পদ্মপাতার উপর জল, টলমল যেন প্রাণের কথা,
ভাসে শিশির—নীরবতা বাঁশিতে দেয় কাঁপন-সাথা।
ঘুম পাড়ানো ঢেউয়ের ডাকে, এক বালক চায় পথ চেনা,
পদ্মপাতার জলে পড়ে, চাঁদের মতো স্বপ্ন গড়া বেনা।
বালকটির নাম ছিল অনিমেষ, চোখে ছিল দীপ্তি-ভরা,
মা বলতো—"তুই পদ্মপাতা, জলও তোরই অন্তরা।"
তাই সে শিখেছিল দাঁড়াতে, জলে না মিশে থাকিতে,
জীবনের সব কাঁটা ছিঁড়ে, নিজের হৃদয় আঁকিতে।
তার এক কাঁধে ছিল বাবার স্মৃতি—তীব্র ঝড়ের কাহিনী,
যুদ্ধ শেষে ফেরেনি আর—দূরে নক্ষত্রের আলো ফিনী।
মা কেবল স্নান জলে বলে—"জল যদি পড়ে পাতার গায়,
তবু সে শুকায়, মিশে না জল—তুমি তেমনই হইতে চায়।"
শিশু বড় হয়, স্বপ্নও তার নদী পার হয় পদ্ম ছুঁয়ে,
তবু হৃদয়ে চিরকালই, এক শিশির জমে থাকে বুকে।
যখন প্রেমে পড়ে সে প্রথম, চোখে মায়ার পূর্ণিমা,
কিশোরী কন্যা তার হৃদয়ে, খেলে দোয়েলের প্রতিমা।
কিন্তু সেও এক পদ্মপাতা—কাঁপে, ঝরে, ফিরে যায়,
ভালোবাসা তাকে রাখে না—জল ছুঁয়ে কেবল ছায়া পায়।
অনিমেষ তখন বলে উঠল—
"জীবনের সব প্রেম যদি, পদ্মপাতার জলই হয়,
তবে আমি পাতাই থাকি, তবুও জলটুকু পাঞ্জরে রয়!"
কেটেছে দিন, পালক পড়েছে, বয়স যেমনি নদীর ঢেউ,
তবুও তার ভিতর জ্বলে, শিশুকালের একটা ‘চেয়ে রই’।
তার ছাত্ররা যখন জিজ্ঞাসে—"স্যার, জীবন কাকে বলে?"
সে হেসে বলে—"একটা জলরাশি, পদ্মপাতার ঢালে।
চোখ রাখো কিন্তু গিলে ফেলো না, ভালোবাসো তবুও ধরো না,
যা কিছু সুন্দর তা ভাসে কেবল—ভালোবাসা মানে হারায় না।"
শেষ অধ্যায়ে অনিমেষ একা, ধ্যান করে এক গৃহের কোণে,
চোখে তার একধরনের আলো—যেন পদ্মপাতা ভোরে বোনে।
বলে—
"আমি আর কিছু চাই না, শুধু চাই, থেকে যাক জল,
পদ্মপাতার মতো জীবন, ছুঁয়ে যাক প্রতিদিন ফল।
হারাই যেন, তবু না মরি, মিশি না যেন কোনো জলে—
আমার প্রেম, আমার ব্যথা, থেকে যাক শিশির ছলে।"