আমার আকস্মিক মৃত্যু


আজ যদি হয় আমার আকস্মিক মৃত্যু!
কেউ কেউ খবর পাবে না,
কেউ কেউ খবর পেয়েও আসবে না,
কেউ কেউ আফসোস করিবে, আকস্মিক হয়ে,
কেউ কেউ হতবাক হবে, জল চোখে।


আজ যদি হয় আমার আকস্মিক মৃত্যু!
কেউ কেউ হাসাহাসি করিবে—মিথ্যে,
কেউ কেউ চিৎকার করিবে করুণ দুঃখে,
কেউ কেউ আসিবে লাল চোখে,
আমার মুখে আজ কথা নেই আকস্মিক ভাবে।


আজ যদি হয় আমার আকস্মিক মৃত্যু!
সবুজ রঙ চার দিকে ভয়াবহ মাখিবে_
পাখিরা নীরব হয়ে নীড় ভাঙিবে,
কেউ কেউ আসিবে, দেখিবে দূর থেকে,
আমার আকস্মিক মৃত দেহ।


আজ যদি হয় আমার আকস্মিক মৃত্যু!
কেউ কেউ অজানা শহর থেকে আসিবে,
কেউ কেউ ভাত নিয়ে আসিবে-অভাবে,
কেউ কেউ ঝুড়ি বরে মানবতা আনিবে,
কেউ কেউ সুখ আনিবে হাতের মুঠোয় করে।


আজ যদি হয় আমার আকস্মিক মৃত্যু!
আমি তোমাদের মাঝে রবো গোপনে,
আসা—না আসা মানুষ গুলোর ভিতরে,
আজ আমার আকস্মিক মৃত্যু আমার অজানা,
কোনো এক দিন হবে আমার আকস্মিক মৃত্যু!


আমি হতে চাই


চাষারে লয়ে, আমি চাষা হতে চাই
কৃষকের রৌদ্র মাখা দেহে, শীতল বাতাস হতে চাই।
ঘরনীর চোখে স্বপ্ন হতে চাই;
আমি বৃদ্ধের মনে ছোট্ট বেলার দুষ্টু হতে চাই।


আমি গ্রাম্য হতে চাই, হতে চাই বাংলা
মায়ের কোলে ঘুমিয়ে নীরব হতে চাই-শান্ত
আমি বাবাকে অবসর দিয়ে হতে চাই কর্মঠ
আমি বড়-ন, ছোট হয়ে থাকতে চাই সারা জীবন।


আমি হতে চাই ভোরের কুয়াশা মাখা হলুদ সূর্য
গ্রাম্য বধুদের হাতে বকুল ফুলের মালা।
আমি হতে চাই ভোরের দোয়েল, ঘুঘু_
খেজুরের রস হতে চাই নানির পাতিলে!
আমি ধবধবে সাদা বক হতে চাই_
ধানক্ষেতের মাঝে নিজেকে লুকিয়ে।  


আমি গ্রাম্য ছেলে হতে চাই, ধূলিমেখে গায়ে
আমি মাউস হাতে শহুরে ছেলে হতে চাই
রাত—দিন পড়ার টেবিলে, গেমস খেলে খেলে!
আমি ঘুড়ি হতে চাই, মেঘের সাথে ঘুরে ঘুরে
আবার শূন্যে উড়ে যেতে চাই নাটাই ছেড়ে।


আমি কৃষ্ণচূড়ার ফুল হতে চাই,
গোধূলী মাখা বিকেলের রক্ত রাঙা আকাশ,
মধ্য আকাশে উড়ন্ত কবুতর।
আমি হতে চাই সন্ধ্যার জোনাকি_
ল্যাম্পপোষ্টের সোডিয়াম লাইট।


আমি হতে চাই ফুটপাতের নীরিহ মানুষ_
ঘরহীন, খাদ্যহীন, বস্ত্রহী, চিকিৎসাহীন, শিক্ষাহীন
মানুষ। আমি ওদের মুখের ভাত হতে চাই;  
আমি হতে চাই নীরিহ মানুষ গুলোর নিষ্পাপ দেহ।
আমি হতে চাই ভিখারী বাবার হাসি, মায়ের দোয়া_
আমি হতে চাই ধনী, উপকারিতার করুণ মায়া।  


আমি বিকেলের ছাদ হতে চাই, রমনীদের চিত্রশৈলী
ফুলের টবেটবে যত ধরনের ফুল হতে চাই,
আমি হতে চাই প্রেমের চিরকুট; মধ্যবয়সের চিন্তা_
শেষ বয়সের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, কোমল হাসি।


যে দিন আর কবিতা লিখবো না


যে দিন আর কবিতা লিখবো না,
ভেবে নিও, এই নশ্বর পৃথিবীর বিহঙ্গ হয়ে
উড়ে গেছি অন্য পৃথিবীতে।
যে দিন আর কবিতা লিখবো না
ভেবে নিও, গাঢ় সবুজ ঘাসে মিশে আছি,
ঘাস ফড়িং হয়ে, নয়তো ঘাস ফুল।
যে দিন আর কবিতা লিখবো না
ভেবে নিও, আমার হাতের কলমের কালি ফুরায়নি,
আমার সময় এসেছে চলে যাওয়ার
আমার নিঃশ্বাসে অক্সিজেন নেই
নয়তো দেহের সাথে মনের বিচ্ছেদ ঘঠেছে।
যে দিন আর কবিতা লিখবো না
ভেবে নিও, আমি বড় তৃষ্ণার্ত ছিলাম
আরো হাজারো কবিতা লিখবো বলে
আমি কেঁদে ছিলাম সাদা কাগজে চেয়ে
মনের অন্তরালে কবিতার ঘুম নিয়ে।
যে দিন আর কবিতা লিখবো না
ভেবে নিও, আমি নিসর্গের বুকে সবুজ হয়ে আছি
কখনও পাখি, অরণ্য, ঘাস, কবিতা।
যে দিন আর কবিতা লিখবো না
ভেবে নিও, ঘুমিয়ে আছি নীরব বৃক্ষের মত
দু'চোখ চাহিয়া আছে তোমাদের পানে কবিতা হয়ে।
যে দিন আর কবিতা লিখবো না
ভেবে নিও, সে দিন আমি শুধুই কবিতা_
কবিতার অক্ষর, শব্দ, ছন্দ হয়ে।
যে দিন আর কবিতা লিখবো না
ভেবে নিও, ২নং ব্রিজে আমার দেহ নেই
হাতে অফুরন্ত কলমের কালির সমাপ্তি
কাগজের পাতায় আমার মৃত্যুর কাহিনী।
যে দিন আর কবিতা লিখবো না
ভেবে নিও, আমি বিহঙ্গ হয়ে অন্য পৃথিবীতে
অন্য ভাবে কবিতা লিখছি, অন্য কারো জন্য।
যে দিন আর কবিতা লিখবো না
ভেবে নিও, সে দিন আমার মৃত্যু হয়েছে
এই গাঢ় সবুজ ঘাসে, নরম পাখির সুরে
শুধুই মৃত্যু এই দেহের, কবিতার নয়।



সন্ন্যাসী হতে চেয়েছি


অনেক আগের জীবনে সন্ন্যাসী হতে চেয়েছি
সন্ন্যাসী জীবনে প্রকৃতির সাথে সন্ধি এঁটেছি।
একলা জীবনে ভয় নেই, আক্রমণ-বিদ্রুপ নেই
চিন্তা, চরিত্র, আফসোস, সংঘাত, সংশয় নেই।
অনেক আগের জীবনে সন্ন্যাসী হতে চেয়েছি
সন্ন্যাসী জীবনে সবুজ রাতের প্রকৃতি পেয়েছি
এখানে হিংসা নেই, বিদ্বেষ, হাহাকার, নরক নেই
ঘুষ নেই, সুদ, দুর্নীতি, ছিনতাই, আক্রোশ নেই।


