উঠে যাবো কাগজের প্রথম পাতায়;
সেদিন থেকে কিন্তু,_ তুই আর দেখবিও না আমায়;
কেন?_ দূর বোকা, শুধু তো কাগজের পাতাতেই উঠবো না,
সেখান থেকে উড়ে আকাশ ছাড়িয়ে
নক্ষত্রদের ঘর বাড়ি পেরিয়ে
চলে যাবো অনেক দূরে, অনেক ওপরে সুদূর এক রূপকথার দেশে !


সেখানে কেউ বলবে না আমাকে প্রথম হতে,
বইয়ের পাতা ইচ্ছে মতো ছিঁড়ে ছিঁড়ে
বানাবো কাগজের নৌকো, ভাসাবো সােনালী রূপালি নদীর জলে;
মা এসে বকবে না, বাবা আমাকে খুঁজে পাবে না,
সারা গায়ে কাদা মেখে খেলবো আর খেলবো !
সূর্যটা ডুবলো কি ডুবলো না, সেদিকে তাকাতে হবে না,
বাড়ী ফেরার তাড়া যে থাকবে না !
থাকবে না ক্লাসে প্রথম হবার খাঁচায়, দিনরাত বন্দী থাকার যন্ত্রণা;


আর বলি,_ লজ্জা দিবি না তো?
ঐ যে সুগন্ধী সুগন্ধী মেয়েগুলি !
ওদের দিকে আড় চোখে তাকাতে পারবো তখন;
বাবার মতো চোখ রাঙিয়ে কেউ বাধা দেবে না,
সাহস হলে ওদের হাত ধরে নিয়ে যাবো
ঝমঝম করে বৃষ্টি ঝরা মাঠ পেরিয়ে, রঙিন প্রজাপতিদের বাগান পেরিয়ে,
নীল ময়ূর আর লাল হরিণের বন পেরিয়ে, ঝর্ণার পাহাড় ডিঙ্গিয়ে,
ঐ..ঐ দিগন্তের ধার ঘেষে গল্প পরীদের রাজ্যে,
শুনবো বসে গল্প, মজা করে একসাথে;
সময়ের কথা ভাবতে হবে না, ওখানে ঘড়ি ধরে
কেউ কোনো কাজ করে না,
চার বেলা শুধু পড়ো পড়ো পড়ো !
অন্য কোনো দিকে মন দেবে না, শুধু পড়বে আর প্রথম হবে !
এরকম অবাক করা কথা, কেউ সেখানে বলে না...


আমার জন্য একদম দুঃখ করবি না, কাঁদবি না,
দেখিস, বাবা মা'র ও রাগ কমে যাবে, কষ্ট কমে যাবে,
আমারও তখন কোনো কষ্ট থাকবে নারে,
আমাকে যে ক্লাসে প্রথম হতে হবে না........


(১১.০৬.২০২১)


(আমাদের কবিতা আসরের খ্যাতিমান কবিদের কবিতার লাইব্রেরীতে, গতকাল কবি জয় গোস্বামীর "টিউটোরিয়াল" কবিতাটি পড়ে, আর ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায় এর অপূর্ব আবেগঘন আবৃত্তি শুনে, আমার চোখে অশ্রু এসে গেলো। আবৃত্তিকার ব্রততীও শেষটায় নিজেকে সামলাতে পারেননি আবেগে! তখন এ কবিতাটি লেখার স্বতঃস্ফুর্ত একটি প্রেরণা গড়ে উঠলো, লিখেও ফেললাম।)