ঘুমভাঙা চোখে দেখি, হাতঘড়িতে ভোর ছ’টী। আকাশ-ঝারি
শহরময় অবিরল জল ছিটোচ্ছে রাতের শেষ প্রহর থেকেই। শ্রাবণ-
ধারায় আমি হয়ে উঠি গুণীর সেতারের আলাপ। আমার মনের
গহনে চকিতে কদম ফুল ফোটে। এই ফুল ফোটালে তুমি, অথচ
নিজেই জানলে না। জানি, এখন তুমি ঘুমের গহীন গাঙে স্বপ্নময়
ডুবসাঁতারে নিমগ্ন, ছুঁয়েছ জলজ গুল্ম আর কয়েকটি রঙিন শঙ্খ
গাঙের তলদেশ। তোমার ঘুমন্ত ঠোঁটে হাসির কুঁড়ি চোখ মেলছে
তোমার অজ্ঞাতে। তোমার নিত্যদিনের সুপ্রভাত আর শুভ রাত্রিগুলো
আনন্দমেলা হয়ে আমাকে ঘিরে দুলছে এক স্বপ্নিল
ঘোর-লাগা নাগরদোলায়। কৃতজ্ঞতায় ছলছলে আমার চোখ। মনে
পড়ে, কাল রাতে হঠাৎ তোমার ক্ষণিকের আবির্ভাবে অনন্তের কয়েকটি
বুদ্বুদ দেখেছিলাম। অনৈতিহাসিক অথচ ব্যক্তিগত তাৎপর্যপূর্ণ মুহূর্তের
মুকুল আমার অসুস্থতার কালোয় আলো ছড়িয়েছিল অকপট অকার্পণ্যে।
সেই ঝলক তোমারই দান জেনে জ্যোৎস্নারাতের সোনালি মাছ হয়ে
তুমি ঝলসে উঠছিলে ক্ষণে ক্ষণে। আজকের ভোরবেলা গত রাতের
কয়েকটি মিনিট লাল চেলী গায়ে আমার বুকে মাথা রাখে। উন্মাতাল
আমি দু’বাহুর নীড়ে টেনে নিই বিগত ক্ষণকালকে।


   (মেঘলোকে মনোজ নিবাস কাব্যগ্রন্থ)