১৪/১১/২০১৯, সময়-ভোর-৬-৩০ মি:


ট্রেনের যাত্রী ( গদ্য কবিতা- জীবন ও যাত্রী)


ষেটশনে পৌছলাম
এক সময় ট্রেন এসে থামলো ।
যাত্রী নামার এক অপূর্ব দৃশ্য ।
কার আগে কে নামবে !
কিছুক্ষণের মধ্যে আমি ট্রেনে ছড়ে বসলাম ।
অন্যদের মতো  সাবধানে মালপত্র গুছিয়ে নিলাম ।


এদিক সেদিক তাকালাম,নানা রকম ছবি চোখে পড়ে ।
যাত্রাতে অনেক রকম মানুষের বিভিন্ন রকম প্রস্তুতি ।
সময় হয়ে গেল, ট্রেনও ছেড়ে দিল । ঝপ ঝফ্, ঝপাঝফ,
-------খটকট ,খটাখট । যেতে যেতে বহু ষ্টেশন । শত শত যাত্রীর উঠানামা,
চিত্র,বিচিত্র,মনোরম,সুখ ও দু:খের ছবি চতুর্দিক ।
কোনটা হাসায়, কোনটা কষ্ট দেয়, কোনটা বা মনকে জাগায় !


মাঝে মাঝে কত রকম হকার আসে পসরা নিয়ে,আবার চলেও যায় ।
বিক্রির জন্য কত রকম কারসাজি,কত সুরে হাকঁ-ডাক,
সবিই তো জীবনের জন্য। ভিক্ষুক উঠে, নানা জন ,নানা রকম,
ভিক্ষার কৌশলও ভিন্ন, সবাই চায় যাত্রীকে


একটু মুগ্ধ করে দু’টাকা পেতে ।
কোন সময় গানের ফেরী নিয়ে আসে ভাসমান শিল্পী,
গান গেয়ে শুনায়, একতারা- দু’তারা বাজায়,
কিছু বকশিস পায় হয়তো তা দিয়ে সংসার চালায় ।


এভাবে ট্রেন চলতেই আছে ----------
নতুন নতুন ষ্টেশনে পৌঁছে থামে, আবার সেখান থেকে ছেড়েও যায়,
হরেক রকম ঘটনাও ঘটতে থাকে । মানুষ তা সামালও দেয় ।
শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সব ধরণের যাত্রী আছে এ যাত্রায় ।
ভেতরের অবস্থা যা হোক ট্রেনের দু’পাশের
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য খুবই মনোমুগ্ধকর।
আনন্দ, বিরক্তি, কোলাহল, ঝক্কি-ঝামেলা পাড় হয়ে
এক সময় গন্তব্যে এসে পৌঁছলাম। যে যার মত করে তড়িঘড়িতে
মালপত্র গুছিয়ে  শেষ ষ্টেশনে নেমে গেল ।


জীবনের গাড়ীও এক সময় থেমে যাবে ।
তবে কবে, কখন, কোথায়, কিভাবে এ যাত্রা শেষ হবে তা কেউ জানে না ।
কত বিচিত্র ঘটনা না-ই ঘটে এতে । আনন্দ-বেদনা, উত্তান-পতন,
মিলন-বিরহ,চাওয়া-পাওয়া ও না পাওয়ার হিসেব,
গ্লানি অথবা  অতিশয় উত্তরণ এতকিছু ।
সব হিসেব এখানে কখনো মিলে না,মিলাতেও পারে না কেহ ।



এরি মধ্যে এক সময় সব কিছুর পরিসমাপ্তি
ঘটে যায় প্রকৃতির কঠোর নিয়মে । গত কয়েকদিন
আগে ট্রেন দুর্ঘটনায় দেশে অনেক লোকের প্রাণ
প্রদীপ নিভে গেছে । যাত্রাতেই যাত্রীর জীবন বিনাশ ।
ভ্রমন ও জীবন  দু’টোই ক্ষণস্থায়ী ।
ট্রেন গাড়ি থেকে জীবন গাড়ির পার্থক্য হলো
শুধু, ট্রেন গাড়ি থেকে নামার সময় সবকিছু
গুছিয়ে সাথে নিয়ে নেয়া যায়, আর
জীবন গাড়ি একবার থেমে গেলে
আর কোন দিনই চালু হয় না ।
যাত্রীকে খালি হাতে, অসাড় মূল্যহীন শূন্য দেহে
একাকী চলে যেতে হয় পরপার নামক শেষ ষ্টেশনে,
যেখান থেকে আর ফিরে আসা যায় না কখনো ।
শরীফ নবাব হোসেন, স্যাম্ব, মীরবাড়ি, দেওয়ান হাট ।