অনেক আগের জীবনে আমি সন্ন্যাসী হতে চেয়েছি
আমি মানুষ ভুলে প্রকৃতির সাথে প্রকৃতি হয়েছি
গাছ, পাখি, ঘাস, নদী, বন, পাহাড়, সুখ হয়েছি
অনেক আগে আমি প্রকৃতিতে সন্ন্যাসী হতে চেয়েছি।  


আমি আবার সন্ন্যাসী হতে চাই, কোলাহলের বাহিরে
প্রকৃতির সাথে মিশে যেতে চাই সন্ন্যাসী হয়ে।  
যেখানে চোখে কান্না নেই, কষ্ট, ব্যাথা, দুঃখ নেই
টানাটানি নেই, লোভ, হানাহানি, টাকার চোখ নেই।


আমি আবার সন্ন্যাসী হতে চেয়েছি একেলা দূরে
যেখানে মানুষ নেই, আমি মানুষের মত করে।
হঠাৎ এক দিন আবার সন্ন্যাসী হয়ে যাবো—নীরবে
যেখানে রক্ত নেই, যুদ্ধ, ধনী-গরীব নেই—ভবে?


বেকারত্বের অভিশাপ


নিজের কাছে নিজেকে অভিশপ্ত মনে হয়!
বিষাক্ত শব্দে কানে বিস্ফোরণ গঠে-অসহায়।
বিবেক জানতে চায় বেকারত্ব্যের দুরবস্থার কথা
করুণ কান্না, চাপা কষ্ট, অজানা ব্যাধির অসুস্থতা।


যে ছেলেটি অভিশাপ থেকে মুক্তি চায়-মুক্ত ছায়া
হেঁটে-হেঁটে আবিষ্কার করে দুর্নীতির সত্য ছায়া।
জুতুর তলায় লেগে থাকা অভিশপ্তরা পাঁথর হয়ে
দাসত্বের তাড়নায় কত দ্বার থেকে বিতাড়িত।


কোথায় স্বাধীনতা, টাকায়, সত্যে, ঘুষের ভিতরে?  
স্বাধীনতা খুঁজতে খুঁজতে মনুষ্যত্ব জ্বলেপুড়ে মরে।  
বিষাক্ত মিথ্যের ছলে সত্যের গোলাগুলি_পরাজয়
মিথ্যেরা দখল করেছে স্বাধীনতা, আলোর বিপর্যয়।


ওরা মনুষ্যত্ব বিক্রি করে, পশুর সাথে করে বন্ধুত্ব
ওরা ছেলেটির রাশি গুনে গুনে বিয়োগ কষে বৃত্ত।
ওরা দেখেনা জ্ঞান, বৃদ্ধ বাবা, পরিবারের কান্না
ওরা দেখেনা লুকানো কষ্ট, উড়ানো সুখ পান্না।
হাতের মোঠোয় টাকা চায়, গোল টেবিলের সন্ধি
টেবিলের নিচে টাকা দেওয়া, নইলে যাও,কু-গন্ধী।


আমিও আজ মিথ্যে


আমাকে আমি সামলাতে পারলাম না;
বিকৃত মস্তিষ্কের কুকুরও নিজেকে সামলে নিয়েছে!
কথার মূল্য নেই, মূল্যহীন নিঃশ্বাসের
বাসাত কেউ নাকে নেয় না, ‘বিশ্বাস মরে রয়েছে
বিস্তির্ন শহরে’ আমার মুখে গন্ধ নরকের।
আমিও আজ মিথ্যে, অগণিত কথার বাজারে
যেখানে কথা বিক্রি হয় সস্তা দামে ‘মিথ্যে কথার
উসিলা আরেকটি মিথ্যের আবিষ্কার করে’
সেখানে সুখ নেই, স্বর্গ নেই, বাতাসে গন্ধ নরকের।


আমাকে আমি সামলাতে পারলাম না;
আমিও আজ মিথ্যে, ‘কথার মূল্য নেই’
কথা দিয়ে কথা রাখতে পারলাম ঈশ্বরের সাথে।
সুখ খুঁজে আমি ক্লান্ত, বাঁশির সুর নেই
নিঃশ্বাসে গন্ধ, ‘বাতাসে মিথ্যে উড়ে উড়ে
নরকের সাথে আজ বাস ‘আমি অন্ধ’।
আমিও আজ মিথ্যে,
আমাকে আমি সামলাতে পারলামনা, নরক থেকে?


গল্প গুলো আমার


কাগজে লেখা গল্প গুলো আমার
রিমকে রিম কাগজ লিখলেও আমার গল্প ফুরাবেনা
আমার মাঝে শত গল্প ভান্ডার
জীবনে বেহাল সাজ গল্পগুলো রয়েছে দুখ অভিধান


কাগজে লেখা গল্প গুলো পড়েছে
অনেকে;চুপ গভীর মননের অবাক চিন্তা আনাগোনা
আহত চোখে কেউ খোঁজে নেমেছে
জীবন্ত গল্প গুলোর আবিষ্কার করতে কত আলোচনা


আমার আমি চুপ গল্প কাগজে
গল্পের বই সবার হাতেহাত নতুন আলো মাতোয়ারা
আমারে লয়ে হাসে কাঁদে সমাজে
সবার কাছে আমার জীবনের কাগজ সাজে দিশাহারা


আমার মনে কত কথা সাজাবে
শিউলি ফুল তোমরা নজরেই দেখিবে রূপ অপরূপ
তোমার চোখ লয়ে ডাকি ঘুমাবে
আমার গল্প শিউলি ফুলফুলে মাখিবে আজ স্বপ্নচুপ


সবার মুখ চুপে কাঁদে হাসিবে
এখানে ঘুম চোখের স্বপ্নরাই বাঁধিবে বাসা অন্যঘরে
সবার ঘরে সুখ হাসে কাঁদিবে
আবার চোখ মেলিয়া অবসন্ন আদরে চাহে গল্পঘরে


কয়েদি


কংক্রিটে ঘেরা আবদ্ধ কবরে কয়েদি
এখানে বাতাস নেই, আকাশ নেই।
ঘন অন্ধকারে জং ধরা আশা,
বাসা বাঁধে মাকড়সার জালে।
দেয়ালে ঝুলে থাকা টিকটিকির মত;
এদেয়ালে-ওদেয়ালে দীর্ঘশ্বাস,
মন পাখির আর্তনাদ নরক বাস।
রাত-দিনের ব্যাবধান হলুদ লাইটের আলো
কখনও শিকলে বাঁধা পায়ে জমে থাকা রক্ত
দেখা যায়না, হলুদ আলোর বিমর্ষ চাহনিতে।
এই কবরে ঘুম নেই, তন্দ্রা চোখ এলোমেলো
মুক্ত বিহঙ্গের ডাক সুখ চিন্তার খুব বাহিরে
এই কবরে থেকে বাহিরের আলেখ্য মুছে গেছে
অনিয়মে মন জ্বলেপুড়ে শান্ত হয়ে রয় কালো।


কংক্রিটের দেয়ালের চুপষে থাকা সিমেন্ট তৃষ্ণাতক
কয়েদির দীর্ঘশ্বাসে দেয়াল চুপ জীবিত!
কয়েদির সমাপ্তি শরীরে ছারপোকা বাসা বেঁধেছে
মৃত্যুর রায় ঘোষণা হয়েছে,
লোহার চারদেয়াল কবর, মৃত্যু তো হয়েই আছে
যেখানে বাসাত নেই, আকাশ নেই, পৃথিবী নেই
সে খানে কত আগেইতো মরে আছে, কয়েদি।


