(রেণু)
পরাগ ... কি রে, কেমন আছিস ?
ও-মা ... এ-কি হাল করেছিস !
কত্তোদিনের পরে দেখা …
আজও কি তুই আছিস একা ?
কে-ই বা তোকে করবে বিয়ে …
আজও আছিস কাব্য নিয়ে,
পালাসনি তো বিদেশ বিভুঁই
তাই বুঝি নেই ফেসবুকে তুই ?


(যূথী)
আহ্হা রেণু ! রাখ তো এসব .... দেখ না, কতো বছর পরে,
এই আমাদের দেখা হলো, আর তুই আছিস সেই রাগটা ধরে।
কার জীবনে কি হলো তার খবর কে নেয় ? ব্যস্ত সবাই,
ফেসবুকে তো কেউ কারও না, সবাই যে যার, বন্ধু তো নাই।
পরাগ ... সত্যি কেমন আছো ? ... আমাকে তো ভুলেই গেছো,
আমরা তো প্রায়ই একসাথে হই, কিন্তু তুমি কোথায় আছো ?
লিখতে তো খুব পত্রিকায়, আর ব্যস্ত ছিলে বই-খাতায়,
কাটলো কেমন বিশটা বছর ভাবুক মনের জোয়ার ভাটায় ?


(পরাগ)
বছরগুলো কোথায় গেলো, কখন গেলো,
পেলামই না টের …
নিয়মমাফিক সবই হলো, তাও কেন যে,
মন-সিঁদুকে আটক কোনো ডায়েরী ভাঁজে,
যত্নে রাখা বেহিসেবী ক্ষণগুলো সব ...
ছন্নছাড়া গল্প কাব্য আবেগ নীরব।
কোথায় যেন ঠিকরে গেলাম যে যার মতো,
কোনটা যে সুখ কোনটা দুখের মিষ্টি ক্ষত,
বন্ধু ফেলে কোন সে ছুটে সব হিসেবের
খুব হলো হেরফের।


(রেণু)
উফফ রে পরাগ ! তোর গেলো না এত্তদিনেও
কাব্যকথার স্বভাব ...
মিস করিস, তা বললেই হয় অল্প কথায়,
এইটুকু ভাব, শব্দ ভরাট গবেট মাথায়।
মনের ভেতর কি যে রাখিস খুব লুকিয়ে,
পারলি না তো বলতে সেসব মুখটা দিয়ে।
লিখতি কী তুই সেই খয়েরী ডায়েরীটাতে ?
ক্যাম্পাসে তো করিসনি প্রেম কারোই সাথে,
আমার চোখেই চোখ মেলাতে ছিল যে তোর
দুঃসাহসের অভাব।


(যূথী)
থাক না ওসব, পারিসও তুই রাখতে পুষে রাগ,
সেই বয়সে জানতো কি কেউ কার মনে কি দাগ ?
সবার ছিল আলাপ প্রলাপ,
পরাগ ছিল খুব চুপচাপ,
এমন মানুষ দেখায় না দাগ কষ্ট লুকোয় বুকে,
আমরা তো সব হিসেব পাগল পাওনা-দেনা টুকে।


(পরাগ)
দাগ ছিলো না, বন্ধু ছিলেম দাগ কি করে রাখি,
রেণুর কাছে সব বলতাম কি লিখি কি আঁকি।
দাদন-দেনা যা-ই বা ছিল
এক জনমের পুঁজি হলো,
জমাট কথার টুকরি মাথায় আজও করি ফেরি,
তাও রেণুকে বলতে কিছুই হয়নি তো যে দেরী।


(রেণু)
ছাই বলতি ... যা বলার তা বলিসনি তো তখন,
আমিই ছিলেম বেলাজ, আজও আছি যেমন।
দুইটা বছর তোরই সাথে
মিনিট ঘন্টা দিন বা রাতে  
তোর হতাশা তোর নিরাশায় সঙ্গি ছিলেম আমি ...
তুই মরেছিস মনের রোগে,
বন্ধুহীন আর অসংযোগে,
কি জানি কোন না পাওয়া প্রেম তোর কাছে খুব দামী।


