পাল্টায় খেলুড়ে।</p>
<br /><p> (আদিগন্ত নগ্ন পদধ্বনি কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/unmottota-boyusyu-amar/উম্মত্ততা বয়স্য আমার2018-02-17T17:28:40-05:002023-06-26T08:39:48-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>প্লাটিনাম চোখ নিয়ে অজস্র শেয়াল রাত্রিভর<br />আমার বিছানা নোংরা করে স্বপ্নগুলো<br />দেয়ালে দেয়ালে ঝোলে সার্টিনের পর্দার মতন।<br />খুব হিংস্রতায়<br />একটি বিরাট কাঁচি সেসব পর্দার বুকে স্বেচ্ছাচারী হয়।<br />আফ্রিকার তিনটি মুখোশ অতি দ্রুত<br />কোরানের আয়াত আবৃত্তি<br />করতে করতে<br />আওড়ায় আদালতী বেবাক শপথ।</p>
<br /><p>আমি কি উম্মাদ হয়ে যাচ্ছি?</p>
<br /><p>ঘরে রাশি রাশি টেলিগ্রাম<br />অচল নোটের মতো নির্লজ্জ ছড়ানো ইতস্তত<br />এবং সকল বার্তা উদ্ধার-রহিত। বিছানায় শুয়ে শুয়ে<br />দেখি মস্ত ছায়ার ধারালো জিভ চাটছে আমাকে<br />বিশদ ক্ষুধায়।<br />মেডুসার মুন্ডু চতুর্ধারে নেচে ওঠে বারংবার।<br />যোগাযোগহীন<br />টেলিফোন নিয়ে মেতে আছি, কেবলি ডায়াল করি<br />অসম্ভব ডিজিটের ঘোরে, নিঃশব্দতার ওপর করছি<br />অলৌকিক বলাৎকার<br />তবে কি বলবো, হায়, উন্মত্ততা বয়স্য আমার?</p>
<br /><p>এইতো মেঘের বুক ফুঁড়ে</p>
<br /><p>হৃদয়দ্রাবক<br />তন্বী এক চারা অস্তিত্বের গরিমায় ঝলমলে,<br />অথচ হঠাৎ<br />একটি প্রকট হাত, সুবিশাল, দরজা-জানালা ছাদভেদী,<br />নেমে আসে আমূল উপড়ে নিতে, আমি সাত তাড়াতাড়ি<br />চারাটাকে মানবিক আড়ালে রাখতে চাই। সেই হাত আমাকে হেলায়<br />বারবার দিচ্ছে ছুঁড়ে, টেবিলের খাটের তলায়<br />গিয়েও নিস্তার নেই। সমগ্র সুন্দরবন আসে ঘর ব্যেপে,<br />চাক চাক আকাশও এখন<br />আমার নিবাসে, ভাসমান, ডাঁই ডাঁই সংবাদপত্রের নিচে<br />কেবলি তলিয়ে যাচ্ছি, একজন কাগজের মূর্তি, পিকাসোর<br />ছবির মতন কয়েকটি<br />মুখাবয়বের দীপ্র ব্যাপক চমক হেনে ডাকে,<br />টেবিলের দিকে ফুরফুরে আঙুল নিবন্ধ তার।</p>
<br /><p>ঘরময় ট্রেন দুর্ঘটনা, লঞ্চ ডুবি, জুয়োর টেবিল; অকস্মাৎ<br />আমার ডবল এসে আমাকেই পরায় লোহার হাতকড়ি,<br />চতুষ্পার্শে সুর্যমুখী, নতুন বাছুর, গয়লানী সাঁতরাচ্ছে,<br />শুধু সাঁতরাচ্ছে……<br />আমি কি উন্মাদ হয়ে যাচ্ছি?</p>
<br /><p> (আদিগন্ত নগ্ন পদধ্বনি কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/ami-amar-swapnoguli/আমি আমার স্বপ্নগুলি2018-02-17T17:27:32-05:002023-06-26T17:20:39-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>আমি আমার স্বপ্নগুলি বাঁচিয়ে রাখতে চাই।<br />কৃষক যেমন চায় বাঁচাতে ধানের চারা,<br />পক্ষী যেমন শাবকগুলো দেয় পাহারা,<br />তেমনি আমি স্বপ্নগুলি বাঁচিয়ে রাখতে চাই।</p>
<br /><p>সকল স্বপ্ন এক নাগাড়ে হয়ে যাবে ছাই?<br />জমি জিরেত নেইতো কিছু, আমার কাছে<br />নেই তো কড়ি, শুধু কিছু স্বপ্ন আছে।<br />সেসব স্বপ্ন এক নাগাড়ে হয়ে যাবে ছাই?</p>
<br /><p>এমন বিশ্বে স্বপ্নগুলি কী করে বাঁচাই?<br />দাও বেচে দাও স্বপ্ন তুমি, বলছে ওরা,<br />‘নইলে পিঠে পড়বে হাজার হিংস্র কোড়া।<br />এমন বিশ্বে স্বপ্নগুলি কী করে বাঁচাই?</p>
<br /><p>স্বপ্ন দেখায় তেমন কোনো নতুনত্ব নাই।<br />কিন্তু একলা বুকের ভেতর স্বপ্নগুলি<br />লালন ক’রে ঘোরা ফেরা নয় মামুলি।<br />স্বীকার করি, স্বপ্ন দেখায় নতুনত্ব নাই।</p>
<br /><p>স্বপ্নে আছে উল্টাপাল্টা স্মরণের রোশনাই।<br />পাথর টাথর, গাছের পাতা, এসব নিয়ে<br />কে যেন এই স্বপ্নগুলি দেয় বানিয়ে।<br />স্বপ্নে আছে উল্টাপাল্টা স্মরণের রোশনাই।</p>
<br /><p>এত স্বপ্ন করবো বলো কী করে বাছাই?<br />উজান ঠেলে তাদের কেবল বাঁচিয়ে রাখতে চাই!</p>
<br /><p> (আদিগন্ত নগ্ন পদধ্বনি কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/omon-takao-jodi/অমন তাকাও যদি2018-02-17T17:26:44-05:002023-06-27T19:12:49-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>অমন তাকাও যদি একবিন্দু অনন্তের মতো চোখ মেলে,<br />আমি বারবার<br />তোমার দিকেই ছুটে আসবো প্রত্যহ।</p>
<br /><p>যেখানে তোমার দৃষ্টি নেই,<br />তোমার পায়ের ছাপ পড়ে না যেখানে কেনোদিন<br />সেখানে কী করে থাকি? তোমাকে দেখার জন্যে আমি<br />যশের মুকুট<br />ছুঁড়ে দেবো ধূলায় হেলায়, তাকাবো না ফিরে ভুলে<br />কস্মিনকালেও আর। মেনে নেবো হার, এই খর<br />মধ্যাহ্নেই হয়ে যাবো স্বেচ্ছায় সূর্যাস্ত; জেনে রাখো,<br />তোমাকে দেখার জন্যে বেহেস্তী আঙুর আর কয়েক ডজন<br />হুরীর লালচ আমি সামলাতে পারবো নিশ্চিত।</p>
<br /><p>তোমার নিদ্রার ঢেউয়ে ঢেউয়ে যাবো বেয়ে ছিপ নৌকো<br />এবং লাফিয়ে প’ড়ে তোমার স্বপ্নের তটে আবিষ্কারকের<br />মতো দেবো পুঁতে<br />আমার নিঃশ্বাসে আন্দোলিত এক পবিত্র নিশান।</p>
<br /><p>কখনো নিদ্রার রাজপথে, কখনো-বা জাগরণে<br />বাগানে কি পার্কে<br />সড়কে ট্রাফিক দ্বীপে, বাসে<br />গোলাপ শ্লোগান হাঁকে একরাশ, উড়ন্ত কপোত<br />অকস্মাৎ দিগ্বিদিক লুটোয় নিষিদ্ধ<br />ইস্তাহার হ’য়ে,<br />পড়ি, ‘নরকেও ভালোবাসা ম্যানিফেস্টো হিরন্ময়।<br />অমন দাঁড়াও যদি নিরিবিলি পা রেখে চৌকাঠে,<br />সমর্পণ করতে পারি আমার সমস্ত আয়ুষ্কাল<br />তোমারই আঁচলে।<br />যদি পাপ তোমার শরীর হ’য়ে নত নয়, হয় উন্মোচিত,<br />দ্বিধাহীন তাকে খাবো চুমো গাঢ়, বাঁধবো ব্যাকুল আলিঙ্গনে।</p>
