তোমাকে মনে পড়ে খুব।


যেন জেগে থাকা এক স্মৃতিময় সবুজ দ্বীপ,
কখনোই ডুবে যাবে না বৈশ্বিক উষ্ণতার বাড়ন্ত জলে;
প্রতিদিনই অফিসে আসতে, এক একটি অপূর্ব শাড়ির
উচ্ছসিত ধ্বনিতে মূর্ত হয়ে, উদ্দীপিত হতো অফিসের কাটখোট্টা সিঁড়ি,
মুখরিত হতো এ হৃদয়সহ, তোমার পায়ের ছন্দে ছন্দে;
কত যে চাতুরি করে গিয়ে দাড়াতাম তোমার কক্ষপথে,
সকালের প্রথমক্ষণেই, তোমার ঐ স্নিগ্ধ মধুরিমা সবার আগে আমারই চাই,
যেনো না পেলে, অঙ্ককষা সওদাগরী দিনটি হয়ে যাবে নির্ঘাত মৃত্যুপ্রত্যাশী!


কর্তারাও থাকতো উন্মুখ, তবু প্রতিদিন, তাদের বনেদি কাঁচঘেরা প্রত্যাশা,
চুরমার করে আমার করণিক ডেস্কের সামনে রাখা চেয়ারটিতেই, ধপ্ করে
বসে পরতে, হয়ে যেতে ক্ষণকালের নিখাদ প্রণয়িনী;
এসব কিছুই হতো না, যদি তোমার হৃদয়, আমারই মতোন পাগলপ্রবণ আত্মহারা না হতো;
যদি জীবনের প্রতিটি পর্বেই ঝর্ণার মতো ভালোবাসা ছুটিয়ে দিয়ে,
ধর্মান্ধ নগরীর যত অন্ধকার বুহ্যভেদী তোমার আমার সত্বা, একরুপ না হতো;
তুমি তাই ছিলে এক নিরুপমা নারী!


শুরু হতো আমাদের প্রাত্যহিক লীলা, নিচু লয়ে, ঈর্ষার চোখ আর দম্ভের
সব হাঁক ফাঁকি দিয়ে; আমাদের সেই কবি-প্রণয়িনী খুনসুটি খেলায়,
ছলনার কোনো দাগ কলঙ্ক ফোটাতো না;
প্রকৃতই বনে যেতাম আমরা সখী আর সখা; সারাদিনময় ক্লান্ত অঙ্ককর্ষিত খরার মাঝে,
সামান্যতম দর্শনেই আমরা রুপান্তরিত প্রেমিক আর প্রেমিকা;
তুমি বুঝে গিয়েছিলে প্রথম আলাপনেই, আমার জন্ম কবিদের সূতিকাগারে,
তুমি বুঝে গিয়েছিলে, নিয়ত আমাকে বিদ্ধ করে অন্ধকার জীবন দর্শন
আর তার নিকৃষ্ট স্বৈরাচারী মনোভাব,
তাই প্রথম দিন থেকেই তুমি হলে আমার বিষাদে চন্দ্রমুখ সান্তনা;


কত যে অশ্লীল গাল ভরা গল্প ছিলো তোমায় নিয়ে,
মুগ্ধ হয়ে দেখতাম তোমার অনির্বচনীয় উপেক্ষা;
তোমার বিবিধ আসক্তির বর্ণময় কল্পিত ঈর্ষিত কুৎসা রটনা,
বর্জ্য জীবন খোঁয়ারে আটকে থাকা অবদমিত যৌনআকাঙ্খায় পীড়িত সব পশুদের মুখে;
আমার বাটার শক্ত জুতোর তলায়, নির্মম পিষে দিতাম ডলে ডলে,
সিগারেটের বাটের মতো, সেসব জীবানুবাহী পোকামুখো নচ্ছার কাহিনীদের;


হে আমার মোহময়ী স্বাধীনা রমণী!
মনে পড়ে, একদিন ছুঁয়ে দিতে তোমার মসৃণ ত্বক, অনুমতি চাইলাম;
কথাও শেষ হয়নি, বলে উঠলে, 'হোয়াই ডোন্ট ইউ?'; যেন বলতে চাইলে,
এতো যে হলাম তোর শুদ্ধ প্রণয়িনী, সেখানে তোর এখনো অনুমতির প্রয়োজন!
এমনই হেমন্তের সাদা মেঘের ওড়াওড়ি ছিলো তোমার নির্মল হৃদয়নীলে;


আরেকদিন, মনে আছে!; তোমার স্বাধীনতার উড়াল চিহ্নের মতো রমণীয় যানে,
আমাকে নিয়ে ঘুরে বেড়ালে এই প্রিয় বিদগ্ধ নগরী,
সেদিন নগরী আমাদের স্বচ্ছ প্রাণময়তায় হয়ে উঠেছিলো
রঙিন আলোকমালার এক বিষ্ফোরিত ফুলঝুড়ি!


যেনো ব্রাজিলের কার্নিভালের কনফেটি উড়ছে পুরো সন্ধ্যার নিয়নচ্ছটা শরীরে,
বাজছে ঢাক, উদ্দাম নৃত্য, আর মনোমুগ্ধকর প্যারেডের শব্দধ্বনি;
এসব কিছুরই উৎসমূলে যেনো ছিলো, তোমার দেহসত্তায় জড়িয়ে থাকা,
অজানা আনন্দময় ভুবনের কোনো অলৌকিক স্ফুর্তি!  


তোমার রূপ, গন্ধ, কন্ঠ, কথা, ভঙ্গিমা, সব কিছু ছাড়িয়ে উর্ধ্বে উঠে থাকতো
একটি মুগ্ধতা; তুমি ছিলে কিংবদন্তী দেশপ্রেমী মহাযুদ্ধনায়কের এক অসামান্যা কন্যা!
তোমার স্পর্শে আমি হয়ে উঠতে চাইতাম আমার চিরপ্রেম আকাঙ্খা,
মুক্তিযোদ্ধার এক দুর্নিবার আত্মা!


অশরীরি যন্ত্রণাবিদ্ধ যাতনার মতো
তুমি এখনো আমার এক সুখ;
তোমায় মনে পড়ে খুব,- খুব মনে পড়ে


আমার দেবীপ্রভা মৃন্ময়ী, আনন্দময়ীকে ।


(১২.০৬.২০২০)