কন্যা,


সৃষ্টির সপ্তম দিনে সূর্য অস্ত যাবার পূর্বে
হঠাৎ কি খেয়ালে, স্রষ্টা দিলেন ইচ্ছা শক্তি, মানবেরে
এরপর থেকে জীবন নিয়ে আমরা, ছিনিমিনি খেলি
যেমন খেলছো তুমি!


উদ্ভিন্ন যুবতী, যখন আঠারোর চৌকাঠে পা রাখে
নীল ময়ূখ পাখি হয়, তার দ্যুতিতে, দূর থেকে যুবক দিশা হারায়
সাতরঙা রঙধনু, ওড়নার মতো জড়িয়ে, আঠারো বয়সী কন্যারা, ওড়ে আর ওড়ে
ক্ষণজ্ঞানহীন হাসির ঝর্ণায়, বৃদ্ধ দাদুর ধমক খায়, আরো হাসে দাদুকে জড়িয়ে


কন্যা, তুমি তবে কেনো,


আঠারোর চৌকাঠে পা রাখতেই, এ কোন বিপন্নতায় বিমুখ হলে?
ফিরে যেতে চাও, ফিরিয়ে দিতে চাও, ইচ্ছাশক্তি দাতা স্রষ্টাকে,
তুমি তাঁর গ্লানিত নিরাকারে আরো কালিমা ছড়াবে?
জীবন বৃক্ষ থেকে ঝামটা টানে বিচ্যুত করে জীবনফল,
বিকোতে যাও কোন আসমানি হাটে, নাকি ছুঁড়বে নীল দরিয়ার বুকে?
রজনীর নিশুম প্রহরে, বিভ্রান্ত নক্ষত্রের কোন ইশারায়, তুমি পথ হারাও আজ?
দূরপার দুঃখ ভারাক্রান্ত এক মঠে, একটি ফুল ফোটেনি বলে?
আর যে পুষ্পে তুমি পুষ্প হলে, শুকিয়ে যায় যে পুষ্প, একাকী নিঃসঙ্গতায়
তবু তোমার পাষাণী চোখ বিঁধে থাকে, দূরপার মরুতে?


আহা! এই দুঃখ সহ্য করি কি করে?


স্বপ্ন দেখেছিলাম, প্যারিস-লন্ডনে রস্ট্রামে দাড়িয়ে,
তোমার কবিতা করছো পাঠ, গর্বিত গ্রীবার মুগ্ধকর হেলনে, আর
যে প্রণতিযোগ্য যুবমুনি, তোমাকে কবিতা লিখতে শিখিয়েছিলো,
তাকে পাশে নিয়ে দুজনেই ভাসাচ্ছি হৃদয়ের প্রান্তর,
আত্মহারা দমিত খুশির অশ্রুতে


আমি লিখে দিলাম আজ, পদ্মপাতায়
তুমি যেদিন উপনীত হবে আমার বয়সে
আমার কষ্টাত্মা তখন হাঁটছে, হয়তো
অগ্নিহাবিয়ায় অথবা মিনালি বাগানে; সেদিন,
তোমার কান্নার জল নির্ঝর গড়াবে পদ্মফুল জলে;
তোমার মাথাটি বুকে নিয়ে সান্তনা দিতে,
এ কবিকে আর খুঁজে পাবে না!


কন্যা, সমাজের পিশাচতায় অনাহারী যদি
খোলে মৃত্যুর দূয়ার, আমি কাঁদবো সারারাত
তুমি যদি নেভাও প্রদীপ, আঠারোর খেয়ালী মাদকতায়,
মুহুর্তেই ভুলে যাবো তোমাকে, এ আমার অভিমান অঙ্গীকার


আমি তোমাকে ঈগলীনি হতে বলেছি, কথা শোনো, কবি তনয়া
উড়তে থাকো আকাশে, ঐ নীলিমা তুমি অধিগ্রহন করো
তোমার দৃষ্টি সীমানায় জীবন রত্নভান্ডারের অপার বিস্তার
সম্ভাবনার শত শত আহবানী ঋদ্ধ দূয়ার
ঈগলীর মতো খুবলে খুবলে খাও, জীবন উজ্জীবনি মাসপিন্ড,
পান করো জীবন অমৃত রস


কবিতার খাতা খোলো, রাজেন্দ্রাণী,
হাত পেতে আছি কবিতার ভিক্ষু
আমাদের জন্যই না হয় বাঁচো তুমি,


জীবাত্মা নির্বাহে কবিতা দাও, হে কবি রাজেন্দ্রাণী।


(২২.০৫.২০২০)


(*পাদটীকাঃ আমার নিজ পরিবারের অভিমানী, কবি এক মেয়ে, তার জন্য, তার খেয়ালীপনার যন্ত্রাণায় তাকে একটু শাষালাম! এবং চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখালাম আমাদের এই কবিকে, যাকে উৎসর্গ করলাম কবিতা - এ কবির মতো হও!)


(*কবি ময়ূরী রয় কে উৎসর্গ। এই অবিশ্বাস্য আশ্চর্য প্রতিভা, আমাকে মুগ্ধতায় বিমূঢ় করে রাখে। আমার বদ্ধমূল বিশ্বাস, সে যখন পূর্ণ জীবনে প্রবেশ করবে এবং কাব্যচর্চা যদি অব্যাহত রাখে, কবি হিসাবে তার নাম দিকবিদিক জয় করবে নির্দ্বিধায়। কিন্তু তাকে প্রতিনিয়ত সে চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। আমি নির্বাক হয়ে ভাবি, এত তরুণ এক কবি, এখনি কেমন করে, অসম্ভব সব পঙক্তিদের জন্ম দিতে পারে, এত সহজাত দক্ষতায়। ঈশ্বরপ্রদত্ত প্রতিভা ছাড়া এ হয় না। কবি, এ প্রতিভা তুমি আলিঙ্গন করো। ঐশী নির্দেশে আমার প্রস্থানের আগেই, দেখে যেতে  চাই, তুমি কবি হিসাবে ছড়িয়েছো জ্যোতি বিশ্বময়। তোমাকে ১২ বছর সময় দেয়া হলো, একজন বড় কবি হয়ে আমাদের অবাক বিস্ময়ে মুগ্ধ করে দাও)