প্রিয়তমা রুশি,
    এই চিঠি যখন তোমার হাতে পৌঁছাবে ,তখন হয়তো তুমি রান্নার ঘরে ভেজা হাতখানি আঁচল দিয়ে মুছে ছুটে যাবে একান্ত নীরবে।যেথায় তোমার শোবার ঘর। হয়তো চমকে উঠবে তুমি এই যুগে চিঠি!!তবু ও কৌতুহল তো থাকতে পারে কার চিঠি? কে কি লিখেছেন? কার বা এত সাধ করে এই যুগে চিঠি লিখবার বাসনা জেগেছে মনে।


     আচমকা যখন ঐ আকাশে ঝড় উঠে যাবে,তখন তোমার জামকালো চুল গুলো মায়ার আঁধারে আলোর মত উড়ে বেড়াবে তোমার ঐ মায়াময়ী দু'টি আঁখির পাড়ে।বাম হাত দিয়ে সরিয়ে চুল গুলো টানা টানা চোখ ফেলবে সমুদ্রের নাবিকের মত বিশাল গাঙ্গে অন্ধকারে বিজড়িত পথে গভীর জলরাশির দিকে।কি চমকে উঠেছ!!হাসছো!!হেসো না গো ।আজ কেন জানি তোমায় লিখতে ইচ্ছা করছে। আজকাল তো চিঠি লেখা একদম ভুলে গেছি।প্রবাসের এই ব্যস্তময় দুনিয়া,অসহ্য গরমে চরম পরিস্থিতি।উজ্জ্বল কাননে পরিশ্রমের লোনা জল যেন উত্তাল সাগরের গভীর তলদেশ থেকে উঠে এসেছে,আর বেয়ে বেয়ে পড়ছে মাথা থেকে পা অব্দি।এরি মাঝে যখন তোমার কথা ভাবি,আমার কচি ফুল টা'র কথা ভাবি তখন মনে হয় যেন সমস্থ লোনা জল মিঠা জল হয়ে স্নান করছি। ও হ্যাঁ স্নানের কথা বলতেই মনে পড়ে গেলো -আচ্ছা তুমি কি এখনো বরষার জলে ভিজো ? তোমার সেই ছোট বেলার অভ্যেসটা।মুষলধারে বরষ মাঝে যখন তুমি পুকুরে নেমে নিচের জল গুলোর গরম ভাব টা আহরণ করতে,এখন কি আর ভিজো? শেষ যে দিন তোমার সাথে আমি ও ভিজেছিলাম তোমার সাথে পুকুরে নেমে !!


       আজ আমার আকাশে চাঁদনী রাত,একা বসে আছি আর তোমাকে লিখছি। চারিদিকে শত গাড়ির ব্যস্ততা ছুটে চলছে সবায় আপন গন্তব্যে।কেউ হয় তো বাসায় গিয়ে আপন পরিবার পরিজনের সাথে কথা মিলেমিশে একাকার হয়ে যাবে।হয়তোবা সারা দিনের ক্লান্তি শেষে নীড়ে ফিরে আবার বেড়িয়ে পড়বে জগিং করতে।আচ্ছা তোমার কি মনে আছে আমরা শেষ যে দিন কুয়াশাভোরে জগিং করতে গিয়েছিলাম ।তুমি খোলা মাঠে চড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকা খেঁশারি ডাল গাছের সাথে মোড়িয়ে গিয়ে পরে গিয়ে ছিলে ? তোমার সেকি কান্না! অবুঝ শিশুর মত! আমি তোমাকে কোলে তুলে বহন করে আনতে হলো তোমার মলিন মুখের দিকে চেয়ে।কিন্তু কে জানতো সেটা ছিলো তোমার নিছক দুষ্টামী মাত্র।আমার কোলে উঠার ইচ্ছে করেছিলে তাই এই অভিনয়।আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।যখন দেখলাম তোমার লাল ঠোঁটের কোণে একটা হাসির জবা ফুল ফুটে উঠেছে।তখন কিছুটা স্বস্থি পেয়েছিলাম। সেই দিন না তোমার প্রতি আমার বড্ড রাগ হয়েছিলো জানো।আবার ভেবেছি অন্তত তোমার,আমার কোলে উঠার সাধ টা তো আমি পূরণ করতে পেরেছি তাই না।তাই আর কিছু বলতে পারিনি,তোমার অনাবিল হাসির সাগরে লুকানো আমার সুখ টাকে আমি অনুভব করলাম একাকী আনন্দে ।


