একদিন ভোরবেলা ঘুম থেকে জেগে চোখ কচলাতে কচলাতে দেখি
আমার জন্মশহরের প্রায় প্রতিটি রাস্তা শত শত গণ্ডারে
ভরে গেছে। কে জানে কোত্থেকে এসেছে এ পশুর দল।
হঠাৎ গণ্ডারের ভরাট মিছিল থেকে
উচ্চারিত হলো, “কে রে তুই বেল্লিক, বুরবক আমাদের
পশু বলে গাল দিচ্ছিস? বড় তো আস্পর্ধা তোর! এক্ষুণি
তোর টুঁটি ছিঁড়ে কাকপক্ষীকে খেতে দেবো আর উপড়ে নেবো
চোখ। সারা জীবন পথ হাতড়াতে হাতড়াতে কাটবে। বুঝলি বেয়াদব?”


জানলা থেকে গণ্ডারের বিপুল মিছিল দেখে আর
ওদের ক্রুদ্ধ বক্তব্য শুনে পিলে চমকে তো গেলোই,
শিরার উষ্ণ রক্ত শীতল হয়ে গেলো এক লহমায়। আচমকা
কানে এলো এক ঘোষণা,-“হে নগরবাসী, যা বলছি মন দিয়ে
শোনো। তোমাদের শহর এখন
আমাদের দখলে। কেমন ক’রে গণ্ডার-প্রভুদের
দাসত্ব পালনের সুযোগ তোমরা পেলে তা জানার প্রয়োজন নেই।
তোমরা এমনই অথর্ব, এরকমই নিষ্কর্মা যে,
কারও না কারও প্রভুত্ব স্বীকার না করলে
তোমাদের উদরের অন্ন হজম হয় না। তাই এখন গণ্ডার-প্রভুদের
গোলাম তোমরা। হ্যাঁ, তোরা আমাদের
দাসত্ব করলেই থাকবি সুখে, মেদ জমবে তোদের শরীরে।


জানলা দিয়ে ভোরবেলার রোদ আমার ঘুমন্ত
মুখের ওপর খেলা করতেই আমি
জেগে উঠলাম। জানলা রাস্তায় দৃষ্টি দিয়ে
গণ্ডারের মিছিল খুঁজি। না, তেমন কিছু নেই কোথাও।
সত্যি কি নেই? কেন যেন মাথায়, কপালে হাত
চলে গেলো নিজের অজ্ঞাতেই একটি কি দু’টি শিঙের উদ্দেশে।


  (গোরস্থানে কোকিলের করুণ আহবান কাব্যগ্রন্থ)