চাকুরি'টা এবার বোধহয় হয়ে যাবে
লিখিত পরীক্ষা টা অসম্ভব  ভালো হয়েছে-
মৌখিক প্রশ্নে বড়বাবুর বেশ উজ্জ্বল মুখ দেখে অনেক সাহস পেলাম,
ভাবতে ব্ড্ড ভালো লাগছে,
প্রতিদিন চাকরি'র পিছু ইঁদুর দৌড়ানো আর মোটেই ভালো লাগছে না।
অনেক দিন  হলো মা-কে একটা  ভালো শাড়ি কিনে দিতে পারনি,
ছোট বোন'টা লাজে সামনে আসতে পারছে না ।
শত তালি'র মাঝে ও ছেঁড়া শেলোয়াড় কামিজটি যেন অসহায়,
বাইরে বের হওয়া তে বেশ ইতস্থতবোধ করছে।
মা-কে দেখেছি কতদিন এক  কাপড়ে স্নান করে রোদে শুকিয়ে ঘরে ফিরেছে,
ছোট ভাই টি ক্ষুধার জ্বালায় কেঁদে যাচ্ছে ধুলায় গড়িয়ে,
গড়াতে গড়াতে যখন সে ক্লান্ত হয়ে পড়ে ঘুমের ঘোরে
তখন যেন সে সামান্য শান্তি টা খুঁজে পেলো।
বাবা চলে গেছেন কিছুদিন আগে না ফেরা'র দেশে,
ঠিকমত বাবা'র পেনশন গুলো ও উঠাতে পারেনি ,
অফিসের টেবিলে চা-নাস্তার বিল টা রাখতে পারেনি  বলে।
এ নিয়ে মা প্রতিদিন আসা যাওয়া'তে আছেন অফিসের দ্বারে,
নানা'ন রকম তালবাহানা করে ছয় টি বছর কাটিয়ে দিলো তাঁরা,
আজ মা যেন বড্ড ক্লান্ত!!
রাতে ধার করা চাউলে পেট'টা মোটামোটি ভরলে চিন্তা আগামীকাল কি হবে?
তুমি ভেবো না মা এইবার আমার চাকুরি'টা হয়ে যাবে-
ভালো বেতন দিবে বলেছেন,
তোমাকে একটা ভালো ডাক্তার দেখাবো,চোখের চশমা টা বদলে দিতে হবে,
আড়ালে কেঁদে কেঁদে চোখের সে কি হাল করে রেখেছো !!
পিংকি'র জন্য বেশ ভালো থেকে কয়েক'টা জামা এবং তোমার জন্য শাড়ি
দেখো মা তখন আর আমাদের কোন দুঃখ থাকবে না ।
আচ্ছা মা রিংকি'র জামাই কি এখনো ও তার সাথে খারাপ আচরণ করে?
তার পাওনা যৌতুক গুলো দিতে পারিনি বলে ?
ভেবো না কাল চাকুরি টা হয়ে গেলে ,মাস শেষে তার সব কিছু চুকিয়ে দিবো।
অপেক্ষার প্রহর যেন পেরোতে চায় না-প্রভাতে রবি'র আলোয় বের হলাম
অফিসে'র বড় বাবু আমায় দেখে ঈষৎ হাসলেন
আমি কুতূহলী হয়ে চেয়ে রইলাম,মনে সেকি টান টান উত্তেজনা !
কিন্তু বড়বাবুর এক কথায় আমি যেন 'থ' বনে গেলাম ,
লাখ টাকা বখশিস এর আবেদনে!!
ঘরে রান্না'র হাড়ি জ্বলছে না ঠিকমত ক'রে সেখানে 'লাখ টাকা'!!
সাজানো স্বপ্ন গুলো বুঝি ঐ টাকার নোটে বন্দি হয়ে গেলো?
যখন দেখলাম অন্য একজন এসে টাকায় কিনে নিয়ে গেলো
চাকুরি নামক সোনার হরিণ টাকার কাঁধে  তুলে দিয়ে ।


রচনাকাল
১১।০৭।২০১৪
ইউ এ ই ।