আমায় ডাকিতেছে


অন্ধকারে ডাকিতেছে গম্ভীর কাক_
কালো পালক খসিয়া পড়িতেছে এসিডের উত্তাপে;
আমার গায়ের মাটি গুলো_
লাবার মত গলিতেছে মৃত্তিকার ভিতরে।
বৃক্ষরা নিশ্বাস ছাড়িতেছে না আমার নাকে,
ডাকিতেছে মৃত্যুরা কাক ডাকা অন্ধকারে।
ঢলে পড়িতেছে চোখ কালো হয়ে_
সবুজ ঘাসেরা ধূসর হয়ে চুষিতেছে আলো,
অন্ধকারে ডাকিতেছে বৃদ্ধ বৃক্ষেরা—চোখ ভুজে
শুকনো পাতারা ছাই হয়ে আছে কালো।


মাংসে মিশে আছে মাটি—মাটির শরীরে
পঞ্চ ইন্দ্রিয় বন্ধ হয়ে আসে; পাশে থাকিবে না কেউ
মৃত্যুর কোলে আমি! আমি কে, কে আমি?
অন্ধকারে ডাকিতেছে গম্ভীর কাক_
ধূসর ঘাস ভিজিতেছে গলিত মাংসের পঁচা পানিতে,
হাড় গুলো আলাদা হয়ে রবে—মৃত্যুর পরে।


মাটির গলিতে শুধু মাটি; আর মাটির শরীর
আমায় ডাকিতেছে অন্ধকারে গম্ভীর কাক_
শরীরের সাথে শুধু শরীর; আর উৎপাদিত ফসল
বাতাসে ভেসে যায় সৃষ্টিকর্তার কাছে।


ধূসর মাঠে শুকনো ফুল


চোখে ঘুম নেই চাপা কান্না নিয়ে বসে থাকে একা
শুকনো রোগা শরীর হাড় গুলো একটা একটা করে_
গোণা যায়; দীর্ঘশ্বাসে মরনের গন্ধ বাতাসে ভাসে
বিচানায় শুয়ে শুয়ে ভাবে মৃত্যুর কথা—আর কাঁদে।
কে দেখবে শরীর, বাবার সাথে বসে আছে ছেলে_
ছোট্ট ছেলের কান্না চোখে কত আর্তনাদ ধূসর
বাবার অসুস্থতায় ছেলে শুধু কাঁদে কাঁদে কাঁদে_
মা নেই, ঘুমিয়ে আছে বকুল গাছে নিচে’ স্বর্গ বাঁধে।


বিছানায় শুয়ে আছে কঙ্কাল শরীর, দু'টি চোখ নড়ে
ঘরে আলো ছায়ার খেলা, ঘাস ফুল মরে ঝরে পড়ে।
মধ্যবয়সীর চোখে মৃত্যুর কান্না দেখে সাদা হাঁস_
কাঁদিতেছে নয়া পুকুরের জলে; শেওলা ঠেঁলে।
শরীরে রক্তের খুব অভাব পানিও নেই—আনার
ঠেঁলে ঠেঁলে কত মুঠো ভাত খাওয়া যায় ঘাঁ মুখে
ঠোঁট শুকিয়ে আছে গলা, সারা শরীর ধূসর
ঘুম নেই, সুখ নেই, অবসর নেই নরম চোখে।


ধূসর মাঠে শুকনো ফুল ঝরিতেছে নক্ষত্রের সাথে
শুকনো শরীরে শুকনো ঘাস খসে পড়ে পথে পথে।


উড়ে যায় পাখি


কিছুক্ষণ আগেও ওরা হেসে ছিল,
গল্প–আড্ডায় মেতে ছিল,
অন্য দিনের মত আজও বাসায় ফিরবে–
কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে
তখনও কলেজ রোডে দাঁড়িয়েছিল।
হঠাৎ,
একটি বাস এসে সাদা পোশাক লাল করে দেয়
রক্তাক্ত শরীর_
মুহূর্তে কয়েকটি দেহ স্তব্ধ হয়ে যায়।
আর প্রিয় মানুষ গুলোর বিরহের চিৎকারে
আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠে।


এক ঝাঁক পাখির উপরে দানবের হানা
মানুষ রূপি অমানুষ গুলি দিনের পর দিন
কত প্রাণ কালো চাকায় পিসে মেরে ফেলে।


তখনও ছেলেটির চোখ পৃথিবী দেখেছিল
এখন শুধু আর্তনাদ, চার দিকে কষ্টের চিৎকার
হাজার–হাজার বন্ধুর চোখে জল, বেদনার।


যে প্রাণ ঝরিয়া পড়েছে


একুশে যে প্রাণ ঝরিয়া পড়েছে মৃত্তিকার গহ্বরে
ঘন অন্ধকার বাঁশ ঝাড়ে, ঘাসের আবরণ শরীরে।
যে ফুল ঝরিয়া পড়েছে সকাল পেরিয়ে বিকেলে
সে ফুল আমার নয়ন কাঁদাইয়া জল ঝরে_
জাগিয়ে তুলে অন্ধকার রাতে সঙ্গহীন,
আবার ডাকে পেঁচা হয়ে, ঘরের পাশে কাঁঠাল গাছে,
ঘরের ছালে শুকনো ঢাল ভাঙিয়া পড়ে
ঘুম চোখ জাগিয়া উঠে, শরীরে কাঁপন ধরে।


কোন্ এক দিন ধানের আঁটি ঢালিয়াছিলো উঠুনে
সে ধান আজ সোনালী ধান খই ফুটে;
মুখে হাসি নেই আজ, চার দিকে অন্ধকার ঘাটে
জোনাক জ্বলে না, মৃত্যু কত ডাকে উঠুনে।
একুশে প্রাণ ঢলিয়া পড়েছে উঠুনের কোণে
হয়া না আর দেখা সূর্য উঠা কোন্ ভোরে।


ঘাসের আবরণে ঢাকা পড়েছে একুশের প্রাণ
কবরের উটেস্ত মাটি মিশে গেছে পুকুরে
কোন্ এক বৃষ্টির রাতে; অন্ধকার ঢেলেঢেলে,
সকালে ঘাস ফুল ফুটে আছে, নিঃশ্বাস মরে।


