যমুনার হাতের মুঠোই চাঁদের আলো ঝকঝকে শাদা,
চারিদিকে অন্ধকার।  পাশের উঠনে ধান মোড়াই হচ্ছে,
সারি সারি গরুর দল বৃত্তাকারে ঘুরছে বৃত্তের মাঝে
সদানন্দ  মাথায়  পাগড়ী বেঁধে গরু তাড়াচ্ছে  
এই  গরু  হাঁট হাঁট । এই গরু হাঁট হাঁট ।    


ওরা  নির্বোধ , ওরা দাসের দাস। তাই তো ওরা গভীর
রাত্রেও   ঘুরে  চলেছে  ধান মাড়ায়ের মেশিনের মতো।
নির্জীব  রাত্রিতে সদানন্দের "হাঁট হাঁট" শব্দ ছাড়া,  
আর কারো  যেন  কোনো  সাড়া শব্দ নেই।  


শুধু শুকনো  খড়ের উপরে অর্ধ ঘুমে  পাঁচ বছরের কন্যা যমুনা ছাড়া ।
যমুনার মা চলে গেছে  তিন বছর আগে এমন দিনে,
সব ছেড়ে অন্যের মনে প্রেম মিশিয়ে  স্বার্থপরের মতো ।  


দৈনন্দিন অভাবের তাড়না বড়ই কঠিন, সদানন্দের ক্ষেতের  ফসল নেই,
ঘরে  চাউল নেই । ভালো খানাপিনা নেই।  ভালো পোশাক নেই।
অভাবের টানাটানি ।  এখানেই  তার সহধর্মিণীর কাছে  তার  দুর্বলতা ।
সেই যে চলে গেছে কোনো এক আঁধার রাতে আর ফিরে  আসেনি।  


এখন সদানন্দের পুরো আশার  দুনিয়া কন্যা যমুনা ।
তাকেই ঘিরে তার সব আশা ভরসার আধার।
মেয়েটি  ঘুম চোখে বাবার কাছে এসে বললো,
"বাবা দেখ, আমার হাতে  এক চাঁদ আলো।
এই আলোয় মা আর আমায়  ছেড়ে আঁধারে পালাতে পারবে না।
আমি  আঁচল ধরে রাখবো। "  


সদানন্দ তখন খড়ের উপরে  দাঁড়িয়ে বিহ্বল ।
ততক্ষণে জোনাকিরা যমুনার হাত থেকে  উড়ে যাচ্ছে
আঁধারের বুকে আলো ছড়িয়ে।      


রচনাকাল
১০। ০৭।২০১৭
আবুধাবী