সত্য মিথ্যের স্তুপে


যে সুখ বিষন্নতায় বিক্রি করে,
নৃশংসতার মায়াজালে অসুখের সাথে বসত করে,
সে হেঁটে হেঁটে ধ্বংসের শেষ সীমান্তে ফিরে।
কালো অর্থের গোড়ামি হিংসা লয়ে মরে
এ সুখ জঘন্য মৃত্তিকার তরে ঘরে
যে ঘরে সুখ ফিরে কালো অর্থ, সে ঘরে সব মৃত
অন্ধ মনে, চোখে আলো নেই, দেহ ঘৃণিত।
বিশ্বাস গুলো ঘুমন্ত বিশ্রামে কাতর
অবিশ্বাস ব্যস্ত চলাচল গতরে গতর।
বিকৃত মস্তিষ্কে উন্মাদনা, মানুষ-মানুষ মারে
কেরোসিনের মত প্রদ্বীপ জ্বেলে জ্বেলে
রাত শেষে নিবে যায়, জোর ফুরোলে
এখানে কিছুই কারো না, তুচ্ছ মরনের তরে।
পকেট বিস্তির্ন কালো অর্থের স্তুপ বেচে?
সাড়ে তিন হাত জায়গায় আবদ্ধ;
যে শূন্য হাতে রবে সেও তার সাম্য;  
মিথ্যে অর্থের পাহাড় এক কানাও সঙ্গে যাবে না_
শুধু সত্য-মিথ্যের কর্মের স্তুপ সঙ্গী হবে।


মিথ্যের ঘরে আরাধনা, কালো অর্থের স্তুপে বাস
উন্মাদনার খেলা বেলা-অবেলা, হবে ক্লান্ত শেষ।
মানহুশ গুলো সাদাসিধে অবিরত সুখের লয়ে
কালো অর্থের মানুষ যত রয়েছে অসুখের ভয়ে।



আজব সংসার


বিচ্ছেদ, বিচ্ছেদ, বিচ্ছেদ, অনুচ্ছেদে মন!
লাশ হয়ে ঘুরে যাযাবর, নেই আবাসন।
ছবির মাঝে গল্প, জীবন গল্প গৃহ ক্ষয়
জীবন যুদ্ধে নিখোঁজ হয়ে, মরনের জয়।
হাসি-কান্না সংসারেতে, কেনো লাগে ভয়
সংসারেতে সাদা-কালো বড় বিপর্যয়
বেলা-বেলা কত বেলা, কোন বেলা সুখের_?
দুঃখের বেলা ঘুরে আসে, এ আজব সংসার।


কেউ দ্বার টানে, হিংসা সিদ্ধ ক্রোধ চোখে
কেউ হাত বাড়িয়ে আহার খোঁজে করুণ দুঃখে।
কেউ মেঘের সাথে ঘর বেধেছে চাঁদের সুখ চেয়ে
কেউ মৃত্তিকাতে কুটির গড়ে, মাটির ঘ্রাণ নিয়ে।
ফুলের মত ঝরে পড়ে মাটির দেহ ধূলায়
মায়ার মোহে অন্ধ হয়ে জীবনের উল্টোপীট ভুলায়।
ভুলে যাওয়া মরন আসিবে সাজানো ঘরে
সুখ-দুঃখ, আলো-আধার আজব সংসারে।


স্বপ্নজাল


পথে-পথে, ঘুরে-ঘুরে, পথেই যার আবাস মিলে
সে স্বপ্ন দেখে, এক বেলা তার খাবার মিলে_
দু'বেলা সে উপাস রবে,
কষ্ট গুলো জানা-অজানা,
কে জানে তার স্বপ্ন গুলো পাথর চাপা-ভবে।
দুস্তর হয়ে সুস্থ নহে, ফুটপাতে রয় শুয়ে
কংক্রিটে মাথা ঠেকে বিধ্বস্ত ভাব মরে
সোনার মাটি মুখে মেখে শরীর দেয় ছুঁয়ে।
সে ভাবের জগত গ্রাস করেছে,
বোবা চিৎকার শুনে কে?
মনের গভীরে ক্রন্দন ঝরে_
ঝড়-তুফানে ভাঙছে হৃদয়, কে আছে তার সাথে?


কংক্রিট হিংস্র রক্ত মাখা এই শহরের মানুষ কারা?
যে হাত রক্ত চাহে, অন্ধ চোখে, তার মুখেতে ভাত
জুটেছে; রাক্ষসেরা হাওয়ায় বাসে-মৃত্যু করে তাড়া।



যাযাবর


যাযাবরের কাঁধে লাশ
লাশ-লাশে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়,
মাটির দেহ কাঠের কফিনে_
শহর-গ্রাম কেঁদে বেড়ায়,
কেউ নিঃশ্বাস নিয়ে-বিশ্বাস
কেউ লাশ হয়ে কাঁদায় অবিশ্বাস।
মাটির ঘর প্রস্তুত সে ঘরে শুধু মাটি
মাটির সাথে লাশ মাংস মিশ্রিত গন্ধ
বদ্ধ মাটির ঘরে,-বিশ্বাস নিয়েই অমর।
যাযাবর, যাযাবর, সবাই যাযাবর!
কেউ নেই কারো সাথে, কেউ নেই মাটির ঘরে
একেলা রবো পড়ে লাশ হয়ে,
এই লাশের অস্তিত্বও হারিয়ে যাবে এক দিন।
নিঃশ্ব-বিশ্ব, লকোলাহলে কেউ চুপ_অদৃশ্য
ভবে-ভাবে কেউ হতাশ_দৃশ্য'
যাযাবর মন কি ভাবে?
অভয় নিয়ে ঘুরে মৃত্যুর দুয়ারে-দুয়ারে
মৃত্যুর ঘরে যাবে কি একটুও নাহি ভাবে?
যাযাবর, যাযাবর, সবাই যাযাবর।


দেয়ালে পিঠ ঠেকেছে


বেঈমান উজ্জ্বলতার আড়ালে বিমর্ষ মুখ দৃশ্য
তখনও দেয়ালে পিঠ ঠেকেনি!
আজ অচিন্তার ফ্যাকাসে রং চক্ষুদ্বয়_
আঙুল দিয়ে নেশার ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলেছে,
পেছনে বড় বড় চোখ দিয়ে আড় চোখে দেখে
সামনে এলে দু'হাত জড়িয়ে জয় জয় ডাকে।
যে পেটে ডাল-ভাত সে পেট খাবার ভুলে
কে লালন করে, আদর-বিপদের হাত ধরে?
সে ভুলে চক্ষু নাড়ে, ষড়যন্ত্র লয়ে মাতে,
বাঁকা চোখে।
নেই নেই কাছে নেই_
সেই দিনের অর্থ লোভের মানুষ গুলো
আজ দেয়ালে পিঠ ঠেকেছে_
কেউ ফিরেও তাকাবে না, মেরুদণ্ড বাঁকা হয়ে,
আজ দেয়ালে পিঠ ঠেকেছে।