একুশে প্রাণ ঘুমিয়ে রয়েছে অদূরে, সবুজ বনে
‘সারা রাত জাগিয়ে তুলে, পেঁচা হয়ে ডাকে'
ছুঁয়ে দেইনি বলে আমার ঘুম চোখে দিন হয়ে আছে
খেলার আওয়াজ নিয়ে ঘরের পিছন থেকে ডাকে_
                            শুধু রাতেই ডাকে।


যে দিন ঘুড়ি উড়াতে উড়াতে দু'জন দৌড়ে ছিলাম
সবুজ মাঠে; পাংশু মেঘও উড়ে ছিলো নাটাই ছাড়া_
পাখিরাও উড়ে ছিলো, আজও উড়ে—ঘুরে,
আজ শুধু তুই নেই_নিঃশ্বাস নেই, দেহ নেই-অস্তিত্ব,
একুশে প্রাণ ঝরে আছে মৃত্তিকার গহ্বরে,
ফুল ঝরে; বৃষ্টি, পাতা, আলো নিবে আঁধারে।
আমায় সারা রাত জাগায় পেঁচা হয়ে, কাঁঠাল গাছে,
ঘরের ছালে শুকনো ঢাল ভেঙ্গে পড়ে
একুশে বন্ধুর প্রাণ ঝরিয়া পড়েছে মৃত্তিকার গহ্বরে
নিসর্গের বুকে নিজেকে বিলিয়ে মিলিয়ে—কবরে।



লাশ


শোবার ঘর নেই; ধুলোয় মাখামাখি শরীর
শুকনো—পাতলা সব রোগী ক্লান্তির চোখে চায়
খসড়াপাতার আকাশে করুণ নিঃশ্বাস নামে_
বাতাসে; লাশ গুলো নিচের করিডোরে শুয়ানো
চার দিকে ভেজা কান্না নরম চোখ ঘামে।


নিচ তলায় গাঢ় অন্ধকার কপিন গুলো নিস্তব্ধ_
লাশের অপেক্ষায়; লাশ খাবে রাক্ষসের মত,
ধূসর সন্ধ্যায় নেমে আসা জোনাকির মত উড়ে_
আত্মা গুলো নিধন নেশায় মাতালের মত_
ঢলে পড়েছে মাটির বুকে; বিকট শব্দ করে।


মরা গাছের ডালে বসে যমদূত মৃত্যু গুণে
কাক লাল চোখ মেলে আছে যমদূতের চোখে
হাসপালের কর্ণারে বড় বাবলা গাছের ডালে_
চরই পাখিরা পালক ঝরাতেছে ভীষণ দুঃখে
মৃত্যু—লাশ দেখে দেখে নির্ঘুমে সুখ ভুলে।


লাশের মহড়া চলছে আউটডোরে মীমাংসিত—অ
বিচ্ছেদ হয়েছে সব, দেহ, মন, আত্মা, সব সব_
লাশের স্তুপে লাশ, চার দিকে ভেজা ‘কাঅ’
ক্ষত শত মন, ক্ষত শত দেহ, ক্ষত শত লাশ_
হাসপাতালের বিছানা খালি হয়ে আছে কত সব।



এই ঘরে সব মৃত


এই ঘরে সব মৃত; অন্ধকার নেমেছে শহরে শহরে
বিষন্নতার ভিতরে বিষন্নতা—চোখ নেই
দেয়ালের ভিতরে দেয়াল ঝুলে রয়েছে টিকটিকি
মাকড়সার জালে আটকে রয়েছে মশা;
এই ঘরে সব মৃত; শুয়ে রয়েছে লাশ হয়ে_
সব কিছু চুপ রক্ত ঝরে পড়েছে জোকের শরীরে
ঘাসের ভিতরে গাঢ় সবুজ রঙ দুর্বিশার অন্ধকারে,
শুকুনেরা নেমে আসে গভীর অন্ধকার থেকে ভয়ে।
এই ঘরে সব মৃত; কাচা হলুদের ডাটার মত ঝরে_
শুকনো পাতা হলুদ হয়ে; তাজা ঘাস মরে।


পিপিলিকা ঢুকেছিলো গর্তের গভীর অন্ধকারে
সেখানে নেমেছিলো আবাল ব্যাঙ চোখ খসে।
মৃত দেহ গুলো এই ঘরে শুয়ে রয়েছে—কবরে
দালান ধষে পড়েছে দেহ নিয়ে; ক্লান্ত নিশে।
এই ঘরে সব মৃত; বুড়ো শালিকের মত ঝরে
খয়েরি পালক উড়িতেছে ঘন অন্ধকারে—মরে।
শুয়ে রয়েছে বিছানা ছাড়া, মাটি-ঘাসের উপরে
এই ঘরে সব রয়েছে পড়ে মৃত, ক্লান্ত দুপুরে।
  


মৃত্যুর যন্ত্রণা


খাঁচার ভিতর উদাস পাখি কত দিন রবে উড়ে
মরনের ক্লান্তি উঠেছে মিছিল, আত্মা যায় ঝরে।
নরম শরীরে ভাজ পড়েছে শুকনো পাতার মত_
মাছির মত মরে ঝরিবে, মাকড়সার জালে ক্ষত।


শত শত দেহে মৃত্যু কামড়ায়, যন্ত্রণা খোসে পড়ে
পায়ের কোষ মরে রয়েছে, হাঁটে ঘন অন্ধকারে।
মৃত্যু—পোষা পাখির মত দেহে করে বাস—সাজ
হাসায়-কাঁদায়, দুমড়েমুছড়ে চোখ হয়েছে ভাজ।


সকাল, বিকেল, রাত্রি—মরে, ঝরে পড়ে চোখ_
অন্ধকারের মত; ঘুমের মত, মৃত্যুর মত।
মৃত্যুর যন্ত্রণা দেহের ভিতর, দেহ রয় ঘরে বাহিরে_
অন্ধকারে, চাঁদের কাছে, মাটির কাছে, ক্লেশ যত।


আমড়া গাছের মত পাতা ঝরা হয়ে আছে শরীরে
ধবল চুল, আধমরা চোখ শুকিয়ে আছে নীরবে।
এক মনে চাহে আহারে দীর্ঘশ্বাসে মন কেদে উঠে
ঠোঁট শুকিয়ে ধূসর মাঠ, মরে কাক রৌদ্র ফুটে।


