একটা ঝাঁকুনি দিয়ে ট্রেনটি থামে।
পড়তে পড়তে নিজেকে সামলে নিই।
আশে পাশে এতো লোকজন,
কেউই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় না।
কেন দেবে অপরিচিতের প্রতি!


বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে এতোটা পথ এসেছি।
রিসেপশানের তরুনীটি তুচ্ছ একটা অযুহাতে আমার দরখাস্তটি প্রত্যাখ্যান করে। স্মিত হেসে বলে: সরি মাই লাভ। এই 'লাভ' শব্দটি আমাকে একবিন্দুও স্পর্শ করে না। এতে কোন মানবিক আবেদন নেই।
আমাদের চারিদিকের পরিবর্তন, ক্রমবর্ধমান সভ্যতা কেমন যেন মানবিক আবেদনহীন!
সকল আন্তরিকতা যেন শব্দে
সীমাবদ্ধ, অন্তরে নয়!


অফিসের সু জোড়া খুলে ট্রেইনার পরছে
একজন মধ্যবয়সী নারী। হয়তো ট্রেন থেকে নেমে অনেকদূর হাটতে হবে ঘরে ফেরার জন্য! তার ব্যস্ত সন্ত্রস্ত হাত থেকে মোবাইলটি পড়ে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। কুড়িয়ে নিয়ে উঠতে উঠতে ট্রেন ছেড়ে দেয়। একটি ঘটনা কিভাবে গন্তব্য বদলে দেয়; সময়ের,কখনো কখনো পুরো জীবনের!


ঠান্ডায় পুরো দেশ জমে যাচ্ছে। আ্যপল ট্রি
ইয়ার্ডের একটি কফি শপে ঢুকে পড়ি খানিকটা উষ্ণতার জন্য। আমার অসাবধান ধাক্কা লেগে ওয়েট্রেস'র হাত থেকে কফি পড়ে তার গা ভরে যায়। কিংকর্তব্যবিমূঢ় আমি বলি:
সরি মাই লাভ।
আমি অবাক হয়ে যাই- সকালের এ বাক্যটি কিভাবে আমার চরিত্রে ঢুকে পড়েছে এতো অল্প সময়ের মধ্যে!
ওয়েট্রেস প্রত্যুত্তরে আমাকে বলে: ইটস্ অলরাইট!
তার মুখে একটুও হাসি থাকে না।


পেয়ালাভর্তি সমগ্র কফি জুড়ে থাকে
আমার অখন্ড অস্বস্তি।


আ্যপল ট্রি ইয়ার্ডের কর্মচঞ্চল পথ ধরে
বৃষ্টি কেটে কেটে মানুষ ছুটছে গন্তব্যের প্রতি।


বিনানোটিশের এই বৃষ্টি নাগরিক জীবনকে থামাতে পারে না; কারন মানুষ স্বভাবতই জীবনমুখী।


টবে ঝুলে থাকা বৃষ্টিতে ধোয়া ফুলগুলোকে কী
অপূর্ব লাগছে!


(কবিতাটির দুটি পংক্তিতে শব্দ সম্পাদনা করেছেন প্রিয়বন্ধু, লন্ডন প্রবাসী কবি ডরিনা লাইজু)


লন্ডন
৭ মার্চ ২০১৮