এই শোন!
তোমাকেই বলছি, হ্যা তোমাকেই বলছি;
তোমাকে তুমি করেই বলছি।
শুনেছি পৃথিবীতে মানুষের জন্ম আগে-পরে হলেও-
আত্মার জন্ম এক সাথেই হয়েছে,
তাই এক আত্মা হয়ে অন্য আত্মাকে ডেকেছি।


এত সুন্দর কেন তুমি?
না! তোমার দেহের সৌন্দর্যের কথা বলিনি আমি,
তোমার আত্মার সৌন্দর্যের কথা বলেছি।
চেহারা যতই সুন্দর হোক না কেন,
মানুষের আত্মা সুন্দর না হলে তাকে সুন্দর দেখায় না;
তোমার আত্মা সুন্দর বলেই তুমি এতো সুন্দর!
বিধাতা আল্লাহ তোমাকে খুব ভালবাসেন।    
তাই তোমার আত্মাকে সুন্দর করেছেন,
তাই তুমি এতো সুন্দর!


অবশ্য তোমার চেহারায় এক বিশেষ দ্যুতি কাজ করে,
তোমার আত্মা তার আপন আলো তোমার চেহারায়—
উদ্ভাসিত করে এক স্বর্গীয় সৌন্দর্যের রূপ নেয়।
একটি নবজাতক শিশু সদ্য ভূমিষ্ট হয়ে যেমন —
পৃথিবীকে সম্মোহিত দৃষ্টিতে দেখে,
আমি ঠিক সে রকমই তোমায় প্রথম দেখেছিলাম।
এ যেন নতুন এক দৃষ্টি, নতুন এক দেখা
এ যেন দীর্ঘ অন্ধত্বের শেষে নতুন করে দেখা।
যেন এমন কিছু আমি দেখেছিলাম,  
যার তুলনা করার মতো আমি আগে কিছু দেখিনি।
এ যেন এমন কিছু আমি দেখেছিলাম,  
যার রূপের কাছে পৃথিবীর সব অবয়ব নিরাকার হয়ে যায়।
এ যেন এমন কিছু আমি তোমায় দেখেছিলাম,
যার রঙ পৃথিবীর সব রঙ কে ধূসর করে দেয়।
এ যেন এমন তোমায় আমি দেখেছিলাম,
পৃথিবীর সব সৌন্দর্য ভীষণ কুৎসিত মনে হয়।


অনন্যা, তোমায় আর কোন নাম আমি তখন দিতে পারিনি    
তুমি কী রাজকুমারী?
ছোট বেলায় দাদুর মুখে যার রূপকথা শুনেছিলাম,
যে আমায় সাত সমুদ্র পার করে নিয়ে যেতো স্বপ্নপুরীতে।
নাকি সেই আমার নিশি সঙ্গী পরী?
যে আমার তারুণ্যে রোজ রাতে আমার শিয়রে এসে বসতো।  
যার নূপুরের নিক্কণ আর চুড়ির ঝনঝনানিতে
হঠাৎ আমার ঘুম ভাঙ্গত!
নাকি কোন স্বর্গের সুন্দরী অপ্সরা?
পুণ্যবান তার পুণ্যের ফল সরূপ যাকে স্বর্গে পাবে।
আমিতো কোনো পুণ্যবান নই!
তবে কেন এ মর্তেই তোমার দেখা পেলাম?


অনন্যা, তুমি জানো?
রোজ রাতে যখন পৃথিবীময় ঘুম নেমে আসে
চারদিক যখন নিস্তব্ধ প্রাণ শূণ্যময়,
নিজের নিশ্বাসের শব্দ যখন আরো স্পষ্ট শোনা যায়।
তখন তুমি আসো আমার খুব কাছে,
আমি তোমার মাঝে ডুব দিয়ে দেখি
তোমার ভেতরে গভীর থেকে আরো গভীরে।
তোমার হৃদয়ের কাছে দাঁড়িয়ে সাগর কে এক জলবিন্দু মনে হয়,
তোমার ভালোবাসার কাছে দাঁড়িয়ে নীল আকাশটাকে
কোন পাখির ছেঁড়া পালক মনে হয়।


নিশীথের নীরব পৃথিবীতে তুমি আমি মুখোমুখি!
আমার তখন তোমায় ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করে,
ভীষণ ইচ্ছে করে ; আমি তখন ছুঁয়ে দেখি।
হেমন্তের অবাধ্য হাওয়া যেমন সবুজ বনকে ছুঁয়ে যায়,
তেমনি আমার আঙ্গুল তোমার চুলকে অবাধ্য করে দেয়;
তোমার ললাট কে ছুঁয়ে অনুভব করি
যেমন অন্ধ ছুঁয়ে স্পর্শ করে দেখে,
তোমার ওষ্ঠকে ছুঁয়ে অনুভব করি
যেমন হৃদয় সুখ কে অনুভব করে,
তোমার অধর কে ছুঁয়ে অনুভব করি
যেমন হৃদয় শান্তিকে অনুভব করে।
তখন তোমায় আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরি
যেমন কোন পরজীবী স্বর্ণলতা আমগাছকে আঁকড়ে বাঁচে।
আমি নিজে কে তোমার মাঝে করি বিলীন,
যেমন লবণ বা চিনি পানিতে মিশে যায় স্বাদে ও বর্ণে!


অনন্যা, তুমি এভাবেই আমায় আগলে রাখো!
আমার বড় ভয় হয়!  
তোমার আগমনে যে দুঃখ কষ্টরা আমায় ছেড়ে গেছে,
তোমার প্রস্থানে তারা আবার যদি ফিরে আসে?
আমাকে তখন যন্ত্রণা দেবে ভীষণ আক্রোশে!


অনন্যা, যদি তুমি রূপকথার রাজকুমারী হও
তবে তোমার প্রস্থানে পৃথিবী হবে মৃত্যুপুরী,
যদি তুমি নিশি সঙ্গী পরী হও
তবে তোমার প্রস্থানে পৃথিবী হবে প্রেম শূণ্য,
আর যদি তুমি স্বর্গের অপ্সরা হও
তবে তোমার প্রস্থানে পৃথিবী হবে নরকময়।
মাঝখানে আমি পরে রবো
জীবের চিহ্ন হয়ে জড় বস্তুর মতো!