(যূথী)
না পাওয়াতেই জীবন, জানিস ? আমরা সবাই তাই,
অনেক পাওয়ায় জনম যে যায় তাও কি যেন নাই।
বাদ দে ওসব ... যা-ই বা গেছে
জীবনটাতো একই আছে,
আমার এখন নেই যে দাবী,
যা আছে তা নিয়েই ভাবি,
আসবে যাবে সময় বা ক্ষণ তাও তো বেঁচে আছি ...
দীর্ঘশ্বাসে লুকোই স্মৃতি,
দুঃখে তবু নেই যে ইতি,
তোদের খুঁজে পেলেই খুশি
তাই তো জীবন ভালোবাসি
অল্প এমন চাওয়া-পাওয়ায় আমরা সবাই বাঁচি।


(পরাগ)
জানি, যূথী ... দুঃখ তোমার নিশ্বাসে আজ মাখা,
এই আমাদের স্মৃতির পটেই তোমার বিষাদ আঁকা।
আড্ডা ভিড়ে থাকতে তুমি প্রতীক্ষাতে যার,
সেই যে গেলো সীমান্তে সে ফিরলো না তো আর।
দেশপ্রেম-ভরা অন্তর তার
তাই আজও সে গর্ব সবার,
খুব যে ছিল গল্পুটে, তাই
সবার প্রিয় ফরহাদ ভাই,
সেই একুশে এমন প্রেমিক হারিয়ে ফেলার দুখে,
মিষ্টি তোমার হাসির কিছুই থাকলো না এই মুখে।


(রেণু)
হ্যা রে যূথী, কান্নাটা তোর আজও আছে মনে,
সেদিনটা খুব একলা ছিলেম একসাথে তিনজনে।
সন্ধ্যে নিথর আবছা আলো
মন বলে কেন এমন হলো ?
কেউ বোঝেনি কেনই হঠাত
এলো এমন কালসিটে রাত,
চারপাশে ভিড় উপচে পড়া রাতের কালো রোষ ...
পরাগ তো চুপ, শূন্য চোখে
নিষ্পলকে তোকেই দেখে,
আমার চোখে কান্নাটা তোর
মনে মনেই দিচ্ছি আদর
কেউ বুঝিনি অদৃষ্ট কার, কার ছিল কি দোষ।


(যূথী)
মনে আছে সব, কি করে ভুলি সেসব নিঠুর দিন,
তারপরও যে হাসছি এখন সে তো তোদের ঋণ।
দোষ কারে দেই, অমোঘ, অপার এমন স্মৃতির ভার,
পারলো না মন বাসতে ভালো এই জীবনে আর।
এখন ভাবি, আর হবে না সেই সে অনুভূতি,
এক জীবনে প্রেম যে আমার এখন শুধুই স্মৃতি।
যে কটা দিন বাঁচবো ব্যথায় পুষবো সে দুখ হেসে,
হোক না জীবন এমন, না হয় কষ্ট ভালোবেসে।


(পরাগ)
নাহ, বোলো না অমন কথা
জানি, বুকে অতল ব্যথা,
বন্ধু তুমি জানো, তোমায়
দুঃখে দেখে মন পুড়ে যায়,
যখন তোমায় হাসতে দেখি
সেই হাসিতে জীবন আঁকি,
মন ভালো হয় যখন দেখি তোমার সুখের ছবি ...
ঘর হয়েছে, আপন আধার
বর মেয়ে নিয়ে এই পরিবার,
আমায় দেখো, ঘর হলো না
কেউ আপন আর পর হলো না,
ভালোবাসায় আছো তুমি
তাই-ই চেয়েছি রেণু, আমি,
সুখটা তোমার পাওনা যূথী, সুখই তোমার কবি।


(রেণু)
আচ্ছা পরাগ, তুই কি করে যূথীর কথা জানিস ?
এক শহরে থেকেও কি তুই আমার খবর রাখিস ?


