সারা পথে ধুলো ছিল, কাঁটার
শাসন ছিল, কাঁকরের বিরূপতা সইতে
হয়েছে ঢের। জানতাম না পা দুটোকে রক্তাক্ত করে
কায়ক্লেশে এখানে পৌঁছে
দেখতে পাব সরোবরের উদ্ভাসন। এখানে আসার
কথা ছিল না, তবুও এলাম।


সরোবরের টলটলে জলে মুখ রেখে
তৃষ্ণা মেটাই ব্যাধের বিপদে থেকে ছুটে-আসা
বনের প্রাণীর মতো। দূরে তাকিয়ে দেখি,
তুমি দিগন্তের মহিমা থেকে বেরিয়ে আসছো;
তোমার শাড়ির রঙের বিচ্ছুরণ কলাপ মেলে আকাশে,
আমার আকাঙ্ক্ষা সুদূরপ্রসারী।


যখন নত আমি তোমার মুখের উপর,
তুমি রহস্যের ভাস্কর্য।
তোমার স্তনের নগ্নতাকে চুমো খাই যখন, তখন ধানের শীষ
ফোটে গানের গানে, পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর পাখি
শিঁস দেয়, কৃষকের কুটির দুলে ওঠে বসন্ত বাহারের সুরে
এবং ছিপছিপে নৌকো তীর ছেড়ে এগোতে তাকে জল চিরে।


তোমার নাকে ক’ ফোঁটা ঘাম, যেন ভোরের
পাতায় জমে থাকে শিশিরবিন্দু। তোমার নিঃশ্বাসের সুগন্ধ
আমাকে বানায় মাতাল তরণী, অপ্রতিরোধ্য
কামনার হাত চেপে ধরি। কী কথা বলতে গিয়ে বোবার
অস্বস্তি রাখি ঢেকে; বিষণ্ন, রক্তচক্ষু কোকিল
নীরবতা পোহায় নগ্ন পাতার আড়ালে।


আমার হৃদয়ে প্রেম মজুরের কর্মচঞ্চল
রগের মতো দপদপ করে। জীবনের
সঙ্গে আমার গভীর দৃষ্টি বিনিময় হলো,
যখন তোমার মধ্যে দেখলাম পবিত্র অগ্নিশিখা আর
সেই মুহূর্তে তুমি আমাকে এনে দিলে একরাশ পতঙ্গের
ভস্মরাশি, যাতে ভালোবাসার অর্থ বুঝতে ভুল না হয় আমার।


   (আকাশ আসবে নেমে কাব্যগ্রন্থ)