তন্দ্রা চোখে সান্ধ্য


নিজের ভিতরের মানুষটাকে মাঝে-মাঝে
লাশ মনে হয়_
দেহতো লাশ হবে বলেই জন্ম নিয়েছে।
মনটা দেহের ভিতরে কোথায় বাস করে?
খুঁজে খুঁজে হয়রান_
দুনিয়ার মায়াজালে।
দেহের সাজসজ্জা মৃত্তিকার ভিতরে
না যাওয়ার কত চেষ্টা। বিলাসিতার অভিলাষে
মরনের অভয় নিয়ে কত ঘুম।
ঘুম মরনের একটা অংশ;
ঘুম শেষে তন্দ্রা চোখে মস্তিষ্ক ভুলে যায় সব;
দুনিয়ার আলোচনা।
কেউ বুঝে-অবুঝ, কেউ বুঝে মিথ্যে-সত্য
মরন এসে নিয়ে যায় প্রাণ, মসৃণ-ক্ষত;
মানুষ-মানহুশ, ব্রক্ষ্মান্ডের প্রাণকুল
সব ধবংস হবে এক দিন_
সে দিন হবে কিয়ামত।


ভুলে ভুলে


ভুলে–ভুলে কত ভুলে, জীবন চলে,
উড়ে–উড়ে, দূরে–দূরে
ভুল পথে চলে–চলে
হাসি মুখে কত ভুল, বিষাদের তরে
মিথ্যে কথায় ভুল কত সত্যের ঘরে।
মনে–মনে অর্তনাদ, গোপনে সত্যের বিলাপ
সবই ভুল কত ভুল, জীবন ঘরে
মরনের তরে ডাকিবে কারে
চোখ নিবে যাবে, আসিবে না জীবন বারে–বারে।
রঙে–রঙে কত খেলা, কত দিন যাবে
শত দিন নহে দু'দিন সবে
কিছু নেই নিজের, হিংসা–বিদ্বেষ অপমান
কি নিয়ে যাবে পরকালে-সবান।  
ভুলে–ভুলে কত কিছু, উড়ে–উড়ে
ভুলেরও মাঝে মন, সব ভুলে ঘুরে।


আমার আমিত্বে ভয়


রৌদ্র নেই বলে ভয় হয়–দিনে,
আমি আঁধারে অভয় নিয়ে মিথ্যের বেচাকেনা করি।
আমার আঁধারে অন্যেরা বিষণ ভয় পায়।
আমার ভিতরে বিবর্ষ শয়তানির খেলা,
আমার আমিত্বেও বুঝতে পারেনা!
বেঈমানির চোখে দুশমণ,
এক চোখ আরেক চোখের ঘৃণা নিয়ে_
জন্ম দেয় পাপের।
পাপও পাপকে ঘৃণা করে,
বিষণ পাপ আমার আঁধারে।
কালো টাকার পাচু্র্যে অভিশাপের লেনদেন,
আমার মত কত জনের।
অভিশাপের বোজা দিন দিন ভারী হচ্ছে,
হলুদ পানির পরিমান বেড়ে, নর্দমা নষ্ট হচ্ছে,
নর্দমার পোকারা অভিশাপ দিচ্ছে,
মেরে–দে, না হয় সব কিছু নষ্ট করে দিবে।



আমি সত্যের পূজারী


কসম! আমি মনুষ্যত্ব বিক্রি করতে আসিনি
মনুষ্যত্ব–অমানুষের সাথে লড়াই করতে করতে
দেহ–মনের সংঘর্ষে, ক্লান্ত আমার–আমি।
যে পথে ধূলয় মাখামাখি দোষ
সে পথে আমার বারন
তবুও কারা যেন টানে–কালো হাতে
বদনামের কালি গায়ে মেখে দিতে চাহে
আমি অব্যক্ত করুণ চোখে
রক্ত জ্বালাতে চাই সত্যের নমস্কারে
স্বর্ন পোড়ার মত খাঁটি হতে চাই
মনুষ্যত্বের চোখ খুলে মানবের তরে।


কসম! আমি মনুষ্যত্ব বিক্রি করতে আসিনি
আমি এসেছি ভালোবাসা দিতে
ভালোবাসা নিতে।
আমি মানুষ–মানহুঁশ হতে চাই
মনুষ্যত্বের দ্বার খুলে
আমি সত্যের কথা বলতে চাই;
কারা যেন কালো হাত দিয়ে  
সত্য কথা গুলো জীবিত মেরে ফেলে
মিথ্যে কথায় আমাকে কলংক দেয়
ওরা আমকে হুমকি দেয় সত্য বেচার জন্য
তবুও আমি সত্যের পূজারী, সত্যের পথে চলি।


আত্মার বসবাস


নীরব অন্ধকারে, চাঁদের আলো চোখে মেখে
বর্ষার ঘুড়ি-ঘুড়ি বৃষ্টি ভেজা ঘাসে
হেঁটে চলেছি কোন পথে?
জোনাকির মিছিলের সাথে আলো মেখে মেখে
ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক চার দিকে;  
জনহীন অন্য পৃথিবীতে,  
এখানে সঙ্গী নেই।
এখানে অন্ধকার, গভীর অন্ধকার
সূর্য নেই শুধু চাঁদ-রাতের দৃশ্য;


প্যাঁচার মত বসে থাকি-নীরবে
বটগাছের ডালে
বড়-বড় চোখ মেলে-অভয়ে।
অন্ধকারে উড়ে যেতে চাই
দূর থেকে দূরে, গভীর অন্ধকারে
যেখানে বন চুপ করে আছে
পথ চলছে অন্ধকার কোন এক শহরে;
          চাঁদের আলো জ্বলে_  
                জন হীনে।
বাতাস এসে আমায় ভুলিয়ে দিবে-অতীত
আমি ভবিষ্যৎ নিয়ে থাকতে চাই
দুঃখরা আমার পিছনে দৌড়ায়;  
ছুঁয়ে দিতে চায় গতর-ক্ষত গতরে_
ভালোবাসার বেদনার গর্ত গুলোতে,
ফুঁ-দিয়ে আগুণ জ্বালিয়ে দিতে চায়।


আমি যেতে চাই অন্ধকারে
যেখানে পূর্ণিমার আলো আছে,  
যেখানে আমায় কেহু চিনবে না;
নালায়েক মানুষ গুলি।
যেখানে শুধু ঈশর বাস করে,
সেখানে আমি দেখতে চাই_
বেহেস্তের দরজা খুলে আমার মনুষ্যত্বকে।



অভিনয়


মিথ্যের মঞ্চে অভিনয় করতে-করতে
সত্যেরা দূর বিক্ষত গর্তে_
মানুষের বেশে আমিও মানুষ
মিথ্যের আবরণ গায়ে।  
বিবেকের জালে বড়-বড় ফুটা
নরম গলায় নিরবতা, কঠিন বিশ্বস্ত;  
মিথ্যের দ্বার বহু দামি, আলো মৃত।
আমি আহত পাখির মত
নীরব ঘাতকের সাথে নীরব যুদ্ধ।
হাসির অভিনয় করতে-করতে
কান্নারা লুকিয়ে আছে মিথ্যে হাসির আড়ালে
রম্য নাটকের দর্শকেরা চিৎকারে হাসে-গলাগলি
অভিনেতার দর্শনে গোপন ব্যাথার আকুতি
তবুও দর্শকের মুখে হাসি।
পুতুলের খেলার মত আমি নিরব পুতুল
যে মনে নাচাও নাচিব আমি
আমার মিথ্যে হাসির, সত্য অভিনয়।


পড়ন্ত বিকেল


যত দিন যাবে, যত শত দিন, কালে-কাল
আলো নিবে যাবে, যবে পড়ন্ত বিকেল।
খেলা ঘরে মন, কত খেলা, বেলা-অবেলা
আজি দিন আমার নহে, আমি ভ্যাবলা।
ঠেঁলে-ঠেঁলে রথ, মরীচিকার বদ্ধ ঘরে
দেহে-দ্রোহ স্তব্দ জেদ, চক্ষু মরে-ঝরে


