জীবন চক্র
এস.কে.হিমেল


আয় দাদু ভাই, আয় এদিক আয়, জীবনের গল্প শুনায়,
চলার পথে পথে,এ জীবন পদে,পদে শুধু রঙ্গ বদলায়।
বসুধার বুকে জন্ম আমার, মা বাবার ভালোবাসায়,
গভীর নিশিতে,পূর্ণিমার শশীতে,চেয়েছিলো আমায়।
দশ মাস পর প্রসব বেদনায়,তীব্র ছটফট করলে মা,
ক্ষুধার্ত হয়ে,চিৎকার দিয়ে, আমার, পৃথ্বীতে রাখা পা।
আঁখিপাতা মোর,উম্মুক্ত হলো, মায়ের মুখ খানি দেখে,
দেখি অতি আদরে,ঢেকে চাদরে, মা রেখেছে  বুকে,
দুগ্ধপানে মুগ্ধতা আসে,থেমে যায় ক্ষুর্ধাত চিৎকার
চুমোতে চুমোতে ভরে যায়, সেকি ছোট্ট তনু আমার।
এক কোল থেকে,অনেক কোলে,হলেও আমার ঠাই,
ক্ষুর্ধাত হলে, মায়ের কোলে,আমি প্রাণ ভরে অন্ন পাই।
বাবা আমার অতি আদরে,নিতো যখন কোলে তুলে,
কোল খানি তার ভীজে দিতাম, নাকি প্রসাবের জলে।
কত যে নিশি, থেকেছে বসি বসি,মা মোরে কোলে নিয়ে,
ভিজা জায়গায়, শুয়েছে  মায়, আমারে শুকনো দিয়ে।
বোন আমার,থাকতো সারাক্ষণ, আমার পাশে বসে,
হরহামেশায় করতো বারণ, নিতে চাইলে কেউ এসে।
ভাই যে আমারে, যত্ন করে, রত্ন ভেবে ভেবে রাখতো,
প্রতিক্ষণ আশেপাশে  থেকে বাবু,বাবু বলে ডাকতো।
শিশু থেকে শৈশবকাল যখন হলো মোর সঙ্গিন
জীবন যেন স্বপ্ন ময়, হয়ে গেলো সব রঙ্গিন।
হৈহোল্লা করে করে,ঘুরতাম পাড়া মহল্লা আমি নিত্য,
কত দৌড়াদৌড়ি, খেলায় মাতিয়া মন থাকতো সিক্ত।
কৈশোরে আসলে  আমার আমিকে একটু একটু বুঝি
নিজের মাঝে নতুন কিছু, কিছু, পায় সদা যেন খোঁজি।
দুরন্তপনা মন খানি মোর, হতে শুরু করে যেন শান্ত,
আকাশে উড়িয়ে রঙ্গিন ঘুড়ি  ভেবে ভেবে হয় ক্লান্ত।
কৈশোর পেরিয়ে যৌবন আমার, দিলে জীবনে উকি
ভালোবাসার,কাছে আসার টানে,প্রিয়ার ছবি আঁকি,
ছবি যখন বাস্তব হয়ে, আদর, সোহাগ, নিয়ে আসে
সারাক্ষণ, চাইতো মন, প্রেয়সী থাকে যেন পাশে বসে।
ভালোবাসার দর্পন হয়ে, এলো তোর বাবা খোকা,
পিতা হয়ে পুত্রের মুখ দেখা, যেন স্বপিল ছবি আঁকা।
পুত্র কোলে নিয়ে,কত স্বপ্ন আসতে থাকে নয়নে নেমে।
চাওয়া পাওয়া, আদর শাসন,মনে উঠে তখন জমে।
ছেলে আমার যুবক যখন, প্রেমে মজেছে তার মন,
জীবন চলে জীবনের গতিতে কি বলবো আর তখন।
আমার ছেলেও আজ ছেলের বাবা,সেই রত্ন যে তুই
আবার এসেছি সে শিশু বয়সে আশি ছোঁয় ছোঁয়।
শিশুর মত হাটতে পারি না,হামাগুড়ি দেওয়া লাগে,
প্রকৃতির ডাকে, বড় অসহায়,তাতো বুঝিনি আগে
জীবন যেন গোলক ধাঁধাঁ, প্রারম্ভ,আর সমাপ্তিতে মিল,
ভালোবাসা হয় ঘৃণায় পরিণত,কেন যে এমন নিখিল।
অচিন থেকে এসে, অচিন জগতে যায় আবার চলে,
মিছামিছি  মায়ায়, জড়ায়ে সবাই, যায় পৃথ্বী  ফেলে।
জীবনের মানে বুঝে যেজন, করেনা জীবনের মায়া,
লক্ষ জীবন বাচাঁতে চাই, সে তার নিজের জীবন দিয়া।
মাটির দেহ খানি মাটিতে যায়, অবশেষে সবার মিশে
সার্থক শুধু তাদের জীবন, যারা জগত কে দেয় দিশে।
খোকা তুই কাঁদিস কেন? দে এনে ভাই এক গ্লাস জল!
বৃদ্ধা শ্রমে ধোকে ধোকে, বাকি দেহ খানি হওক বিকল।
বাছা তোর,বাবাকে আসার জন্য করবি না কিন্তু বাধ্য,
তাহলে বৃদ্ধবেশে জীবন চক্রে হবি প্রমাণিত উপপাদ্য।