<br /><p> (আদিগন্ত নগ্ন পদধ্বনি কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/opradhi/অপরাধী2018-02-17T17:25:57-05:002023-06-27T17:08:12-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>আমি তাকে অকস্মাৎ তারস্বরে গেট আউট গেট আউট ব’লে<br />তাড়িয়ে দিলাম।</p>
<br /><p>সদর দরজা দিয়ে পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি অন্যমনস্কতা<br />বিড়ি ফুঁকে চ’লে গেলো। দালানের অভ্যন্তরে যেতে চেয়ে পথ<br />দীর্ঘ পথ বেয়ে<br />যথারীতি চ’লে যাবে খোলার ছা-পোষা ঘরে সূর্যাস্তের পরে।</p>
<br /><p>আমি কি নির্দয় কোনো জীব? ঠিক তা’না, তাকে জাহান্নামে যেতে ব’লে অনুতাপের বিবরে<br />ব’সে আছি। অথচ তক্ষুণি তাকে, মানে<br />সেই অপদার্থ লোকটাকে না তাড়ালে লোকচক্ষুর আড়ালে<br />আমাকে অরণ্যে</p>
<br /><p>আস্তনা গাড়তে হতো। লোকটা অর্থাৎ<br />সেই কম্পোজিটার আমাকে বিরক্তির খানাখন্দে<br />কেবলি দিচ্ছিলো ঠেলে যখন তখন।</p>
<br /><p>একটি নিটোল স্বপ্ন তাকে কম্পোজ করতে দিয়ে দেখি,<br />স্বপ্নের জায়গায় দিব্যি দুঃস্বপ্ন দিয়েছে বসিয়ে সে,<br />সুস্থতার জায়গায় অসুখ আর উন্মত্ততা। তার<br />হাতের অস্থির স্পর্শে সুবিশাল উন্মুক্ত প্রান্তর<br />কারাগার হয়ে যায়, শিশুর চিৎকারধন্য মৃদু আলোময়<br />একটি আঁতুড়ঘর গোরস্থান। পরিপাটি গ্রাম,<br />মুখর শহর তাকে কম্পোজ করতে দিলেই সে<br />টাইপে সাজাতো দগ্ধ, বিধ্বস্ত ভিয়েতনাম আর<br />আলো চাইলে তড়িঘড়ি ছত্রিশ পয়েন্ট বোল্ড টাইপে নিখুঁত<br />অন্ধকার শব্দটি বসিয়ে দিতো বারবার। একি<br />দারুণ অবজ্ঞা তার? না কি বৈপরীত্যবিলাসী সে<br />ভ্রান্তির কোটরে খোঁজে স্বস্তি অহর্নিশ?<br />এখন তাড়িয়ে তাকে নিজেই টাইপ কেস নিয়ে<br />বসে গেছি চমৎকার; দেখবো এবার<br />কী ক’রে তুমুল ভুল শব্দ যথার্থ শব্দের জায়গা<br />জুড়ে বসে। কিন্তু আমি স্বপ্ন কম্পোজ করতে গিয়ে, ভারী<br />অপ্রস্তুত, দেখছি দুঃস্বপ্ন হ’য়ে যাচ্ছে অবিকল<br />এবং সুস্থতা<br />ভীষণ অসুখ; আশা নৈরাশ্যের জুতোয় গলিয়ে দিচ্ছে ঠিক<br />পদযুগ পরিপাটি গ্রাম,<br />মুখর শহর হয়ে যাচ্ছে বিধ্বস্ত ভিয়েতনাম<br />এবং টাইপ কেস তন্ন তন্ন ক’রে আলো শব্দটি পাচ্ছিনা খুঁজে আর,<br />পাচ্ছি না কোথাও-</p>
<br /><p>ছত্রিশ পয়েন্ট বোল্ড টাইপে অত্যন্ত দ্রুত শুধু<br />ভীষণ হাভাতে এক অন্ধকার বানিয়ে ফেলছি!</p>
<br /><p> (আদিগন্ত নগ্ন পদধ্বনি কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/onggikar/অঙ্গীকার2018-02-17T17:25:04-05:002023-06-27T06:38:34-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>ফিরে যাবো? কেন ফিরে যাবো বারবার?<br />জানি সিংহদ্বার<br />পেরুলেই পেয়ে যাবো আকাঙ্ক্ষিত সব<br />উপচার, যার জন্যে ভীষণের স্তব<br />করেছি সকালসন্ধ্যা, পেরিয়েছি ঝড়মত্ত নদী, কতো সিঁড়ি,<br />রক্তাপ্লুত, বারংবার নেমেছি খনিতে। আজো ফিরি<br />পথে পথে কেইনের মতো। ফিরে যাবো? প্রহরীর<br />রক্তচক্ষু দেখে ফিরে যাবো? তুমি তবুও বধির<br />হ’য়ে থাকবে সর্বক্ষণ? ডাকবে না সেখানে, যেখানে<br />আমার ব্যাকুল পদচ্ছাপ পড়েছিলো স্বপ্নে, মানে<br />অলৌকিক অভ্যন্তরে। এই রুদ্ধ সিংহদ্বার থেকে<br />হতাশায় ভগ্নরথ ফেলে রুক্ষ ক্লান্ত মুখ ঢেকে<br />গেছেন আমার পিতামহগণ ফিরে। আমার শপথ,<br />প্রাপ্য ছাড়া আমিতো যাবো না ফিরে, থামাবো না রথ।</p>
<br /><p> (আদিগন্ত নগ্ন পদধ্বনি কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/1400-saler-suchonay/১৪০০ সালের সূচনায়2018-02-17T11:33:24-05:002023-06-26T18:34:40-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>জীবনানন্দের কবিতার সঙ্গে সারারাত সহবাস করে<br />বেদনা ভুলতে গিয়ে আরো বেশি বেদনার্ত হই।<br />১৪০০ সালের আশা সত্তাময় মেখে নিতে চেয়ে<br />ক্রামগত বুনো অন্ধকারে ডুবে যাই।</p>
<br /><p>ক’দিন দু’চোখে এক ফোঁটা ঘুম নেই, চর্তুদিকে বিভীষিকা<br />নানান মুখোশ পরে নাচ জুড়ে দেয়, অন্ধকারে<br />আমার একান্ত পাশে মৃত্যু শুয়ে তাকে,<br />হিয়ায়িত মিসাইল যেন।</p>
<br /><p>হায়, সোমালিয়ায় মরছে কারা? মানুষ, মানুষ।<br />হায়, বসনিয়ায় মরছে কারা? মানুষ, মানুষ।<br />হায়, বসনিয়ায় ধর্ষিতা কারা? মায়েরা, বোনেরা।<br />বোম্বে, আর দিল্লী নগরীতে খুন হলো কারা? মানুষ, মানুষ।<br />ভোলায় আগুনে জ্বলে-পুড়ে মরেছিল কারা? মানুষ, মানুষ।<br />প্রচ্ছন্ন মানিকগঞ্জে ধর্ষিতা হয়েছে কারা? মায়েরা বোনেরা।<br />সেখানে লুণ্ঠিত কারা? মানুষ, মানুষ।<br />এখানে লুণ্ঠিত কারা? মানুষ, মানুষ।</p>
<br /><p>‘মানুষের মৃত্যু হ’লে তবুও মানব থেকে যায়’-<br />মানবতা প্রায়শই ব্যধভূমিতে চলেছে, হায়।</p>
<br /><p>মৃত্যু প্রতিদিন খবরের কাগজে নিজের মুখ<br />পাখি-ডাকা সকালে দেখতে পেয়ে নিজেই আঁৎকে ওঠে খুব;<br />তবু মৃত্যু নিজেকে সাজিয়ে রাখে কম্পিউটারের<br />ঝকঝকে হরফে এবং বিজ্ঞাপিত হয় ভাঙনপ্রবণ বিশ্বময়।</p>
