নিবারণ বাবু ছেলের পাশের খবর শুনে অঢেল খুশি  মনে,
বহু দিন পর ঘুচবে বুঝি অভাব সংসার উচ্ছ্বাস প্রতি ক্ষণে।
অসীম খাটুনি খেটে নিবারণ বাবু চালাচ্ছেন সংসারের হাল,
হাসিমুখ ছিলো সদা ছেলে'র দিকে চেয়ে অভাব বেসামাল।


অনেক স্বপ্ন এঁকে বুকে চাষ করেছেন সোনালী ধানের শীষে,
ছেলে অনেক বড় ডাক্তার হবে গ্রামে সেবা করবে মিলেমিশে।
খুশির বন্যায় ভাসতে ভাসতে বাবু স্বপ্নে তুলেছেন রঙ্গিন পাল,
আজ খোকন সোনা আসবে বাড়ি ঈদের চাঁদ খুশির অন্তরাল।


সকাল গড়িয়ে বিকেল হলো কালোসন্ধ্যা আঁধারে ছেয়ে গেল,
জোনাকি পোকা জ্বলছে মিটিমিটি অপেক্ষায় জ্বালিয়ে আলো।
দিনের পর মাস পার হলো অস্থির নিবারণ বাবুর চোখে মুখে,
আঁকুপাঁকু করছে মন নিরবধি কাঙ্গাল মনে চিন্তা রেখা দুঃখে।


তাঁর স্ত্রী'র মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না বাবু আজ অসহায়,
কি ভেবে একটা ব্যাগ নিয়ে রওনা দিলো শহরে'র মোহনায়।
অচেনা শহরে নিবারণ বাবু'র প্রথম আসা লাল নীল বাতি'তে
পেটটা ক্ষুধায় ছোঁ ছোঁ করছে ,কিছু খেয়ে,ব্যস্ত ছেলে খুঁজতে।


রাতের প্রহর ক্রমশ হচ্ছে গভীর নীরব হচ্ছে শহুরে কোলাহল,
বাবু এক ক্লিনিকের বারেন্দায় শুয়ে রাত কাটালো ঘুম টলমল।
ভাঙ্গা চোখে হঠাত নজরে পড়লো যেন তাঁর খোকা যাচ্ছে হেঁটে
হাতে স্যুটকেইস নিয়ে ডাক্তার বেশে বাবু তাকিয়ে পিপাসামিটে।


খোকা খোকা বলে ডেকে উঠলেন বাবু বিশাল ক্লিনিকের দ্বারে,
খোকা এক বার তাকিয়ে মুখ ফিরিয়ে নিলো স্তব্দ অহং ভারে।
দৌঁড়ে গিয়ে নিবারণ বাবু উপস্থিত হল সব ডাক্তার সভা কক্ষে,
জড়িয়ে ধরলো ছেড়া কাপড়ে খোকা বাবু'কে টেনে নিল বক্ষে।


পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে খোকা কষিয়ে দিলো বাবুর গালে চড়,
পাঁজরের হাড় বুঝি ভেঙ্গে গেলো নিবারণ বাবু'র মনে'র স্বপ্ন ঘর ।
ঐ ক্লিনিক মালিকে'র বড় মেয়ে কনা হচ্ছে তার জীবন চলার সঙ্গি,
তারা দরিদ্র বলে পাশ কাটতে পারে ভেবে খোকা ধরলো ঐ ভঙ্গি।


লাশের গাড়ি দেখে গ্রামের পাড়াপড়শি ছুটে এলো তড়িঘড়ি করে,
পৃথিবীতল বুঝি হাহাকারে  কাঁদছে  নিরন্তর স্ত্রী রইলো লাশ ধরে।


রচনাকাল
২৩।০৭।২০১৪
ইউ এ ই।