(যূথী)
তোর খবরও পরাগ জানে,
চুপ থাকে, তাও মনের টানে
ছদ্মনামে সে ফেসবুকে,
তোর আর আমার সবই দেখে।


(পরাগ)
তুই তো প্রাণের বন্ধু, রেণু,
তুই বারোমাস ইন্দ্রধনু,
পাগলী রে তুই, আজও তেমন
তুই তো আমার সবচেয়ে আপন।


(রেণু)
কেউ না আমি, প্রমাণ হলো
বন্ধু তো তোর যূথীই ছিল !
তাই বুঝি তুই বুঝতি না মন ...
কষ্ট দিতি যখন তখন।
দেখলে আমায় আনমনা খুব
হঠাত গায়েব, হঠাতই ডুব,
আমার কথায় মন দিতি না, আজও রাখিস দূরে ...
আমিই বোকা, সংসারী আজ
বন্ধু নামে যাই ভুলে কাজ,
কিন্তু স্বামী পুত্র বা কেউ
বুঝলো না স্রোত, দেখলো না ঢেউ।
ঘরটা জুড়ে প্রয়োজনে
সবাই রাখে আমায় মনে,
কিন্তু আমার গল্প শোনার নেই যে কেউই ঘরে।


(যূথী)
কেন ? আমি ছিলেম, আছি, বন্ধু হয়েই তোর,
তুই তো আমার বন্ধু প্রিয় তুই তো সহচর !
তোকে ছাড়া আমরা কি আর
বন্ধু হয়ে থাকবো সবার ?
পরাগ না হয় একটু অমন
কবি সে তার মনের আপন,
কেউ জানেনি কার হবে সে
না শুরুতে না সবশেষে।
কিন্তু দেখিস, আমরাই তোর
শুনবো কথা রাতদিনভর,
তুই আছিস, তাই আজও আমরা একসাথে এক তনু,
সবাই জানে, এক সূতোতেই যূথী-পরাগ-রেণু।


(পরাগ)
বাহ যূথী, এই কথার মাঝেই বন্ধু সুখের সুর,
স্মৃতির স্রোতে অতল যে এই স্নেহের সমুদ্দুর।
যে যার রথে যে যার পথে
তাও তো আপন কল্পনাতে,
হয় না কথা, নিয়মিত
তাও মনে হয় আড্ডা যতো।
সময় গেছে তাও মনে হয়
বয়স হওয়ার নেই কোনো ভয়,
কারণ আমার বন্ধু আছে
তরুণ আমি তাদের কাছে,
এই হৃদয়ে যূথী রেণুর জন্যে আদর যতো,
সেই স্নেহে মন পূর্ণ, সে আর ভরবেই বা কতো ?


(যূথী-পরাগ-রেণু)
আমরা যেমন তেমনই ভালো,
যা-ই বা আছে যা-ই বা ছিল,
বন্ধু হয়ে থাকবো মনে,
দুঃখ-রাতে সুখের দিনে।


যূথী-পরাগ-রেণু যেথায়,
একসাথে, আর কি আসে যায় ...
হয় তো জীবন মনমতো নয়,
তাও হারানোর নেই কোনো ভয়।


থাকুক সাথে না-পাওয়া খেদ,
থাকুক বিরাগ, থাকুক না জেদ,
দেখবে না কেউ, কিচ্ছু এসব,
দেখবে হাসি, কান্না অরব।


গল্পটা হোক সাদাসিধেই,
তাও যে আপন, তিনজনেতেই ...
বন্ধু ছিলেম, আজও আছি,
বন্ধুবরেই আমরা বাঁচি।