(১) শোক


প্রিয়জন মৃত্যুশোক, যার যার বুকে
অন্যজন কখনো, বুঝবে না তাকে


বন্ধু আমার!


হিসেব-নিকেশ চুকিয়ে তুই
কার হাতে দিলি
অকস্মাৎ আজ
কেনো চলে গেলি
ওপারে?


একবারও ভাবলি না আমাদের কথা
ফুটফুটে ফুল দুই কন্যার মায়া


কে নিয়ে গেলো তোকে?
এ শোক সহ্য করি কি করে?


হোয়াটস অ্যাপে তোর
শেষ কথারা
ভাসছে আমার দুঃখের সাগরে
(আলহামদুলিল­্লাহ্, ভালো আছি
সাবধানে থাকিস, খালাম্মার যত্ন নিস)
পড়েছো তোমরা, তার শেষ কথাগুলো
স্রষ্টার নাম নিয়ে শুরু করেছিলো
বলো কতটুকু বন্ধুর গাঢ়তা ছিলো
ভবিতব্য কেনো, মুক্তোর মতো
কথাগুলো আজ, রেখে দিয়ে গেলো
এভাবে আমার সত্তায়


হায়! এ শোক সহ্য করা যায়?


(২) উম্মত্ততা


কে নিয়েছে তোকে? স্রষ্টা
তাঁর অভিশাপ, অতি ভ্রষ্ট দ্রষ্টা


প্রকৃতিকে খুন, করেছি জেনে
করোনা তবে, শোধের আগুনে
বিঁধালো ছুরি, আমার বুকে?


হ্যাঁ ঠিক আছে, একদম ঠিক আছে


না না না মানুষই তোকে খুন করেছে
না না ভুল হলো, তোকে খুন করেছে পিশাচ
মানুষ যারা ছিলো পৃথিবীতে
অনেক আগেই তারা মরে গেছে


এখন যারা ঘোরাঘুরি করে এই মর্ত্যে
তারা আগ্রাসী এবং সর্বগ্রাসী পশু
মানুষ নয়, তাদের বিনাশ হয়ে গেছে


হে করোনা
তুমি পৃথিবী করে দাও ধূসর
ধুয়ে নাও, ধুয়ে দাও বিষ
মনুষ্য পশু যেন একটাও না থাকে


তোমার জন্য এই পশু প্রস্তুত
আমাকেই বলি দিয়ে দাও, সবার আগে


নতুন করে শুরু করো
বিলীন করে সবকিছু


শুদ্ধ সবুজ ফোটাও, ধীরে
তোমার জমিনে
তারপর
সমুদ্র হতে ফের মানুষ জাগাও


অন্যরকম মানুষ, আমাদের বিষাক্ত বীজ নয়
নব বীজে শুদ্ধ জাতের মানুষ
ফের জাগাও সমুদ্র হতে


তবে
হাতে রেখে দেবে সুশক্ত দমন
পৃথিবীর পরিমাপে, আঙ্কিক অনুপাতে
এগোতে দেবে তুমি মানব জন্মের প্রসবন


প্রকৃতি, পৃথিবী, স্রষ্টা
আর কখনো ভুল করো না
কখনো না, কখনো না, কখনো না!


(০৪.০৫.২০২০)


(আমার বন্ধু, ফেরদৌস আলম নভেল, গতকাল (০৪.০৫.২০২০) ঢাকার বনানীতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরন করেছে। কয়েকদিন ধরে শরীরে জ্বর ছিলো, গতকাল সেহরী খাবার পর হঠাৎ শ্বাসকষ্ট শুরু হয় এবং দু’ঘন্টার মধ্যে মারা যায়। জানিনা, তার স্ত্রীর নিষেধ সত্বেও জ্বর শুরু হবার কিছুদিন পূর্বে সে বনানী বাজারে গিয়েছিলো, ওখান থেকেই করোনা আক্রান্ত হলো কিনা। আমাদের সমগ্র পরিবারে এবং সমগ্র বন্ধুদের পরিবারের মধ্যে সেই প্রথম করোনার শিকার। ইমাম সাহেব তো আর খুজে পাওয়া গেলো না, তার এক বন্ধুই জানাজার ইমামতি করে দাফনকার্য সমাধা করেছে। এই হলো আসল বন্ধু আর আমি এই কবিতা লিখেছি, কবি বন্ধুদের কবিতায় মন্তব্য করেছি, তাদেরটা উত্তর দিয়েছি, কিন্তু লকডাউনে, করোনা এবং পরিবারের ভীতি ভেদ করে প্রাণপ্রিয় বন্ধুকে কবরে নামাতে পারিনি শেষ বিদায়বেলায়, যে বিপদে আমার পাশে ছিলো সবসময়। তাহলে আমি কে? করোনাক্রান্ত এক মানব পিশাচ! আমারও বেঁচে থাকার অধিকার নেই। আমি প্রস্তুত, হে নিঠুর স্রষ্টা!)