অসহায় এক বালক ছিল মরুর দেশে তাঁহার বাস
জন্মের আগেই পিতৃহারা বলছি শোন ইতিহাস।
আঁধার যুগে প্রদীপ হাতে জন্মে ছিল সেই বালক
তাঁরই নূরে আলোকিত দেখছে বিশ্ব তাঁর ঝলক।
প্রথা মতো দুধ’মার কাছে এই শিশুটির হয় লালন
প্রথম দিনেই দুধ’মা বুঝেন নয় সে অতি সাধারণ।
শৈশবের চারটি বছর কাটলো সেথায় আদরে
যথা সময় দুধ’মা তাঁরে ফিরিয়ে দেন দাদার ঘরে।
অতি আদরের নাতিরে লয়ে ভাবে আর করে খেলা
পিতাহীন এই শিশুটির যেন যতনে না হয় হেলা।
ধীরে ধীরে আরো বড় হয়ে যবে ছয়ে পরে তার পা
নিয়তি তাঁহার এত নিষ্ঠুর! উঠাইয়া নিল ‘মা’।
দাদাজী তাঁরে কোলেকাঁধে করে ঘুরে আর ভাবে হায়
এত বেদনা নাতিরে আমার দিল কেন বিধাতায়।
দেখিতে দেখিতে আরো ক’বছর কেটে গেল সংসারে
অষ্ট বছরে দাদাজীও তাঁর চলে গেল পরপারে।
পিতাজীও নাই, মাতাজীও নাই দাদাজীও নাই তাঁর
সহিতে না পেরে চাচাজী এবার তুলে নিল তাঁর ভার।
চাচাজীর ছিল ছেলে-মেয়ে নিয়ে বড় এক সংসার
বিনা কাজে সেথা থাকিতে বিবেক সায় দিলনাযে তাঁর।
খুঁটিনাটি কাজ যাছিল চাচার তুলে নিল নিজ কাঁধে
বকরি চড়াতো মরু প্রান্তরে সকাল হইতে সাঝে।
সাথীরা তাঁহার খেলাধুলা নিয়ে কাটাইয়া দিত বেলা
মাঠেতে ছাড়িয়া বকরির পাল কি যেন ভাবিত একেলা।
একদা দুপুরে খাঁ খাঁ মরুভুমি কেউ নেই আসে পাশে
বুক চিরে তাঁর কি যেন ফুঁকিল স্বর্গীয় দূত এসে।
মানবতা আর জ্ঞানের আলো ছিলনা সে যুগে মোটেই
তুচ্ছ ঘটনায় ক্ষুনো-ক্ষুনি হতো সারাটা বছর জুড়েই।
মানুষে-মানুষে হানাহানি দেখে কাঁদিত তাঁহার মন
মানব জাতির শান্তির লাগি ভাবিত সে সারাক্ষণ।
সাথীদের লয়ে সংঘ গড়িল মানব সেবার তরে
দুঃখি মানুষের সাথী হবে সবে এই ব্রত অন্তরে।
এমনি করিয়া এক দুই করে কৈশর হলো পার
যৌবনে এসে হাল ধরে ফের চাচাজীর ব্যবসার।
মিথ্যা বলেনি কষ্মিণকালেও ছিল বিশ্বাসি চিরদিন
সকলে তাঁরে ডাকিতেন তাই সাদেক আর আলামিন।
মেধা ও মননে ভাবেন কেমনে ব্যবসায় আসে গতি
দিনে কিবা রাতে নেই যেন তাঁর অবসর এক রতি।
জীর্ণ ক্ষুদ্র ব্যবসায় যেন ফিরিয়া আসিলো প্রাণ
সকলের মুখে শুধু তাঁর নাম পর্বতসম সন্মান।
দেখিয়া তাঁহার দক্ষতা আর নির্লোভ রীতিনীতি
মুগ্ধ হইয়া নিজেকে সপিলেন এক আরবের ধনপতি।
ধন-সম্পদ যা ছিল সকলই সপে দিল তাঁর তরে
রইলনা কোন অভাব অনটন আর তাঁর সংসারে।
হতাশা তবুও কাটেনাযে তাঁর দুঃখি মানুষের ভিড়ে
কেমনে সহিবে এতসুখ যার জীবন অপরের তরে।
‘এত বৈভব তবুও উদাস’ সুধাইলো বিবি হেসে
যাকিছু আমার বিলাইতে পারো দুঃখিরে ভালোবেসে।
অভাবির তরে সব বিলিয়েও ভরেনা যে তাঁর মন
দুঃখি মানুষের মুক্তির লাগি ভাবে বসে সারাক্ষণ।
সংসারের দায় পূর্ণ করিয়া সারা দিনমান ধরি
পাহাড় চুড়ার গুহায় বসি রাতে করে আহাজারি।
একদা হঠাৎ স্বর্গীয় দূত ডাকিয়া কহিলেন ‘পড়’
‘সৃষ্টি করিলেন দুজাহান যিনি তাঁর কথা মুখে স্বর’।
ভয়ে মৃধুস্বরে বলিলেন তিনি পড়িতে পারিনা আমি
কেমনে পড়িবো উম্মি যে আমি জানেন অন্তর্জামি।
স্বর্গীয় দূত শিখালো তাঁহারে কেমনে পড়িবে হায়
ভয়ে কম্পিত বেচারা ভাবিল এই বুঝি প্রাণ যায়।
ঘরেতে ফিরিয়া বিবিরে কহিল জড়াইয়া ধর মোরে
এত ভয় বুঝি পায়নিতো কেহ এই ভব সংসারে।
শুনিয়া ঘটনা বিবি বলে তব শুনিয়াছে দয়াময়
অপরের তরে সদা তব প্রাণ তোমার কিশের ভয়।
তবুও তাঁহার বিচলিত মন কাটেনা যে সংশয়
কেমনে কিহলো এই ভাবনায় মনে জাগে সদা ভয়।
স্বামীজির মনে যত সংশয় দূর করিবার তরে
তাঁহারে লইয়া গেলেন মনিষি ওরাকার দরবারে।
সব শুনেবুঝে জ্ঞানি ওরাকা মুস্কি হাসিয়া বলে
তোমারই ছবি দেখিয়াছি আমি তৌরাত বাইবেলে।
আরবের দুঃখি মানুষের সাথী প্রিয়নেতা মোহাম্মদ
তাঁহারই কাঁধে সপিলেন খোদা মানব মুক্তির পথ।
সেদিন থেকেই আমাদের সাফি এই উম্মি আরাবি
মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের প্রিয় নবী।
অসহায় অনাথ বালকটি আজ আমাদের গৌরব
দুই জাহানেই ছড়ানো ছিটানো শুধু তাঁর সৌরভ।
*****


রচনা কালঃ ৩ মে ২০১৫