<br /><p>আমরা কি মৃত্যুর ফরমাশ খেটে নিত্যদিন মনুষ্যত্ব<br />শ্মশানে ও গোরস্থানে ফেলে রেখে মানুষের প্রাণ<br />লুটে নেবে? ১৪০০ সালের সূচনায় বিশ্ববাসী<br />এসো আজ আমরা সবাই হৃদয়ের গানে গানে<br />গোধূলির মেঘ থেকে রক্তচিহ্ন আর ষড়যন্ত্রকারীদের<br />কালো খাতা থেকে সব আতঙ্কের নকশা মুছে ফোলি।<br />চারণ কবিরা সুরে দশ দিগন্তে রটিয়ে দিন-<br />‘সকল মানুষ, বৃক্ষ-লতাগুল্ম, পশুপাশি শান্তিতে থাকুক।</p>
<br /><p> (আকাশ আসবে নেমে কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/hete-jai/হেঁটে যাই2018-02-17T11:32:32-05:002023-06-27T10:04:16-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>আমার দু’হাতে কিছু নেই, তবু কেন<br />লোকে বলে-প্রহরে প্রহরে<br />পায়রা ওড়াই আমি, নিষ্পত্র গাছের জীর্ণ ডালে<br />বসাই রঙিন ফুল, খটখটে তিরিক্ষি খরায় রিম ঝিম<br />বৃষ্টি আনি নির্মেষ আকাশ থেকে আর<br />মাঝ রাতে বানাই অভ্রের ঘর শূন্যের মাঝার?</p>
<br /><p>বাকপটু নই,<br />জিহ্বায় জড়তা ঝুঁকে থাকে সর্বক্ষণ, তবু কেন অক্ষরেরা<br />যখন তখন<br />ভ্রমের মতো তোলে গুঞ্জরণ মাথার ভেতরে,<br />বেরিয়ে আসতে চায় হুড়মুড় করে,<br />যেমন মুরগির ছানা, দর্বা খুলে দিলে পর ভোরে?</p>
<br /><p>যখন একাকী হাঁটি ফুটপাতে, আমার উপর<br />ঝরে মুঠো মুঠো রেণু। বিস্ময়ে তাকাই<br />এদিক ওদিক, কেউ নেই আশেপাশে,<br />বুকের ভেতর নিয়ে অচিন সুরভি হেঁটে যাই শৈশব স্মৃতির দিকে।</p>
<br /><p> (আকাশ আসবে নেমে কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/horinath-sorkar-bolechen/হরিনাথ সরকার বলছেন2018-02-17T11:31:53-05:002023-06-26T08:35:07-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>আমার বসতবাড়ি, পুঁইমাচা, উঠোন, ইঁদারা<br />আমার দু’চোখ থেকে ওরা<br />মুছে দিতে চায়; ভরদুপুরে পুকুরে নিত্যদিন<br />জুড়িয়েছি শরীর, এ পথে হেঁটে গিয়েছি বিকেলে হাটে, প্রাণ<br />ভরে কথা বলে কাটিয়েছি কত বেলা<br />কাশেম মহিম আর মজিদের সঙ্গে। কোনোদিন<br />শুনেছি বাউল গান, ভেসে গেছি মুর্শিদি, কীর্তনে। ওরা আজ<br />আমার স্মৃতিকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়ে<br />হো হো হেসে ওঠে,<br />ওদের পায়ের নিজে আমার স্বপ্নেরা বড় আর্তনাদে করে।</p>
<br /><p>তুলসীতলায় সাঁঝে দীপহীন স্তব্ধতা শীতল<br />দীর্ঘশ্বাস ফ্যালে, নাটমন্দিরের ছাই<br />হাওয়ার, হৃদয়ে ওড়ে! সন্ধ্যার আহ্নিকে<br />এখন বসে না মন। সাত পুরুষের ভিটে ছেড়ে<br />সোমত্ত মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে বেড়াই সারাক্ষণ<br />আঁদাড়ে-পাঁদাড়ে একমুঠো চিড়েগুড় খেয়ে, অতি<br />সন্তর্পণে ছায়া হয়ে হেঁটে যাই, ভিখিরির মতো পুঁজিহীন<br />একটু আশ্রয় খুঁজে সদাশয় গেরস্তের কাছে।</p>
<br /><p>ও হরি, হে আল্লাহ, বলো প্রভু দয়াময়<br />আমার দেশের মাটি, ধুলিকণা আলো-হাওয়া, জল<br />কেন আজ এমন নিষিদ্ধ হবে আমারই সংসারে?<br />তোমার দুনিয়া, দীনবন্ধু, সমকালে<br />কেন এত ছোট মনে হয়?<br />তবে কি আমাকে শেষে, হায়,<br />নিজ চোখে দেখে যেতে হবে আত্মজার লুণ্ঠির সম্ভ্রম আর<br />নিঃশব্দে সাজাতে হবে আমার নিজেরই গুপ্ত চিতা?</p>
<br /><p> (আকাশ আসবে নেমে কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/swapnogulo-obinyasto-tebile/ স্বপ্নগুলো অবিন্যস্ত টেবিলে2018-02-17T11:31:14-05:002023-06-27T16:52:06-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>স্বপ্নগুলো অবিন্যস্ত টেবিলে টুকরো টুকরো জ্যোৎস্না;<br />জ্যোৎস্নায় উড়ে এসে পড়ে<br />পোড়া ঘরের ছাই। ধুলোবালি খিলখিলিয়ে হেসে<br />ঢেকে দেয় তাকে, যে সবেমাত্র তার<br />স্বপ্নগুলোকে গুছিয়ে রাখছিল চায়ের পেয়ালায়;<br />সে এখন পুরনো কালের বিকৃত মূর্তির মতো।</p>
<br /><p>এখানে প্রতি মিনিটে জন্ম নিচ্ছে হাজার হাজার<br />প্রেত, লহমায় বেড়ে উঠে গিলে ফেলছে<br />ঘড়ির মিনিট এবং সেকেন্ডের কাঁটাগুলো।<br />সময় এখানে ভারি পাথরের মতো, প্রেতবাহিনী<br />হাতে গোণা কয়েকটি প্রকৃত মানুষকে<br />ঘরছাড়া করে ঠা ঠা রোদ্দুরে<br />বজ্রপাতের দরনে হাসছে। ওদের মুখ-গহ্বর থেকে<br />গলগল করে বেরোয় রক্ত।</p>
<br /><p>লোকগুলো প্রেতবাহিনীর সঙ্গে হাত মেলায় মহা আহলাদে,<br />জুড়ে দেয় খোশগল্প, কী এক<br />রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় ওরা একটু-একটু করে<br />প্রেত-প্রেত হ’য়ে উঠছে খেদহীন। রাতের<br />তৃতীয় প্রহরে তাড়া-খাওয়া কবিগণ ভয়ার্ত<br />ভাঙা গলায় আর্তনাদ করছেন<br />তাঁদের পাণ্ডুলিপিসমূহ পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে বলে নয়,<br />নাগরিকদের মুখগুলো ক্রমাগত নিজস্ব<br />মানুষের চামড়া ত্যাগ করে<br />বিচিত্র জীবজন্তুর রূপ ধারণ করছে বলে।</p>
<br /><p>অবিন্যস্ত টেবিলে স্বপ্নগুলো পেরেকময় মাথার<br />দুঃস্বপ্নের সঙ্গে জায়গা বদল করে নিচ্ছে। স্বপ্নচারীর<br />সারা শরীরে পেরেক গাঁথা, শুধু চোখ দুটো<br />জলপায়রার পালকের স্পর্শ পাওয়ার আশায় জাগ্রত, তৃষিত।</p>