চোখের সামনেই কয়েকটি আত্মা উড়ে গেছে
চোখ ঝরে পড়েছে, অন্য চোখের জল ঝরিতেছে।
মৃত্যুর যন্ত্রণা আগুনের মত, পাথর, আকাশের মত_
বৃষ্টির মত, আলো, পাতা, গাঢ অন্ধকারের মত।


ঘরে ঘরে দেহ ঘুমিয়ে রয়েছে, কত বিছানা হয় খালি
দেহের সাথে খেলা করে মৃত্যুর চোখে রয়েছে বালি।
যমদূত ঘুরে ঘুরে আসে সব ঘরে মৃত্যুরে করে সাথে
মানুষ দেহ যন্ত্রণা লয়ে মরে, ঝরে মৃত্যুর মালা গেঁথে।


হাসপাতালে মরনের সাথে রয়েছে অনেকে শুয়ে
অনেক দেহ পড়ে রয়েছে অবহেলা-তুচ্ছ জয়ে।
মৃত্যুর ভয়ে কাঁদিতেছে চোখ, অন্ধ ঝরে চোখে
চিতকার করিয়া কাঁদিতেছে অনেকে করুণ দুঃখে।



যে বনে আমি


সব চুপ বিষন্নতার আঁধারে, আমি ফুলে
নারিকেল বনে বাসা বেঁধেছি অন্ধকারে
রাতে এসে কেউ দেখে না বৈষম্য ভুলে,
জোনাকিরা আমায় খোঁজে;
যে রাতে চাঁদ উঠেনা নারিকেল বনে
অন্ধকারের  পেঁচা রয়েছে ব্যাকুল।
বাতাসে অন্ধকার ভেসে আসে আমার গায়ে
সুখেরা মরে ঝরে পড়েছে মৃত্তিকার তরে,
ঘাসে ঘাসে সুখ মিশে রয়েছে_
লাল পিপিলিকার পায়ে।


অন্ধকার আমার গা—ঘেষিয়া ভেসে যায়;
কাকের শরীরে হাসে সাদা ফুল।
চোখ মেলিয়া নারিকেল ফুল রাত জাগে
ঘ্রাণ বাতাসে উড়ায়-ঘুরায় অন্য বনে_
যে বনে সব মৃত, অন্ধকারে চোখ জাগে।
মৃত পেঁচার নিঃশ্বাস বাতাসে ঢেলে দিয়েছিল
এখন আর কেউ আসে না বনে
দেখে না চোখ মেলে, সব মৃত_নরম।


সব ঝরে পড়ে মৃত হয়ে


শালিকের পায়ে রংধনু বেঁধেছিল কাক ডাকা দুপুরে
রৌদ্র বাতাসে ভেসে আসে ঘাস ফুলের শরীরে
নরম চোখে রমণী চাহে মৃত শরীরে_বাঁশি বাজিয়ে,
মৃত হাঁসের পালক ঝরিয়া পড়ে আলোর মত।
গাঢ় সবুজ পাতা ঝরিতেছে দুলনটাকের নিঃশ্বাসে
একটুকরো গরম রক্ত চুষে নিয়েছিলো জোঁক_
কলমিলতার ঘন বনে; ফুল ঝরে পড়েছে ঘুমে,
আলোর বিছানাতে ক্লান্ত চিল থরথর বুকে।
পানিতে নেমেছিলো আলোর ধ্বনিতে ডাহুকী
মরে ভেসেছিল কোনো এক বিষন্ন ভোরে_সব ঘুমে,
ঝরিতেছে বাঁশ ফুল পুকুরে_রমণীর ভেজা শরীরে,
ঘাস ফড়িং প্রকৃতির সাজে ঝরিতেছে ঘামে।
পদ্ম ভাসিতেছে বুড়ো নদীতে নয়ন মেলে
গরম আলোর জ্বালা শরীর পুড়িয়ে দিয়েছে সেদিন_
যেদিন হাঁস সাঁতার কেটেছিলো নদীর হিয়া,
গান গাওয়া কুকিল মৃত প্রাণ নিয়ে ফিয়ে ঘরে।
ঝাউবনে বাউ সুর তুলে স্বর্ণ বীণা বাজায় আদরে
আলো আরেকবার জেগে উঠেছে শিউরে_
মৃত প্রাণের শরীরে; আলো ভেসে যায় ঘরে,
সব শরীর ঝরে পড়ে আলোর মত করে।


নিরুদ্দেশ


কেমন আছি, কোথায় আছি, কে নিলো খবর?
এই পৃথিবী আমায় হারাবে, অন্য পৃথিবীর সাদর,
মাকড়সার জালে আটকানো স্মৃতি
কে নিলো খবর, কে দিলো কবর।


সব জানালা খুলে দিলাম রঙ্গের উষ্ণতায়
আমার কপাল যার কপালে মেখেছিলাম
সে আমায় খোঁজে অন্ধকার কবরে।


তোমরা এক দিন খুজিবে আমায়
তোমাদের হাসিমুখের দিন গুলোতে
আমার হাসিমুখের মায়া তোমাদের চোখ কাঁদাবে
তোমরা চিৎকার করে কাঁদিবে আমায় ভেবে
আমার শেষ নির্বাসন নীরব কবরে।


খবর নিও কত ঘাস ফুল ফুটে আছে
আমার বক্ষছেদিয়া তোমাদের চোখে,
সাদা বক আর ঘুঘু পাখিরা বাসা বেঁধেছে,
আমার নির্বাসনে, সবুজ ঘাস মুড়িয়ে
সাদা,কালো,নীল,ধূসর আকাশ বুকে নিয়ে।


ভালো মানুষ রয়েছে ভবে


এই ভবে মানুষ কারে নিয়ে ভাবে
যে যার নিয়মে—নিয়ম গড়ে_ভাঙে
নদীর মত কুল ভাঙা গড়ার খেলা
কেউ মুখ ফিরায়, চাহে মন সাঙ্গে।


এখনও ভালো মানুষ আছে ভবে
চোখ মরে নাই কোনো মানুষের মনে
কত জন আসে, এই ভব ঘুরে
অন্য মানুষের তরে—ঘরে, সুখ গণে।


