ঘুটঘুটে অন্ধকার বড়ো প্রিয় আমার,
প্রিয় অমাবস্যার রাত।
মেঘের আড়ালে ঢেকে পরা মুখ ভালো লাগে,
ভালো লাগে জগতের যত আঁধার।
যা কিছু তাচ্ছিল্যের,সব ভালো লাগে।
ভাবতে অবাক লাগলেও এটাই সত্য!
কারন আমি কালো, ভীষণ রকম কালো।
না, না, দয়া দাখিন্যের নেই প্রয়োজন।
কালোকে কালো বলতে হয়?
এটাই নিয়ম, সাদাকে সাদা।
কবি, সাহিত্যিকরা মমতা ভরে,
বলে কৃষ্ণকলি,শ্যামা, মায়াবতী।
ওসব কবিতায় শোভা পায়।
দিনের আলোয় উদ্ভাসিত আমি কালোই!


জন্মের পর ছেলে না হ‌ওয়ার শোক মাকে
যতো না যন্ত্রণা দিয়েছিল,
তার থেকে বোধহয় কষ্ট দিয়েছিল
মেয়ে নামক এই মানব শিশুর কালো রঙ।
হাঁটি হাঁটি পা পা থেকে মা বিচলিত হয়ে যায়
কালো মেয়ে বেড়ে ওঠে,বড় তাড়াতাড়ি করে
স্কুল, গান বাজনা,নাচ সবকিছুই তার সাধনা।
শুধু সে সাধনায় থাকে না কোনো পুরুষ
প্রেমিক পুরুষ, এমনকি কল্পিত পুরুষ ও নয়।
শরীরের ভেতরে শরীর জানান দেয়,
একটা ভালোবাসার গল্পের জন্য।
কিন্তু বাইশ বছর বয়সের মধ্যে,
উনত্রিশটি নিপাট ভদ্রলোক বলেছেন কালো।
আমার বাবার অনেক কষ্টের টাকায় করা
বাজারের গলদা চিংড়ি, ভেটকি মাছের পাতুরি
চব্যচষ গলাধঃকরণ করে বলেছে
সব ভালো, শুধু গায়ের রং টা কালো
সেই ভীষণ কালো আমি কালোকেই ভালোবেসেছি।


আমি আমার বোনের বিয়ের অন্তরায়
ভাইয়ের কাছে সমাজের সংশয়।
আমার মায়ের গলার কাঁটা,
জন্মের দায় গর্ভবতী মায়ের,
কলংঙ্কের রং ক্রমাগত দগদগে ক্ষত
বাবা শুধু নির্বাক অপরাধী পিতা।


অথচ এই আমি বাংলা ভাষায় কতো শব্দ ধ্বনি,
অপয়া,অলক্ষ্মী, লক্ষ্মীছাড়া, অকর্মণ্য,মুখপুড়ী
আরো কত কি??
যখন যেমন যোগ দিয়ে,আমায় সাজিয়ে নিন।
আসলে কি বোকা! কালো তো কোন রং নয়।
বর্নহীন আমি মিশ্রিত ঝর্না ধারা।
কালো তোমার দেয়া নাম।
অজস্র অশ্রু দিয়ে লেখা নাম কালো।