আমাদের পরিবারে আজ একটি মৃত্যু হলো;
তাতে পৃথিবীর মানুষের কিছুই এলো গেলো না;


সব কিছু ছিল স্বাভাবিক, জীবনের জৈবিকতা,
প্রেমিকের কাছে ছুটেছে প্রেমিকা,
সৌম্য বৃদ্ধের সকালটি চায়ের কাপে কাটলো চিনি ছাড়া;
বাস স্ট্যান্ডে উপচে পড়া ভীড়ে, বাসের জন্য সবার অধীরতা;
স্বল্প বেতনের কেরাণী, গুনলো মাস ফুরোতে দিন বাকী আছে আর ক'টা;
স্কুলমুখী ছোট্ট শিশুর ঘুম ঘুম ঠোঁটে ফুটলো এক চিলতে হাসি;
স্বামীর বুকে মাথা এলিয়ে বললো হয়তো কোনো স্ত্রী, তোমায় ভালোবাসি;
অথবা বলছে কেউ নিমন্ত্রণের পাট চুকিয়ে "এবার তাহলে আসি";
পত্রিকা হাতে জ্যামের মাঝে চলেছেন অফিস যাত্রী,
কোথাও বরের জন্য অতিমাত্রায় সেজে অপেক্ষায় কনে-পাত্রী;
কোথাওবা ছেলে হারানোর শোকে স্থবির হয়ে গেলো কোনো বাবা মা'য়ের দিন রাত্রি;
আন্দোলনে কোনো রাজনীতিবিদ রাজপথে ফাটালো তার গলা,
কোথাও না কোথাও চলছে পুরোদমে মৌসুমী কোনো মেলা;
কারো কারো কাটছে যে অনাহারে সকাল থেকে সন্ধ্যাবেলা;
সিনেমা থেকে ফেরা তরুণ তরুণীর চোখে মুখে স্বপ্ন রঙিন;
কোনো কবি'র দীর্ঘ কবিতায় বেজে চলে দুঃখের বীণ;
এরকম স্বাভাবিক ছন্দে চলে মানুষের সব রাত আর দিন;


তাই আমাদের পরিবারে আজ যখন একটি মৃত্যু হলো;
তাতে পৃথিবীর মানুষের কিছুই এলো গেলো না;
সব কিছু ছিল স্বাভাবিক, জৈবিক সব চাহিদাগুলো ছিল চলমান;


আর আমরাও জীবনের স্বাভাবিকতার একটি শোকার্ত অংশের মতোই,
কিছু সময়ের জন্য শুধু শোকে স্তব্ধ হয়ে থাকলাম।


(১১.০৯.১৯৯৬)