দুঃখের ঘরে যে রবে, সে সুখ মরে
সুখের ঘরে চাহিয়া রয়েছে কত জনে
আবার আসিবে সুখ অপেক্ষা ঝরে
কাহারা মিলেমিশে রয়েছে দুর্গম ক্ষণে।


এখনও ভালো মানুষ রয়েছে ভবে
অন্যের দুঃখে নিজেরে কাঁদায় বৃষ্টির মত
নিজের সুখ বিলিয়ে দেয় অন্যেরে
ভাগাভাগি করে ঈশ্বরের সুখ যত।


এই ভবে মৃত সুখের পিছে কে দৌড়ায়?
অন্ধকারে নিজেকে না দেখে ভয়_
চিৎকার নিয়ে অন্ধকারে কাঁদিবে কারা
সুখের মহে অন্য সব ভুলে যায়।


এখনও ভালো মানুষ রয়েছে ভবে
অন্যের দুঃখে আসিবে ছুটে সব ভুলে
দুঃখির কোলেতে সুখ বিলায়ে নয়ন
ভালো মানুষ কত জনে ফুলে ফুলে।



যন্ত্রনা আছে গিরে


কতটুকু শান্তি দিয়েছিলে আর দিবে
দুধঘাসের মত টিপে টিপে কতটুকু দিষাদ
বুকের ভিতর থেকে ঢেলে নিবে?
কৃষ্ণচূড়া ফুল এখনও ঝরেনি
আমার হাতের মেহেদীর মত।
নির্জন রাত আমার যাতনার চিত্র আঁকে
জানালা খুলে জোনাক পোকারা আমায় দেখে
আমি তখনও শুধু শিল্প চিত্র সবার কাছে।


তুমি আসবে না ভেবে সন্ধ্যামালতি এসেছিলো
এসেছিলো চাঁদ আর তারারা!
আমার হতে চেয়েছিলো শত শত ফুল
আমি মানিয়েনিতে পারিনি তাদের সঙ্গ
কারণ তুমি নেই বলে।
আমি বৃক্ষের মত নিরব বলে যন্ত্রনা বাসা বাঁধে
নর্দমার মাছির মত অসুখের ছায়া গিরে আছে
তুমি আসলে না বলে আমার ঘুম নেই
আমার আশা নেই, স্বপ্ন নেই, সুখ নেই।



আর্তনাদ কেউ শুনেনা


পুরনো স্মৃতি গুলো এখনও ভুলিনি
তোর চোখ, মুখ, বেবলা হাসি!
এক দিন দু'জনে চোখ বুজে এক সাথে হেঁটেছিলাম
সে দিন তো পথ ভুলিনি
এত বছর পর আমাকে ভুলে গেলি?
যে পথে ধুলো উড়েছিলো চরণ লেগে
সে পথে আজ কাঁটার বেড়া।


দু'চোখে ধুলো আর কষ্ট জমেছে
মুখে অসুখের ছায়া থাবা মেরে আছে
পঁচা ইঁদুরের মত গন্ধ ছড়ায়
সারা শরীরে রক্ত জমাট আর ঘা।
মন ক্ষতবিক্ষত কুষ্ট রোগীর মত
আমি খুব কষ্টে আছি নীড় হারা পাখির মত।


অসুখের বাজারে আমাকে বিক্রি করে
তুই কত দূরে____
মৃত্তিকা থেকে আকাশের দূরুত্বে?


বাতাসে গন্ধ আর শুঁকুন উড়ে
চার দিকে গন্ধ আর পঁচা গন্ধ
আমাকে পঁচা আর নষ্ট করে দেয়
দ্রুত আমার কাছে ছুটে আসে কষ্টরা
মিশে যায় সারা শরীরে মিসাইলের মত।


তোর চোখের মায়া নিম পাতার মত শুঁকনো
আর ঝরে পড়েছে, মরে গেছে ভালোবাসার ডাল।
তোর কথা সর্বক্ষণ দিয়ে যায় ব্যাথা
কোথায় তুই হারিয়ে গেলি আমার ভুলে কথা
হঠাৎ করে ভুলে গেলি
চলে গেলি কত দূরে? খুঁজেছি তোকে কত ঘরে
তোরই কথা মনে হলে দেহের ভিতর মন কাঁদে।



পৃথিবী গোল্লা


তোমরা বুঝিবে যে দিন সে দিন তোমরা আর
মানুষ রবে না হয়ে যাবে আত্মা;
সে দিন চিৎকার করে কাঁদিবে শুধু কাঁদিবে
বলার মত কোনো ভাষা থাকিবে না।
পৃথিবীর বুকে কামড়েছিলে আর রক্ত চুষেছিলে
আর মাংস খেয়েছিলে;
তোমরা সেদিনও মানুষ ছিলে না, ছিলে অমানুষ
আর অমানুষ ছিলে।
কত ফুল তোমাদের তপ্ত নিঃশ্বাসে ঝরেছিলো
কত পাতা তোমাদের দাঁতে চিবেছিলে
তোমরা শুধু তোমাদের কথা ভেবেছিলে
পৃথিবীর মায়ায় পড়ে;
আর নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলে
কত দিন বেঁচেছিলে, বাঁচিয়ে রাখতে পারলে?
আজ নিজেকে চিনতে খুব কষ্ট হয় বুঝি?
তোমার জিহ্বায় আগুন আর পুঁজ লাগিবে।


অন্যের হক আর অন্যের ঘাম চুষেছিলে
মনে করেছিলে মধু, মধুর মতই চুষেছিলে।



ভব সংসার


এই ভব সংসারে কত খেলা করিতেছে
সব খেলা শেষ হইবে নিঃশ্বাস না আসিলে
কি করে মন, কি চাহে, কিসের লাগি ঘর_
মাটির ঘরে দেহ, দেহ বাতাসে মন বসাইলে?