ভুলে গেছি ঘর, চলি দলবল, সুখ-সুখে
মরি-মরি, কে হবে সঙ্গি, ধরে চেপে বুকে?
আজি দিন আমার নহে, আমি কাঁদি-কাঁদি!
চলে যাব আজ পড়ন্ত বিকেল, দেহ বাঁধি।
আমার নাহি কিছু, আমি মিথ্যে দামি!
সময় আমার ক্ষয়, ওপারের যাত্রাগামি।


এখানে আমার ফসল কিছু আমার নহে,
আমি-আমার তাও ধার, ভিক্ষা বহে।
চোখ কাঁদে, বুক পাটে, কি নিব সাথে?
দেহ-মন বিচ্ছিন্ন যাবে, নিরবে কথা গাঁথে।
এখানে ঘর আমার নহে, মাটিতে বিচানা উজ্জ্বল
সবি বল, কোলাহল, চলে যাব পড়ন্ত বিকেল।



সেও এক দিন চাঁদ ছিল


উচ্ছাসে মন রঙ্গিন ঘরে বিবর
কোলে-কোলে দোলে-দোলে
সবার আদর দেহে বহে_
বহে-কহে, বর্ণ, স্বর্ণ নলে
অন্ন উঠে মুখে-সুখে
দু'হাতে বরে সুখ দলে-দলে
সে দিনও সে স্বরনালী ছিলো
সবার মাঝে-মনে,
আজ বরবাদ রমনী ভেড়াজালে
অন্ধকার বিষাদ লয়ে
ঘরে আলো নেই-অনলে পুড়ে।


এখানে বাবা-মা নাহি
অপত্য-বর, ঘর-ঘরনী নাহি
এখানে স্বরনালী একা,
সমাজ নাহি, ধর্ম নাহি
শুধু বর্ণ চাহি উজ্জ্বল শরীর,
এখানে পরিবার নাহি-আদর_
এখানে পাপ, অন্ধকার লিলা।
জোনাক পোকার আনাগোনা নেই
দুরের আকাশ হাত বাড়ায় না
এখানে অন্ধকারেও চাঁদ উঠেনা
চার দিক ভীষণ থমথমে
নরক পতিতা!
স্বাদ চুষে-চুষে যায় শরীরের
যারা আসে তারাও মানুষ নহে-পশু
লাল চোখে চাহে।


কে দিবে তাঁহায় সুখ?
যে আসে ঘরে চুপে?
সুখ চুষার আশায়
আবার চলে যায় চুপে, স্বাদ লয়ে।
স্বরনালী আজ বিরহের গুহায়-বিবর
সবাই চাহে শরীর, স্বার্থ লাভে-ঘৃণায়
বীণা বাজে নাকো গভীর সুরে
দূরে সুর তুলে সুখ, বহু দূরে।
যেখানে আছে স্বাদ, সে স্বাদে মাছি বসে
স্বরনালীর ঘরে-দ্বারে কারা?
আড় চোখে চাহে-কুনজরে যারা
স্বরনালীর চোখে জল দিল-দল বেঁধে
সেও এক দিন চাঁদ ছিলো।


দুঃখরা বাসা বাঁধে, বিচ্ছিন্ন সুখ_
গড়াগড়ি দেয় পাপের ঘরে–
নালায়েক শহরে–
যেখানে পাপ নিজের শরীরে অন্যে মেখে দেয়!
অপবিত্র করে দেয় শরীর।
শত চিৎকার কারো কানে যায় না
এখানে মানুষ থাকে না_মানহুশ
এখানে শুঁকুনের খেলা বেলা-অবেলা
স্বরনালীর মত কত শরীর নিয়ে করে খেলা_
নরক পতিতা।


স্বরনালী-বর্ণালী, সুখ খুঁজে ঘরনী
সুখ হারা ধরনী_
দুঃখ সহে মরমী।
কে দিবে সুখ_কিঞ্চিৎ?
সুখের পাখি আজ নিঃস্ব
কোথাও সুখ নেই সারা বিশ্ব।
স্বরনালীর পথে কাঁটা ঢালা
আপন কেহু নেই, বরণ মালা।
একদিন স্বরনালীও চাঁদ ছিলো
ছিল পরিবার, ঘন অন্ধকার
বিশাল আকাশ, নিজের শহর,
আজ অন্ধকার ঘর_পতিতা
যেখানে আলো নেই-চাঁদ।
যেখানে রমনীরা বন্ধী পাখির মত
শক্ত-অমানুষের নির্যাতনে_
শত-শত হাত শরীর স্পর্শ করে
যেখানে ভালোবাসা নেই
শুধু নরম মাংস নিয়ে করে কামড়াকামড়ি।
সেও এক দিন চাঁদ ছিল-স্বরনালী।


এখনো আমি অকর্মঠ


এ সময়টা আমার নয়, আমার মত করে_
এ সময় আমাকে যন্ত্রণা দেয় মনের গভীরে,  
যখন কেউ আমাকে দেখতে পারেনা_
হাসাতে পারেনা, তখনও আমি অকর্মঠ।
বুকের ভিতর জমাট বাধা কষ্ট গুলো
দিন দিন ফোলে উঠে,
হৃদয়ের পানিতে বেসে–বেসে।
এ শহরের মানুষ গুলো স্বার্থ চায়—টাকা
আপন জনও গেউ কুকুরের মত হয়ে যায়
লাল চোখে চায় আমায়, আমার পেটে অন্ন নষ্ট হয়।
কোথাও আমার বিশ্বাস নেই, টাকা নেই
আমায় কেউ ডাকেনা, কেউ বুঝে না,  
নিজের কাছে নিজেকে অভিসপ্ত মনে হয়
সুখ আমার নয়, দিনে–দিনে সুখ তিলে–তিলে ক্ষয়।


আঁধারের আলো


দুর্জয় করিয়া সূর্য, আমি চঞ্চল
ঘূর্ণি বাতাসের অঞ্চল
আকাশ বাঁধিয়া বক্ষে !
অভয়ে-নাচিয়া, মাথায় করে বিশ্ব
চক্ষে অক্ষয় দৃশ্য।
সৃষ্ট মানুষ-মানহুশ, মানবতা
ভেঙ্গে-মারিয়া দানবতা।
আমি রুক্ষ মানব ছেদিয়া
শির নত নাহি করিয়া
করুণ দর্শন চড়িয়া
মন্তরে দিব ঠাঁই।
আমি মম আলোর দোয়ারে
বারবার কাঁদি, দুঃখি মানবের তরে।


মলয় মিশিয়া দলয়
আমি অদৃশ্য বলয়
চুম্বন করিয়া মৃত্তিকা
নিঃশ্বাস চলে বাঁকা
আঁধারে কুপি জ্বালিয়া
শয়তানদের মুখ দেখিয়া
রক্ত চোখ, আমি ধ্বংস করি।
বারবার যুদ্ধে মাতিয়া উঠি
চিৎকারহীনে নিরব বাতি
শত প্রাণ নিয়াছি
আমি একা, তরবারি দার রাথি।


আয় কঠিন হৃদয়!
কাঁদিয়া নিজ সাজে সদয়
আমি বিদায় বলে
আকাশ বাঁধে বক্ষে
দুঃখী মানবের তরে_  
        মরিবার চাই।
রক্ত কণিকা অক্ষয়ে-অভয় ৷৷  
আমি যুদ্ধ করেছি
শয়তানদের সাথে
রুক্ষ দানবের তরে-ঘরে
থু-থু ফেলেছি বারংবার।


