করোনার এই মহাক্রান্তিকালে আমি চাই কবিদের সমগ্র অস্তিত্বে
সূর্য্যের গণগণে ফুল্কির মতো ফুটতে থাকুক মহা চৈতন্য
জাগ্রত হোক কবিরা, ছিন্ন করে সুললিত শব্দের মদির কুহক
আমি চাই নজরুলের বিদ্রোহ, সুকান্তের ঝলসানো ক্ষুব্ধতা, কঠিন গদ্য
চাই পাবলো নেরুদা, রাষ্ট্রনায়ক এবং একিসাথে প্রান্তিক অসাম্যের কবিতা
আমি চাই লোরকা, ফ্যাসিস্টের গুলির সামনে বুক পেতে দেয়া
কবির নির্ভীক বারূদ শব্দমালা,
হেমিংওয়ের মতো সচেতনতার ঘুম ভেঙ্গে দেয়া শব্দঘন্টা প্রহরে প্রহরে  
আর জালালউদ্দিন রুমির শুধু শ্বাস এর মানবিকতা


আমি চাই কুঠার আঘাতে চেরা কাঠের মতো রসকষহীন শব্দ
রেকিং বলের মতো, সব প্রহসন মিথ্যাচার গুড়িয়ে দেয়ার মতো শব্দ
এক একটি শব্দ, এক একটি পঙক্তি অব্যর্থ ক্ষেপনাস্ত্রের মতো উড়ে গিয়ে
বিস্ফোরিত হোক পৃথিবীব্যাপী উম্মাদ বায়ুগ্রস্থদের মস্তিষ্কে
ওয়াশিংটন থেকে মস্কো, তেহরান থেকে পিকিং
জাগ্রত করুক বোধ, বিবেক, একাত্মতা আর সমন্বয়ের
নির্বোধগুলো এখনও নিজ বৃত্তে দাড়িয়ে উত্থিত করে আছে শিং
কবিতা হোক সম্বিত ফিরিয়ে আনা পাঁচ আঙ্গুলের দাগ বসানো প্রচন্ড চাপড়
কবিতা হতে হবে আজ জ্ঞানচক্ষু উম্মীলনকারী সফল অস্ত্রোপচার
কবিদের কলম হোক এক একটি প্রাণঘাতী সুচাগ্র বর্শা
গেঁথে ফেলুক ইবলিশ মজুদকারী, ত্রাণচোর আর
যতপ্রকারের সমাজের দুশমন জুলুমকারীদের


তুলতুলে প্রেমকাব্যের সময় এখন নয়
ছিঁচকাঁদুনে অনুভূতিগুলি সব পুঁতে ফেলুক কবিরা
অস্থায়ী কোনো সমাধিতে
এরপরও যদি না হয়, কলমের নিব্ উপড়ে ফেলুক
হৃৎপিন্ড ছিঁড়ে খাক


প্রান্তিক মানুষের ক্ষুধার্ত শরীর খোঁজে না তুলতুলে প্রেম
তারা চেনে না নাগরিক কাব্যের মেকি শৃঙ্গার
তারা চায় খাদ্য, গণগণে উনুনে চাপানো মোটা চালের ভাত
প্রান্তিক মানুষের প্রতিদান অপ্রত্যাশী পেশীর শক্তি
পৃথিবীর সবচেয়ে মনোরম কবিতা, শুদ্ধতম শাস্ত্র
কবিদের নিভৃত আয়েশী পারিপার্শ্বিকতা হতে উদ্ভুত সব কবিতা
সে তুলনায় ঠুনকো, তরুণ-তরুণীর অসহ্য ঢঙ এর মতো অর্থহীন


আমাদের প্রাত্যহিক সুখভোগ, বিলাসব্যঞ্জনপূর্ণ নাগরিক জীবনের
পরম সংজ্ঞা হলো প্রান্তিক মানুষের উদায়স্ত শ্রম
মুখস্থ করো, করো মজ্জাগত


প্রান্তিক মানুষের মতো আছে আরেক দল,
আত্মনিবেদিত অতন্দ্র প্রহরী এই পৃথিবীর,
নৈষ্ঠিক মানতাবাদী বিজ্ঞানী, গবেষক এবং চিকিৎসক সম্প্রদায়


অপেক্ষা করেনি কারো, তাঁরা শুরু করে দিয়েছে
সময়ের বিরুদ্ধে তাঁদের দৌড়
তাঁরা যাদুকর, খুজে পাবেন সহসাই ভ্যাকসিন ফুঁ মন্তর
এক ফুঁতে বিলীন হবে করোনা -
শেষ পর্যন্ত তাঁরাই বিজয়ী হবে, গ্রন্থিত ইতিহাস তাহাই কহে


আর যদি কবিরা নিতান্তই ব্যর্থ হয় শাণিত শব্দ চাষে
তাহলে তুলতুলে প্রেমকাব্য বাদ দিয়ে কবিদের উচিৎ, এক্ষুণি
গৃহ হতে পরীক্ষাগার ২৪ ঘন্টা
গবেষক-বিজ্ঞানীদের সেবায় নিয়োজিত হওয়া
অথবা ত্রাণের বস্তা বহনের কাজ প্রান্তিক মানুষদের বাঁচাবার জন্য


ভেবোনা, আবারও প্রান্তিক মানুষ আর
মানতাবাদী বিজ্ঞানী, গবেষক এবং চিকিৎসক সম্প্রদায়
কবিদের তুলতুলে প্রেমকাব্য রচনায় সমাসীন করে দেবে
নিশ্চিন্তে লিখতে পারবে ফুল, ফল আর প্রেম ভ্রমরার কবিতা


এ এক ভয়াল অশনি দুর্ভিক্ষ আগমনী
ক্ষুণ্ন বিক্ষুণ্ন, ধাতব বাস্তব সময়
অদৃশ্য এবং নীরব ঘাতক করোনাকে পরাজিত করার জন্য
শুধুমাত্র যোদ্ধাদের জন্য এ সময়


তুলতুলে প্রেমকাব্যের সময় এটা একদমই নয়।


(রচনাঃ ২৮.০৪.২০২০)