<br /><p> (আকাশ আসবে নেমে কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/se-likhbe-bole/সে লিখবে বলে2018-02-17T11:30:24-05:002023-06-26T08:38:30-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>সে লিখবে বলে বসে আছে নির্মল সুফীর মতো<br />গভীর রাত্তিরে। চৌদিকের চেঁচামেচি গেছে থেমে<br />অনেক আগেই, ক্রুশ হ’য়ে প্রকাশিত তার ব্রত<br />অন্তরালে; সে লিখবে বলে আকাশ এসেছে নেমে<br />ছিটিয়ে নক্ষত্র কিছু। গাছপালা জানায় কুর্নিশ,<br />নিশীথের পক্ষীকুল ডানা থেকে ঘুম ঝেড়ে ঝুড়ে<br />জুড়ে দেয় গান, সে লিখবে বলে অলীকে উষ্ণীষ<br />মাথায় জ্বলছে তার, গূঢ় মন্ত্রধ্বনি জাগে মেধা জুড়ে।<br />ধ্যান মানে এক ধরনের যাদুভাষ্য, জন্মান্তর<br />বলা চলে, সে তার জানে বলেই প্রতীক্ষা করে খুব<br />ধৈর্য ধরে বিভিন্ন প্রহরে; যদি কোনোদিন ভুল<br />হয়ে যায় তার আরাধনায় বিভ্রমে সে প্রথম<br />অনুতাপে আরো বেশি সত্তার গভীরে দেয় ডুব,<br />অনন্তর ভেসে ওঠে হাতে নিয়ে অনন্তের ফুল।</p>
<br /><p> (আকাশ আসবে নেমে কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/samne-pa-barbar-pala/সামনে পা বাড়াবার পালা2018-02-17T11:29:49-05:002023-06-26T08:38:25-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>গোধূলির ভেতর থেকে বেরিয়ে এসে<br />কে যেন ডাকে আমাকে, বলে-<br />আর নয় নিষ্ক্রিয়তার মদে চুর হ’য়ে<br />বসে-থাকা,<br />আর নয়, আফিমে বুঁদ হ’য়ে ঝিমুনি।<br />এবার শরীরে একটা ঝাঁকুনি দিয়ে<br />উঠে দাঁড়াও; স্থবিরতার পাথর হটিয়ে<br />এবার সামনে পা বাড়াবার পালা।<br />যারা আলো-তাড়ানো অন্ধকারের<br />বিরুদ্ধে লড়ছে,<br />যারা আগাছাগুলো উপড়ে ফেলে মানুষ মানুষে<br />সম্প্রীতির সাঁকো গড়ছে, যারা<br />আগামী শতাব্দীর দিকে মুখ রেখে<br />করছে নতুন সভ্যতার নান্দীপাঠ,<br />যারা চাষ করছে মানবতার পতিত মাঠ,<br />এসো আমরা সবাই<br />হাত লাগাই তাদের কাজে। এসো আমরা<br />প্রতিক্রিয়ার শ্যাওলা-ছাওয়া ভিত কাঁপিয়ে গান গাই।</p>
<br /><p>সময়ের ঘাড় ধরে যারা নিয়ে যেতে চাইছে<br />প্রস্তর যুগে, এসো আমরা আমাদের দিকে ধেয়ে-আসা<br />সেসব পাথর ফেরত পাঠাই<br />চির স্থবিরতার দিকে। আমাদের কণ্ঠে<br />প্রশ্রয় দেবো না পরাজয়ের আঁধার-আক্রান্ত ধুসরতাকে,</p>
<br /><p>আমাদের গীতধারায় আশ্রয় পাক জয়ধ্বনি।<br />ওরে তোরা সব জয়ধ্বনি কর বলে আমরা<br />এগিয়ে যাবো, এবার আমাদের সামনে পা বাড়াবার পালা।</p>
<br /><p> (আকাশ আসবে নেমে কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/sorbotro-manush/সর্বত্র মানুষ2018-02-17T11:29:14-05:002023-06-26T08:39:05-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>আদিগন্ত প্রসারিত মাঠ,<br />উদার আকাশ<br />আর হৃদয়ের সন্দীপণ<br />আমাকে দিয়েছে পাঠ স্বপ্ন থেকে স্বপ্নে গমনের,<br />মহানুভবের স্পর্শে মহাশ্মশানেও<br />বসন্তের বৃক্ষরোপণের।</p>
<br /><p>পূণ্যলোভীদের ক্রূর চিৎকার, ধ্বংসের<br />বীভৎস উৎসব পণ্ড করে<br />সৌন্দর্যের মহিমার দীপ্র সম্মিলন<br />এবং জখম করে কবিতার গ্রীবা<br />দিবানিশি। সর্বত্র মানুষ আজ ভয়ানক ভীত,<br />হঠাৎ আগুন-লাগা উড়োজাহাজের যাত্রী যেন।</p>
<br /><p> (আকাশ আসবে নেমে কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/shyamolir-galib/শ্যামলীর গালিব2018-02-17T11:28:37-05:002023-06-26T08:38:55-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>ইয়ার বক্সির মজলিশ থেকে সবেমাত্র তিনি<br />নেমেছেন ধূসর রাস্তায়; তার কণ্ঠনালী ব্যেপে<br />সদ্য কিছু গজল পাঠের স্মৃতি স্তব্ধতা পোহায়।</p>
<br /><p>সুরা মেঘময় করে তাকে; নক্শাদার পাল্কি নয়,<br />ধোঁয়া ছেড়ে বেবী ট্যাক্সি কাছে আসে প্রতীকের রূপে।<br />আত্মা আছে কিংবা নেই, এই তর্ক মুলতুবি রেখে</p>
<br /><p>গলিতে ঢোকেন ছায়া-প্রায়। কে যেন জানালো তাকে,<br />‘এই মির্জা, দ্যাখো কত মোহর তোমার পিরহানে<br />লেগে আছে জ্বলজ্বলে’। শায়ের ভ্রূক্ষেপহীন, একা</p>
<br /><p>ঘরে ফিরে ঝাড়লেন নিজের কামিজ, লহমায়<br />জামার আস্তিনে গজলের সুর বাজে; রাত্রি তার<br />ওপর নিছক নারী, ঝুঁকে-থাকা। তিনি উদাসীন,</p>
<br /><p>নীরব থাকেন চেয়ে দূর নক্ষত্রের জলসায়।<br />জানালার পাশের পেয়ারা গাছ, মসৃণ বেড়াল,<br />নিদ্রাতুর ঘরদোর জানে না যন্ত্রণা তার আর</p>
<br /><p>অন্তর্গত খর ক্ষরণের রক্তচ্ছাপ প্রকাশিত<br />নয় বটে। ভগ্নস্বাস্থ্য স্ত্রী-র দিকে কিছুক্ষণ চোখ<br />রাখেন, শোনেন রুক্ষ, বিরান জমির হাহাকার</p>
<br /><p>আর কোনো এক ধ্বংসস্তূপের নাছোড় স্মৃতি তাকে<br />বিচলিত করে খুব; পাঁজরের খাঁচায় কে পাখি<br />কাঁদে? বুঝি শ্যামা বুলবুলিকে না পেয়ে কাছে ধারে</p>
<br /><p>দুঃখ নয়; নৈশ হাওয়া চেটে নেয় গীতসুধাময়<br />কসবির আত্মার আতর, নিশীথের প্ররোচনা<br />বড় তীব্র; গোলাপ বাগানে ঘোরে কবির কংকাল।</p>
<br /><p>ভোরের আবীর ঝরে নিরিবিলি শ্যামলীর সুপ্ত<br />গালিবের সত্তাময়। খোঁয়ারির তীরে জেগে উঠে<br />তিনি নিশীথের কাছে পাওয়া গজলের রাঙা ওড়না</p>
<br /><p>খোঁজেন হাতের কাছে। ইজারবন্দের গিট খুলে<br />খুলে পদাবলী পেয়ে যান, কিছু চুম্কি-খসা ওড়না<br />ওড়ে উল্লসিত রাধাচূড়া গাছে, বাংলার আকাশে।</p>