বিশ্ব কাঁপিয়া উঠে নিঃশ্বাসে
তপ্ত করিয়া মাটি, জানান-নাশে
অমানুষের হৃদয় করিয়া সিদ্ধ
অবিনাশি হৃদম যুদ্ধ
কর্দম বাঁধিয়া অবিরাম
চরণ দাবিয়া উঠে হর্সর_
বর্ষ চলিয়া আজ চরম হিংস্র
মানবতার পায়ে তালা রুদ্ধ
জ্বলিয়া মানব তর সদয় মত্ত।
কাঁদে ফুল-পল্লব আঁখি
নরম নিঃশ্বাসে আগুন জ্বলে-অবিরাম
                    আমি বিশ্ব
আমি করুণ, দানবতার যম।


জঞ্জাল ঘেরিয়া পুষ্প দল
উজ্জ্বল-সূর্য, ধরনি স্বচ্ছল
চন্দ্রদেবীর দুপিঠে হাঁটতে চাই
মানুষ-মানহুঁশ হয়ে যাই
আঁধার-আলোর ঘরনী
            ধরণী-বরনী_
আমি রমণীর কবরী,
মানুষ-মানহুঁশের আদরী,
আমি হতে চাই মাটি
বক্ষে বাঁধিয়া ঘ্রাণ আঁটি
             মানুষ খাঁটি_
সত্য মানুষ হওয়া বহু বাঁকি
আঁধারে যুদ্ধ করে_
অমানুষের সাথে আজ
মানবতার হাত ধরে,
কাঁদি দুঃখী মানবের তরে-ঘরে।


মানুষ হতে চাই মানুষ


আমার ভিতরের অমানুষটাকে লালন করতে-করতে
চারদিকের বৈষম্য হারিয়ে গেছে।
জীবনের গতী বুঝতে-বুঝতে
মনুষ্যত্বের খুব বাহিরে চলে গেছি।
অমানবিকতার নির্ভয়ে নিজেকে মানুষ ভাবিনী।।
বিবেক মরতে-মরতে, মানবতা নিস্তেজ
মরনের আগেও অমানবিকতার যোগ ফল সতেজ।


টাকা-পয়সা সবি তুচ্ছ কখনও ভাবিনী_স্বচ্ছ
দিন শেষে কিছুই নেই, বিয়োগ গুচ্ছ।
কালো চোখে আলো জমানোর চেষ্টা
সূর্যের কাছে চাঁদ ঋণী, শোধ করার নাই তেষ্টা।
আমার ভয়ে, আমার ছায়াও শঙ্কায়  
মনুষ্যত্বরা মৃত্তিকায় লুকায়।
আমি মানুষ 'চকচকে', ভিতরে থমকানো ছবি
কালো আঁধারের ভিড়ে লুকিয়ে আছে রবি।
আমার হাসিতেও কেমন জানি ভয়-ভয়
ভিতরের অমানুষ করে মন ক্ষয়-ক্ষয়।


আমি নিজেকে দেখে ভয় পাই-অন্ধকারে
আমি হতে চাই মানুষ, মহা মানবের ঘরে।  
আমি হতে চাই অভয়, মানুষ বুকে টেনে
আমার আমাকে গড়তে চাই, মনুষ্যত্বের দিনে।
মানবতার পাশে, মানুষে খুব কাছে-মনের ভিতরে
আমার ভিতরে আমি মনুষ্যত্বকে লালন করতে চাই,
সত্যের আলো জ্বেলে, অমানুষটাকে মেরে।



মরীচিকার আলয়


মরীচিকার স্তুপ ভাংতে-ভাংতে আমি ক্লান্ত
চকচকে দেহ অশান্ত, নতুনের দ্বার ভ্রান্ত।
অকাল মৃত্যু স্বচ্ছ, সমীকরণে মত্ত
কেহ শ্রমে-ঘামে, কেহ চুপি-চুপি বিত্ত।


মরীচিকার চত্বরে জীবনের বিস্ফোরণ
ছিন্নভিন্ন মন, বিবেকের সংস্করণ।
সংসারের আলাপন, সুখ-দুঃখের সংঘাত
প্রিয় জন, আত্মীয় স্বজন কে করে আঘাত।


হতাশ জীবনে; বিষাদ সঙ্গ নিবে,
সংশোধনে অন্য গ্রহের জীবের আবির্ভাব।
জীবনের সংবিধানে অনিয়ম পাতায়-পাতায়
প্রজন্ম পর প্রজন্ম ভাংবে মরীচিকার আলয়।


কাঠগড়া


আমি মানুষ; সত্যের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে চাই
বিবেক-বুদ্ধি অবসরে যাওয়াটা কাম্য নই।
আমি বুঝি; বিষের বাটি, মধুর হাঁড়ি
কোন খানে জয়-ভয়, নিজের বসত বাড়ি।


দখল, জুলুম, অন্যায়নীতি, বেঈমানি, দুষমনি
দুর্বল জনে বাকরুদ্ধ, জোরের হাতে অবনী?
সুখ খোঁজে, চোখ বুজে, রক্ত চুষে আড়ালে
ঘরণীর বোবা চিৎকার, দুর্নীতির ভেড়া জালে।


ঘর দখলে, বল ফসলে, দল আসে হাঁকি-হাঁকি
বীরত্ব বাহু নাইকো ঘরে, অবলার চোখ দেখি।  
যা ছিলো সব লুট করেছে, মেরে-মেরে দেহ ক্ষয়
সব জনে দেখে তামাশা, প্রতীবাদ রয়েছে বেবোলা।


বাহু দলের জোর দেখিয়ে ভুলে গেলি সত্য?
কোমলের ঘরে বিষাদ দিলি, ভুল চোখে মত্ত।
মাটি থেকে লাশ উঠিয়ে নিবি, আত্মার হবে বাস
মনুষ্যত্ব হারিয়ে গেছে, বিবেকের সর্বনাশ।


ঘর ভেঙ্গেছে, মারে দিলে, ঠাঁই হবে না বিটায়
দুঃখের সময় কেহু দেখেনা, আগে-পরে হায়-হায়।
জোর দেখিয়ে, জুলুম করে, কি নিয়েছিস কেঁড়ে?
ঐ পারেতে বিচার হবে, মরতে হবে তোরে।



বেকারত্বের অভিশাপ


নিজের কাছে নিজেকে অভিশপ্ত মনে হয়!
বিষাক্ত শব্দে কানে বিস্ফোরণ গঠে-অসহায়।
বিবেক জানতে চায় বেকারত্ব্যের দুরবস্থার কথা
করুণ কান্না, চাপা কষ্ট, অজানা ব্যাধির অসুস্থতা।


যে ছেলেটি অভিশাপ থেকে মুক্তি চায়-মুক্ত ছায়া
হেঁটে-হেঁটে আবিষ্কার করে দুর্নীতির সত্য ছায়া।
জুতুর তলায় লেগে থাকা অভিশপ্তরা পাঁথর হয়ে
দাসত্বের তাড়নায় কত দ্বার থেকে বিতাড়িত।


কোথায় স্বাধীনতা, টাকায়, সত্যে, ঘুষের ভিতরে?  
স্বাধীনতা খুঁজতে খুঁজতে মনুষ্যত্ব জ্বলেপুড়ে মরে।  
বিষাক্ত মিথ্যের ছলে সত্যের গোলাগুলি-পরাজয়
মিথ্যেরা দখল করেছে স্বাধীনতা, আলোর বিপর্যয়।


ওরা মনুষ্যত্ব বিক্রি করে, পশুর সাথে করে বন্ধুত্ব
ওরা ছেলেটির রাশি গুনে গুনে বিয়োগ কষে বৃত্ত।
ওরা দেখেনা জ্ঞান, বৃদ্ধ বাবা, পরিবারের কান্না
ওরা দেখেনা লুকানো কষ্ট, উড়ানো সুখ পান্না।
  
