একদিনও পড়িনি একজন কবির কবিতা। আজই প্রথম পড়লাম তাকে আর তার প্রেমেও পড়ে গেলাম। বাংলা কবিতায়  Suman নামে লিখে থাকেন। বাংলা কবিতার একদম প্রাথমিক সময়ের সদস্য হয়েও মাত্র ৬২৪ টি কবিতা তিনি এ যাবৎ পোস্ট করেছেন। বাংলাদেশের মানুষ হলেও  প্রোফাইলে তার কোন ঠিকানা দেয়া নেই।
রাত আটটার পর তার লেখাটিতে চোখ বুলাতে গিয়ে আটকে যাই। গভীর দৃষ্টিসম্পূর্ন একটি লেখা। যেটি তাৎক্ষণিকভাবে আমার ভেতরটায় মোচড় দিয়ে ওঠে। আমার সকল বন্ধুদের নিকট অবহিত করানোর তাকিদও অনুভব করি। আসুন একটু পড়িঃ
কবিতা "শোভন বর্ম"  কবি সুমন।


বর্ম শাব্দিক অর্থ ঢাল আর শোভন  অর্থ – মনোহর,  রমণীয়, চারু, অভিরাম, চমৎকার, সু্শ্রী, রূপবান, মনোরম।


প্রচ্ছন্ন একটা ইঙ্গিতে কবি সুমন  "শোভন বর্ম" নামের এ কবিতাটি আমাদের উপহার দিলেন। ম্যাগনেটিক আবহ রয়েছে কবিতাটিতে। সহজবোধ্য  নয় কাঠিন্যের মধ্যে দিয়েও যায় নি। এই অতি সম্প্রতি লেখার যে ধরন, যতিচিহ্নের ব্যবহার স্বল্প রেখে কবিতার মূল ঘরানাকে সঙ্গে রেখে যে শব্দ  বাক্য উপমা অলংকারের ব্যবহার, তা বজায় রেখে একটি লেখা একটি অনন্য অর্থবহনকারী কবিতা "শোভন বর্ম"।


কবিতার প্রথম চারটি চরণ


"হয়তো এই অনাকাঙ্ক্ষিত দূরত্ব ভালো
তাই এই সবুজ সীমানা আঁকা
জলে মাছের মতো কাছে থাকা
নিবেদিত দাসেরও অধিক "


ভালোবাসবার রঙের চিহ্নে কবি অনাকাঙ্ক্ষিত একটি দুরত্বকে ভালো বলে প্রবোধ দিচ্ছেন। কিন্তু কতবড় নিগুড়তম দার্শনিক তত্ত্ব বহন করে আছে এটুকু লেখায় তা সামান্য ভাবলেই অনুমিত হয়। মাছের বাস জলে, তেমনি প্রিয়জনের বাসও মনে
অথচ তা যদি হয় রাজায় আর প্রজায় পীর আর মুরিদে, মহাজন আর নিঃস্বে, সে সম্পর্ক কতটা নৈকট্যের আর দুরত্বের তা আমরা বুঝতেই পারি।


কবিতারপরবর্তী দুইটি চরণ আরো বেশী আকর্ষণ বহন করে। কবিতার প্রয়োজনে আসে নানা উপমা, নানা অলংকার। কোথাও খুব বেশী, কোথাও কম। কবি সুমন লিখলেন,
                ভালো কিছু নাকি অল্পটাই মুল্যবান
                মুল্যহীন  যেমন অসুন্দরের আধিক্য
এটুকুর কোন জবাব নাই। এতো অল্প কথায় তাবৎ পৃথিবী তুলে আনবার মতো।পৃথিবীতে সত্যিই তাই মহামূল্যবান জিনিসপত্রের পরিমান কম, তেমনি মানুষও। অসুন্দর ছেয়ে আছে চারদিক সর্বকালে।


এরপর অবাক বিস্ময়ে এক প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে কবি বলছেন,
          কোনো এক গোধূলির লগ্নে
          পৃথিবীর শরীরে গলে পড়া
          লাল-সোনালী সিঁদুর রঙা মাহেন্দ্রক্ষণে
          স্বগোতক্তি করে সময়


সময় তার স্বগতোক্তি করে একটি অপরূপ দৃশ্যের মধ্য দিয়ে


"এমন অসাধারণ মূহুর্ত
কেনো এমন অল্পায়ু হয়   "


বহুপথ বিচরন করেছি, বহুজনকে জেনেছি চিনেছি বুঝেছি, অল্পকিছু কথায় এমন দর্শন আমি অল্পই পেয়েছি। সুক্ষ্ম চিন্তা চেতনায় মনোসংযোগ একমাত্র কথা নয়, তার সাথে প্রয়োজন নিষ্ঠা। সেই নিষ্টার চূড়ান্ত প্রতিরূপ হিসেবে কবি শেষ কথাগুলি লিখলেন,
           তারা একদিন সতর্ক করেছিলো
           সেই কবে
           সব কিছু বুঝে উঠতে উঠতে
           বৃদ্ধ হয়ে যাওয়া, কবে বুঝবে
           রোজ রোজ কাদা ছোড়াছুড়ি
           ফিরে আসে একান্ত ভূবনের অন্ধকারে
           নিরালায় ধ্যানমগ্ন আত্মস্থ সাধু হয়ে
           যুদ্ধক্লান্ত পলায়নপর বীরের
           সুশোভন বর্ম যেনো
শেষটায় এক দুর্বোধ্য স্বত্বার ভেতরে অবগাহন করে কবি সুমন তার লেখাটিকে কবিতার সঠিক সংজ্ঞার কাছে নিয়ে গেছেন। কিছু বুঝলাম আর কিছু বুঝলাম না, অথচ লেখাটি হৃদয় দিয়ে অনুভব করে যাচ্ছি, কিছু ভালোবাসছি, কিছু বাসছি না, কিছু অনুভবে কিছু বাস্তবে।
সার্থক একটি কবিতা। নির্দ্বিধায়  বলা যায় আধুনিক কবিতা। উত্তরাধুনিকতার কাছাকাছি। আসুক কবিতা এমনই হয়ে। কবিতায় ভাসুক চরাচর, শান্তির বারতা নিয়ে।