<br /><p> (আকাশ আসবে নেমে কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/shaskoshto/শ্বাসকষ্ট2018-02-17T10:41:30-05:002023-06-26T08:38:38-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>হৈ হৈ হাটে কিছু কেনাকাটা কিংবা বেচা<br />ছিল না আমার মনে। তবু<br />ঘেঁষাঘেষি, পা মাড়ানো, গুঁতোগুঁতি আমাকে বিব্রত,<br />বিমর্ষ, বিপন্ন করে। কেউ কেউ রক্তের তিলক<br />কপালে পরিয়ে দেয়, কেউ বা পাঠায়<br />লাঠির অরণ্যে, হামেশাই গালি গালাজের বানে<br />ভাসি, আর কোমরবন্ধের নিচে খুশি<br />মেরে প্রতিপক্ষ সুখে পানসি ভাসায় নদীবক্ষে পাল তুলে।</p>
<br /><p>খুব সাবধানে তাঁবু খাটিয়ে নিজেকে নিরালায়<br />লুকিয়ে রাখার সাধনায় মগ্ন হই, ভালো থাকি<br />সূর্যমুখী-ছাওয়া মাঠে, গাছপালা, পাখিদের জলসায়, দিঘির স্নেহের<br />স্পর্শ নিয়ে, মাঝে মাঝে সাঁঝে দেখি একটি তরুণী<br />খোঁপা থেকে ফুল খুলে ভাষায় দিঘির জলে, চলে<br />যায় দিগন্তের দিকে। অন্য কারো পদচ্ছাপ দেখি না কখনো।</p>
<br /><p>অকস্মাৎ দুরন্ত ঝঞ্ঝায় এক ঝটকায় সুরক্ষিত<br />তাঁবু উড়ে যায়, খুঁটিগুলি শূন্যে ওড়ে,<br />দেবোপম উলঙ্গতা নিয়ে হি হি কাঁপি,<br />জলজ রাক্ষস তীক্ষ্ণ দাঁত দেখায়, কাচের মতো<br />ভাঙে প্রতিবোধ, চতুর্দিকে পুনরায়<br />হট্ররোল জেগে ওঠে; শ্বাসকষ্ট বেড়ে যেতে থাকে।</p>
<br /><p> (আকাশ আসবে নেমে কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/shuddho-hote-chai/শুদ্ধ হতে চাই2018-02-17T10:40:43-05:002023-06-27T03:34:23-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>আহ্ কতকাল পর দেখা। এখন তোমার কোনো<br />খবর রাখি না বন্ধু, এ লজ্জা আমার। কী করে যে<br />তোমাকে ভুলেছিলাম এতদিন, অথচ দিন ছিল<br />আমরা দু’জন দিব্য একই বিছানায় ঘুমোতাম<br />গলাগলি, দাড়ি কামাতাম একই ব্লেডে। পরস্পর বলাবলি<br />করতাম নিজ নিজ স্বপ্ন কথা। আহ্ কী সুন্দর<br />স্বপ্নই না দেখতাম আমরা তখন।<br />সেসব স্মরণ করে বুকের ভেতর হু হু হাওয়া বয়ে যায়।</p>
<br /><p>কী-যে হলো, সঙ্গের সংঘর্ষে বাচালের হুমকিতে,<br />সঙ্গীতের ভ্রষ্টাচারে তুমি দূরে, খুব বেশি দূরে<br />সরে গেলে; আমাকে গিলতে হলো নোংরা।<br />বার বার বিসমিষা পাক খায়, ভেদবমি হ’য়েও নিস্তার<br />নেই, দ্যাখো আজ আমি গুলি-খাওয়া বাঘের মতোই<br />আপন গুহায় শুয়ে ক্ষত চেটে নিরাময়<br />চাই আগোচরে, ভুলে যেতে চাই সেই আত্মঘাতী<br />তমসার সরীসৃপ-স্মৃতি। হা করি, কী নিঃস্ব আমি।</p>
<br /><p>যাক গে, ভালোই হ’লো, হঠাৎ তোমার সঙ্গে দেখা<br />এই অবেলায়; হয়তো আমি<br />নিজেরই অজ্ঞাতসারে তোমাকে খুঁজেছি<br />অন্তরের বাহিরে সর্বক্ষণ। দ্রষ্টা তুমি, এ গরিব<br />ভিখিনীকে তোমার ভেতরে টেনে নাও,<br />হৃদয়ে রঙিন পাখি পোষার অবাধ অধিকার<br />দাও আর তোমার আশ্চর্য সব স্বপ্ন জাগাও আমার চোখে,<br />আমিও তোমারই মতো শুদ্ধ হতে চাই।</p>
<br /><p> (আকাশ আসবে নেমে কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/shanti-ki-horin/ শান্তি কি হরিণ2018-02-17T10:40:11-05:002023-06-26T18:37:02-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>শান্তি কি হরিণ হয়ে ঘুমাচ্ছিল এখানে কোথাও? ‘স্বপ্ন দাও’<br />বলে সে কি ঘুমের ভেতর অন্তরীণ<br />উঠেছিল নড়ে? তার শরীরে আঁচড়<br />পড়ে এলোমেলো, জেগে বিখ্যাত দু’চোখ<br />মেলে খোঁজে ঝিলের ঝলক ত্রস্ত তাকায় অদূরে,<br />দেখে নিতে চায় সন্ত্রাসের নেশায় মাতাল কোনো<br />ব্যাধের নিশানা তীক্ষ্ণ হয়ে আছে কি না।<br />অথচ বাজায় বীণা গাছ, প্রজাপতিদের নাচ<br />পাতায় পাতায়; তবু ভয় জেগে রয়<br />স্পন্দিত হৃদয় জুড়ে। কত ভালো হয়, যদি গুপ্ত<br />নিষাদের পায়ের তলার মাটি দ্রুত সরে যায়,<br />দেবতার হাত নেমে আসে অকস্মাৎ মেঘ থেকে।</p>
<br /><p> (আকাশ আসবে নেমে কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/shobdoshob/শব্দশব2018-02-17T10:39:14-05:002023-06-26T08:38:45-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>বসে, শুয়ে দাঁড়িয়ে,-কিছুতেই<br />না আমার সুখ, না স্বস্তি।</p>
<br /><p>রেস্তোরাঁয় চিকেন কাটলেট অর্ডার দিয়ে অথবা বাসস্টপে<br />দাঁড়িয়ে, পার্কের বেঞ্চিতে বসে গাছ থেকে<br />পাতা খসে-যাওয়া কিংবা<br />ঝালমুড়িঅলার তৎপরতা দেখতে দেখতে<br />আমি ছটফট করি।<br />মনে আমার চরকি; চাদ্দিকে এই<br />ঘোরাঘুরি আমার সময়কে খায়, আমাকেও<br />খায়। সুতোহীন এক রঙিন ঘুড়ি<br />আকাশে দুলতে দুলতে যায় হাওয়ায় হাওয়ায়<br />আর তাকে ধরার জন্যে ছুটতে থাকি অবুঝ<br />বালকের মতো। সবুজ ঘাসে লুকানো পাথরে হোঁচট খেয়ে<br />আমার ঠোঁট থেকে ঝরে রক্ত। তবুও<br />হুঁশ নেই, চলে হাত বাড়িয়ে অবিরাম ছোটা।</p>
<br /><p>না বিত্তের ঝলসানি, না রমনীয় ভালোবাসা,<br />শুধু এক শব্দ্তৃষ্ণা আমাকে অষ্টপ্রহর<br />তাড়িয়ে বেড়ায় এদিক থেকে ওদিক।<br />হাওয়া, গাছের পাতা, রোদের টুকরো<br />আর পাখির পালক থেকে শব্দ পাওয়ার<br />আশায় এই বয়সেও ভাষাহীন আমার তুমুল ছটফটানি।</p>
<br /><p>হঠাৎ কিছু শব্দ পেয়েও যাই, অথচ শব্দগুলোকে<br />ঠিকমতো সাজাতে গিয়ে<br />পণ্ড করে ফেলি বিন্যাসের আলপনা আর<br />প্রিয়তমা শবের পাশে বসে উস্কো খুস্কো।</p>