হাতের মোঠোয় টাকা চায়, গোল টেবিলের সন্ধি
টেবিলের নিচে টাকা দেওয়া, নইলে যাও,কু-গন্ধী।


বড়শী


অরে মন্ত, না হও উক্ত, হও শান্ত;
হে বীরত্ব, হে সাঁচা, হে অবণী
জেনে রাখ লোকালয়,
আঠারো হাজার মাখলুকাতের শ্রেষ্ট জীব মনিষী,
মৃত্যুদুত সর্বক্ষণ সঙ্গে_
হায়াত পুরালে পরকালে।


মেঘ যে কত রঙের হয়?
সব মেঘে বৃষ্টি নামেনা।
ঘন মেঘ আকাশ ভার করে নিয়েছে
বৃষ্টি নামার সম্ভবনা রয়েছে
আকাশ কাঁদতে কাঁদতে,বাতাসের কানে বলে,  
মানুষকে বলে দিও অক্সিজেনের বড় অভাব!
যে কোন সময় আকাশে মিশে যাবে।


সবাই ভিখারি


আমি তাঁহাদের দলে যাহারা তোমাদের
               চরণ তলে ঘৃন্য-ভিন্ন।
তাঁহারা আমার হৃদয়ে  
যাঁহারা তোমাদের ভালোবাসা থেকে,
               বঞ্চিত-লাঞ্চিত।
আমিও ভিখারি তাঁহাদের মত
তোমরা যাঁহাদের কর দান
করিও মান, সবাই ভিখারি, কি কার অবদান?
হে মানব, হে আবর্জনার দাতা
আমরা কার, তোমরা কার?
              করিও একটু চিন্তা।
ভালোবাসা দাও, ভালোবাসা নাও
চোখে-মুখে তাকাও____
তোমাদের মতই মানব,
তোমাদেরই ভাই,
ললাটের লিখন, ভিক্ষা চাই।
আমিও ভিখারি, তামাম দুনিয়া ভিখারি_
               সবাই দু'দিনের শিকারি।  


কর্ণ-মুখগহ্বর করে কার সাধন  
স্বর্ণ গিলে গিলে ধন ভোজন।
পণ্য; ভিখারি, করে না গণ্য
উপোস করে করে দিন-শূন্য
                সাধনা
ললাটে আঁধার কি আছে করার
তুমি রাজা, আমি প্রজা-দুনিয়ার।
টাকা-পয়সা পাপের মলাট
কর পুণ্য হবে পরকালের সম্রাট।


দুনিয়া ভিখারি-বড় অভাব
পুণ্য থাকিলে দু'কালে হবে সম্রাট।


আ ড়া লে


আলো জ্বেলে, আলো মেলে
কালো কি ডাকা যায়?
মুখোশের আড়ালে কত কাহিনী
স্বপ্ন, আশা, ভালোবাসার দাহনি।
ব্যস্ত শহরে, শান্ত ছেলেটি
হেঁটেছে বহু পায়, অবুজ মনে।
গভীর রজনীতে উঠেছে জেগে স্বপ্নে_
স্বপ্নের ভয়ে নির্ঘুম রাত কাটে আহারে,
দীর্ঘশ্বাসের শব্দ আকাশও জানে,  
বাতাসের রঙে মিশে যাওয়া কত কথা
আজও অজানা; আপন ঘরে।
ফিরে ফিরে দেখা না আসার ভ্রমর,
ফুলে ফুলে তার মিলন হবে, নাহি হবে সংসার।
হেঁটে হেঁটে ক্ষয় সময়, পাদুকা ও বিস্ময়!
ব্যস্ত শহরে মানুষ গুলোও ব্যস্ত
নাহি ফিরে ফিরে চায় মোরও প্রাণ,
মোরও আঁখি জলে (সু-কু দর্শনে)।
খোঁজে–খোঁজে, কাছে–দূরে
জীবনের পথ হারিয়ে গেলে,
আলো-আলো' মুছে যাবে,  
কালো জ্বেলে ব্যস্ত শহরে,
ঘুমিয়ে যাবো নিঃসঙ্গ, নিরবে।
কাফনের কাপড় জড়িয়ে আছে হাজারও দেহ
নিভে যাওয়া স্বপ্ন দেখার আঁখি, অবিনশ্বর,
কোথায় পাবো তোমায় হে ঈশ্বর।



মনুষ্যত্বের লড়াই


শুধু একটি কথা জাগায় আমায় সারা নিশি
কাঁদায়, চোখের জল ঝরায়, স্বপ্নে আসি,
মনে হয় আমার মাঝে আমি এক সর্বনাশী।
কে আমি হঠাৎ ভুলে যাই নিজের মুখ খানি!
আমি পাপিষ্ট, পাপের স্পর্শে ঘৃণ্য এক প্রাণী
আমার ভিতর কুড়েকুড়ে খায় এক জ্বলন্ত বাণী।


অন্ধকারে আমার ছায়া আমাকে হুমকি দেয়
ভয়ে স্তব্দ হয়ে মুখ আড়ালে লুকায়।
সুখ আজ অশান্তি হয়ে বুকের ভেতর করছে খেলা
যাতনার বাক্য হৃদয়ের তল্লাটে নিরবে করছে লীলা।
আমি বাংলার নই, আমি বিন দেশি,বর্বর ভায়ানক
আমি কর্কশ, আমার চামড়া বন্য পশুর সয়ানক।


আমি কি কখনও চেয়েছি মানুষের সুখ–শান্তি?
আমার ভিতর শুধু লোভ, সম্পদের বড়াই, দ্ভ্রান্তি।
এটা দু’দিনের পৃথিবী এক আজব ভূমি_জানেনি আমি  
কি আছে নিজ সম্ভল, সবি পর ধন, উপরে সর্ব দামি।
আজ, কাল, সময়, আমি আমরা সবাই নিঃসঙ্গতা
শুধু দেহ খানা করে খেলা, না বুঝি, কাল উপরের যাত্রী।



আগুনের পরশমণি


দাউ দাউ করে জ্বলিছে আগুন
       দুঃখির রুদ্ধ মনে
দুঃখির তরে সুখ নাহি আজ
      দুঃখিরা দুঃখ গুনে


এক ঘরেতে পুষ্প ফুটিয়াছে
      সুখের আবাস মনে
আরেক ঘরে জ্বলিতেছে আগুন
      কেউ নাহি শব্দ শুনে।


কারো আগুনে, কেউ উষ্ণ খোঁজে
       জ্বলেপুড়ে যায় দেহে
  হাসিতেছে কেউ সুখের জলে
      আসিবে না কেউ চাহে।


দুঃখির ঘরেতে চাহে না কেউ
       স্বচ্ছ চোখ পেতে
দূর থেকে হাসিতেছে তাহারা
     রবে আনন্দে মেতে।


দাউ দাউ করে জ্বলিছে আগুন
        দুঃখির রুদ্ধ ঘরে
সুখেরা কেউ চাহিবে না ফিরে
     জ্বলেপুড়ে যাক মরে।


এই ভবেতে আজব খেলা
      খেলে সকল মানুষ
কেউ হাসিতেছে আকাশ উঠে
     উড়ায় রঙিন ফানুস।


অন্ধ চোখে দেখিবে না কেউ
      অর্থের বেড়াজালে
কারো ঘরে বেড়া নাহি সুখ
      খাবার পেট জ্বলে।


সুখের মাঝে হাসিবে জীবন
     রবে কত সুখ ঘরে
সবার তরে আসিবে না সুখ
     যে দিন যাবে মরে।


আগুনে জ্বলার মানুষ গুলো
     কাঁদিবে কত কাল
মরণ এসে হাসিয়ে দিবে
    সুখে রবে পরকাল।