মনের ইশারায় দেহ ঘুরে, দেহ থাকে কোন ঘরে
ঘরখানা রয়েছে পড়ে, দেহ রয় মাটির তরে।
এই ভব সংসারে দেহ উড়াল পক্ষি নাচে
কেউ রঙ মঞ্চ, কেউ ধুলায় ঘর ছাড়া বাঁচে।


মাচা পাতিয়াছে বৃক্ষতলে তাল পাতার বিছানায়
দয়াল মনে মনে, কে খায় কে করে সাধনা
এই ভব সংসারে দেহ করিতেছে কত খেলা
সময় চলিতেছে মরণ করিবে নাকো মানা।


দেহ ঘরে কে করে বাসনা, কে করে খেলা?
কিসের লাগি জীবন—যৌবনা সাঙ্গ লীলা।
কে ছিলো কার, কে হবে কার, কে থাকবে কার
মিছে মায়া দু'দিনের খেলা এই ভব সংসার।



শূন্য ভবে


মানুষ ভাবে ভবে, ভাবতে ভাবতে যায় ঘরে
খায় ঘরে, মৃত্তিকাতে শুয়ে, চক্ষু পড়ে ঝরে
জায়গা নিয়ে ভাবে, টাকা নিয়ে ভাবে মরে
মরণ আসিবে জানে, ভাবে কত জনে ঘরে।


হাকাহাকি করে, চক্ষু লাল ভয়ে, হিংস্র ভাবে
মানুষ ভাবে মানুষেরে হাহা! কে কারে খাবে?
মানুষ মারে মানুষে সত্যি!কে কবে চলে যাবে
মানুষ ভাবে নিজেরে নিয়ে, অন্যেরে কু'ভাবে।


নিষিদ্ধ কাজে মানুষ, ভালো-খারাপ বুঝে না
যেখানে বাঁধা সেখানে পা-চলে রুদ্ধ খুঁজে না
গায়ে বড্ড জোর, তাহারে কেউ ক্ষ্যাপায় না
অর্থের বেড়াজালে মনুষ্যত্ব মরে, ফুল ঝরে না।



আমি যখন অসুখী


বাতাসে অসুস্থের গন্ধ উড়ে,
ঘুরে ঘুরে আমার নাকে আসে গায়ে মাখে
কালো কাক, চিল, কোকিলের ডানায়
অশান্তির থাপ্পড় লাগে আমার মুখে।
সুখে আমি আছি দেখেছিলে কারা
কাহার নজর লেগেছিলো আমার গায়ে
অসুস্থের বাতাস বিকট শব্দ করে আসে
ভাসে বাতাসে, আমার নিঃশ্বাসে—পায়ে।
ওষুধের পোটলা স্তুপ মায়া গন্ধ নাকে
সর্দি, জ্বর, ব্যাথা, অসুখের আলামত
শুধু আমাকেই গ্রাস করে বারে বার
হটাৎ হটাৎ লাল চোখে করে আঘাত।
আমি যখন অসুখী, তখন ভেবে নিও আমি অসুস্থ
তখন ভেবে নিও কাপছি অসুস্থতার আঘাতে
তখন ভেবে নিও ওষুধ আমার মুখে
জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে শরীর—কাতরাচ্ছি।


মা আমাকে নিয়ে সারা রাত বসে ছিলো
মাথায় পানি দিয়ে ছিলো, জড়িয়ে ধরে ছিলো
সারা পৃথিবী তখন ঘুমে_
আমি তখনও আধমরা, নিঃশ্বাস আটকে আটকে আসে
মা বসে আছে আমার পাশে, চোখে ঘুম নেই
ভোরের সূর্য আঁখি মেলিয়াছে—পাখিরাও
মা আমার জন্য নাস্তা বানাতে গেলো
আমি তখন একটু সুস্থ—সস্থির নিঃশ্বাস নিচ্ছি।



বাবার অসুস্থতা


বাবার চোখে জল ঝরিতেছে নীর বৃক্ষের মত_
নদীর মত, সাগর, বৃষ্টি, অন্ধকারের মত।
শান্তির ভেড়া ভাঙিয়া পড়েছে যন্ত্রণার কাঁধে
অশান্তিরা বাসা বেঁধেছে বাবার দেহের মাঝে।
দেহের ভিতর অসুখের জীবাণু আকাশ ভাঙিয়া পড়ে
নীরব আঁধারে, নরম সুরে, চিন্তা শুধু বাড়ে।
আলোর ছবিতে কালোর ছবি স্বপ্নের রুদ্ধ ঘরে
চার দেয়ালে আত্মার উল দেহ সংসারে।
বাবার মুখেতে অসুখের চাপ লেগেছে বৃষ্টির ছায়া
চোখের কোণে বৃষ্টির দাগ চুপি রক্ত মায়া।


আলোর ঘরেতে চোখ ঢেকেছে অন্ধকারের ভয়ে
বাবার হৃদয়ে ভয়ের আঁধার, আলো শুধু ক্ষয়ে।
দেহের ভিতরে জং ধরেছে ব্যাধির অন্ধ চোখে
ব্যাধি গুলো সব জড়ো হয়েছে ছায়া পড়েছে মুখে।


হে খোদা, হে দয়াময় আপনার কাছে প্রার্থনা মোর_
বাবার দেহে শান্তির আলো স্বর্গ আলো উঠুক সুখের।



প্রিয় কবি আল মাহমুদ


কবি এসেছিলেন কবিতা নিয়ে, এই বাংলায়_
গ্রাম্য রূপে, যুদ্ধা হয়ে, প্রেম নব প্রেম নিয়ে।
সরিষাবাড়ী, সবুজ বন, হলুদ পাখির গায়ে,  
ঘাস, পাখি, মাটি, ফুল, ভালোবাসা নিয়ে।
কবির চোখেছিলো মায়া, আদর, যত্ন, বিশ্বাস_
আশা, আকাঙ্ক্ষা, আনন্দ, সুখ, দীর্ঘশ্বাস।
কবি দেখেছিলেন স্বপ্ন, লিখেছিলেন কবিতা_
নদীর পাড়ে বসে এঁকেছিলেন প্রকৃতির ছবিটা।
পাখিরা উড়ে ছিলো মধ্য সাদা নীল আকাশে_
সবুজ রঙ মেখে কবির মনে নরম বাতাসে।
ঘাসে শুয়ে চোখে স্বপ্ন মেখেছিলো রংধনু_
বিকেলের হলুদ আলো নেমেছিলো বিস্তৃত জানু।
কবি—কবিতায় লিখেছিলেন ভোরের বাতাসে_
মৃত্যু আসুক শুক্র বারের শান্ত শুভ্র আবাসে।
কবি এই সোনার বাংলায়, মাটির তরে রবে শুয়ে_
মানুষের মনে সবুজ পাতায় পাতায় ক্লান্ত ধুয়ে।