<br /><p> (আকাশ আসবে নেমে কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/shobdochetna/শব্দচেতনা2018-02-17T10:38:28-05:002023-06-26T08:38:45-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>কোনো লুকোছাপা নয়, এর দরকার<br />আছে বলে মনে করি না।<br />শব্দ নিয়ে ছ্যাবলামি আমার<br />ধাতে নেই,-এই শাদা কথাটা আমাকে<br />সরাসরি বলতেই হচ্ছে। না বললেও চলে বটে,<br />যা ঘটে ঘটুক, বলে ফেলাটাই ভালো।<br />আত্মহত্যার বদলে খুদকুশি শব্দটি যদি<br />বসিয়ে দিই কিংবা বৈমাত্রেয় ভ্রাতা না বলে<br />বলি সওতেলা ভাই, তাহ’লে কি<br />আমাকে কেউ দিনদুপুরে হাতকড়া পরিয়ে দেবে?</p>
<br /><p>কারগারের পরিবর্তে জিন্দানখানা<br />অথবা পরম বান্ধবের জায়গায় জিগরি দোস্ত<br />ব্যবহার করি, তবে কি<br />বঙ্গীয় শব্দকোষ মানহানি-মামলা করবে আমার বিরুদ্ধে?</p>
<br /><p>কখনো যদি মহাফেজখানায় বসে<br />খোদার বদলে ঈশ্বর এবং পানির বদলে<br />জল উচ্চরণ করি, তাহলে কি বাজ পড়বে<br />কারো মাথায়? যদি মুখ থেকে আধা ডজন পুষ্পার্ঘ্য<br />আর এক ডজন প্রণাম অথবা নমস্কার<br />বেরিয়ে পড়ে তবে কি নাকে খৎ দিতে হবে সাতবার?</p>
<br /><p>আপাতত কিছু শব্দ প্রজাপতির মতো<br />উড়ে এসে বসছে আমার নাকে, কানে,<br />ওষ্ঠে আর খোলা বুকের পশমে; আমার<br />চোখ মুদে আসছে। প্রজাপতিগুলো এক ফাঁকে<br />ভ্রমর হ’য়ে গুঞ্জরণে<br />আমার অবসরকে বানিয়ে তুলছে<br />এক চমৎকার খেলা এবং কনকনে হাওয়ায়<br />স্পন্দিত ফুল ফোটার বেলা।</p>
<br /><p> (আকাশ আসবে নেমে কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/robindronather-jonye/রবীন্দ্রনাথের জন্যে2018-02-17T10:37:47-05:002023-06-26T08:38:16-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>যখন অধ্যাপকের জিভের ডগায়<br />তোমার কবিতাবলী ভীষণ চর্চিত হ’তে থাকে,<br />তখন আমার কেউ নও তুমি হে রবীন্দ্রনাথ।<br />যখন ঘোড়েল রাজনীতিবিদ মাতে<br />মঞ্চ থেকে মঞ্চান্তরে<br />তোমার প্রবল নাম সংকীর্তনে<br />তোমার রচনাবলী না পড়েই, তখন তোমাকে<br />চিনি না এবং<br />যখন তোমার গান সরকারি আসরে অলঙ্কার<br />হয়ে বাজে উদাসীন কানে, তখনও আমার<br />কেউ নও তুমি।</p>
<br /><p>যখন নিভৃতে দেখি তুমি পদ্মাতীরে হেঁটে যাও<br />আদিগন্ত সরল জ্যোৎস্নায় গীতিবিতানের স্মৃতিময়তায়,<br />তখন তোমার দিকে বিস্মিত তাকাই,<br />তখন তোমার দিকে তাকাই,<br />তখনই আমার তুমি, একান্ত আমার,<br />ভেজা মাটি, স্বর্ণ রেণু, সমস্ত আকাশ যেন তোমার হৃদয়,<br />আমার অন্তর জুড়ে তোমারই অমর্ত্য পদধ্বনি।</p>
<br /><p> (আকাশ আসবে নেমে কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/rokhsakoboch/রক্ষাকবচ 2018-02-17T10:37:10-05:002023-06-27T02:55:14-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>মধ্যদুপুরে সতেজ যুবক দুর্ঘটনায়<br />রাস্তায় পড়ে বেশ বিব্রত। হাতে ছিল তার<br />নাদুস নুদুস বঙ্গীয় কিছু হালের থ্রিলার।<br />থ্রিলার সহায়, একটি আঁচড়ও লাগে নি শরীরে।<br />গীতবিতান কি ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’ তার<br />হতো না কি বলে যথেষ্ট এক রক্ষাকবচ?</p>
<br /><p> (আকাশ আসবে নেমে কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/je-odrishyo-chad/যে অদৃশ্য চাঁদ2018-02-17T10:35:05-05:002023-06-26T08:35:23-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>বেলা তো অনেক হলো। এরই মধ্যে গুছিয়ে ফেলার<br />কথা ছিল সব কিছু। অথচ কেমন<br />অগোছালো পড়ে আছে সংসার এবং<br />কবিতার ঘর, যেন কোনো<br />দুষ্ট বালকের দস্যিপনায় পাখির বাসা খুব<br />তছনছ হয়ে আছে<br />বিষণ্ন ধুলোয় এক কোণে। পথচারী<br />উপেক্ষার কিছু ছাই ছড়িয়ে গন্তব্যে চলে যায়।</p>
<br /><p>আশা ছিল, যেটুকু হায়াত আছে বাকি,<br />বিকেলের রোদ, জ্যোৎস্না, পাখিদের ওড়াউড়ি আর<br />গাছ গাছালির সবুজাভা, মেঘ দেখে<br />বই পড়ে, শিশুদের ছোটাছুটি, আপনজনের<br />কথা উপভোগ করে, কবিতার অন্তঃপুরে ব’সে<br />নিশ্চিন্ত কাটিয়ে দেবো। কিন্তু আমি আজ<br />হঠাৎ লুণ্ঠিত মানুষের মতো নিঃস্ব, প্রায় নগ্ন,<br />বাইরে প্রচণ্ড শীতে বৃষ্টিতে কাঁপছি হি হি এক<br />অবোধ শিশুর হাত ধরে। হায়, আমার ভুরুর মাঝখানে<br />যে অদৃশ্য চাঁদ আছে তা-ও কি আখেরে নিভে যাবে?</p>
<br /><p> (আকাশ আসবে নেমে কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/jodi-aro-kichukal/যদি আরো কিছুকাল2018-02-17T10:34:21-05:002023-06-26T08:35:30-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>যদি আরো কিছুকাল পৃথিবীর ধুলোবালি, জল<br />আমার সত্তায় লাগে, বাতাস রূপালি<br />চুলগুলি নিয়ে খেলা করে নিরিবিলি<br />আরো কিছুকাল, তবে এমন কী ক্ষতি হবে কার?</p>
<br /><p>এইতো দেখছি ফুল তার যৌবনের আভা নিয়ে<br />ফুটে আছে, ডালে বসে পাখি চমৎকার<br />শিস দিয়ে বিকালকে বেশি বৈকালিক<br />ক’রে তোলে, বুঝি বা ঈষৎ ঈশ্বরিত!</p>
<br /><p>মোড়ায় আছে বসে মা আমার বৈধব্যের শুভ্র<br />স্তব্ধতায়, স্মৃতিগুলি যেন মেঘমালা থেকে নামে<br />এবং সাঁতার কাটে তাঁর পায়ের কিনারে। এই<br />দেখা আরো কিছুকাল থাকুক না হয়।</p>
<br /><p>সারা রাত অন্ধকারে বৃষ্টি পড়ে ঘুমের ওপর,<br />সারা রাত বৃষ্টি পড়ে স্বপ্নের ভেতর,<br />মায়াবি ঘুঙুর বাজে চরাচরে, শুনে ফেলি অপার বিস্ময়ে-<br />নামুক এমন বর্ষা বার বার হৃদয়ে আমার।</p>