বিবেকের দ্বারে তালা ঝুলছে


মালির হাতে ঝাড়ু, জঞ্জাল পরিস্কার করতে ব্যস্ত
অন্ধ প্রহরে'
এই ময়লা কোন সাহেবদের?
টেবিলের নিচ দিয়ে রঙিন খামে মনুষ্যত্ব বিক্রি
করে? ‘অবৈধ টাকার লেনদেন’
বিবেকের দ্বারে তালা ঝুলছে
মরীচিকার আবরণে শত শত বছর ধরে।


ঘানি টানার বলদ গুলো, সহজ-সরল
কলুর বলদ মাথায় করে তৈল বেচে!
কি সহজ জীবন,_সাদামাটা, অহংকার নেই
কে খবর নেয়?  গ্রাম্য ক্ষেত মানুষের!
শহর থেকে এডভেঞ্চারের জন্য আসে
আহা কি আনন্দ, মাঠে মাঠে, ক্ষেতে ক্ষতে!
ক্ষত ক্ষেতের যন্ত্রণা গুলো চোখের বাহিরে।
বিবেকের দ্বারে তালা ঝুলছে
মরীচিকার আবরণে শত শত বছর ধরে।


শহুরে ডাসবিনে উদাম গায়ে জীবন্ত লাশ_
না খেয়ে পড়ে আছে, কাকের চোখ চেয়ে;
ঘৃণায় নাক চেপে হাঁটা মানুষ গুলো চেয়ে
দেখে না মানুষ, ওরাও যে মানুষ,_লাশ।
বিবেকের দ্বারে তালা ঝুলছে
মরীচিকার আবরণে শত শত বছর ধরে।


নর্দমার পাড়ে বস্তি গুলোতে কে কেমন আছে
কেউ কি খবর নিয়েছে?
আকাশই যে তাদের ছাদ,
মেঘ-বৃষ্টি, রোদ মাখা সংসার; ঝুলে আছে।
বাবার হাত ভিক্ষা চায়, আমাদের কাছে
আমরা কে,_অন্ধ মরা?
ফিরে দেখার সময় যে আমাদের নেই!
বিবেকের দ্বারে তালা ঝুলছে
মরীচিকার আবরণে শত শত বছর ধরে।



রিক্সাওয়ালা


জীবন যুদ্ধের খাঁটি যোদ্ধা,ঘাম ঝরানো রিক্সাওয়ালা
চোখ জুড়ানো কত শ্রদ্ধা, স্বপ ঘামের রুদ্ধ মালা।
রিক্সার প্যাডেল দু'পায়েতে শরীর ভিজে ঘামে    
জনে-জনের টানছে দেহ, আলসে নাহি জমে।


রিক্সায় উঠে ন্যায্য মূল্য দিচ্ছে না,দিচ্ছে কেউ গাল
মারছে আবার ঘামের শরীর, কি খাবে কাল।
ঘাম নয়তো, রক্ত ঝরে  রক্তের নাহি দাম
গরীব বলে বাকরুদ্ধ, দীর্ঘশ্বাসে ক্ষুধার্তের দম।  


সংসারেতে কাঁদছে সবাই, ভাত নাহি কারো পাতে
ভাত দে বলে চিৎকার করে, লুকিয়ে রয়েছে ভাতে।
রিক্সাওয়ালা রিক্সা নিয়ে তপ্ত রৌদ্রে ঘাম ঝরিয়ে
চাল কিনে বাড়ি ফিরে হাসি মুখের কাঁন্না নিয়ে।


ছেলে-মেয়ে তার স্কুলেতে পড়তে যাবে কবে
কত স্বপ্ন মনে বাঁধে, মন ঘরে স্বপ্ন মরে সবে।
রাত-দিন প্যাডেল চাপে জীবন যুদ্ধের তরে
রক্ত বেচে ভাত কিনেছে স্বপ্ন কাঁদে ঘরে।



মহানগরীর ফুটপাত


মহানগরীর যান্ত্রিক কোলাহলে
ছোট্ট ছেলেটির ইতিহাস–ফুটপাত জানে;
না খাওয়া কত রাত, ভাত জানে,
করুণ চোখ দেখেনা কেউ, কান্নার জলে।


ময়লা টিশার্ট, শরীরের গন্ধ, কে জানে?
কত রাত ঘুমায়নি,অন্ধকারে।


কুকুরের সাথে বন্ধু করেছে, ফুটপাত,ডাস্টবিনে
কেউ দেখেনা, কেউ শুনে না
চিৎকার যেন বোবা কান্না,
ধূলো জমা চোখ,জীবনের হিসাব গুণে।  


খোলা জানালা, বদ্ধ দুয়ার,
না দেখা সুখ, অসুখের বেজা রুমালে নাক।


ফুটপাতে বেড়ে উঠা ছোট্ট ছেলেটিও মানুষ;
সে হেসে–হেসে কাঁদে, দুঃখেরে করে সাদর
কে বুঝে তার আত্মবিলাপ–নয়নে মাখানো আদর,
কে জানে তার রং, ভিতরে উড়ানো ফানুস।



জ্যান্ত গুম


জ্যান্ত মানুষ গুম করে সব লাশ বানিয়ে রাখে
লাশের খবর কবর দেশে হদিশ নাহি আছে
সত্য মানুষ গুম করেছে, মিথ্যের গন্ধ মাখে
সত্য মানুষ সত্য কথায় সত্যের মাঝে বাঁচে।


সত্যের কথা বলতে গেলে মুখ চাপিয়ে রাখে
মিথ্যেরা সব উচ্চ ঘরে সত্য নাহি কাছে
পত্রিকাতে খবর আসে গুম হয়েছে মালেখে
লাশের খবর নাহি আসে গঙ্গার জলে পেয়েছে।


যদি সত্য বলে মেরে দিবে মিথ্যেরা সব বলে
ঘর থেকে টেনেহেছড়ে গুম করে দেয় মেরে
কত জনের খবর নাহি কত বছর চলে
আত্মীয়রা চেয়ে আছে আসবে আবার ফিরে।



মানবতা আজ কোথায়


মানুষ গুলো কেমন করে মানুষ মারে হায়
বিবেক, বুদ্ধি, মানবতা মৃত্তিকাতে লুকায়।
নিষ্ঠুরতা বাড়ছে দিনে, কাড়ছে আপন মন
ভালোবাসা নাইতো মনে, নিষ্ঠুরতার প্রাণ।


মানুষ গুলো কেমন জানি নিচ্ছে শুধু জান
নিজের জানের মায়া খুঁজে গাইছে মিথ্যে গান।
মান নাহি তার মানের খোঁজে, অট্টহাসি মুখে
চোখ রাঙিয়ে কথা বলে মানুষের করুণ দুঃখে।


মানুষ নাকি শ্রেষ্ঠ প্রাণী-প্রাণ থাকিলে নয়?
মানবতা কোথায় গেলো, মানুষ কুলে ভয়।
দিনে দিনে মানুষ সবাই মানুষ নয়তো হয়
মানুষের মনে ভালোবাসা তিলে তিলে ক্ষয়।


কত মানুষ কথা বলে বিবেক বুদ্ধি ভুলে
মান নাহি তার মানের কথা নিজে শুধু বলে।
হাজার হাজার মানুষ কাঁদে, আপন মানুষ মরে  
অমানুষ গুলো হাসছে কেমন, মানবতা ছেড়ে।  


মানবতা কার মানুষ নাকি পশু–পাখির?  
মানুষ সবাই মানুষ হয় না, মানবতার ঘুড়ি।
মানবতা ঘুরছে দেখ, উড়ছে মিথ্যে পাতা
মানুষ কারা সত্য মানুষ, ধরবে মানবতা?