কবি সোনালী কাবিনে লিখেছিলেন প্রকৃতি_
কানা মামুদের উড়ালকাব্য, ছড়া—কাব্য প্রবৃত্তি।
কবি নেমেছিলেন অন্ধকারে আলো নিয়ে সুখে_
দুঃখি মানবের আলোয় নরম ঘাস দিয়েছিল চোখে।
কবি মাটির ঘ্রাণ নিয়েছিলো নিঃশ্বাস গভীরে টেনে_
নদীর পাড়ে বসে একলা মনে পাখির গান শুনে।
কবি হেসেছিলো সূর্যের মুখে, সোনালী রৌদ্র গায়ে_
নয়নে নয়ন রেখেছিলো কৃষিকের রূপলী পায়ে।
কবি মৃত্যুর কোলে ঘুমিয়ে ছিলো কত দিন ধরে_
মৃত্যুর সাথে হেসেছিল ঘাস, ফুল, মেখে অন্তরে।
আজ কবি ঘুমিয়ে রয়েছে মাটির মধ্য কোলে
সারা গায়ে ঘাসের আবরণ পাখিরা কাঁদে দুলে।
কবি মায়া দিয়ে কাঁদিয়ে গেলো শত শত চোখে_
উড়াল দিলো পাখির ডানায়, রয়েছে সবার বুকে।



এ সব মিথ্যে


যাঁহারে নিয়ে মাথায় নাচে
     প্রচারে গাঢ় ঢল
সে সুধা কিসের বহরে
    নিয়ে সব দলবল।


কিসের লাগিয়া পিছে ছুটে
      হে সাধু জনগণ
কিসের তরে উপচাইয়া বুক
     হাঁকিয়া উঠে বল।


যার পিছে ছুটে জীবন গেলো
       কি দিলো শেষে
যাঁহার কথায় হাঁকিয়াছ তুমি
      রক্ত নিয়েছ চুষে।


তোমারই বলে উচ্চ তাহারে
     গড়িয়াছ ধনসম্পদ
অন্যের ধনে লোভী সেজে
    রঙমঞ্চে সাধন মদ।


কাহার ধনসম্পদ চুষিয়া নিলে
    কাহারে করিলে ভিখারী
তাঁহারও অভিশাপ মাখিলে গায়ে
    তোমার রক্তে পাপ ভারী।


কিসের নেশায় উঠাইয়াছ আঁখি
     নিজেরে করিয়া লোভী
কাহার কথায় বংশী বাজালে
     মিথ্যেরে করিয়া চাবি।


যে আঁখি মিথ্যে হাঁকিয়াছ অন্যায়
        মিথ্যে সুখের লাগি
সে আঁখি নিবিয়া যাবে চুপিসারে
       পাপের ভোজা জাগি।



কোনো এক দিন


কোনো এক দিন ঘুমিয়ে যাবো
       নীরব করুণ সুরে
সে দিন আর উঠিবো না জেগে
      হাসিব না মুখ ভরে।


শত ডাকার পরেও আমার
     ফুটবে না মুখে কথা
আত্মা আমার তোমাদের তরে
    স্মৃতি গুলো রবে গাঁথা।


আমার চোখে তাকানো যাবেনা
      দুঃখরা বাঁধিবে বাসা
  ভালোবাসার মানুষের চোখে
      জলেরা করিবে চাষা।


কেউ কেউ কাঁদিবে চিৎকারে
      আমার বুক জড়িয়ে
কেউ কেউ আসিবেনা দেখিতে
      আমায় দিবেনা ছুঁয়ে।


আমার কথা মনে রাখিবে না
      দূরের কোনো গাঁয়ে
সে দিন আমি ঘুমিয়ে রবো
     সাদা কাপড় জড়িয়ে।


আপন মানুষ নিজ হাতে মোরে
         দেহ দিবে ধুয়ে
কাঁধে করে নিয়ে যাবে কবরে
        রাখিবে যত্নে শুয়ে।


কোনো এক দিন ভুলে যাবে সবাই
        আমার সকল স্মৃতি
   আমার কথা বলিবে না আর
       বাসন্তীর গাওয়া গীতি।



অসুস্থ মন


ধরণীর মত আমিও নশ্বর, ব্যবধান বয়সের
কষ্টের অণু জমতে জমতে
মারাত্মক ভাবে মন অসুস্থ_
এক চোখে দুস্থ।
যান্ত্রিক দেহে বায়োস্কোপের দৃশ্য,
ঘুরে ঘুরে কষ্টের অণুরা বাসা বাঁধে
অনুরাগে বহু রঙের দৃশ্য।
চার দিকে অস্বস্তির কামড়াকামড়ি,
দুর্ভিক্ষের বংশী বাজাতে বাজাতে দেবতা
আমার ঘরে কড়ানাড়ে চব্বিশ বছর ধরে।
আমার করুণ সময়ে সবাই বৈষম্য দেখায়
সুখের আড় চোখে—
অসুস্থ মন রয়েছে পড়ে বিমর্ষের মুখে।


উনিশ শতকের শেষের দিকে জন্ম, মাত্র চব্বিশ,
দেহের সাথে মনের পার্থক্য মুদ্রার এপিট ওপিট
রাত্রি–দিনের বিভাজ্যে আমার বয়স
পৃথিবীর মত পঞ্চাশ বছর বেড়ে আছে।
চোখে মুখে বার্ধক্যের হাতুড়ির চাপ
মনের রস শুকিয়ে শুকনো পদ্মের মত অবহেলিত;
নয়নে নয়ন রাখে অনুরাধা_
কষ্টের অণুরা জমাট বেঁধে আজ মন খুব অসুস্থ।



ক্যান্সারের সাথে বসবাস


ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধ করা নব্যা আলো মেয়ে
সামনে তাঁহার পুরোটি জীবন যাচ্ছে শুধু ধেয়ে।
কোলে তাঁহার অপত্য কাঁদে, মায়ের কষ্ট দেখে
ছোট্ট ছেলে শুধু কাঁদে, জল ভরা জল চোখে।
রক্তে তাঁহার মিশে আছে, ক্যান্সারেরই অণু
বাঁচতে বড় ইচ্ছে তাঁহার, ছেলেরে মেখে রংধনু।


