বাবা, একখানা চিঠি লিখতে চেয়েচিলাম তোমাকে
তা আর লেখা হয়ে ওঠেনি কখনো
কতদিন ধরে ভেবেছি ঈশ্বরের ঠিকানায় একটা মেসেজ পাঠিয়ে দেবো
ই-মেইলের ঠিকানাটাও জোগাড় করে রেখেছি
কেবল সময় করে উঠতে পারিনা, ক'জন মানুষের খাবারের ব্যবস্থা করতে করতে।


গতর খাটুনি যাকে বলে।


সারাদিন খাটাখাটনি করে সন্ধ্যায় শীর্ণ দেহখানা জীর্ণ ঘরে টেনে নিয়ে তোমার বউমার সংসারের নানান
অসুবিধার কথা শুনতে শুনতে আমি বেহুঁশ হয়ে পড়ি।
তুমি তো সেই যে চৈতের শেষ বিকেলের ঝড়ের কবলে পড়ে বিদায় নিয়ে গেলে।
আম কুড়ানো সুখটুকু মুহূর্তে বন্ধ হয়েছিল আমার।
টিনের চাল উড়ে গিয়ে তোমাকে বিদীর্ণ  করে গিয়েছিল একেবারে। তোমাকে তো বাবা বলে ডাকতেও পারিনি আর। পহেলা বৈশাখ তাই দুঃখ হয়ে আসে প্রতিবার আমাদের ঘরে।
ওই দিনইতো তোমাকে নামিয়েছিলাম আঁধার ঘরের অসীম ঠিকানায়।


আচ্ছা বাবা! ওখানে কী খাদ্যের খুব বেশী টানাটানি?
এই আমাদের মতন?
এতোটা শ্রমের পরেও কি জোটেনা পেটের আহার??
নাকি অনন্ত ছাড়াছাড়ি
খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসার প্রয়োজন নেই আর!


তুমি তো কত সময় রেগে গিয়ে বলতে, মরেও তোমাকে চালাতে হবে এ আজন্ম দুঃখের সংসার।
ওখানে কেমন  সংসার তোমার ?
বাহারী সুখের খুব বেশী ছড়াছড়ি তাইনা, বাবা?;
ওখানে তো সামাজিক  নিপীড়ন  নেই, নেই চালচোর, ডালচোর, সুদখোর, জুয়াখোর, ঘুষখোর, নেশাখোর
নেই রফিকের মতো মেম্বার, নমিনেশনের চেয়ারম্যান। নেই টানাটানি ভাতা বন্ধের হুমকি
চরম হানাহানি।  


আহা! অমন যদি হতো আনন্দে অবিরত জড়িয়ে দিতাম মায়ের কোমল শাড়ি
আঁচল খানা টেনে বুকের মধ্যে এনে মাকে বলতাম চলো, "বৈশাখে কাম নেই চলো বাবার বাড়ি।"
তাহলে তো তোমাকে আর চিঠি লেখার কোন দরকারই পড়ত না বাবা।


একদিন সত্যি সত্যিই তোমাকে লিখতে হবে চিঠি
সুখ হারিয়ে আমরা ভীষণ অসুখ নিয়ে আছি।
*****************************
টুঙ্গিপাড়া,
★লেখাটি কয়েক বছর আগের। কোন এক সন্তান কর্তৃক বাবার জন্যে আকুতি। যে কিনা চৈতের শেষ দিনে কালবৈশাখী ঝড়ে ওপারে চলে গিয়েছিলো★