<br /><p> (আকাশ আসবে নেমে কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/minoti/মিনতি2018-02-17T10:32:15-05:002023-06-27T18:22:20-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>তুমি কি এসেছ ফিরে? তুমিতো জানোই বহুদিন<br />ধরে আমি নীরেট বধির আর দু’চোখ আমার<br />জ্যোতিহীন। প্রত্যহ কে এক পাখির সুরের আড়ালে<br />বলে যায়, ধৈর্য ধরো, প্রতীক্ষা শিখতে হয় তাকে,<br />যে চায় প্রকৃত রূপ দেখে নিতে অন্তরের চোখে।<br />বৃশ্চিক দংশন করলে নড়বে না, বেনো জলে<br />বেবাক তৈজসপত্র ভেসে গেলে শান্ত থাকা চাই।<br />সবুরে জ্বলবে বাতি ছন্নছাড়া অন্ধকার ঘরে’।<br />কত আর ধৈর্য ধরি? পক্ষী-পর্যবেক্ষকের মতো<br />চেয়ে থাকি সর্বক্ষণ দৃষ্টিহীন। প্রতীক্ষার শেষে<br />আসবে তারার মতো শব্দস্রোত ভেবে কী নিশ্চুপ<br />বসে আছি; অজস্র বল্মীক এসে আমাকে নিশ্চিত<br />দেবে ঢেকে। যত শীঘ্র পারো ফিরে এসো এ নিবাসে,<br />আমার চোখের জ্যোতি আবার স্থাপন করো আজ।</p>
<br /><p> (আকাশ আসবে নেমে কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/valobashar-ortho/ভালোবাসার অর্থ2018-02-17T10:31:46-05:002023-06-26T09:35:23-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>সারা পথে ধুলো ছিল, কাঁটার<br />শাসন ছিল, কাঁকরের বিরূপতা সইতে<br />হয়েছে ঢের। জানতাম না পা দুটোকে রক্তাক্ত করে<br />কায়ক্লেশে এখানে পৌঁছে<br />দেখতে পাব সরোবরের উদ্ভাসন। এখানে আসার<br />কথা ছিল না, তবুও এলাম।</p>
<br /><p>সরোবরের টলটলে জলে মুখ রেখে<br />তৃষ্ণা মেটাই ব্যাধের বিপদে থেকে ছুটে-আসা<br />বনের প্রাণীর মতো। দূরে তাকিয়ে দেখি,<br />তুমি দিগন্তের মহিমা থেকে বেরিয়ে আসছো;<br />তোমার শাড়ির রঙের বিচ্ছুরণ কলাপ মেলে আকাশে,<br />আমার আকাঙ্ক্ষা সুদূরপ্রসারী।</p>
<br /><p>যখন নত আমি তোমার মুখের উপর,<br />তুমি রহস্যের ভাস্কর্য।<br />তোমার স্তনের নগ্নতাকে চুমো খাই যখন, তখন ধানের শীষ<br />ফোটে গানের গানে, পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর পাখি<br />শিঁস দেয়, কৃষকের কুটির দুলে ওঠে বসন্ত বাহারের সুরে<br />এবং ছিপছিপে নৌকো তীর ছেড়ে এগোতে তাকে জল চিরে।</p>
<br /><p>তোমার নাকে ক’ ফোঁটা ঘাম, যেন ভোরের<br />পাতায় জমে থাকে শিশিরবিন্দু। তোমার নিঃশ্বাসের সুগন্ধ<br />আমাকে বানায় মাতাল তরণী, অপ্রতিরোধ্য<br />কামনার হাত চেপে ধরি। কী কথা বলতে গিয়ে বোবার<br />অস্বস্তি রাখি ঢেকে; বিষণ্ন, রক্তচক্ষু কোকিল<br />নীরবতা পোহায় নগ্ন পাতার আড়ালে।</p>
<br /><p>আমার হৃদয়ে প্রেম মজুরের কর্মচঞ্চল<br />রগের মতো দপদপ করে। জীবনের<br />সঙ্গে আমার গভীর দৃষ্টি বিনিময় হলো,<br />যখন তোমার মধ্যে দেখলাম পবিত্র অগ্নিশিখা আর<br />সেই মুহূর্তে তুমি আমাকে এনে দিলে একরাশ পতঙ্গের<br />ভস্মরাশি, যাতে ভালোবাসার অর্থ বুঝতে ভুল না হয় আমার।</p>
<br /><p> (আকাশ আসবে নেমে কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/bitorko/বিতর্ক2018-02-17T10:30:34-05:002023-06-26T08:33:20-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>থাকুক না; থাকলে দোষ কী? আজ ওদের হটাতে<br />করা সভা ডেকে<br />করবে ঘোষণা লাগাতার হরতাল? বলো, কারা<br />মানববন্ধনে মেতে চাঁদ আর চন্দ্রমল্লিকাকে<br />কবিতার খাস জমিনের চতুঃসীমা<br />থেকে দেবেনির্বাসন? না, ওরা থাকবে নিজ নিজ<br />জায়গায় অটুট। কারো কোনো ক্ষতি নেই;<br />কবিতার বুকে নিত্য ফুটবে গোলাপ আর দুলবে দোয়েল।</p>
<br /><p>কবিতা কি ধুলোবালি থেকে ইস্ত্রি করা<br />কাপড় বাঁচিয়ে খুব সন্তর্পণে দূরে দূরে<br />অশোক ফুটিয়ে হেঁটে যাবে অথবা রুমালে নাক ঢেকে<br />এঁদো বস্তি পার হবে মখমলী চটি পায়ে? যদি<br />মানুষের বসতিতে হঠাৎ আগুন আগে, তবে কবিতা কি<br />মাউথ অর্গানে সুর তুলে আর্তনাদ মুছে দেবে?</p>
<br /><p>যদি কোনো চিত্রকল্পে বেজে ওঠে কংকালের হাড়,<br />উপমায় ভীষণ শীতার্ত, খাদ্যহীন, তাপহীন<br />নারী আর শিশুদের নীল মুখ ভেসে ওঠে, তবে<br />ঘোর নান্দনিক কম্বুকণ্ঠে উচ্চারিত<br />হবে কি ধিক্কার? এ প্রশ্ন তুলে যারা<br />পথে হাঁটে, মিছিলে দুর্বার ছোটে, তারা<br />উত্তরের প্রতীক্ষায় থাকবে না। রোদ্দুরে মন্দিরা বাজে,<br />নতুন আঙ্গিকে ওরা হয়ে ওঠে দীপ্ত মানবিক।</p>
<br /><p> (আকাশ আসবে নেমে কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/bagan/বাগান2018-02-17T10:29:52-05:002023-06-26T08:33:06-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>সে বারান্দায় দাঁড়িয়ে<br />কয়েকটি চারাগাছের দিকে তাকিয়ে তার<br />স্বপ্নের কথা বলছিল, ‘যদি কোনো দিন<br />আমার নিজের বাড়ি হয়, তাহ’লে আমার<br />শোবার ঘরের জানালার<br />কিছু দূরে থাকবে হাস্নাহেনার গাছ,<br />ড্রইং রুমের দেয়াল ঘেঁষে<br />বেড়ে উঠতে দেবো বেলি ফুলের ঝাড়<br />আর গেটের সামনে<br />ফুল ফোটাবে একটি বকুল গাছ’।</p>
<br /><p>অথচ ঘুণাক্ষরে তার মনেই হয় নি যে,<br />সে নিজেই একটি বাগান। দেখি,<br />ওর স্বপ্নের ওপর শুধু<br />চিক চিক করছে দুপুরের রোদ।</p>
<br /><p> (আকাশ আসবে নেমে কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/bacho-tumi-bacho/বাঁচো, তুমি বাঁচো2018-02-17T10:29:06-05:002023-06-26T08:33:06-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>বাঁচো, তুমি বাঁচো ধীরে স্থির অনাবিল বেঁচে থাকো।<br />এক বুক রৌদ্রছায়া নিয়ে বাঁচো; কাকে<br />বলে বাঁচা, এনিয়ে খামোকা যুক্তিতর্ক<br />করো না কখনো, বাঁচো, তুমি শুধু বাঁচো।</p>
