শুভবাদী রোদ চুমো খাচ্ছে লতাগুল্মে ঢাকা এই
রেস্তোরাঁকে, প্রাণে
পুরনো বৈভব নিয়ে বসে আছি, ছোট
টেবিলের ওপারে তরুণী, একা গায়ে
টোমাটো রঙের পুলওভারের প্রগাঢ় মমতা।
সমুখে স্যালাড, বিফ স্টেক,
সোনালি সুরার পাত্রে ঠোঁট।
কখনও দেখছি তাকে বিদেশী সংকোচে, কখনও বা নিসর্গকে।


একটু একটু নিচ্ছি স্বাদ
বাদামি রুটির,
মুখের ভেতর গলে টাটকা মাখন;
উড়ন্ত বেগনি পোকা তার সোনালি আঙুলের বসে
খেলা করে, কিছুক্ষণ ডগালগ্ন থাকে, যেন
হয়েছে মাতাল তন্বী ত্বকের উত্তাপে।
-এ কিসের ছায়া মাঝে-মধ্যে দুলে ওঠে।
মৃদু প্রবাধন-ধন্য মুখে?
পরা বাক্‌ পাক খায় বারবার মনের ভেতর। মনে হয়
এরকম বসে-থাকা, ত্র্যানিমার মুখোমুখি, বহু
শতাব্দী আগেও ছিল। ওর লাল বুটে
ঘাসের সবুজ স্মৃতি লুটোপুটি খায়, যাত্রী নিয়ে দূরে বাস চলে যায়।


একদা এখানে এই পুরনো মহলে আসতেন পুশকিন,
বাতাসের গুঞ্জরণময় ছায়াবীথি পেতো কবি দৃষ্টি; তিনি
হেঁটে যেতে-যেতে
হেমন্ত বিকেলে
চকিতে পেতেন খুঁজে কবিতার পংক্তিমালা
চৈতন্যের ষড়জে নিখাদে।
গাছের শিকড়গুলি সর্পিল আবেগে
তাকেই জড়াতে চায় রক্তে যার আফ্রিকার গহন ঝংকার।
বেলা বাড়ে, চুল ওড়ে মৃদু;
অচিহ্নিত বেদনায় ছায়া জমে মনে, রেনকোট নিই
কাঠের চাকতি জমা দিয়ে
প্রৌঢ় সজ্জনের কাছে। কারুকে বিদায়
না বলে ট্যাক্সিতে উঠে, ফিরে যাই মাইল-মাইল
দূরে নক্ষত্রের নীড়-ছোঁওয়া হোটেলের কামরায়।
কালো কফি খেতে খেতে ভাবি
উড়ন্ত বেগনি পোকা, রোদ-লাগা গোলাপি আঙুল,
কাঠের রেলিঙে ঝুঁকে-থাকা ডগার লতার কথা।
ক্রীড়াপরায়ণ পোকাটির প্রতি তার
প্রসন্ন দৃষ্টির মায়া বিলিয়ে কী কথা
ভাবছিল সেই মেয়ে? কারো সঙ্গে অভিমান করে
এসেছে একলা চলে? নাকি যে আসবে বলে কথা
দিয়েছিল, সে মেট্রোর টিকিট কাটেনি ভুলক্রমে?


ঝর্নার পানির মতো সময় গড়িয়ে যাবে, ক্রমাগত ঘোলা
হবে জল দশ দিকে, রাশি রাশি মাছ
কোথায় হারিয়ে যাবে ব্যাপক দূষণে।
বিস্মৃতির ধূসর ডাস্টার নির্বিকার
নিমেষে ফেলবে মুছে অনেক কিছুই। ভুলব না
সেই কবে দূর দেশে শুভবাদী রোদ
চুমো খেয়েছিল
লতাগুল্ম ঢাকা রেস্তোরাঁকে, একটি বেগনি পোকা
খেলা করেছিল সরু গোলাপি আঙুলে।
লাল বুটলগ্ন কচি ঘাসের ডগাকে ভুলব না কোনোদিন।


   (হোমারের স্বপ্নময় হাত কাব্যগ্রন্থ)