       একাকী জীবনে এই প্রবাস ঘরে যখন সারা দিনের অফিস শেষে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরি। তখন যেন একটা বিরাট ব্যাথা অনুভব করি তোমার শূন্যতায়।যখন পড়ন্ত বেলার ঘুম শেষে উঠে এদিক ও দিক তাকায় তখন মনে হয় যেন তুমি কোথাও আছো।ভালোবাসার পরশ মাখিয়ে এক কাপ চা'মুখের সামনে তুলে ধরেছ আর হাসছ,আমি টাটকা গরম তাপানো চা টা ডগডগ করে পান করে নিয়েছি তোমার হাসির রূপের সুধার আগুনে।যখন গা ঘামে ভিজে যাচ্ছিলো তখন তোমার কোমল আঁচলে মুছে দিলে আমার সমস্থ চেতনা তোমার ভালোবাসার অভিসারে।আর আমার অবচেতন মন কেবল হাসছে তোমার উচ্ছ্বাসে।এই তুমি কি হাসছো ?হেসো না গো এই যে আমার প্রবাস জীবনের দারুণ মনের আকুতি।


       মুটোফোনে কি এত সব বলা যায় বলো ? যখন আলাপনে মত্ত থাকি তখন যেন সব ভুলে যাই আগে থেকে চিন্তা করে মনের ভিতর অজস্র জমাট বাঁধা কথাগুলো ।তাই আজ কলম কালিতে  লিখতে বসলাম তোমাকে । এই শুনো আমার চোখের সামনে এক জোড়া কবুতর হেঁটে যাচ্ছে। হাতে হাত রেখে চোখে চোখ রেখে ঠিক এই ক্ষণে।আহ!!রবনে বানাইয়া জুড়ি!!মন মাতানো অনুভব তাঁদের। আমার চিঠির লেখা থমকে  গেলো।আমি যেন কল্পনায় মত্ত,তুমি আমার পাশে হাঁটছ আমি তুমি পাশাপাশি আর আমাদের অর্ঘ্য সোনা সামনে সামনে হেঁটে যাচ্ছে আপন খেয়াল বসে মনের আনন্দে।এই কি ভাবছি আমি!!আচ্ছা তুমি কি আমায় পাগল বলবে ? আমি যে আজ অযাচিত চিন্তা করছি!!এই চিঠি যদি অন্য কারো হাতে পড়ে তাঁরা ভাবলে ও অন্তত তুমি ভাবতে পারবে না কেননা এই যে আমার একাকী মনের সকল বিষাদ মাখা কষ্টের পদাবলী সুর,জীবনের কথা।


     মন খারাপ হচ্ছে ? চিন্তা করো না আর মাত্র ক'টি দিন, আমি আসছি উড়ে তোমার মনের ঘরে এসে উঁকি দিবো আমার অর্ঘ্য সোনা কে নিয়ে।রাত  ঢের হয়েছে  তিন ঘটিকা।তোমার ওখানে এখন সকাল পাঁচ ঘটিকা তা আমি জানি।তাই আজ আর নয় অন্য কোন দিন আবার লিখবো যতন করে কবিতার কথায় অনিন্দ ছন্দের গৌরবে সৌরভে।বাবা-মাকে আমার প্রণাম দিও।তাঁদের প্রতি খেয়াল রেখো আর অর্ঘ্য সোনা কে চোখে চোখে রেখো।জেনে রেখো তোমার কাছে তাঁরাই আমার  আমানত।ভালো থেকো খাবার দাবার করো সঠিক সময়ে।আর উজাড় করা ভালোবাসা রইলো নিরন্তর।চিঠির উত্তর দিতে হবে না,জবাব নিতে আসছি মাত্র দুই মাস পর স্বশরীরে তোমার সামনে।
                                                                              
                                                                            ইতি তোমারই
                                                                                   আর্য  
                                                                              
রচনাকাল
১৯।১১।২০১৪
ইউ এ ই ।
বিঃদ্রঃ- একটি  জীবন বোধের  কবিতা।