<br /><p>এইতো তোমাকে ছুঁয়ে যায় হাওয়া, পাখি<br />শোনায় কত যে গান, জ্যোৎস্না তোমার পায়ের কাছে<br />কোমল লুটিয়ে পড়ে, গাছের নিবিড় পাতাগুলি<br />খোলাখুলি তোমাকে জপায় রোজ, ‘বাঁচো, তুমি বাঁচো’।</p>
<br /><p>ম্লান, ছেঁড়া বাচাল পোস্টার পথে পড়ে আছে, শিশু<br />বখিল উঠানে খিলখিল হাসে খেলনাবিহীন;<br />বারান্দায় একজন তরুণী শ্রাবণ-কালো চুলে<br />চালায় চিরুনি চিরায়ত ডৌলে-চোখ ভরে দ্যাখো।</p>
<br /><p>জ্বর ছেড়ে গেছে, মুখ নেই তেতো স্বাদ, ফল খাও, কাশিটাও<br />তেমন নাছোড় নয়। রোগ শোক সত্ত্বেও গভীর তুমি বাঁচো।<br />মেঘের ওপারে নয়, এখানেই কোথাও তোমার জন্যে কেউ<br />প্রতীক্ষায় আছে, তার আর কবিতার জন্যে বাঁচো, তুমি বেঁচে থাকো।</p>
<br /><p> (আকাশ আসবে নেমে কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/bondhuboreshu/বন্ধুবরেষু2018-02-17T10:28:28-05:002023-06-27T04:47:36-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>বেশ কিছু দিন থেকে তোমার শরীর ভালো নেই,<br />বলা যায়, মনও ভালো নেই। শীতের রোদ্দুরে একা<br />বসে থাকো চুপচাপ বিষণ্ন ধ্যানীর মতো, চোখে<br />ভেসে ওঠে কবেকার শূন্য মাঠ, চারু পদছাপ।</p>
<br /><p>ঈষৎ অক্ষম বটে, অসহায় পদচারণায়;<br />খাতার সকল পাতা থেকে যায় অক্ষরবিহীন।<br />তোমার মননে পক্ষাঘাতের কামড় নেই, টান<br />আছে ঠিক আগেকার মতো রবীন্দ্রনাথের গানে।</p>
<br /><p>কখনো ছিলে না সঙেঘ, একলা সর্বদা নির্বাচিত<br />বান্ধবমণ্ডলে, গাম্ভীর্যের অন্তরালে হাস্যরস<br />বুঝি বা লুকানো থাকে, ঝর্ণা হয়ে ঝরে মাঝে-মাঝে;<br />দেখলে তোমার মুখ হৃদয়ে রোদ্দুর কথা বলে।</p>
<br /><p>আজ প্রাতঃভ্রমণে বেরুনো দায়, ঠায় বসে থাকা,<br />নিজের সঙ্গেই চলে বিভিন্ন আলাপ, কখনো বা<br />শব্দাবলী খুনসুটি করে অসাড় হাতে সাথে,<br />তোমার মনোজ হংস উড়ে যায় কোন সে মানস সরোবরে।</p>
<br /><p> (আকাশ আসবে নেমে কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/bondoniyo/বন্দনীয়2018-02-17T10:27:41-05:002023-06-26T08:33:25-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>আমার নিকটে এসে পুনরায় দূরে চলে গেলে।<br />যাবার সময় তুমি আমার কথার প্রতি কান<br />দাওনি, অথচ আমি আলো-আঁধারির কণ্ঠস্বরে<br />হৃদয়ের কিছু কথা তোমাকেই বলতে চেয়েছি।</p>
<br /><p>আমার দু’হাতে কারা হাতকড়া দিয়েছে পরিয়ে,<br />আমি হাঁটলেই ঝন্ঝনিয়ে ওঠে লোহার শেকল<br />বার বার-এই অজুহাতে তুমি পরিহার করো<br />আমাকে এখন, জানি কারাগারে জমে না প্রণয়।<br />তবুও তোমাকে নিত্য গোলাপ পাঠাই, ভিলানেল<br />লিখে যাই তোমার উদ্দেশ্যে তাজা হৃদরক্ত দিয়ে।<br />প্রতিষ্ঠালোলুপ সব সমাজসেবক স্তব করে<br />শাসকের; আমি আজও তোমাকেই বন্দনীয় মানি।</p>
<br /><p> (আকাশ আসবে নেমে কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/protiti-nisshase/প্রতিটি নিঃশ্বাসে2018-02-17T10:27:05-05:002023-06-26T08:51:34-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>বারান্দায় আহত লোকটা। তার অর্ধেক শরীর<br />রোদ্দুরে, অর্ধেক ন্যস্ত ছায়ায়; ঘুরে কোমলতা<br />প্রশ্রয় দিয়েছে তাকে। খোয়াবের অর্ধস্ফুট ভিড়<br />ঘিরে ধরে, সুপ্রাচীন কংকালেরা হিজিবিজি কথা<br />কেবলি বলতে থাকে স্বপ্নের ভেতর। অকস্মাৎ<br />জেগে ওঠে, এদিক ওদিক দেখে নেয় ভালো করে;<br />বেখাপ্পা দুপুর ছোরাহত মানুষের মতো কাত<br />হ’য়ে বিকেলের কাঁধে ঢলে পড়ে গৃহস্থের দোরে।</p>
<br /><p>এ কেমন রাত আসে? ধূসর পথের ক্লান্ত ঠোঁটে<br />শিশির রক্তের রঙ ধরে; ঘরবাড়ি শীতে নয়<br />আতঙ্কে কম্পিত যেন। নিদ্রাছুট মানুষেরা ভয়<br />পেতে পেতে নিথর নিঃস্পন্দ হ’য়ে গেছে। অবিশ্বাসে<br />আচ্ছন্ন পাথুরে চোখ। কখন যে ফের জেগে ওঠে<br />মানবিক বোধ, এই প্রশ্ন কাঁপে প্রতিটি নিঃশ্বাসে।</p>
<br /><p> (আকাশ আসবে নেমে কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/nouka-kahini/নৌকা কাহিনী2018-02-17T10:25:15-05:002023-06-26T08:37:27-04:00শামসুর রাহমানhttps://www.bangla-kobita.com/shamsurrahman/<p>কিছুক্ষণের জন্যে, এই ধরো চব্বিশ-ঘণ্টাব্যাপী, একটা জোয়ার<br />এসেছিল। লোকগুলো আনন্দ। টগবগে ছন্দোমায় কোনো কবিতা<br />যেমন মাতিয়ে রাখে সবাইকে, তেমনি। একটি নৌকা,<br />ছিপছিপে, ঔদার্যে অলংকৃত, জলে ভাসতে ভাসতে ওদে,<br />যারা তীরে দাঁড়িয়ে দূরে থেকে দেখছিল খেলাচ্ছলে<br />ঢেউয়ে ঢেউয়ে নৌকায় দোলা, বলে, “অনুপম সূর্যোদয়<br />দেখাব তোমাদের। তোমরা ভরাট গলায় জয়ধ্বনি দাও”।<br />নদীতীরে দাঁড়িয়ে-থাকা লোকগুলোর মনের গহনে তখনো<br />সূর্যোদয় দেখার সাধ আড়মোরা ভাঙেনি। নৌকা<br />মানুষের নিঃস্পৃহতার ধূসর ধাক্কায় অনেকক্ষণ ঘুরপাক<br />খেলো মাঝ-নদীতে। তারপর জলকন্যার মতো দিলো ডুব।<br />প্রতিশ্রুতি সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্তে মুক্তোর দ্যুতি ছড়ায়।</p>
<br /><p> (আকাশ আসবে নেমে কাব্যগ্রন্থ)</p>@ 2024 - শামসুর রাহমান