এই যে ... দেয়ালে লটকানো সস্তা আয়না, শোনো ...
তুমি কি রঙ তামাশা করো আমার সাথে!!


প্রতিদিনের তিনপ্রহরে আমাকে আমার বিম্বে দেখাও
আমার ভ্রুণে লুক্কায়িত যতো কল্মষের প্রাণ,
একটা দেশের তেতাল্লিশ বছরের ইতিহাসে জড়ানো
আমার কালসদৃশ সাতটা অঘ ...
আমার লিপ্সা, রিরংসা, রোষ, ঈর্ষা, দম্ভ, কুঁড়েমি আর ঔদরিকতা।


কিন্তু আমি তো এসব দেখতে চাই না!


গালে ক্ষুর ছোঁয়ানোর সময় আমি দেখতে চাই
আমার পুরুষালী সৌষ্ঠবের চাকচিক্য।
কিন্তু তুমি দেখাও
কালরাত্রীর পৈশাচিক হত্যাকান্ডের সময়
জীবন-লিপ্সার তাগিদে আমার আত্নগোপন।
সহোদর আর পরিজনের মৃত্যুশোককে পিছনে ফেলে
আমার কাঁচাপাকা শ্মশ্রুর মতো
ঝোপঝাড় আর জঙ্গল চিরে
আপন পরাণ বাঁচানোর রিরংসায় পলায়ন।


আমি তো এসব দেখতে চাই না!


সুখটাকের দুইপাশের চুল আঁচড়ানোর সময়
আমি দেখতে চাই প্রতিসম কেশ বিন্যাস।
কিন্তু তুমি দেখাও
একটা স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রগঠনের সময়
আমার অসমতুলিত দম্ভ আর ঈর্ষার আচরণে
স্বদেশী প্রতিপক্ষের জীবনযাপনের গুষ্টি উদ্ধার,
রাজনৈতিক রোষে আর প্রতিহিংসায় ভর করে
আমার প্রতিপক্ষের বীজ আর মূলের যুগপত উত্পাটন।


আমি তো এসব দেখতে চাই না!


সুশোভিতকরণে আমি দেখতে চাই
আমার লুপ্তপ্রায় যৌবনের প্রত্যাবর্তন।
কিন্তু তুমি দেখাও
সেই স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রনীতির চর্চায় আর রাজকার্যে
কুঁড়েমি আর ঔদরিকতার সমম্বয়ে গড়া
এক দুর্নীতিবাজের অবয়ব,
যে অনর্থের অর্থ আর ভাড়াটে পেশীবলে
তৈরী করা অন্ধকূপের গহবরে
প্রতিবাদীদের নিক্ষেপ করে ...
অথবা অপারগতা আর অকর্মণ্যতার রঙীন খোলশে
উত্সাহি অনুচরদেরকে মুখ ঢাকার প্রলোভন দেখায়।


আমি এসব কিছুই দেখতে চাই না।
তবু তুমি আমাকে এসব দেখাও,
রোজ, গত তেতাল্লিশ বছর ধরে।


তুমি কিন্তু দেয়ালে লটকানো সস্তা একটা আয়না মাত্র,
অথচ হাবভাব এমন করো যেন তুমি থ্রি ডি স্ক্রীন,
অথবা মহাকাল থেকে পাঠানো পরাবাস্তব অক্ষিকাচ।


তুমি কি রঙ তামাশা করো আমার সাথে!!