ক্যান্সারের অণু বিষাক্ত লয়ে যুদ্ধ করে যায়
পূর্ণিমাতে মেঘ জমেছে, ধূসর চাদর গায়।
হাসির মাঝে লুকিয়ে আছে, অদৃশ্য চিৎকার
শুনেনা কেউ আর্তনাদ, ছিছি-জানাই ধিক্কার।
আশেপাশে কত মানুষ, বাতাসে টাকা উড়ায়
পাশের ঘরে মৃত্যু শয্যায়, দেখার বড় দায়।


আজ আকাশে ধূসর মেঘ, বৃষ্টি নামে চোখে
সাদা মেঘেরা উড়ে দূরে হিমালয়ের মুখে।
কার ঘরেতে, কার তরেতে, মানবতা আছে
মানবতা আসছে না কেন পূরনিমারি কাছে?
আলো-আঁধারির ধাঁধাঁ খেলা, বিয়োগ গুণে যায়
কখন কে কালো মেঘ-সাদা মেঘে দৌড়ায়।


ক্যান্সারের সাথে বসত নিলে, নব্যা কোমল মেয়ে
বাঁচতে শুধু ইচ্ছে তাঁহার ছেলের মুখ চেয়ে।



পুরনো আয়নায়


মাটির সাথে মিশে যাবো এ মিশার শেষ হবে না।  
দেখা হবে না আর দেখা হবে না।
কথা হবে না আর কথা হবে না।
দেওয়া নেওয়ার বিশ্বাস আর রবে না।


যে ঘরে ঘুমিয়ে রবো সে ঘরে কেউ রবে না।
কেউ আর খবর নিবে না, খবর দিবে না।
মায়ার ঘরে আসিবে ফিরে অন্য জনে।
সে জনে হাসিবে-ভাবিবে নতুন দিনে।


পুরনো দিনের খবর নাহি আর, পুরনো আয়নায়।
মুখ ফিরে দেখেনা পিছু, কিছু অজানা।
যে ঘরে জমানো স্মৃতি ধুলো মাখানো।
সে ঘর আজ ধুয়েমুছে রয়েছে সাজানো।


দেহ নেই বলে আত্নার খবর রয়েছে অজানা।
আমি রয়েছি ধূলোজিমা পুরনো আয়না।
দেখা হবে না আর কথা হবে না।
মাটির ঘরে রয়েছে আমার দেহ খানা।



ছবির ভিতরের রং


ভুলে যেতে যেতে কাছের রং গুলোও-
মন থেকে মুছে যাচ্ছে,-
কাছের মানুষ বহু রূপী সাজের রঙ মাখে!  
দূরের মানুষও খুব কাছে আসে-মিশে।
গোপনে, আড়ালে গিবত গায়;
প্রশংসায় বহু উপরে তুলে,
মিছে-মিছে স্বপ্ন দেখায়-খেয়ালে
ব্যাখেয়ালে কাঁদায়-নীরবে।
আঙ্গুলের ঈশারায় কত কী প্রকাশ?
হায় হায় মনে কথা, অবুজ সরমায়,
বিরহের কথা বলে চোখ, বর্ষার দিনে।
কার সাথে গিয়ে গোপনে ঘর বাঁধে
কু-কথার আলোচনা, মাতামাতি
নির্দোষের কলঙ্ক, সর্বনাশী,- রাতারাতি।
রোকসানার ঘরে আঁধার, আলোর নিষেধ,
ঘরের ভিতরে ঘর, কোন সে ঘর-বিপদ।
লুকোচুরি লিলা, পাহারায় সাদর,
রুশির ঘরে আলো তাতেও ধূসর।
মানুষ মানুষ কে সে মানুষ?
বিপদে যার ডাক, উড়ে যায় ফানুশ?
আমার চোখ নিচু, উচ্ছ আঁখি সমাজবাদী
তোরা-আমায় করিস অপরাধী?  
নির্দোষের হয় ফাঁসি,  
তোরা সমাজের উচ্চ বাসি।
রঙের ভিতরে রঙ-এলোমেলো
মানুষের ভিতরে মানুষ, উড়ে যায় ফানুস,
মনুষ্যত্ব, মানবতা, আলো-কালো_
কে সে ভালো, কে শ্রেস্ট মানুষ?


ঘুম-নির্ঘুম, স্বপ্ন স্বরনে রাত
আঁধারে ভয়, আলোর ক্ষয়,  
ছবির ভিতরে রঙ-এলোমেলো,
আমিও ছবি তুমি মানুষের মত।
রঙের মত মানুষের মন, মানুষ যত
রঙ বদলে-বদলে অমানুষ মানুষের মত।
বাহিরে খোঁজ, ভিতরে অমত।।
বিবেকও জানে ভয়-অভয়,
মিছে সত্যের ছয়-নয়।
সাপের খোলস বদলালেও
রূপের ভিন্নতা হয় না-
সাপ-সাপই থাকে, বিষদর।
নজরে-নজর খারাপের উপর
ভালো সামাজিক ধূসর।
কথায়-কথায় মানবতা নেই!
মানবতা নেই মনুষ্যত্ব পুড়ে ছাই।
কানের কাছে ফিসফিস
চোখে রাগ, সত্য বলিস?
মিত্যে কথার হাসি, সত্যের কালি,
অপরাধী হয় বন্ধু, সত্যের হয় বলি।
সমাজ আমার, আমি অপরাধী
আমি দোষী, সমাজবিরোধী।


মানুষের ভিতরে মানুষের বাস
মানুষের বাহিরে বহু রঙের চাষ।
মানুষ ও অমানুষ মুখোশের আড়ালে
কার দাঁতে বিষ, চোখে রক্ত গলে।
হাসিতে ভয়, নরম স্বর কঠিন
কান্নাতে জল ক্ষয়-ভীষণ।
লাভ-ক্ষতি, নীরবের মরণ
হেসে-হেসে অলক্ষ্মীর বরণ।
চঞ্চল-উদাসীন, বিস্ময় স্বরন
অলস, মূর্খের কালির আবরণ।
ধর্ষণ-দর্শন চোখ মেলে বর্ষণ
পাতায় লেখালেখি খুনে মরণ।
হাত পেতে ভিক্ষা, কয়েক পয়সা
আকাশে দালান কি তোমার পেশা।
তুমি-আমি ওরাও মানুষ,
গরিব যারা বড়লোকও উড়ায় ফানুস।
দেয়ালে ঝুলানো ছবি কবে কার
দেয়াল ক্ষয়ে-ক্ষয়ে নিস্তেজ কবর।
মাটি ও মানুষ, মাটির কবর
মাটিতে বাস, মাটির আসর।
মাটিতে পাটি, কবর খাঁটি
পূর্ণ রাখো সাথে আঁটি-আঁটি।


চলে যাবো


কাক ডাকা কোন এক সকালে শুনিবে
আমার ঘরের পাশের বরই গাছে
চড়াই পাখিরা আর নেই।
আগর বাতির ধোঁয়া সারা ঘর জুড়ে
আতরের সুগন্ধ নাকে এসে লাগবে
নিরবে সবার চিৎকার, আমি নিরব বলে।


বিকেলের ছাদ আর ডাকবে না
ফুল গাছে পানি দে বলে,
দূরের উড়ন্ত পাখিরা আর আসবে না,
ফেলে রাখা মুড়ি–চানাচুর খাবে বলে।
আমার মৃত্যুর গন্ধ আজ আকাশে–বাতাসে
মৃত্তিকার ভিতরে ছড়িয়ে পড়েছে,
জানাজানি হয়ে গেছে অন্য জগত বাসে।


৩নং ব্রিজে আমার আর দেখা মিলবে না
তবে আমি দেখবো তোদের,
তোদের আনন্দ ভাগ করে নিতে আমি যাব,
অদৃশ্য হয়ে।
না দেখতে দেখতে ভুলে যাসনি আমায়,
আমার অস্তিত্ব,শারীরিক গঠন।


মনে মাঝে কত স্বপ্ন, কত ভালোবাসা  
আঁকা ছিলো চোখের মাঝে বুঝা না বুঝা ভাষা।  


কারো কাছে মনের নিলাম উঠেছে সস্তা দামে
কারো কাছে কিসের মন অবহেলার তরে,
কারো কাছে দিয়ে ছিলাম জমা ‘মন’ সাদা খামে,  
কারো কাছে ‘অভিশাপ’ পেয়েছিলাম মন ভরে,  
কারো কাছে পেয়েছিলাম দোয়া,স্বর্গ সমান দামে।
কারো কাছে ভালোবাসা মূল্য নাহি মোরে
কারো কাছে জীবন নিয়ে কত খেলা, বেলা–
অবেলা, কাঁদে, হাসে, ভুলে, ডুবে, ভাবে, মরে।


কলিংবেল আর বাজবে নাকো আমার হাতে
কেউ আর বিরক্ত হবে নাকো আমার ডাকে।
ভাতের প্লেট নিয়ে কেউ আর জেগে থাকবে নাকো
সারা রাত জেগে।
মাগো তোমাকে আর কষ্ট করতে হবে নাকো-খোজেঁ
শুধু দোয়া করো তোমার খোকার লাগি,
নামাজ পড়ে, মোনাজাতে দিয়ে।



মানুষ ও মৃত্যু


সব দেশে ঘুরার আমার সাধ্য নাহি হায়
নিজ ভূমিতে চরণ ঢেলে হেঁটেছি বহু পায়,
বহু লোকের বহু কথা, বহু উপদেশ দেয়,
মনুষ্য লোকের মনুষ্যত্ব বিলুপ্তি হয়ে যায়,
মানুষ নামের, মাটির মানুষ একই নাহি হয়,
লোভ, হিংসা, মনুষ্যত্ব, সত্য-মিথ্যা কয়।


এক ঘরেতে বাজনা বাজে, বিলাস রঙ্গ-মঞ্চে
অন্য ঘরে কান্নার সুর, লাশের সামনে বসে,
কারো কবর ইট-সিমেন্টে বাঁধবে পুকুরের পাড়ে
কারো লাশের খবর নাহি, শুঁকুনের চোখ হাসে,
মানুষ সত্য মাটির মানুষ, লাশ হবে কবর বাসে,
পরকালের জন্য জমা আছে কি নেক, নাকি পাপ সঞ্চে?


কার ঘরে কে বসত করে, জল পড়া ঘরে স্বপ্ন বাঁধে
কারো স্বপ্ন আকাশ ছোয়, কারো স্বপ্ন নির্ঘুমে কাঁদে,
ঘর হারা মন পথে-পথে, মাটির ঘরে আকাশ ছাদে,
তাঁরা কারা!টাকার ঘোড়ায় ছুটছে দূরে,বিশ্ব লয়ে কাধে?
তাঁরা কি মানুষ নহে? ঘর ছাড়া মন সাম্য বাঁধে,
মানুষ সত্য মাটির মানুষ, মৃত্যুর স্বাদ সর্ব স্বাদে।



মানুষ সবাই লাশ


এক, দুই, তিন, কত লাশ
লাশের স্তুপে আমিও লাশ
সবাই এক দিন হবে লাশ
কেউ চেনা লাশ কেউ অচেনা
কেউ বেওয়ারিশ লাশ, অজানা
ক্ষত লাশ, রক্তাক্ত লাশ
লাশের স্তুপে লাশ,কত লাশ
সবাই এক দিন হবে লাশ
মানুষ সবাই অচেনা লাশ।
লাশে চেনে না অন্য লাশ
লাশে করে টাকার চাষ।  


মাটিতে রুদ্ধ লাশ, বাতাসে গন্ধ
লাশে লাশ লাশের চোখে অন্ধ।
লাশ হাঁটে, লাশ উড়ে আকাশে
লাশ ভিক্ষা করে, রঙ বাতাসে।
মাটির ঘরে লাশ, মাটির লাশ
মানুষ লাশ, মাটির দেহ লাশ।
মানুষ সবাই লাশ, লাশের রঙ_
কত বৈচিত্র্য, লাশে করে ঢং।
লাশের আফসোস, লাশের কষ্ট
লাশের আনন্দ, লাশ পথ ভ্রষ্ট।